সরকারি চাকরি পেতে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে সরকারি চাকরি পেতে হলে একজনকে ২০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘আমাদের ছেলেরা পাস করে বের হয়। কিন্তু তারা চাকরি পায় না। চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের সার্টিফিকেটও। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যবসা-বাণিজ্য দুর্নীতির করে কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে।’

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ। শতকরা ৪২ জন এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যে এমন বৃদ্ধি পেয়েছে যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। প্রতিদিন জিনিসের দাম বাড়ছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। মানুষের জীবনকে এক দুঃসহ অবস্থার মধ্যে নিয়ে এসেছে।

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, যেই ডিপোতে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই ডিপোর মালিক একজন আওয়ামী লীগার। এখন পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সেখানে যে দাহ্য পদার্থ আছে, তা ফায়ার সার্ভিসকে জানানো পর্যন্ত হয়নি। এতে ফায়ার ব্রিগেডের নয়জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই ঘটনায় প্রমাণ হলো জরুরি রোগীদের ব্যবস্থাপনার জন্য মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে কোনো ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। করোনার সময় তা প্রমাণিত হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, ১৯৭১ থেকে ৭৫—এই সময়কার ঘটনা আওয়ামী লীগ এড়িয়ে যায়। এই সময়ে আজকের যে বাংলাদেশ দেখা যাচ্ছে, এর সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই সময়েও আওয়ামী লীগ বিরোধীপক্ষগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা করতে চায়নি। ভিন্নমতকে দমন করতে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নতুন এক বাহিনী তৈরি করেছিল—রক্ষী বাহিনী। সর্বশেষ সংবিধানকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটা ছিল জাতীয় সঙ্গে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতারণা।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তখন রাষ্ট্রের এমন একটা অবস্থা হয়েছিল যে চারদিকে চুরি, দুর্নীতি ও ডাকাতি। তখন মানুষের জীবনের কোনো মূল্য ছিল না। সম্পত্তির কোনো নিরাপত্তা ছিল না। কথা বললেই রক্ষী বাহিনী হত্যা করত। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ প্রায় ৩০ হাজার তরুণ-কিশোরকে হত্যা করেছিল। আওয়ামী লীগ নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেভাবে বিরোধীপক্ষকে, ভিন্নমতকে দমন করছে একইভাবে তখনো দমন করেছিল।

এই অবস্থার পরিবর্তনে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে লড়াই করতে হবে।

যুবদলের নবগঠিত কমিটি সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন এ সময় সভাপতিত্ব করে। সঞ্চালনায় ছিলেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না। এ সময় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও খায়রুল কবির, দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।