আঁখি উঠে দাঁড়াল

আঁকা: তুলি
আঁকা: তুলি

আঁখি আসার আগে অপেক্ষা করছি।
মিনিট দশেক পরে একটু দূরে আঁখিকে আসতে দেখলাম। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে আসছে।
আঁখি এসে বলল, ‘কেমন আছো? কখন এসেছ?’
‘জি ম্যাডাম, ভালো আছি। এসেছি বেশি সময় হয়নি। কিন্তু আপনাকে কেমন যেন লাগছে। শরীর খারাপ নয়তো?’
‘না, শরীর ঠিক আছে, কিছু হয়নি। বসো।’
‘এখন বলো, জরুরি তলব করেছ কেন?’
‘এত অস্থির হচ্ছ কেন?’
‘ওক্কে বাব্বা, আর অস্থির হব না।
চা খাবে?’
‘হুম্।’
চা খাওয়া শেষ হলে আঁখি নিচু স্বরে বলল, ‘দীপু, রাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি...সারা রাত শুধু তোমার কথা...।’
আঁখিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,‘কখন সকাল হবে, আর আমাকে থাপ্পড় মারবে, তাই তো? মাফ চাইছি। গতকাল আমি বেশি বেশি শয়তানি করে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে রেখো না,ভুলে যাও। প্লিজ।’
‘না, আমি কিছু মনে রাখিনি। দীপু, তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই...।’
যা বলতে চাও বলে ফেলো...থাপ্পড় মারতে চাইলেও মারতে পারো।’ কথাটা বলে আঁখির দিকে গাল বাড়িয়ে দিলাম।
‘ওহ্ দীপু, আবারও ফাজলামি করছ!’
‘ঠিক আছে, আজ আর ফাজলামি করব না। কী বলবে, বলে ফেলো।’
আঁখির দিকে তাকিয়ে দেখি,ও মুখ নিচু করে রেখেছে। চুপ করে আছে দেখে আবারও বললাম,‘কই, চুপ করে আছো যে, কী বলবে বলো না।’ মুখ তুলল মাটি থেকে। তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি গলায় বলল,‘আমি যদি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে?’
‘না।’
‘না! কেন?’
‘তোমাকে তো আমার কখনোই প্রেমিকা মনে হয়নি।’
‘তবে কাল যে তুমি আমাকে...!’
‘শোনো, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে কেউ সিরিয়াসলি মজা করে না। যদি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম, তাহলে অমনটি কখনোই করতাম না।’
‘দীপু, তাহলে কি ধরে নেব আজও তুমি আমার সঙ্গে মজা করছ? এখন যা বলছ, তা সত্যি না?’
‘না আঁখি, এখন তোমার সঙ্গে একটুও মজা করছি না।
আঁখি শোনো, ­আমি নিজেই গতকাল আমার অভিনয়ে মুগ্ধ। ভেবেছিলাম, তুমি আমার অভিনয়টা ধরতে পারবে, কিন্তু পারলে না। তখন নিজের কাছে নিজেকে খারাপ লেগেছে।’
‘মিথ্যুক!’
‘কে?’
‘এখানে তুমি ছাড়া আর কাউকে তো দেখছি না।’
কথাটা বলে আঁখি উঠে দাঁড়াল। তারপর একদৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ক্ষীণ স্বরে বলল,‘কাপুরুষ।’