ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ১২ সেবা দেবে ছাত্রলীগ

মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেছেন, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতায় পরীক্ষার দিনগুলোয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ১২টি সেবা দেবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সনজিত চন্দ্র দাস এ কথা বলেন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় গৃহীত কর্মসূচি’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ওই সংবাদ সম্মেলন করেছে।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের মধ্য দিয়ে কাল শুক্রবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এরপর ৪ জুন কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিট, ১০ জুন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিট, ১১ জুন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট আর ১৭ জুন চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা হচ্ছে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে। ঢাকা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাসামগ্রী ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আগামীকাল ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সনজিত চন্দ্র দাস। ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসবেন, তাঁদের সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতায় ছাত্রলীগের ১২টি সেবার কথা জানান তিনি। এগুলো হচ্ছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থায়ী শিক্ষার্থী-সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ; শিক্ষার্থীদের পরিবহনের সুবিধার্থে বিনা মূল্যে ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’–এর ব্যবস্থা, অভিভাবকছাউনির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আগত অভিভাবকদের বিশ্রামের সুব্যবস্থা করা; সুপের পানির ব্যবস্থা; পরীক্ষাকেন্দ্র পরিচিতির জন্য ক্যাম্পাসে দিকনির্দেশক চিহ্ন‍ ও সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রাখা; শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত অথচ পরীক্ষাকেন্দ্রে নেওয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা; শিক্ষার্থী ও তাঁদের সঙ্গে আগত অভিভাবকের ব্যবহারের জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা; প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ার ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহ; তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র গঠন; মাস্ক, কলম ও আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে হল শাখা ছাত্রলীগের মাধ্যমে পরীক্ষার আগের রাতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের থাকার সুব্যবস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের বিষয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। সনজিত বলেন, ‘ছাত্রদল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এ ধরনের ছাত্রসংগঠনকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ বর্জন করেছে। দেশের সব জায়গায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পথেঘাটে গণপিটুনি খেয়েছেন। জাতির পিতাকে অসম্মান বা আমাদের নেত্রীকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে তাদের ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের চণ্ডীরূপ অবশ্যই দর্শন করতে হবে। তারা ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কারণ হলে আমরা তাদের (ছাত্রদল) শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিহত করতে চাই। পরীক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতি ব্যাহত হয়—এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমরা চাই না। তারা হিংসাত্মক কিছু করলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেব।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে ক্যাম্পাসে যা ঘটেছে, সেটি হচ্ছে ছাত্রদলের দিক থেকে একপক্ষীয় সন্ত্রাস। এটি ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রদল—এমন কোনো ঘটনা নয়। সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের ঐতিহ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ও নৈতিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছে। ভর্তি পরীক্ষার দিনটি আর দশটি দিনের মতো নয়; এটি একটি বিশেষ দিন। ভর্তি পরীক্ষার দিনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকব। সবাই যেন সুস্থ, সহনশীল ও গণতান্ত্রিকভাবে অবস্থান করে, সে ব্যাপারে আমরা আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল থাকব। সব ছাত্রসংগঠনের কাছেই আমরা দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।’

সাদ্দাম আরও বলেন, কারা আক্রমণের পরিবেশ তৈরি করেছে, সেটি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর যখন ছাত্রদলের সন্ত্রাসী আক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তখন প্রতিরোধের জায়গা থেকে তাদের প্রতিহত করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্ররাজনীতির শান্তিপূর্ণ ভাষায় যতটুকু প্রতিরোধ করা দরকার, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সেটুকুই করেছে। এর বাইরে কোনো ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসতে পারবে কি না, সেটি আমাদের বিষয় নয়। ছাত্রদলের নেতা অশ্লীল, অভব্য ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর জন্য অবিলম্বে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে ছাত্রসমাজ মনে করে।’

এর আগে গত ২৬ মে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘সহিংসতার উদ্দেশ্যে’ ক্যাম্পাসে এলেই ছাত্রদলকে প্রতিহত করা হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষা শতভাগ মেধাভিত্তিক, প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতিমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সর্বোচ্চ তৎপরতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে পরীক্ষার দিনগুলোয় সুন্দর-স্বাভাবিক ও আতিথেয়তাপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। সহযোগিতার সার্বিক রূপকল্প নিয়ে ভালোবাসার বরণমালাসহ যেকোনো প্রয়োজন ও পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকেরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছে।