ইকো ইকো ডাক পাড়ি

ছবি: ফাইজা মুবাশশিরা
ছবি: ফাইজা মুবাশশিরা

আমরা ২০১৯ সালের মে মাসে একটা খরগোশ এনেছিলাম। তার আগে আরও দুটি খরগোশ ছিল আমাদের। কিন্তু ওরা কেন জানি মরে গিয়েছিল। ওদের মৃত্যু আমার কাছে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো। তাই পরে একদিন আমরা স্কুল থেকে বাসায় আসার সময় সাদা খরগোশটিকে নিয়ে এলাম।

আমি আগের খরগোশগুলোকে আদর করতে একটু ভয় পেতাম। তবে নতুনটির সঙ্গে ধীরে ধীরে ভাব হয়ে গেল, আর আমার সাহসও হয়ে গেল। আমরা ওর নাম দিলাম ইকো। কারণ, ওকে ডাকলেই ও দৌড়ে চলে আসত, যেমন শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। প্রতিধ্বনির ইংরেজি ‘ইকো’, তাই আমাদের খরগোশের নামও ইকো।

ইকোর ওপর খুব মায়া হয়ে গেল আমার। বাসায় একা থাকলে ইকোর খাঁচার পাশে গিয়ে বসে থাকতাম। ওকে আমরা ভোরবেলা আর বিকেলে ছাড়তাম। ভোরবেলা ও আমাদের পেছন পেছন ঘুরত। ওর খাঁচাটা ছিল ছোট। তাই বড় হয়ে যাওয়ায় ও নিজে নিজেই খাঁচা খুলে বের হয়ে যেতে পারত। খাঁচার মধ্যে থাকতে চাইত না। ইকো আমাদের খাটে লাফ দিয়ে উঠে যেতে পারত। আমাদের পাশে বসে থাকত।

আমরা ওকে প্রতি শুক্রবারে গোসল করাতাম। ও তখন পালানোর জন্য কী যে করত! তারপরও অনেক কষ্ট করে ধরে আম্মু ওকে গোসল করাত। ও গোসলের সময় পালানোর জন্য খাটের নিচে গিয়ে শুয়ে থাকত। কারণ, ও জানে আমরা খাটের ভেতর ঢুকে ওকে আনতে পারব না।

ও আরও বড় হলো, দুষ্টুমিও বাড়ল। খাঁচার ভেতরে লাফাতে লাফাতে খাঁচাটাই ভেঙে ফেলল ও। তাই আম্মু ভাবল, ইকো তো এখন বড় হয়েছে, ওর এখন পরিবার দরকার। ওকে আরও ভালো জায়গায় রাখা দরকার। তাই আম্মু খরগোশটাকে দোকানে ফেরত দিয়ে দেবে বলল। আমরা ইকোর সব দিক বিবেচনা করে অনেক কষ্টে রাজি হলাম। ওর যেহেতু এই খাঁচায় থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আর ওর একটা সঙ্গী দরকার।

ইকোকে যেদিন বিদায় দেওয়া হচ্ছিল, সেদিন ওকে আমরা একটা কাপড়ের ব্যাগে রেখেছিলাম। ও যাওয়ার সময় ব্যাগ থেকে মাথা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়েছিল! যেন ও সব বুঝতে পারছিল।

তারপর থেকে স্কুলে যাওয়া–আসার পথে আমরা দোকানে রাখা ইকোকে একবার করে দেখার চেষ্টা করতাম। একবার তাকালেই বুঝে যেতাম, কোনটা আমাদের ইকো।

কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ বলে আমরা আমাদের ইকোকে দেখতে পাচ্ছি না। ওকে আমরা একটা সময়ের জন্যও ভুলে থাকতে পারি না। আমি এখনো ঘাস দেখলেই ওর কথা ভাবি। মনে হয়, আমাদের খরগোশটা থাকলে ওকে এই ঘাস খাওয়াতে পারতাম। ইকো নিশ্চয়ই ভালো আছে। আর আমাদের নিশ্চয়ই আবার দেখা হবে।

অষ্টম শ্রেণি, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা