আ.লীগের লোকদের পকেট ভরতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: জোনায়েদ সাকি

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের এক বিক্ষোভ সমাবেশে জোনায়েদ সাকি
ছবি: প্রথম আলো

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পকেট ভরতেই গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বর্তমান সরকার জনগণের পকেট কাটছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকারকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। তাদের হটানোই মানুষের সামনে এখন প্রধান কর্তব্য।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। ‘গ্যাস-পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা এবং ভোজ্যতেল-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে’ গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা জেলা কমিটি এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সরকারের উদ্দেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে আপনাদের গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ফিরিয়ে নিতে হবে। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব। আগামী ২ মার্চ গণসংহতি আন্দোলন জেলায় জেলায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ডিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে। ৩ মার্চ ঢাকায় আমরা সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করব। এতেও কাজ না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অপরাপর দলসহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যাব।’

দেশে গণবিরোধী তৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকারের মন্ত্রীরাও এখন কিছুটা নমনীয় সুরে স্বীকার করছেন যে জিনিসপত্রের দাম বেসামাল। তাঁরা সামাল দিতে পারছেন না সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে। এই সিন্ডিকেট কারা? এই সরকারই গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। গ্যাস যে দামে বিক্রি হয়, তাতে লোকসান হয় না। গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতেও কোনো লোকসান হয় না। তবু দাম বাড়াতে হচ্ছে, তার কারণ, নিজেদের পোষ্য কিছু লোককে ব্যবসা দেওয়ার নামে তারা তেলভিত্তিক যে কুইক রেন্টাল প্রকল্পগুলো বানিয়েছিল, সেগুলোর মাধ্যমে তাদের পকেট ভরার জন্য।
জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করে বলেন, এই করোনাকালে মানুষের পেটে ভাত নেই, আর সরকার পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, পানি বিক্রির টাকায় উৎপাদন খরচ ওঠে না। এই খরচের কোথায় অপচয় হচ্ছে, কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে, কোথায় ছয় লাখ টাকা বেতন দাবি করা হচ্ছে, এসব বন্ধ করতে হবে। তাহলেই উৎপাদন খরচ কমবে।

কোনোভাবেই শেখ হাসিনার অধীনে আর নির্বাচন হবে না বলে শাহবাগের সমাবেশে মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, যে ক্ষমতাব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জমিদারিতে পরিণত করে, তা বদলাতে হবে। সংবিধান সংস্কার করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা জনগণের হাতে আনতে হবে। জবাবদিহিমূলক সরকার ও ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে দুটি—নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালটে ভোট গ্রহণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় সাংবিধানিক কাঠামোর সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা। এর জন্য জনগণের মধ্যেও নতুন জাগরণ দরকার।

সরকার এখন নার্ভাস বলে মন্তব্য করেন সাকি। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, পুলিশের গুলি দিয়ে মানুষকে আর ঘরে রাখা যাবে না৷ গুম-খুন-ক্রসফায়ারের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। যে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ভিত্তিতে সরকার বাংলাদেশকে একটা খুনি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, তাদের পায়ের তলার সেই মাটি সরে গেছে। সরকার এখন নার্ভাস। গদি রক্ষার জন্য মানুষের করের পয়সা দিয়ে তারা বিদেশে লবিস্ট-উকিল নিয়োগ করে বিদেশিদের পায়ে ধরছে। এই সরকার জনগণের পেটে লাথিই মারছে না, সারা দুনিয়ার কাছে দেশের মাথা হেট করছে।’
এই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয় উল্লেখ করে গণসংহতির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের নাটক চলছে। যাঁরা নাটকে অংশ নিতে চান, নিতে পারেন। জনগণ এই নাটকে অংশ নেবে না। এই সরকারের নির্বাচন কমিশনের অধীনে জনগণ নির্বাচনে যাবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা জেলা শাখার আহ্বায়ক বাচ্চু ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলবাসনাইন বাবু, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে হাতিরপুল পর্যন্ত মিছিল করেন গণসংহতির নেতা-কর্মীরা।