কর্মপন্থা ঠিক করতে আরও বৈঠক করবে বিএনপি

বিএনপির দলীয় পতাকা
ফাইল ছবি

দলের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব যে ধারাবাহিক বৈঠক করছে, তা এখানেই শেষ হচ্ছে না। দলীয় সূত্র জানায়, এবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে, যাতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণে সবার মতামতের প্রতিফলন থাকে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তৃতীয় দিনের বৈঠক শেষে দলের চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার তাঁদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে আরও কয়েকটি সভা করা হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ হিসেবে দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের কার্যনির্বাহী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় বাকি রয়েছে এবং জেলা পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিদের নিয়ে মিটিং করার কথা আছে। পরে পেশাজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করার কথা রয়েছে।’

বৈঠকের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যথারীতি বিকেল চারটায় দলের চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, উলামা দল ও মৎস্যজীবী দলের সভাপতি, সম্পাদকসহ ৯২ জন কেন্দ্রীয় নেতা অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে মতামত জানান ২৬ জন নেতা।

এ নিয়ে গত তিন দিনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মিলে ২৪৯ জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে ১১২ জন নেতা আগামী নির্বাচন, আন্দোলনসহ নিজ দল বিএনপি এবং ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নানা মতামত জানান। প্রায় সবাই নির্দলীয় সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত জানান।

তবে আগের দুদিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় এলাকার চিত্র ছিল ভিন্ন। বৈঠক চলাকালেই কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের কয়েক শ নেতা-কর্মী মিছিল করেন। তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের পরোয়ানা তুলে নিতে নানা স্লোগান দেন।

বৈঠকে ছিলেন ছাত্রদলের ফজলুর রহমান, ইকবাল হোসেন, কাজী রওনকুল ইসলাম, যুবদলের সাইফুল আলম, সুলতান সালাহউদ্দিন, মোরতাজুল করিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক প্রমুখ।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় সব নেতাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শক্ত আন্দোলন করার পক্ষে মত দেন। এর জন্য মূল দল, অঙ্গ দলসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জবাবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বলা হয়, মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আন্দোলনের কাজটি করতে হবে। যিনি এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তিনি যেন পদ আঁকড়ে না থেকে নিজে থেকে সরে যান।

তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মকৌশল ঠিক করার লক্ষ্যে নেতাদের মতামত জানতে মঙ্গলবার থেকে এই ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হয়। প্রথম দিনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, দ্বিতীয় দিনে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদক পদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়, যা চলে চার ঘণ্টা। দ্বিতীয় দিনে বৈঠক হয় বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। গতকালের বৈঠক চলে সাড়ে চার ঘণ্টা।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এটি তারেক রহমানের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বৈঠকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কী করণীয় এবং আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন এবং নেতাদের মতামত শুনেছেন।’ তিনটি বৈঠকে কী কী পরামর্শ এসেছে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা সময়মতো জানতে পারবেন। তখন আমরাই আমাদের প্রয়োজনে আপনাদের জানাব।’