নিউজিল্যান্ডের যে মানুষটি মুস্তাফিজকে চেনেন না

ফ্রান্সের কানে নিউজিল্যান্ডের সিনেমার আইডিয়া ফেরিওয়ালা মাইকেল থর্প। ছবি: প্রথম আলো
ফ্রান্সের কানে নিউজিল্যান্ডের সিনেমার আইডিয়া ফেরিওয়ালা মাইকেল থর্প। ছবি: প্রথম আলো

‘আমার আইডিয়াটা যাকে বলে ঝড় তুলে দেবে, বুঝেছ?’ খানিক নিচুগলায় বললেন ভদ্রলোক। বটে? কী সেই ধন্বন্তরি আইডিয়া? জবাবে মাইকেল থর্প নামের মানুষটা মুখে বিচিত্র একটা ভঙ্গি করলেন। যার মানে হতে পারে একটাই ‘এখন তো বিশ্বাস করছ না। সময় হলে বুঝবে বাছা! আমার আইডিয়ার কেরামতি!’

১৪ মে ২০১৬। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের পাশের চত্বরে বসেছি খানিক জিরোব বলে। পাশেই ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবের সুবিখ্যাত লালগালিচা জমজমাট। রাস্তার দুই পাশে অপেক্ষমাণ জনতার ভিড়ে আরও একবার উল্লাস ধ্বনি উঠল। তার মানে গালিচায় পা রেখেছেন আরও একজন সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র তারকা। সেদিক ঘুরে আসা দরকার। কিন্তু তার আগে নিউজিল্যান্ডের এই সিনেমার আইডিয়ার ফেরিওয়ালার ব্যাপারটা যে একটু তলিয়ে দেখতে হয়।

 ‘আপনার সিনেমার আইডিয়াটা কী আসলে?’ মাইকেলের পাশে রাখা স্ট্যান্ডটা খেয়াল করে দেখতে দেখতে তাকে আবার জিজ্ঞেস করি। স্ট্যান্ডের সঙ্গে সাঁটা পোস্টারের মাথায় বড় করে লেখা বেন ব্রাউনস ফ্লাইং মেশিন। ছবিতে বিচিত্র এক যন্ত্রে চড়ে উড়ে যাচ্ছে সোনালি চুলের কিশোর। বোঝাই যাচ্ছে, থর্প অর্থায়নের অভাবে যে সিনেমাটি তৈরি করতে পারছেন না সেটি এক কিশোরের অভিযানের গল্প। কী সেই গল্প?

‘গল্পটা অসাধারণ। জর্জ লুকাস, স্টিভেন স্পিলবার্গদের মতো নির্মাতা-প্রযোজকদের মাথা ঘুরে যাবে আমার সিনেমার আইডিয়াটা শুনে।’ মাইকেলের কণ্ঠে গভীর আত্মবিশ্বাস।

-কিন্তু আপনার ছবির আইডিয়াটা ওরা জানবে কী করে?

 ‘জানবে। আলবৎ​ জানবে। মনে করো, এই যে এখান দিয়ে যদি হেঁটে যান স্পিলবার্গ। আমাকে দেখে ফেললেন। হতেও তো পারে, তা-ই না? বলো, হতে পারে না?’

থর্পের কথাটা আমাকে মানতেই হলো। হতে তো পারেই। জর্জ লুকাস কোথায় জানি না। স্পিলবার্গ তো কানেই আছেন। দুনিয়ায় কত অভাবনীয় ঘটনা ঘটে!

মাইকেলের সঙ্গের স্ট্যান্ডটার এক জায়গায় কিছু বিশেষ ধরনের বোতাম। জানতে চাইলাম, ‘যন্ত্রটা কি সত্যিই ওড়ে?’

এবার তিনি নিজেই হেসে ফেললেন। ‘না, ওটা ওড়ে না। ওটা বানিয়েছি শুধু লোকজন দেখে মজা পাবে বলে।’ কল্পনাবিলাসী নির্মাতা মাইকেল থর্প নিজেই খেটেখুটে তৈরি করেছেন তাঁর ছবির সেই ফ্লাইং বা উড়ন্ত মেশিনের নমুনা। পোস্টারের আঁকাআঁকি সেগুলোও তাঁর। সবকিছু বগলদাবা করে কানের মার্শে দু ফিল্মে (সিনেমা বাজার) যোগ দিতে এসেছেন তাঁর সিনেমার আইডিয়া নিয়ে।

আমার লেখার তাড়া। কিন্তু যতই তাড়া থাকুক নিউজিল্যান্ডের মানুষের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলাপ না করলে হয়? থর্পকে তাই খোঁচা দিতে ভুলি না, ‘তোমাদের ক্রিকেট দল কিন্তু আমাদের কাছে নিয়মিত হারে। মনে আছে তো। সেবার ঢাকায়?’

‘মোটেও না, বিশ্বকাপে তোমাদের আমরা হারিয়েছি।’ থর্প সঙ্গে সঙ্গে জোর প্রতিবাদ জানাল।

-সামনের বার মনে হয় না তোমরা পারবে। এখন আমাদের আছে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ।

‘কী নাম বললে? মুস্তাফিজ?’

জি, মুস্তাফিজুর রহমান। লোকে তাঁকে এখন আদর করে ডাকে ফিজ।

মাইকেল থর্প খানিক অবাক হয়ে শুনল। ‘ও আচ্ছা। খুব ভালো বোলিং করে বলছ?’

বুঝলাম থর্প নিজ দেশের ক্রিকেটারদের গুণমুগ্ধ হলেও আমাদের মুস্তাফিজ কী জিনিস সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। খানিক মায়াই হলো তাঁর জন্য। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের জন্যও। তারা সামনে আবার কবে যেন আসছে ঢাকায়?

মাইকেল থর্পের বেন ব্রাউনস ফ্লাইং মেশিন ছবির গল্পটা এক কিশোরকে নিয়ে। এই কিশোর একসময় জানতে পারে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনি তার বাবার। বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে বের হয় সে। তার সহায় হয় একটি উড্ডয়ন যন্ত্র। মিস্টার স্টিভেন স্পিলবার্গ আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?