তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো এবং পরবর্তী সময়ে একাধিক ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্টতর হচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে আমি প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে সেখানে নাশকতা ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার, আস্তে আস্তে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। আপনারা জানেন, সিলেটের ট্রেনে আগুন লেগেছে টয়লেট থেকে, তারপর দাঁড়ানো অবস্থায় খুলনাগামী ট্রেনে আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এগুলোর সঙ্গে নাশকতার যোগ আছে। আসলে সারা দেশে যে আনন্দ-উল্লাস, তা ম্লান করার জন্য, দেশে একটি আতঙ্ক তৈরি করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’
যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গুজব রটিয়েছে, বিভিন্ন সময় গুজব রটায়, তারাই এই কাজগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমে সেটি আরও স্পষ্ট হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এগুলোর সঙ্গে নাশকতার যোগ আছে।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি যাতে সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেটি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। কিন্তু বিএনপির লোকজন চায় না খালেদা জিয়া সুস্থ হোক। তিনি অসুস্থ থাকলে তাদের রাজনীতি করতে সুবিধা হয়। আজ দেখলাম, বিএনপির একজন নেতা এমনভাবে বক্তৃতায় বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া কাতরাচ্ছে; তাতে মনে হয়, তিনিই কাতরাচ্ছেন। বেগম জিয়াকে আগেও আমাদের দেশের চিকিৎসকেরা তাঁদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। সুতরাং এবারও তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
এর আগে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) পক্ষ থেকে সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে ছয় দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকপত্র হস্তান্তর করেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটকো সহসভাপতি বলেন, ‘অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদপত্রে যে ডিজিটাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে এটি পত্রিকার ডিক্লারেশনের আইনের বরখেলাপ। এমনকি এগুলো সম্প্রচার আইনেরও পরিপন্থী। পাশাপাশি যে অনলাইন নীতিমালা আছে, সেই নীতিমালাতেও এটির অনুমোদন নেই। যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।’
ইকবাল সোবহান বলেন, ‘দুই দিন আগে আমাদের সম্পাদক পরিষদ একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাদের বিবৃতি সংবাদপত্রের পক্ষে, কিন্তু ব্যাখ্যা সত্য নয়। পত্রিকার ডিক্লারেশন দেওয়া হয় পত্রিকা প্রকাশ করার জন্য। পত্রিকার যে অনলাইন আছে, সে অনলাইনে পত্রিকাতে যে সংবাদ আছে, ছবি আছে, সম্পাদকীয় আছে, মতামত আছে, সেগুলো ই-পেপার হিসেবে আপলোড করতে পারে এবং সারা দিন ইচ্ছা করলে ২৪ ঘণ্টায় সংবাদ আপলোড করতে পারে। কিন্তু কোনো ডিজিটাল কনটেন্ট আপলোডের কথা এই ডিক্লারেশনের মধ্যেও নেই, অনলাইনের আইনের মধ্যেও নেই।’
উদাহরণ দিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘সিডান গাড়ির অনুমতি নিয়ে কি আমি বাস-ট্রাক চালাতে পারি? অথবা বাস-ট্রাক চালানোর অনুমতি নিয়ে আমি তো লঞ্চ-স্টিমার চালাতে পারি না। তাই আমি মনে করি, সবারই আইন মেনে চলা উচিত। আজ লিখিতভাবে আমরা অ্যাটকোর পক্ষ থেকে আমাদের দাবিগুলো দিতে চাচ্ছি। আশা করি, মন্ত্রণালয় এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে।’
দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অ্যাটকো বিভিন্ন বিষয় আমাদের অবহিত করে। আজ তারা তাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে আমাদের দিয়েছে। আমরা আইনকানুন ঘেঁটে প্রচলিত বিধিবিধানে দেখেছি যে পত্রিকার অনলাইন ভার্সনকে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পত্রিকার কনটেন্টই তারা আপলোড করবে। আর অনলাইন সংবাদ পোর্টাল এবং পত্রিকার অনলাইন ভার্সন টক শো কিংবা নিউজ বুলেটিন প্রচার আইন অনুমোদিত নয়। অ্যাটকোর অন্যান্য দাবি মন্ত্রণালয় পরীক্ষা করে দেখছে।