আবার নির্বাচন চাইলেন মির্জা ফখরুল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আবারও প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচন চাইলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘নিরপেক্ষ একটি সরকারের’ অধীনে এই নির্বাচন চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির মানববন্ধন থেকে ফখরুল এ দাবি জানান।

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের পর আজ বুধবার প্রথম কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করল দলটি।

বেলা ১১টায় মানববন্ধন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মানববন্ধন শুরু করেন। এ সময় ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আজকের মানববন্ধনে বিএনপির নেতা-কর্মীর সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম ছিল। নেতা-কর্মীরা সবাই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন, কেউ রাস্তায় নামেননি।

আজকের মানববন্ধন ঘিরে পুলিশের মধ্যেও একধরনের ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। দাঙ্গা পুলিশের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ছাড়া কোনো জলকামান, প্রিজন ভ্যান দেখা যায়নি। মানববন্ধন থেকে কোনো আটকের খবরও পাওয়া যায়নি।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নেওয়া হয়। নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা পান মাত্র আটটি আসন। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে। তারা নির্বাচন বাতিল ও নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি জানায়। আজ বিএনপির মানববন্ধনে সেই দাবি আবার উঠল।

মানববন্ধনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে একটি সংসদ বসতে চলছে, যে সংসদ জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব করে না। ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে, তা ভোট ডাকাতির ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সম্পন্ন ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগ সংসদে দখলদারির সরকার বসিয়েছে।

ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচনের আগে থেকে জনগণ যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, তার এক বছর আগে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। একইভাবে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার সব ষড়যন্ত্র সরকার পাকাপোক্ত করেছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: দীপু মালাকার
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: দীপু মালাকার

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে আরেকবার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য দখলদারির সংসদ কায়েম করেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে বলেছি, আমরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। তখনই আমরা বলেছিলাম, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের রায়কে নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। আজকে আবার সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করছি। আমরা বলছি, এ নির্বাচনকে বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দেন। জনগণ যেন রায় দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করুন।’

পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার আগে খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। তিনি সংসদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২৯ তারিখ রাতে প্রশাসন, ‘আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী’ ভোট ডাকাতি করেছে। এ দেশের জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ৩০ তারিখ কোনো নির্বাচন হয়নি। এটি তথাকথিত সংসদ। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে তথ্যভিত্তিক একটি শ্বেতপত্র বের করা হবে। তাতে মানুষ দেখবে জনগণ ভোটাধিকার হারিয়েছে। তিনি দাবি করেন, ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। প্রশাসন-পুলিশ নির্বাচন করেছে, জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বাতিলের দাবি জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।