প্রকৃত ইতিহাস বললে আ.লীগের গায়ে জ্বালা ধরে: খন্দকার মোশাররফ
সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, তারা যখন প্রকৃত ইতিহাসের কথা বলে, তখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে। কারণ, তাদের গায়ে ‘জ্বালা ধরে যায়’।
আজ বুধবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে ৭ জুলাই তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম সামরিক ব্রিগেড জেড ফোর্স গঠন করা হয়। দিনটি উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানে, যদি ৫০ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাস জানে, আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো ‘ক্ষেত্র থাকবে না’, আওয়ামী লীগের কোনো ‘অস্তিত্ব থাকবে না’। সে জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসকে ‘বিকৃত করছে’। বিএনপি যেহেতু ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষকের’ দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল, যেহেতু গণতন্ত্রের পক্ষের দল, সে জন্য বিএনপির দায়িত্ব প্রকৃত ইতিহাসকে সামনে তুলে এনে বর্তমান প্রজন্মকে পথ দেখানো।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, তাঁদের সাহসিকতাকে আমরা বারবার শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই এবং তাঁদের সেই প্রেরণা নিয়ে আমরা একটি সুখী–সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, স্বনির্ভর, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়তে চাই—এটাই হোক আমাদের শপথ।’
খন্দকার মোশাররফ জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানসহ এই ব্রিগেডের সব সেনা কর্মকর্তা, সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে যাঁরা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছেন, আরও ক্ষমতায় থাকার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করছেন, জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলছেন। যদি তাই হয়, এই জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানের অধীনে যাঁরা বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছিলেন, তাঁরাও পাকিস্তানের চর ছিলেন কি না, তা এই সরকারকে জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে।’
জেড ফোর্সের অন্যতম সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, জেড ফোর্স ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্রিগেড, কিন্তু এটি ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রিগেড। অন্য দুটি যে ব্রিগেড ছিল—কে ফোর্স ও এস ফোর্স সেখানে দুটি করে পদাতিক ব্যাটালিয়ন ছিল। কিন্তু জেড ফোর্সে তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ছিল। এই জেড ফোর্স ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তিশালী একটি ব্রিগেড, যারা রণাঙ্গনে অনেক গৌরবদীপ্ত ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সাহসিকতা পদক অর্জন করেছে এই ফোর্স এবং আত্মদানে ও শহীদের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি এই জেড ফোর্সে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।