কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির দুই পক্ষের কোন্দল তীব্র হয়েছে। এবার তা আদালত ও থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও তাঁর বিরোধীদের মধ্যে কয়েক মাস আগে এই কোন্দল শুরু হয়।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর শহর বিএনপির মাহমুদুল হাসান-সমর্থিত অংশের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন জেলা বিএনপির চার নেতাকে বিবাদী করে আদালতে মানহানির মামলা করেছেন। অপর দিকে মাহমুদুল হাসানের বিরোধী অংশের আহ্বায়ক সাদেকুল আলম জেলা বিএনপির আট নেতাকে মাহমুদুল হাসান হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইল সদর থানায় ২৭ অক্টোবর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
শহর বিএনপির দুই অংশের নেতা-কর্মীরা জানান, গত ৬ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহর বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনকে আহ্বায়ক ও শাহীন আকন্দকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। মাহমুদুল হাসানবিরোধীরা এই কমিটিকে মাহমুদুল হাসানের পকেট কমিটি অবহিত করে এর বিরুদ্ধে দলের বিভিন্ন স্তরে আন্দোলন শুরু করেন। মাহমুদুল হাসান-সমর্থিত আহ্বায়ক কমিটি গত সেপ্টেম্বরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৮টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল হাসানবিরোধীরা শহর বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন ও সদস্যসচিব শাহিন আকন্দকে তাঁদের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুল আলমকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লিখিত বক্তব্যও দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯ অক্টোবর টাঙ্গাইল জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে সাদেকুল আলম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ছাইদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক আতাউর রহমান ও হাসানুজ্জামিল শাহীনকে বিবাদী করে মামলা করেন। মামলায় জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে বিবাদীরা তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্মানহানি করেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেন এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য জেলা বিএনপির সভাপতিকে নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ আযম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটির কথা আমি শুনেছি। তবে কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি। তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
২৭ অক্টোবর রাতে শহর বিএনপির অপর অংশের আহ্বায়ক সাদেকুল আলম বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, মাহমুদুল হাসান জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। তাই তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতাদের পাশ কাটিয়ে তাঁর সঙ্গে জাতীয় পার্টি থেকে আসা লোকদের প্রাধান্য দেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে তাঁর লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাঁর পকেট কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে মাহমুদুল হাসানের ষড়যন্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের হুমকিতে সাদেকুল আলম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ছাইদুল হক এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসানুজ্জামিল শাহীন, আতাউর রহমান, দেওয়ান শফিকুল ইসলাম, আবুল কাশেম, কাজী শফিকুর রহমান ও মাহমুদুল হকের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাই তাঁরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছেন।
ওই আট নেতাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য মাহমুদুল হাসানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর সমর্থক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে কতিপয় নেতা জিডি করেছেন।