সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি করবে হেফাজত

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা হয়ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশে জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বুধবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় কারাবন্দী হেফাজত নেতাদের আইনি সহায়তা দিতে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়।

হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সভা শুরু হয়ে বেলা ২টায় শেষ হয়। হেফাজতের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সভায় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। পরে এ বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে চেষ্টা-তদবিরের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন হেফাজতের নায়েবে আমির মিজানুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া, মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি হেফাজতে ইসলামের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সংগঠনের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ সারা দেশে কারাবন্দী ৪৮২ জন নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবি জানানো হয়। গত বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এরপর সহিংসতার বিভিন্ন মামলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০২১ সালে করা সব মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন হেফাজত নেতারা।

বুধবার হেফাজতের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এ ছাড়া অনতিবিলম্বে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করে তাদের সব ‘অপতৎপরতা’ বন্ধ করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে হেফাজতে ইসলাম। সভায় মাওলানা ফোরকানুল্লাহ ও মাওলানা মোবারকুল্লাহকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির পদে মনোনীত করা হয়। তাঁরা আগের কমিটিতে সদস্য ছিলেন।

সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের ঘোষণা আসবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা দাবির মধ্যেই থাকছি। দাবি আদায় না হলে করণীয় কী হবে, তা পরে জানানো হবে।’

কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া, তাজুল ইসলাম, আবদুল আওয়াল, ফোরকানুল্লাহ, মীর ইদ্রিস, মুহাম্মদ আলী, মুহিউদ্দীন রাব্বানী, আইয়ুব বাবুনগরী, জহুরুল ইসলাম, মোবারকুল্লাহ ও মাওলানা আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।

এই সভা ঘিরে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও থানা-পুলিশ এলাকায় টহল বৃদ্ধি করে।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাও মাদ্রাসা এলাকা পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, সভা আয়োজনের জন্য প্রশাসনের কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। হেফাজতের আমির বয়োজ্যেষ্ঠ, তাঁকে যেন কষ্ট করে ঢাকা যেতে না হয়, সে জন্য তাঁর মাদ্রাসায় সভা হয়েছে।

মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘সভার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা এসে পরিদর্শন করে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা করেনি। আমরা সফলভাবে সভা সম্পন্ন করেছি।’