মাদারীপুর: কমিটি নেই, কার্যালয়ও নেই
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম প্রায় দুই বছর আগে স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদলের কমিটিও বিলুপ্ত।
১৯৭৯ সালের পর মাদারীপুরের তিনটি সংসদীয় আসনের কোনোটিতেই জয় পায়নি বিএনপি। আর দেড় দশক ধরে জেলায় দলের কোনো কার্যালয়ও নেই। স্থানীয় নির্বাচনেও নেই বিএনপির কোনো প্রতিনিধি। এরপরও নেতাদের মধ্যে বিভক্তি আছে, কোন্দলও বেড়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে জেলায় বিএনপির কোনো কমিটিও নেই। জেলায় বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপিকে দায়ী করছেন স্থানীয় নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর জেলা সদরে বিএনপির কার্যালয় ছিল সরকারি জমিতে। ২০০৬ সালে কার্যালয়টি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা–কর্মীরা পুড়িয়ে দেয়। এর আগে একই জমিতে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে, এটি তাদের দখলে ছিল। এই জমি এখন সরকার অধিগ্রহণ করেছে। এর পর থেকে জেলায় বিএনপির কোনো কার্যালয় নেই।
জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, মাদারীপুর আওয়ামী লীগ-অধ্যুষিত এলাকা হওয়াতে এখানে বিএনপির রাজনীতি করা খুব কঠিন। দুই বছর ধরে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মিলে আঁতাতের রাজনীতি করছে কেউ কেউ। এতে বিএনপি আরও দুর্বল হচ্ছে।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ২২ জুন ৪৩ সদস্যের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। নেতাদের প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ছিল প্রতিটি ইউনিটে গিয়ে কমিটি করতে হবে। এরপর সব উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে দেন জেলা আহ্বায়ক। শিবচর বাদে বাকি তিন উপজেলায় নতুন কমিটি করা হয়। তবে এসব কমিটি গঠন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব। এরপর তিনটি উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। একই সঙ্গে জেলা আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয় গত বছরের ২৯ মার্চ।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র বলছে, আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার পর কেন্দ্র থেকে আর কোনো নির্দেশনা আসেনি। দুই গ্রুপের বিবাদ আগের মতোই চলমান। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের নিয়ে কোনো বৈঠকও করেননি। এর মধ্যে গত বছরের ৬ নভেম্বর ছাত্রদল ও গত ১৫ মার্চ যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
মাদারীপুর সদর উপজেলায় বিএনপির ভালো সমর্থন আছে বলে মনে করেন নেতারা। তাঁরা বলছেন, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত টানা দুবার মাদারীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা খলিলুর রহমান খান। এরপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আবার চেয়ারম্যান হন। তারপর বিএনপি থেকে আর কেউ জয় পাননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় শিবচর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান ছিল। এখন একটিতেও নেই।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি এখানে দুর্বল। তৃণমূল থেকে প্রার্থী করা হয় না। গ্রুপিংয়ে দল নষ্ট হয়। খারাপ লোকেরা ঢুকে পড়ে। তিনি বলেন, আহ্বায়ক একসময় জাসদ করতেন। তাঁর নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ শাজাহান খান।
তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নিজের পকেট কমিটি করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন সদস্যসচিব। তাঁর অন্যায় দাবির কাছে তিনি নতিস্বীকার করেননি। সেটি না করে নিয়মমাফিক কমিটি করা হয়েছে। সদস্যসচিবের বাসায় গিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিএনপি বৃহত্তর দল। মতের পার্থক্য, প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে; প্রতিহিংসা নেই। পুলিশের বাধা না দিলে দলীয় কর্মসূচি পালনে কোনো সমস্যা নেই।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৯০ সালে জাসদ থেকে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির রাজনীতি করে সাংসদ শাজাহান খানের সঙ্গে আঁতাত করা অসম্ভব।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পান ঢাকার নেতারা। তাঁরা বসন্তের কোকিলের মতো নির্বাচন শেষে চলে যান। প্রার্থীরা এলাকায় যাতায়াত করলে নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে থাকতেন। নেতাদের আরেকটি অংশ বলছে, দলীয় কোন্দল নয়, প্রশাসনের বাধার কারণেই মাদারীপুরে দাঁড়াতে পারছেন না নেতা-কর্মীরা। বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাঠে নামেন না, নামে প্রশাসন। এখানে আওয়ামী লীগে ভয়াবহ গ্রুপিং কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল বিএনপির সামনে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলের রাজনীতিতে যুক্ত আছেন কে এম তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি মাদারীপুর জেলা বিএনপির স্থগিত হওয়া আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। জেলায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের দালাল আছে, তাদের জন্য আন্দোলন হয় না। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। মাদারীপুরের বিএনপি অভিভাবকহীন, মা-বাবা নেই।