চাপে বিলুপ্তি, ‘কৌশল’ থেকে আহ্বায়ক কমিটি

নানামুখী চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তবে সংগঠন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় গভীর রাতে আহ্বায়ক কমিটি।

  • রোববার রাত ১১টায় কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত।

  • রাত ১২টায় ‘শিগগির কমিটি’ করার ঘোষণা আরেক পক্ষের।

  • রাত ২.৩০টায় বাবুনগরীর নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জুনায়েদ বাবুনগরী

তরুণ আলেম আলতাফ হোসাইন গত সপ্তাহে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এমন পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে যে জুনায়েদ বাবুনগরী নিজে থেকেই হেফাজত ছেড়ে যাবেন। হুবহু তা না হলেও গত রোববার রাতে হঠাৎ হেফাজতে ইসলামের সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।

কিন্তু কী কারণে জুনায়েদ বাবুনগরী আকস্মিকভাবে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন, তা হেফাজতের নেতৃস্থানীয় অনেকেরই অজানা। এ নিয়ে কোনো কোনো নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।

আলতাফ হোসাইনের সঙ্গে কথা হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। গতকাল সোমবার সকালে তাঁর সঙ্গে আবার কথা হয়। তিনি আগের বক্তব্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনাকে বলেছিলাম না, তখন হয়তো ভেবেছিলেন, আমি পাগলামো করছি।’

জুনায়েদ বাবুনগরীকে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিতে হলো কেন? জবাবে আলতাফ হোসাইন বলেন, চাপ সামলাতে পারেনি।

আলতাফ হোসাইন প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা। তাঁর সঙ্গে সরকারি কোনো কোনো মহলের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। তিনি হেফাজতের শাহ আহমদ শফীর কমিটিতে সহকারী মহাসচিব পদে ছিলেন। বাবুনগরীর কমিটিতে (বিলুপ্ত) তাঁকে রাখা হয়নি। বর্তমানে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী সমর্থিতদের নিয়ে হেফাজতে ইসলাম পুনর্গঠনের যে তৎপরতা চলছে, তার সঙ্গেও আলতাফ যুক্ত আছেন।

তবে জুনায়েদ বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, প্রশাসনিক নানামুখী চাপের পাশাপাশি ঢাকায় সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের একটি অংশ থেকেও চাপ ছিল হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়ে। এ ছাড়া সর্বশেষ সংগঠনের হাটহাজারীর নেতাদের একটা অংশও গ্রেপ্তার থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন করে মামলার চাপ। ২৬ মার্চের সহিংসতার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার হাটহাজারী থানায় আরও তিনটি মামলা হয়। তাতে হেফাজতের কমিটিতে থাকা হাটহাজারীর অনেককে আসামি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় বাবুনগরীকেও আসামি করা হয়।

যদিও বাবুনগরী এক সপ্তাহ আগে সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘নেতাদের তালিকা দিন, প্রয়োজনে তাঁদের নিয়ে জেলে যাব।’ হঠাৎ সেই অবস্থান থেকে সরে এসে তিনি রোববার রাত ১১টায় কমিটি বিলুপ্ত করেন। এক ঘণ্টা পর হেফাজতে বাবুনগরীদের বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা শিগগির নতুন কমিটি করবেন। এরপর রাত আড়াইটায় বাবুনগরীদের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে রোববার বিকেলে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন। এদিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় আল-হাইআতুলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাইআতুল উলয়ার এ সিদ্ধান্তের প্রভাব এবং চাপও পড়েছে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তির ক্ষেত্রে। যদিও হাইআতুল উলয়া মূলত কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। এর চেয়ারম্যান যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। তিনি ১৩ এপ্রিল সরকার বরাবর একটি চিঠি দেন। তাতে তিনি সরকারপ্রধানের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া নানা মামলায় আটক নিরীহ আলেম ইমামদের মুক্তি ও ঈদের পর মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার দাবি করেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইচ্ছানুযায়ী হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর পেছনে হাটহাজারী এলাকার সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং হেফাজতের কমিটিতে প্রভাবশালী স্থানীয় দুজন নেতারও সংশ্লিষ্টতা ছিল। ওই দুই নেতাও গ্রেপ্তারের তালিকায় ছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরা সাংসদের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতা চান। তখন হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

হেফাজতের একটি সূত্র জানায়, কমিটি বিলুপ্ত না হলে হাটহাজারী মাদ্রাসায় গ্রেপ্তার অভিযান এবং হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হতে পারে বলেও তাঁদের ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। আমি একটু ভূমিকা রেখেছি। আসলে এ ধরনের ঘটনায় লং টার্মে (দীর্ঘ মেয়াদে) কারও জন্যই ভালো হয় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (হেফাজত) বুঝতে পেরেছে, এ জন্য তারা কমিটি ভেঙে দিয়ে একটা অ্যাডহক কমিটি করতে চায়। বিষয়টি সেখানকার সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আমাকে জানিয়েছেন। আমি কেবল শুনে রেখেছি।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে হাটহাজারীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়তি মোতায়েন ছিল। সন্ধ্যার পর তৎপরতা বেড়ে যায়। হেফাজতের আমির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়ে ভিডিও বার্তা দেওয়ার পর মাদ্রাসা এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলে যায়।

অবশ্য হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব (বর্তমানে সদস্যসচিব) নুরুল ইসলাম জিহাদী যখন নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন, তাতেও ‘বিশেষ পরিস্থিতির’ কথা বলেন।

সেই বিশেষ পরিস্থিতিটা কী? জানতে চাইলে জুনায়েদ বাবুনগরী কোনো মন্তব্য করেননি। একই প্রশ্ন নুরুল ইসলাম জিহাদীকেও করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে বাবুনগরী জবাব দেবেন। আমি শুধু তাঁকে নকল করেছি।’

