ঢোঁক গেলার গল্প

আঁকা: কাজী মাসিয়াত জামান     পঞ্চম শ্রেণি, সামারফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা
আঁকা: কাজী মাসিয়াত জামান পঞ্চম শ্রেণি, সামারফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

বর্ষাকালের কথা। গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছি। দুই চাচাতো বোন লিলি আর মিলিও এসেছে। আমাদের বাড়িটা বিশাল। পেছনের দিকে বাগান, এক পাশে ঘন ঝোপঝাড়। একদিন মহাসমারোহে বৃষ্টি নামল। লিলি বলল, ‘চল বৃষ্টিতে ভিজি।’ 

এমন প্রস্তাবে ‘না’ করা যায়? কিন্তু বাড়ির বড়রা কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে দেবে না। অনেক বলার পর রাজি করানো গেল। আমরা ভিজতে গেলাম। বাড়ির সবাই যখন ঘরের ভেতরে চলে গেল, তখন মিলি বলল, ‘চল, বাড়ির পেছনের দিকে যাই।’

আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ির পেছনে গেলাম। বৃষ্টি তখন মুষলধারে নেমেছে। ফোঁটাগুলো গায়ে লাগছিল একদম পাথরের মতো। হঠাৎ লিলি বলে উঠল, ‘তোরা শব্দ শুনলি?’

আমি বললাম, ‘কিসের শব্দ? কোনো শব্দ নাই। ভয় পাস কেন?’ বলার পর খেয়াল করলাম, জায়গাটা অন্ধকার হয়ে আসছে। লিলি আমার হাত চেপে ধরে বলল, ‘দেখ, ওখানে কী যেন নড়ছে!’ 

আমরা ভয়ে এগিয়ে দেখি, একটা কুকুর গাছের পেছনে বসে আছে। খুব হাসাহাসি করলাম আমরা। কিন্তু তখনই অদ্ভুত আরেকটা শব্দ আমাদের মনে ভয় ধরিয়ে দিল। মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম আমরা। শব্দটা তীব্র হলো। ঝোপঝাড় নড়তে শুরু করল। আমরা প্রাণপণে দিলাম দৌড়। শব্দও যেন আমাদের পেছন পেছন ছুটতে লাগল! এদিকে রাস্তা আর শেষই হয় না। অবশেষে মনে হলো, হাজার বছর পর বাড়িতে ফিরলাম আমরা। বৃষ্টি ততক্ষণে ধরে এসেছে। 

দাদি এসে বলল, ‘তোরা যে হুট করে গেলি, বছর পাঁচেক আগে ওদিকে গিয়ে একটা লোক ভূতের তাড়া খেয়েছিল। ভুলেও আর যাবি না।’

জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওই ভূত কী করে, দাদি?’

দাদি বলল, ‘খুব নাকি শব্দ করে আর বটগাছের ঝুরির মতো হাত দিয়ে পা টেনে ধরে।’

আমরা আর কী বলব! একে-অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনটা ঢোঁক গিললাম।

 সাদিয়া বুশরা

নবম শ্রেণি, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও