রাজনীতিবিদদের ঈদ উদ্‌যাপন ‘সীমিত পরিসরে’

শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, রওশন এরশাদ ও ড. কামাল হোসেন

উৎসব–আনন্দে যেমন করোনার প্রভাব, তেমনি রাজনীতিবিদদের চিরাচরিত ঈদ উদ্‌যাপনেও করোনা বাগড়া দিয়েছে। কেউ কেউ নিজ এলাকায় আছেন, কেউ কেউ রাজধানীতেই ঈদ করছেন। ঈদের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতিবিদদের ভাষায়, ঈদ উদ্‌যাপনও এখন সীমিত হয়ে গেছে। সশরীরের চেয়ে মোবাইল ফোনেই শুভেচ্ছা সেরে নিচ্ছেন তাঁরা।

গত বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু। এরপর দুটি ঈদ গিয়ে এবার তৃতীয় ঈদও করোনাকে সঙ্গী করে কাটাতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। ঈদের রাজনীতিও এখন করোনা মাথায় রেখে হচ্ছে। রোজার সময়ে গত বছর থেকেই কোনো ইফতার মাহফিল হচ্ছে না। রোজার ঈদ ঘিরে কোনো কর্মসূচিও নেই। তবে যাঁরা নিজ এলাকায় আছেন, তাঁরা নিজেদের মতো করেই এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশের মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রতি ঈদে গণভবনে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করলেও এবার সেটা হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে গত দুটি ঈদের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী লোকসমাগম হয়—এমন কোনো কর্মসূচি করছেন না। তিনি গণভবনেই থাকবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় কিছু নেতার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। মূলত, পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কাটবে তাঁর ঈদ।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ আছেন হাসপাতালে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের কোনো কর্মসূচি নেই।

২০১৮ সাল থেকে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বন্দী। করোনার সংক্রমণের পর গত বছরের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের ঈদ তিনি বন্দী অবস্থাতেই কাটিয়েছেন। ঈদের দিনে স্বজনরা খাবার নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।

শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজাতেই থাকছিলেন। গত বছর ঈদের দিন রাতে দলের শীর্ষ নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এবার অবশ্য তাঁর ঈদ কাটছে হাসপাতালে। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পর গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপরে তিনি করোনা নেগেটিভ হলেও হাসপাতালে আছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

বিএনপির এক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া যে অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তার চেয়ে এখন ভালো আছেন। তবে খালেদা জিয়া আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনা–পরবর্তী প্রভাবে তাঁর ঝুঁকির কথা বলে আসছেন বিএনপির নেতারা। সূত্রটি জানায়, সিসিইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। তাঁর কাছে সেখানে ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এক বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাতে জানান, খালেদা জিয়ার এবাররে ঈদ হাসপাতালেই কাটবে।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন। বিএনপির সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতাদের ঈদের দিন হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাঁদের নেত্রী সিসিইউতে আছেন এবং হাসপাতালের পরিস্থিতি বিবেচনাতেই তাঁরা হয়তো যাবেন না। তবে পরিবারের সদস্যরা যাবেন।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এ কারণে দলীয় কোনো কর্মসূচি তাঁর নেই। তবে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঢাকায় উত্তরায় নিজের বাড়িতে ঈদ করবেন। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরী, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও ওবায়দুল কাদের ঢাকাতেই ঈদ করছেন। দলটির দপ্তর থেকে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতা ও সরকারের মন্ত্রীদের বেশির ভাগই ঢাকায় ঈদ করছেন। দপ্তরের এক নেতা বলেন, দলের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ হয়—এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সবাই রাজধানীতেই ঈদ কাটাবেন। এ ছাড়া সাংসদদের বেশির ভাগই নিজ এলাকায় আছেন।

ঈদের নামাজ শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাবেন। শায়রুল কবির জানান, এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর নিরাপত্তা ও সহযোগিতা চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার চিঠি পাঠিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির সাংসদ মো. হারুন অর রশীদ রোজার শুরু থেকেই নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, আগে ঈদের সময়ে স্থানীয় লোকজন কর্মীদের আনাগোনায় বাড়ি সরগরম থাকত। ঈদের দিন সকালে নামাজের পর থেকে মানুষকে আপ্যায়ন, শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় কাটে। কিন্তু এখন তো অনেক সীমাবদ্ধতা। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য এসব আর সম্ভব হয় না। তবে এলাকার লোকজনের খোঁজখবর রাখেন জানিয়ে এই সাংসদ বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।

করোনা ছাড়াও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এখন অনেক ভিন্ন বলে আক্ষেপ করলেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের বিএনপির সাংসদ জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ঈদ বা উৎসবে সাংসদদের মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য সহায়তা দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সব প্রশাসন থেকে করা হয়। নিজের মতো করে তিনি মানুষকে সাহায্য করে যাচ্ছেন বলে জানালেন।