কনের ইচ্ছাপূরণ

বরকনের স্কুটিযাত্রা
বরকনের স্কুটিযাত্রা

বিকেল। তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। খুলনা শহরের অনেকেই সেদিন চোখ বড় বড় করে দেখেছেন এক অবাক করা দৃশ্য—স্কুটিতে চেপে যাচ্ছেন দুই তরুণ-তরুণী। তরুণীর গায়ে বিয়ের লাল শাড়ি, তরুণের পরনেও বরের বেশ। বর-কনের বেশে নতুন দম্পতি স্কুটিতে চেপে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এটুকুই পথচারীদের ভ্রুজোড়া কপালে তুলে দিতে যথেষ্ট। তার ওপর চালকের আসনে যদি বসেন কনে, ভ্রু তো কপাল ছাড়ার উপক্রম হওয়ারই কথা!
খুলনা শহরবাসী দৃশ্যটা দেখেছে গত ৩১ মে৷ তবে সুমাইয়া করিমের কল্পনায় এই দৃশ্য ছিল বহুদিন আগে থেকেই। সাইফুল আবু সবুজের সঙ্গে তাঁর ভালোবাসার সূচনা আজ থেকে আট বছর আগে। কীভাবে? সুমাইয়া বলেন, ‘সে বিরাট লম্বা কাহিনি। বলতে গেলে শেষ হবে না। এই গল্প না হয় থাক।’ পরিচয়পর্বটা সত্যিই ‘গল্পের মতো’ ছিল কি না, জানা হলো না। তবে সুমাইয়া-সবুজ দম্পতির নতুন জীবনের সূচনাটা গল্পের মতোই বটে। ‘নিজের বিয়ে নিয়ে মানুষের কত রকম ইচ্ছা থাকে। ঘোড়ার গাড়িতে যাব, পালকিতে যাব... কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল, বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে স্কুটি চালিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাব। আমার বর বুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েছেন। শিগগিরই পিএইচডির জন্য আমেরিকা যাচ্ছেন, তাই অনেকটা তাড়াহুড়া করেই আমাদের আক্দটা করতে হলো। স্কুটি চালিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া না হলেও বিয়ের পরদিন স্বামীকে নিয়ে স্কুটিতে করে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে এসেছি।’ বিচিত্র এই ‘ইচ্ছাপূরণে’ পরিবার সায় দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন সুমাইয়া। সবার সহযোগিতায় অবশেষে তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। ‘সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন আমার মা। তিনিই বিয়ে উপলক্ষে স্কুটিটা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন।’
বর-কনেকে নিয়ে চলছে স্কুটি, সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি—পথচারীরা বোধ হয় আশপাশে ক্যামেরার খোঁজ করছিলেন। এমন দৃশ্য তো কেবল সিনেমাতেই দেখা যায়! মজার ব্যাপার হলো, সুমাইয়া আর আশপাশের মানুষ মজা পেলেও বর সবুজ নাকি ভীষণ ভয় পাচ্ছিলেন! সুমাইয়া স্কুটি চালানো শিখেছেন মাত্র দুদিন আগে, না জানি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় ভেবে জড়সড় হয়ে বসেছিলেন তিনি। তবে স্ত্রীর ইচ্ছাপূরণে ছিল তাঁর পূর্ণ সমর্থন। ‘আমরা দুজন দুই রকম। আমি একটু চুপচাপ, পড়ালেখা নিয়ে থাকতেই পছন্দ করি। সুমাইয়া আবার খুব উচ্ছল, সব সময় বন্ধুবান্ধব আর বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা চমৎকার।’ বলছিলেন তিনি। একফাঁকে সুমাইয়া যোগ করলেন, পুরো ব্যাপারটা তাঁর কাছে শুধু স্বপ্ন নয়, চ্যালেঞ্জও ছিল।