নিজেদের কারণেই চার পৌরসভায় আ.লীগের পরাজয়

রাজশাহীতে জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা বলেছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে জেলার ১৩টি পৌরসভার মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ হেরেছে। দলের নেতা-কর্মীদের কারণেই এই পরাজয় হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সমাবেশে তৃণমূলের নেতারা এ কথা বলেন। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের সময় ‘স্বজনপ্রীতি’ না করে সঠিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এতে জেলার সব উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, রাজশাহীতে চারটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। পুঠিয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নামানো যায়নি। চারঘাটে দলীয় নেতারা প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করেননি। একই ঘটনা ঘটেছে তানোর ও নওহাটা পৌরসভার ক্ষেত্রে। দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তৃণমূলের ভোটেই সাংসদেরা নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বাড়াতে হবে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন পৌরসভায় তাঁর এলাকার একজন প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীকে একত্র করতে পারিনি। দলের লোক নৌকায় ভোট দেয়নি। এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না। আগামী ইউপি নির্বাচনে যেন আমরা এই বিভেদ কাটিয়ে উঠতে পারি।’
পবা উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ‘বুকে হাত দিয়ে আজ আমরা বলতে পারি, আওয়ামী লীগের অবস্থা আগে যেমন ছিল, আজ আর তেমন নেই।’ তিনি বলেন, ‘চায়ের কাপে যখন ঝড় ওঠে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা হয়, তখন আমরা কথা বলতে পারি না।’ তানোরের একজন নেতা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, মনোনয়ন নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করবেন না। সঠিক ব্যক্তিকে প্রার্থী নির্বাচন করবেন, যাতে তিনি পাস করতে পারেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে রাজশাহীর দুই নেতাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিরোধিতাকারীদের দলে ভেড়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু তা যেন প্রতিহিংসায় পরিণত না হয়। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের কোনোভাবেই দলে (আওয়ামী লীগে) টানা যাবে না।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকতার জাহান, জিনাতুন নেসা তালুকদার, সাংসদ এনামুল হক, আবদুল ওয়াদুদ, জেলা আওয়ামী লীগে যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন প্রমুখ।