আমৃত্যু মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন আবদুল হক

কমিউনিস্ট নেতা আবদুল হকের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ছবি: সংগৃহীত

কমিউনিস্ট নেতা আবদুল হক জনগণের স্বার্থকে একমাত্র কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আমৃত্যু তিনি মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। বর্তমানে দেশে যে বৈষম্য বাড়ছে, তা থেকে উত্তরণে এই বাম নেতার দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে।

আবদুল হকের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আবদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।    

আলোচনা সভায় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনে আবদুল হকের যে অবদান, তা অবশ্যই স্মরণ করতে হবে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এটা স্মরণ করতে হবে যে বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের বড় অংশ লোভে পতিত হয়েছেন। যেভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন, যেভাবে শাসকশ্রেণিকে শক্তিশালী করেছেন; তার বিপরীত ধারায় যাঁরা একনিষ্ঠভাবে ছিলেন, তাঁরা তাঁদের জীবনকে বিপ্লবী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য একনিষ্ঠভাবে নিয়োগ করেছেন।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আবদুল হক তাঁর জীবনের শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন সমাজে বৈষম্য চলছে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কৃষক, শ্রমিকদের কাছে ছুটে বেড়িয়েছেন। আমৃত্যু তিনি মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন।

আবদুল হক এ দেশের লড়াকু জনগণের কাছে ‘এখনো পছন্দের’ উল্লেখ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, মন্বন্তরের সময় আবদুল হক বাবার গোলার ধান বিলিয়ে দিয়েছিলেন। দেশে বৈষম্য বাড়ছে এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য আবদুল হকের দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহসভাপতি খলিলুর রহমান খান বলেন, কৃষক–শ্রমিকদের কীভাবে সংগঠিত করতে হবে এবং কীভাবে অধিকার আদায় করতে হবে, তা দেখিয়ে গেছেন আবদুল হক। জনগণের স্বার্থকে একমাত্র কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। মুক্তির জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব দরকার। এ প্রচেষ্টা তিনি আমৃত্যু করে গেছেন।

আবদুল হক এ দেশের মানুষের শোষণমুক্তির প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বলে মনে করেন কবি হাসান ফকরী। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিপতি ও বুর্জোয়াদের স্বাধীনতাকে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা মনে করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন এই বাম নেতা।

সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি বিশ্বনাথ রায় বলেন, আবদুল হকের সমাজ পরিবর্তনের ধারণাকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সমাজকে ভেঙে ফেলতে হবে। শ্রমিকশ্রেণির রাজত্ব কায়েম করতে হবে।

গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা জামাল বলেন, আবদুল হকের চেতনা ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে। তিনি আন্দোলন–সংগ্রামের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

জাতীয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কামরুল হক বলেন, এ দেশের শোষিত মানুষের মুক্তিসংগ্রামের পথপ্রদর্শক ছিলেন আবদুল হক। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানের কঠিন সময় অতিক্রম করতে হবে।

ব্যক্তিপূজায় আবদ্ধ না থেকে আবদুল হকের আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ জায়গায় জোর দিতে হবে বলে মনে করেন ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান কবির। এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আবদুল হকের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে বিভিন্ন সংগঠন।