এই বর্ষায়...

বৃষ্টিতে ভিজে গেলে অবশ্যই বাসায় ফিরে ভালোভাবে শরীর মুছে নিতে হবে। মডেল: এলভিন। ছবি: অধুনা
বৃষ্টিতে ভিজে গেলে অবশ্যই বাসায় ফিরে ভালোভাবে শরীর মুছে নিতে হবে। মডেল: এলভিন। ছবি: অধুনা

বৃষ্টির দিন শুরু হয়ে গেছে। স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বকে নানা রকমের সংক্রমণ হতে পারে। ভেজা শরীর ভালোভাবে না মুছলে, ভেজা কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দেওয়া, রোদ না থাকায় স্যাঁতসেঁতে ঘর—ইত্যাদি কারণে বর্ষাকালে ত্বকের এসব সমস্যা হয়৷
এ সময় সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ঘামাচি। হঠাৎ গরম ও ঠান্ডার তারতম্যে শরীর ভেজা থাকে। ঘামে এবং ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রাশেদ মো. খান বলেন, যারা মোটা, বেশি ঘামে এবং স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়, তাদেরই এ রোগগুলো বেশি হতে দেখা যায়।

ছত্রাকের আক্রমণ
বিশ্বব্যাপী এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ লোক এ ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আক্রমণের হার শীতপ্রধান দেশের চেয়ে বেশি। ধারণা করা যায়, এ দেশে অন্তত ৮০-৯০ হাজার লোক প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগটির চিকিৎসা দেওয়া হলে খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার দেখা দেয়, আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটু ভালো হওয়ামাত্রই রোগী ওষুধটি বন্ধ করে দেন। আবার যারা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে, তারাও কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহারজনিত কাপড়চোপড় পরিষ্কার করে না। ফলে খুব সহজেই ব্যবহারজনিত কাপড়চোপড় থেকে আবার ছত্রাক দেহে প্রবেশ করে। সে কারণেই এ রোগটি কিছুদিনের মধ্যে আবার দেখা দিয়ে থাকে।

কী কী ধরনের ছত্রাক রোগ এই সময়ে হতে পারে?
মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন: দাদ, ছুলি ও ক্যানডিডিয়াসিস। এ তিন ধরনের ছত্রাক প্রজাতির সবাই মূলত ত্বকের বাইরে অংশকে আক্রমণ করে। সেই আক্রমণ স্যাঁতসেঁতে, নোংরা, ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।
ছুলি দেখতে সাদা হয়। অনেকে আবার একে শ্বেতী ভাবতেও শুরু করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ক্যানডিডিয়াসিসও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বৃদ্ধ কিংবা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিস আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যারা স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছে, তাদের হয়। এ ছাড়া যাদের ত্বকের ভাঁজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে, তাদেরই এই রোগটি বেশি হয়। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচুর চুলকানি থাকে।

ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায় কীভাবে?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছত্রাক সংক্রমণ প্রায় ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব। তবে সেটা আবারও হতে পারে। ছত্রাক প্রতিরোধে পা, আঙুলের ফাঁক, যৌনাঙ্গ ও এর পাশের ত্বক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ত্বক পরিষ্কার বা ধোয়ার পর শুকনা তোয়ালে বা গামছা দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনো না করলে সেখানে ছত্রাক বেড়ে উঠতে পারে।
লেখক: চিকিৎসক