‘নৈতিক সমাজ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা

আজ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘নৈতিক সমাজ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা আসে
ছবি: প্রথম আলো

সাবেক মেজর জেনারেল আ ম স আ আমিন ‘নৈতিক সমাজ’ নামের নতুন একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজনীতিতে নীতিমান নেতৃত্ব এবং নৈতিক মূল্যবোধ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে এ রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

আ ম স আ আমিন ২০০১ সালে কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি গণফোরামে যোগ দিয়ে একই আসন থেকে নির্বাচন করেন। এবার নিজেই একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি নতুন দলটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জনগণ সৎ মানুষকে শ্রদ্ধা করে। নতুন প্রজন্মকে নৈতিকতা বোধের শিক্ষা দিতে হবে। নৈতিকতা ও সততাকে লালন করতে হবে। অসৎ মানুষ চিরস্থায়ীভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেনি, পারবেও না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতার মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর একের পর এক অত্যাচার হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই এসব করেছে। নৈতিকতা বোধের অভাবে এসব হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে সরকারি অফিসে হামলা কেন হবে—এমন প্রশ্ন রেখে জাফরুল্লাহ বলেন, জনগণ জানে ২০১৮ সালে রাতের ভোটে এই অফিসের লোকজনই সহায়তা করেছেন। সেই ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। হেফাজতের কর্মীদের নিহতের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি। এ ছাড়া নৈতিক সমাজ দলটির প্রতি শুভকামনা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘নতুন কিছু দেখলে আশান্বিত হতে চাই। সমাজ থেকে আমরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছি। নৈতিকতা না থাকলে কিছুই থাকে না। নৈতিকতা থাকলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যায়।’

আজ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘নৈতিক সমাজ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা আসে
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করার কারণে আন্দোলনকারী বাম সংগঠন ও নুরদের সংগঠনের কর্মীদের ওপর হামলা হয়। কেউ এর প্রতিবাদ করেনি বলে সমালোচনা করেন আসিফ নজরুল। তিনি আরও বলেন, হাটহাজারীতে হেফাজতের কর্মীরা থানার কাচ ভেঙেছিল, তাই তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। এটা কোনো আইনে আছে?

আসিফ নজরুল বলেন, হেফাজতকে কারা প্রশ্রয় দিয়ে এই জায়গায় এনেছে? বিএনপি, জামায়াত, বাম দলগুলোকে রাজনীতি করতে না দিয়ে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? বিশ্বের কাছে দেখানো হচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে হেফাজত, যারা মধ্যযুগীয় কায়দায় কথা বলে। সরকার হেফাজতের উত্থানের জায়গা করে দিয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের কারণ হিসেবে আ ম স আ আমিন বলেন, দেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাজনীতি। এ জন্য নৈতিক মূল্যবোধের ধস নেমেছে। বড় দলগুলো ভালো মানুষদের রাজনীতিতে আনতে পারছে না। মানুষ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

আ ম স আ আমিন বলেন, সমাজ-সংস্কৃতিতে নৈতিকতাবোধের অভাব দেখা দিয়েছে। রাজনীতিতে নীতিমান নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। এসব পূরণ করতেই নৈতিক সমাজ কাজ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, সাবেক মেজর মুজিবুল হকসহ নৈতিক সমাজের কয়েকজন নেতা।