বিশেষ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা না দিলেও হেফাজত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গভীর রাতে আবার আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে কৌশলগত কারণে, সংগঠন হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে।

একই সূত্র আরও জানায়, অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন, এমন ব্যক্তিদের হেফাজত থেকে দূরে রাখার বিষয়ে সরকারি মহল থেকে চাপ আছে। এমন ব্যক্তিদের ভবিষ্যতে হেফাজতের কমিটিতে রাখা না রাখার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে কমিটি বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে।

কমিটি বিলুপ্ত, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আকস্মিক কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণায় হেফাজতের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর কমিটি থেকে বাদ পড়া মাঈনুদ্দীন রুহী কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানান। অন্যদিকে বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এমন ঘোষণায় নেতৃত্বের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আবদুর রব ইউসুফী রোববার রাতেই ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইলম, আমল ও তাকওয়া-তাহরাতের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, হেফাজতের কয়েক ডজন নেতা রিমান্ডে, পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী জেলে, শত শত নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার আতঙ্কে। এমতাবস্থায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী নেতৃত্বের কোয়ালিটি হারিয়েছেন। দ্রুত গজিয়ে ওঠা নেতৃত্বের এমন পরিণতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।’

যেভাবে আহ্বায়ক কমিটি

রোববার দিবাগত রাত আড়াইটায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী। তিনি বলেন, এ আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে এখন থেকে হেফাজতে ইসলামের যাবতীয় কার্যক্রম ও কর্মসূচি সুচারুরূপে পরিচালিত হবে।

এ কমিটিতে জুনায়েদ বাবুনগরী আহ্বায়ক ও নুরুল ইসলাম জিহাদী সদস্যসচিব। বাকি তিনজনের মধ্যে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান উপদেষ্টা, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সদস্য করা হয়। তাঁদের সবাই বিলুপ্ত কমিটিতেও ছিলেন। এর মধ্যে মিজানুর রহমান চৌধুরী ছাড়া বাকি চারজনই পরস্পর আত্মীয়।

হেফাজতে আহমদ শফীপন্থী হিসেবে পরিচিত সংগঠনের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আহ্বায়ক কমিটি হয়নি, ফটিকছড়ি সমিতি হয়েছে। কারণ, কমিটির চারজনই ফটিকছড়ির এবং তাঁরা একে অপরের আত্মীয়। এটা হচ্ছে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা।’

অবশ্য আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার আগে রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় মাঈনুদ্দীন রুহী হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা অতি শিগগির আল্লামা আহমদ শফীর নীতি-আদর্শের হেফাজতে ইসলাম গঠন করব। এই হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ইসলামের জন্য কাজ করবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাঈনুদ্দীন রুহীর এ ঘোষণার পর রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে হেফাজত নেতৃত্ব আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। শুরুতে এ কমিটি ছিল তিনজনের। পরে সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দুজন ‘অরাজনৈতিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব’ বলে উল্লেখ করেন নুরুল ইসলাম জিহাদী। তবে ‘দেওনার পীর’ নামে পরিচিত মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে সরকারি মহলে যোগাযোগ আছে বলে জানা গেছে। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতের সাম্প্রতিক বৈঠকেও ছিলেন।

সরকারের কঠোরতা, হেফাজতে নানা মত

হেফাজতের নেতারা মনে করছেন, হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারি মহলে আগে থেকে চেষ্টা ছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ঘটানোর কারণে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

হেফাজত নেতারা দাবি করছেন, ২৬ মার্চ হেফাজতের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল না। কিন্তু ওই দিন জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হওয়া মিছিলে হামলার ঘটনা না ঘটলে বিষয়টি এত দূর যেত না। এতে তৃতীয় কোনো পক্ষের হাত ছিল কি না, সে ব্যাপারে নেতারা সন্দিহান। এর ইঙ্গিত করে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হেফাজতের কোনো কর্মসূচিতে তৃতীয় কোনো শক্তি যদি সুযোগ নিয়ে থাকে, তাহলে সরকার তাদের খুঁজে বের করুক। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।’

গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ-সহিংসতা করে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের একটা অংশ মনে করেন, হেফাজতকে চাপে রাখার বিকল্প নেই। কারণ, ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরের অবস্থান ও ব্যাপক সহিংসতার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে হেফাজতে ইসলাম কিছুটা পিছু হটেছিল। এরপর সরকার হেফাজতের নেতৃত্বের একটা অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। এরপর হেফাজতের অনেক দাবি সরকার মেনেও নিয়েছিল। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাস করে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমান করা হয়। যার ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ‘শোকরানা মাহফিলের’ আয়োজন করে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি ছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেওয়া হয়।

তবে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনের নতুন কমিটিতে সরকারঘনিষ্ঠ নেতারা স্থান পাননি। এরপর সরকারের সঙ্গে হেফাজতের পর্দার অন্তরালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থান নিয়ে হেফাজত একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও দ্রুত সে অবস্থান থেকে সরেও আসে। সরকারের দিক থেকেও তখন কঠোর না হয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে গত মাসে নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে হেফাজতের অবস্থান এবং পরে সহিংসতার ঘটনায় সংগঠনটির ব্যাপারে সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এ চাপে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলেও তাঁদের মধ্যে একটা ফাটল ধরানো যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হেফাজতের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত উদাপরপন্থী বা সরকারঘনিষ্ঠদের আনার বিষয়েও তৎপরতা রয়েছে বলে জানা গেছে।