অগ্রযাত্রায় বাধা আমলাগোষ্ঠীর অশুভ চক্র: মেনন
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা অতিধনী ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠীর নেক্সাস বা অশুভ চক্র। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১–২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মেনন এই মন্তব্য করেন।
মেনন বলেন, কোভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা বিশ্বে নতুন। কিন্তু এতে বিমূঢ় না হয়ে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় প্রথমেই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ায় বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দেশে অতিধনী সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের পাকচক্রে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রয়াস অনেকখানিই নিষ্ফল হয়েছে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক খবরদারির কারণে বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি।
মেনন বলেন, ‘করোনা রোধে স্বাস্থ্য খাতে গৃহীত ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ নয়, আমলাতান্ত্রিক নির্দেশে পরিচালিত হওয়ায় কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও আমরা দেখেছি। চোখের সামনে দেখেছি, মাস্ক, পিপিই, করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালজালিয়াতি। একজন শাহেদ, একজন সাবরিনা গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু যাঁরা সচিত্র চুক্তি স্বাক্ষর করলেন, কাজ দিলেন তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই মাস্ক-পিপিই জালকারী প্রতিষ্ঠানই এখনো স্বাস্থ্য খাতের সর্ববৃহৎ সরবরাহকারী।’
মেনন বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রথমেই টিকা সংগ্রহ করে সফলভাবে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু সরকারি ক্রয়নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকারি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার আগেই মার্চ মাসে ৫০ লাখ ডোজের জায়গায় ২০ লাখ ডোজ এসেছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থে একক উৎসের ওপর নির্ভরতা, ওই স্বার্থবুদ্ধিতা থেকে চীন ও রাশিয়ার টিকা, এমনকি দেশের বায়োটেকের টিকা ট্রায়াল করতে দেওয়া হয়নি। ফলে এখন পুরো টিকা কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, করোনাকালে আড়াই কোটি মানুষ, যাঁরা দরিদ্র হয়ে গেলেন, বাজেটে তাঁদের জন্য কিছু করা হলো না। তার মধ্যে গরিব মানুষ যেমন আছে, তেমনি আছে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার বাজেট ব্যবসাবান্ধব। প্রকৃতপক্ষে এটা ব্যবসায়ীবান্ধব। তা–ও ক্ষুদ্র বা মধ্য উদ্যোক্তা নন, বড়দের জন্যই সব ব্যবস্থা।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারী ইউএনওর বিকল্প খোঁজার পরামর্শেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেনন।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শিরিন আকতার বলেন, সমাজে ধনবৈষম্য বাড়ছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং কৃষকদের নগদ সহায়তার পাশাপাশি কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠন করে কৃষকদের পাশে থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সরকারি দলের সাংসদ ফারুক খান বলেন, এবারের বাজেট অনন্য, অসাধারণ বাজেট। প্রতিটি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। এই বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ রাজস্ব সংগ্রহ। করোনায় লকডাউনে ব্যবসায় স্থবিরতা, চাকরিতে ছাঁটাই ইত্যাদি কারণে এটা চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো বিভিন্ন কারণে সঠিক সময়ে হচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহির আওতায় আনা গেলে এটি সম্ভব।
জাতীয় পার্টির সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, বৃহৎ বাজেট, বৃহৎ ঘাটতি। এটি টপ ডাউন বাজেট। আমলাতান্ত্রিক বাজেট। এই বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে ৩৫০ জন সাংসদের সক্রিয় ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, করোনাকালে প্রায় আড়াই কোটি নতুন দরিদ্র মানুষ যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এই বাজেটে তাদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ শাজাহান খান, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।