হঠাৎ বৃষ্টি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘তোমার ঠান্ডার সমস্যা, আবার ভিজছ কেন? যাও, ঘরে যাও, কাপড় পাল্টে মাথা ভালো করে মুছবে! ঠান্ডা লাগলে তোমার কিন্তু খবর আছে।’
‘মানে?’
‘মানে, তুমি তোমার না, তুমি শুধু আমার। নিজের জন্য না, আমার জন্য নিজেকে ভালো রাখবে, বুঝেছ?’
‘জো আজ্ঞা, জানু পাখি।’
এই হলো ফয়সালের জানু পাখি। পরিচয়ের আট বছরের মাঝেও তাদের দেখা হয়নি। নিজের নাম বলেনি বলে ফয়সাল কখনো জানু পাখি, কখনো লক্ষ্মী বউ, কখনো আবার পাগলি বলে ডাকে। মিসড কলেই তাদের পরিচয় হয়। হয়ে যায় জানু পাখি। নিজের পছন্দমতো নামে ফেসবুক খুলে তাকে পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই চলতে থাকে তাদের দিনগুলো।
মাস ছয়েক আগে হঠাৎ করে মেয়েটির মোবাইল নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। কী কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ফয়সাল জানে না। প্রতিদিন কতবার ফোন দেয় তাও জানে না। কিন্তু এটা বোঝে নম্বরটি বন্ধ আছে। ফেসবুকেও আর বসে না। চিন্তায় অনেকটা পাগলের মতো হয়ে যায় ফয়সাল।
তিনতলা বাসার দোতলায় থাকে ফয়সাল। নিচতলা আর তিনতলায় ভাড়াটেরা থাকেন।
বৃষ্টি গেছে থেমে, এমন সময় মোবাইলটা বেজে ওঠে। ধরতেই ও পাশ থেকে বলে ওঠে, ‘কিরে শালা, তোর জন্য প্যান্ট ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আর তোর আসার নাম নেই।’
‘তুই কোথায়?’
‘আয়, ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে আছি। এখনই আয়।’
তড়িঘড়ি করে নিচে নামতেই ফয়সালের ধাক্কা লাগে এক তরুণীর সঙ্গে। টুস করে শব্দ হয়। সরি বলে, দুই পা এগিয়ে যায় ফয়সাল। আড় চোখে খেয়াল করে দেখে মেয়েটির মোবাইলটা পড়ে গেছে। কিন্তু, মেয়েটি ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কী মনে করে মেয়েটিকে মোবাইলটা তুলে দিয়ে বলে, ‘সরি, এই নিন আপনার মোবাইল।’
মেয়েটি ধন্যবাদ, বলতেই ফয়সালের মনে লাগে জোর ধাক্কা।
আসছি বলেই, মেয়েটি হাঁটতে থাকে। চোখে সানগ্লাস পরা তাই কিছু বুঝতে পারে না ফয়সাল। এমন সময় ছোট্ট একটি ছেলে আসে। ‘ফুপি সরি। চলো’। কথাটি বলেই মেয়েটির হাত ধরে।
‘হাই আংকেল, আমি ফয়সাল, দোতলায় থাকি। তুমি...’
‘শাওন, আমরা তিন তলায় থাকি।’
‘দেখা হবে’ বলেই চলে যায় ফয়সাল। কিন্তু মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে ধন্যবাদ শব্দটি। কে এই মেয়ে, কোথায় থাকে? ওর নম্বরটা কীভাবে নেওয়া যায় মনে করতে করতে বন্ধুকে ফোন দেয়। ‘হ্যালো, সরি, আজ আসতে পারছি না, পরে কথা হবে’ বলেই লাইনটি কেটে দেয়।
অনেক দিন পর আজ ছাদে পা দিল ফয়সাল। ভালো লাগছে কেন আজ? আবারও সেই নম্বরটিতে ডায়াল করে। সেই কথাই শোনা যায়। ফয়সাল আকাশ আর মেঘের খেলা দেখতে থাকে আর ভাবে কে এই মেয়ে।
ভোর কখন হয়েছে বুঝতেই পারেনি ফয়সাল। যখন ঘুম ভাঙল তখন অনেক রোদ বারান্দায়। বিছানা ছেড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালটাকে দেখে। এমন সময় ওপর থেকে কী যেন নিচে পড়ল। ওপর দিকে তাকিয়ে দেখল সেই মেয়েটি আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছে। নিচে কী পড়ল দেখার জন্য তাকাতেই দেখল মোবাইলটি খুলে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি নিচে যায় ফয়সাল। মোবাইল ঠিক আছে, শুধু কভারটা খুলে গেছে। কভার লাগাতে লাগাতেই হাজির হয়ে গেল ছোট্ট ছেলেটি।
‘তুমি?’
‘ফুপির মোবাইলটা পড়ে গেছে।’
‘এটা তোমার ফুপির মোবাইল? তোমার ফুপি রাজশাহীতে থাকে?’
‘তুমি জানলে কী করে?’
‘না, মনে হলো তাই...(সে জানত জানু পাখি রাজশাহীতে থাকে)! নাম কী তোমার ফুপির?’
‘মহুয়া।’
‘মহুয়া!’
‘হু, ফুপির চোখ ঠিক হবে কালকে। অ্যাক্সিডেন্টে চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বাবা বলেছে, ফুপি আবার দেখতে পাবে।’