স্ট্যাটাসের কবিতা

.
.

আমাদের কবিরা যদি ফেসবুক ব্যবহার করতেন তবে স্ট্যাটাসে নিশ্চয়ই লিখতেন কবিতা। আমাদের অনুরোধে কবিরা লিখে দিলেন তারই নমুনা—স্ট্যাটাসের জন্য কবিতা।
রফিক আজাদ
তোমার কথারা
কথাগুলো তুমি রেখেছিলে
কচি সরু তাজা তৃণে,
খরখরে শুকনো ঘাসে
রূপান্তর ঘটে
তরুণ তৃণের;
বিষ-পিঁপড়ের মতো তোমার কথারা
উঠে আসে আমার শরীরে!
আসাদ চৌধুরী
মধুর সংগীত
যা কিছু সুন্দর যদিও অদৃশ্য
লুকিয়ে রাখা তার শ্রমের স্বাক্ষর
মেধা ও মননের, দক্ষতার ছাপ
যা কিছু সুন্দর নয়নে ভালো লাগে
শোভনে প্রশান্তি মধুর সংগীত
নিপুণ রন্ধনে রসনা চঞ্চল
সময়, মেধা দিয়ে যত্নে নির্মিত,
ভাবনা কাজ করে চিন্তা না করে কি
মহৎ শিল্পের সৃজন সম্ভব?
মহাদেব সাহা
নিউইয়র্কে সন্ধ্যা
নিউইয়র্কে এই সন্ধ্যায় মডেল তারকাদের
দাঁতের মতো ঝকঝক করছে রোদ্দুর
ঘড়িগুলি সব পি সি সরকারের ম্যাজিক;
আমি জ্যাকসন হাইটের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে
সূর্যাস্ত দেখছি পাথরঘাটায়,
সন্ধ্যার রোদের চেয়েও ঝলমলে দুই রমণী
আমার দুই পাশে
কিন্তু আমি অন্ধকার, কী করে বোঝাই,
নিউইয়র্কে সন্ধ্যা না হলেও আমি অস্তমিত।
টোকন ঠাকুর
উড়ু উড়ু
ভেতরে জ্বর জ্বর! বুকটা খরখরে
মনের সঙ্গে মনের কত তর্ক রে!!
যে নেই আমার পাশে তবু, তার সঙ্গেই
পাগল-সময়—কিসের নেশা ভর করে?
কিছুই তাকে বলা হয় না—বলব বলে
কথা সাজাই, কিন্তু কথা সব ভেঙে যায়
ফাঁকা রাস্তায়—কথারও নাকি ডর করে!?
শাহ্নাজ মুন্নী
প্রেমে
কিছু কিছু প্রেম কোথাও পৌঁছায় না
কেবল বাঁশির মতো সুর করে ডেকে
আনে যন্ত্রণার পাখি।
আমরা তো প্রেম কি, না জেনেই প্রেমে পড়ি, মৃত্যু কি না জেনেই
মরে যাই।
কত মুখ চারপাশে, কত গান, কত মোহ—সব ফেলে, অবশেষে
যোগিনী বেশে ঘুরি দেশে দেশে
এক মুষ্ঠি দয়া ভিক্ষা করি, চাই এক
মুঠো করুণা
আমার ঘোড়া হারিয়ে গেছে, নম্র কণ্ঠে তাই করি ধুলোমাখা পায়ের
বন্দনা।
মারজুক রাসেল
রোগ নিবেদন
গতকাল আসিনি গতকালের পোশাকে এসেছি—
দরজা হিজাব খোলো;
চোখ দেখে সূর্যে যাবে সানগ্লাস,
ডানা খুলে পাখি গিয়ে বিমানে চড়বে,
জঙ্গল ডাকছে, গোলাপ রেখেই চলে যাব শোনো—
আমাকে দেখেও আয়না অক্ষত জীবিত থাকবে;
তুমি এরপর বিছানাকে ঘুম পাড়িয়ে সাজো।
অলংকরণ: কাইয়ুম চৌধুরী