গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া (ডানে) ও সদস্যসচিব নুরুল হক
ফাইল ছবি, প্রথম আলো

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেছেন, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা লাগামহীন পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছেন, যাঁদের সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন মত ও বিরোধীদের মিছিল, মিটিংয়ে হামলা করছেন। স্থানীয় নির্বাচনে নিজেরা মারামারি–কাটাকাটি করে একটা সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন।


আজ বৃহস্পতিবার বেরা সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর পল্টনে গণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের এসব কথা বলেন নুরুল হক। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হামলার শিকার হন গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হকসহ নেতা-কর্মীরা। ওই হামলার প্রতিবাদে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, ‘ভাসানীকে শ্রদ্ধা জানাতে আমরা গিয়েছিলাম, যেটি অরাজনৈতিক একটি কর্মসূচি ছিল। সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অতর্কিত হামলা করল। দুই–তিন দফায় হামলা করা হয়।’


টাঙ্গাইলের হামলায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইঙ্গিত আছে—এমন অভিযোগ তুলে নুরুল হক বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না। একটা মৃত্যুবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পিতা ভাসানীকে শ্রদ্ধা জানাতে আমরা গিয়েছিলাম। এখানে হামলার প্রশ্নই আসে না। অবশ্যই সরকারের বা আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের ইঙ্গিত ছাড়া আমাদের ওপর হামলা হতে পারে না।’


টাঙ্গাইলের হামলা পূর্বপরিকল্পিত জানিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘এত দিন হামলা-মামলা করে চেষ্টা করেছিল আমাদের থামিয়ে দিতে। যখন সেটা পারেনি, তখন তারা সরাসরি হত্যাচেষ্টার দিকে যাচ্ছে। তারা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। এসব ঘটনায় যদি সরকারসংশ্লিষ্ট না থাকে, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিক।’

সে সময় টাঙ্গাইল পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে নুরুল হক বলেন, নুরুল হক বলেন, ‘পুলিশের ওসি ও এসপিকে ফোন করার পর পজিটিভ রেসপন্স পাইনি। তবে মাঠপর্যায়ের কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছে, আমাদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশ ভ্যানের চালকও আহত হয়েছে।’


বর্তমান সরকার একটা অমানবিক সরকার মন্তব্য করে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ‘আমাদের নানাভাবে নাজেহাল করার জন্য, মামলা-হামলা দিয়ে থামিয়ে দিতে, প্রাণ নাশ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র না থাকার ফলে সরকার যা ইচ্ছা তা–ই করছে, প্রশাসন আইনের তোয়াক্কা করছে না। যেটা প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না, সেটাও তারা করছে।’ তিনি বলেন, ‘এর বিচার জনগণের কাছে। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই–সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে এবং এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে। না হলে আমরা কোনো বিচার পাব না।’


গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, টাঙ্গাইলে ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। তারা পাথর-ইট নিক্ষেপ করেছে। অনেকে আহত হয়েছেন। একটা ইট আমার কপালে লেগেছে।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘গতকালের ঘটনা এত জঘন্য যে একটা মাজারে ফুল দিতে গিয়ে আক্রমণ করা হলো। এতে একটা জিনিস প্রমাণ করে আমাদের দলকে এই সরকারের কিছু মানুষ ভয় পায়। কারণ, আমরা জোর গলায় অনেক কিছু বলি, যেটা অনেকে বলতে চায় না।’


ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘কিছু পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা তাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি। পুলিশের কিছু সাধারণ কর্মকর্তা, সিনিয়র অফিসার না, তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে।’ তিনি বলেন, পুলিশ নিজেও ছাত্রলীগের ছেলেদের হাতে মার খেয়েছে। তারা লাঠি, রড, বাঁশ ও পাইপ দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছিল। পুলিশের ওপর হামলার ভিডিওও আছে।


এর আগে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ভাসানীকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার শিকার হন গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। এ হামলায় অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা গুরুতর। এ সময় পুলিশ একপ্রকার নীরব ভূমিকা পালন করে। এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।


সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, টাঙ্গাইলে হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কাল শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করবে গণ অধিকার পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের নেতা মো. রনি, হামলায় আহত তাওহীদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।