প্রায় নয় বছর পর কাল শনিবার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এতে সভাপতি ও সম্পাদকের দুটি পদেই স্থানীয় সাংসদেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের ছয়-সাতজন ত্যাগী নেতা জানান, দলীয় সভানেত্রীর কথা অনুযায়ী নতুন সাংসদ—যাঁরা আগে সক্রিয় রাজনীতি করেননি, টিকিট পেয়ে ২০০৮ সালে হঠাৎ সাংসদ হয়েছেন, তাঁরা নীতিগত কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়া একাধিক সাংসদ জানান, তাঁরা নেত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এসেছেন।
সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় সাবেক সাংসদ তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক সভাপতি, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের বর্তমান সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁরা তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একমত না হতে পারায় তাঁরা দীর্ঘ ছয় বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। ছয় বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে পাঠানো হয়। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি থেকে নির্বাচিত সভাপতি তাজুল ইসলাম ফারুককে বাদ দেওয়া হয়। তাঁর পরিবর্তে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সাংসদ মেরাজ উদ্দিন মোল্লাকে সভাপতি করা হয়। গত সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় প্রার্থী আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা তাঁর পদ হারান। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আখতার জাহান।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামীকাল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্মেলন হবে নগরের তেরখাদিয়া এলাকায় রাজশাহী মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
এবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলম, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আখতার জাহান এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাংসদ কাজী আবদুল ওয়াদুদ, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক লায়েব উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই সম্মেলন ঘিরে জেলার প্রতিটি উপজেলায় কাউন্সিলরদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মুঠোফোনের খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রার্থীরা ভোট চাইছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাগমারা আসনের সাংসদ তাঁর এলাকায় অভিনব প্রচারণার আয়োজন করেন। সেখানে তাঁর এলাকার সব কাউন্সিলরকে ডাকা হয়। উপস্থিত হন সব প্রার্থী। একই অনুষ্ঠানে সব প্রার্থীই কাউন্সিলরদের কাছে ভোট চান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, দলীয় সভানেত্রী তাঁদের একটি সভায় এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন। এর পরও যে সাংসদেরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁরা এর খেসারত দেবেন। তিনি বলেন, তাঁরা ব্যবসা নেবেন, সাংসদ হবেন, তাঁরাই দলের বড় পদটাও নেবেন—এটাই যদি হয়, তাহলে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা চলে আসবে। আগামী দিনের রাজনীতির মাঠে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে তাঁরা নেত্রীকেও বলবেন।
তবে সভাপতি প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নেত্রী এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তাঁর জানা নেই।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এ কথা সঠিক নয়। কারণ, তিনি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি নিয়ে এসেছেন।