বিয়ে হলো বরিশালে

বর বসেছে টোপর মাথায়। ছবি: সম্পা–নিলের পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
বর বসেছে টোপর মাথায়। ছবি: সম্পা–নিলের পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

হল্যান্ডের বাসিন্দা নিল তখন উলুধ্বনির সঙ্গে একাকার হয়ে মন্ত্র পড়ছেন৷ তাঁর শুদ্ধ উচ্চারণে অবাক আশপাশের সবাই৷ বাঙালি কনের সঙ্গে ভিনদেশি ছেলের বিয়ে নতুন নয়। কিন্তু গায়েহলুদ, বরযাত্রা, বিয়ের মণ্ডপ তৈরি, মন্ত্র পড়ে বিয়ে, বাসি বিয়ে এসব নতুন। হল্যান্ড থেকে ৩৫ জন বরযাত্রী এসেছেন বাঙালি সাজে। বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন নয়টি সাজানো রিকশায়! ব্যান্ড দল আর শোভাযাত্রাসহ তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়েছিল। বরিশালের কাউনিয়া থানার জন্য এ ঘটনা অভূতপূর্ব তো বটেই!

বাবা জোহান রাকা ও মা আনিতা রাকার সঙ্গে নিল রাকা
বাবা জোহান রাকা ও মা আনিতা রাকার সঙ্গে নিল রাকা

তিন দিনের আয়োজনই ছিল উৎসবমুখর৷ গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ শাড়িতে দারুণ মানিয়েছিল ভিনদেশি অতিথিদের৷ বাসি বিয়ের দিনে রামকৃষ্ণ মিশনে যাওয়া হবে জল আনতে, দেখা গেল কপালে সিঁদুর এঁকে, হাতে কলস নিয়ে প্রস্তুত বর পক্ষের মেয়েরা৷ পুকুর কাটা, পাশা খেলায়ও তাঁদের কী দারুণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ! পুকুর কাটা খেলায় জল-কাদার মাঝে লুকিয়ে রাখা হয় আংটি৷ সে আংটি খুঁজতে বরকে সাহায্য করেছিল কনে পক্ষের ছেলেমেয়েরা৷ ওদিকে কনেকে আংটি খোঁজায় সাহায্য করতে ভিনদেশিরাও জল-কাদা মেখে একাকার৷ বাসি বিয়ের দিন আরেক মজার কাণ্ড—বর-কনের শরীরে হলুদ লাগানো হয়েছে, এবার গোসলের পালা৷ উহু, টাকা না দিলে গায়ে পানি ঢালা হবে না৷ শীতের মধ্যে হলুদ মেখে হাসি হাসি মুখে ভিনদেশি বর বসে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ৷ শ্যালক–শ্যালিকাদের সঙ্গে চলছিল খুনসুটি৷

ভিনদেশি বরযাত্রী, বাঙালি সাজে
ভিনদেশি বরযাত্রী, বাঙালি সাজে

ছুটির দিনেবরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, প্রতিবেশী এ কে এম মরতুজা আবেদীন জানান, ‘মনে হয়নি যে কোনো ভিনদেশি নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। সম্পূর্ণ বাঙালি মতে ও বরিশালের পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে বিয়ে হয়েছে। নিল রাকার পরিবারের সদস্যরা মিশেছেন একান্ত আপনভাবে।’
সম্পার বাবা স্বপন কুমার বালা বলেন, ‘আমি গর্বিত আমার মেয়ে-জামাই নিয়ে। পারিবারিক যোগাযোগ দুই পরিবারকে এক করে দিয়েছে। আমার কাছে একবারের জন্যও মনে হয়নি অন্য ভাষা বা দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে। বাঙালি হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিয়ের সব আয়োজন করা হয়েছে। ছেলে পক্ষ থেকেও সমানভাবে আয়োজন ছিল। আমার সঙ্গে প্রতিবেশীরাও এই আনন্দের অংশীদার ছিলেন।’