দল ও সরকার আলাদা করার ভাবনা আ.লীগে

দলকে সরকার থেকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে এবং সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার শেষ মুহূর্তের চিন্তার ওপর। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, টানা সাত বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক এলাকায় উপদলীয় কোন্দল-রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দল সরকারের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে সাংগঠনিক তৎপরতা কম। এ জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে চাইছেন নীতিনির্ধারকেরা।
দল ও সরকার পৃথক করার এই প্রক্রিয়ায় মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ। বর্তমানে দলের সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলে ২৩ জন মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকার ও দল পৃথক করার ভাবনা বাস্তবে প্রয়োগ করতে গেলে যাঁরা দলে সুযোগ পাবেন না, তাঁদের মধ্যে দু-একজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হতে পারে। আবার মন্ত্রিসভার কাউকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, এক ব্যক্তিকে একসঙ্গে সরকার ও দলে দুটি পদে না রাখার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত আছে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। যেমন দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আবার তিনি মন্ত্রী না হলে, সরকার সম্পর্কে না জানলে দল চালাবেন কীভাবে? এসব বাস্তবতা বিবেচনা করেই আগামী সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। মন্ত্রিসভার রদবদলেও সার্বিক দিক বিবেচনা করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজেই দলীয় প্রধানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে তাঁকে পরবর্তী সম্মেলনে আবার সাধারণ সম্পাদক করা হলে মন্ত্রিসভা থেকে যেন বাদ দেওয়া হয় কিংবা দপ্তরবিহীন রাখা হয়। তাহলে তিনি দলীয় কাজে সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে দলীয় প্রধান এখন পর্যন্ত কোনো মনোভাব প্রকাশ করেননি।
ওই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, সভাপতি পদে পরিবর্তন দলের কেউ চান না এবং বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেটা সম্ভবও নয়। আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আসছে না বলে অধিকাংশ নেতার ধারণা। তবে সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।
দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৬ সালকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বছর হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মূল কেন্দ্রে রাখা হয়েছে আগামী মার্চের জাতীয় সম্মেলন। এর মাধ্যমে পরবর্তী তিন বছরের জন্য দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। যাঁরা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেবেন।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, দল ও সরকার দুটিতেই অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মূল বিষয় হচ্ছে যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিবেদন। এই তিন জিনিস যাঁর মধ্যে থাকে, তিনি দুটি দায়িত্বই পালন করতে পারেন। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকলে দল সরকারে হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, দল দুর্বল হলে সরকার দুর্বল হয়ে যায়। তাই দলকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
আগামী ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। দলের সভাপতিমণ্ডলীর চারজন সদস্য, দুজন মন্ত্রী ও দুজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সম্মেলনের আগে কিংবা পরে মন্ত্রিসভার পরিবর্তন আসতে পারে। তাঁরা বলেন, সাত বছর সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও দলের যেসব কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হতে পারেননি, তাঁদের অনেকে মন্ত্রিসভার রদবদলের আশায় আছেন। বিশেষ করে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলী মারা যাওয়ায় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বাদ পড়ার পর এ দুটি মন্ত্রণালয় চালানো হচ্ছে প্রতিমন্ত্রী দিয়ে। অনেকে এটাও হিসাব করছেন।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ কিংবা পরিবর্তন দুটিরই সম্ভাবনা আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবারই কাজের মূল্যায়ন আছে। তবে সম্মেলনের আগে-পরে হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো সময়ই হতে পারে।