ছাত্রলীগ থাকতে বাংলাদেশে কেউ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে পারবে না: আল নাহিয়ান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ
ছবি: প্রথম আলো

কিছু ‘ভুঁইফোড় ও মৌলবাদী সংগঠন’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। এসব অপতৎপরতা মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন তাঁরা। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে ‘মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদীদের’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ছাত্রলীগ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ছাত্রলীগ থাকতে বাংলাদেশে কেউ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।

‘ক্যাম্পাসে ধর্মান্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতার প্রতিবাদ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবিতে’ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে অংশ নিয়ে আল নাহিয়ান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে৷ তাদের গা জ্বালাপোড়া করছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে উল্লেখ করে ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘এখানে এসে কোনো চুনোপুঁটি যদি মনে করে যে তারা অনেক কিছু করে ফেলেছে, সেটা ভুল ধারণা৷ সাধারণ ছাত্ররা এই মৌলবাদী গোষ্ঠীকে কখনোই মেনে নেবে না৷ ওই গোষ্ঠী শান্তির ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে আমাদের বিব্রত করে৷ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বেঁচে থাকতে বাংলাদেশে কেউ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে পারবে না৷’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু, সিনেট ও পরিবেশ পরিষদের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে কোনো ধরনের মৌলবাদী শক্তি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে পারবে না। এটি খুব ভালোভাবে জানতে পেরে মৌলবাদীরা একেক সময় একেক লেবাস ও ব্যানারের মাধ্যমে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চায়৷

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস৷ এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদের চর্চা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের অ্যাজেন্ডা নিয়ে সামনে এক ধরনের মোড়ক আর ভেতরে অন্য ধরনের পণ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে মৌলবাদী ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো৷’

এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে সনজিত বলেন, ‘প্রশাসন তাদের কোনো ধরনের বাধা দেয় না, তারা আমাদের সঙ্গে একধরনের আর তাদের সঙ্গে আরেক ধরনের কথা বলে৷ প্রশাসনের এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের হতাশ করেছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অসাম্প্রদায়িক ক্যাম্পাসে পরিণত করার ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে পদক্ষেপ আশা করে আমরা আশাহত হয়েছি৷’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে, সমাবেশ করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) কীভাবে হবে, সে বিষয়ে ফতোয়ার হিম্মত দেখানো হচ্ছে৷ এটি আমাদের হতবাক ও ক্ষুব্ধ করেছে৷

ডাকসুর সাবেক এই এজিএস বলেন, ডাকসু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি থাকবে না৷ সেই জায়গায় আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মান্ধ রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আমরা মনে করি, উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে৷’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি উৎপল বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ ও বেনজীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বরিকুল ইসলাম ও নাজমুল সিদ্দিকী বক্তব্য দেন৷ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন৷

যেসব কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় এই সমাবেশ

গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একটি কোর্সের উপস্থাপনা (প্রেজেন্টেশন) হওয়ার কথা ছিল৷ উপস্থাপনা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ওই কোর্সের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান একটি নোটিশ দেন। সেখানে উপস্থাপনায় সব শিক্ষার্থীকে ‘বাধ্যতামূলক মুখ খোলা রাখার নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছে দাবি করে এক যৌথ বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা৷ পরে অবশ্য ওই উপস্থাপনা স্থগিত করা হয়৷ তবে শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান বলেছেন, ওই নোটিশের কোথাও বাধ্যতামূলক শব্দটি লেখা হয়নি৷

এর আগে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) নামাজের স্থান বরাদ্দের দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন একদল ছাত্রী৷ এ সময় ওই ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি আসিফ মাহমুদসহ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন৷

এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে৷