সারসংক্ষেপ
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের একটি মূল্যায়ন, তার পটভূমি, সিদ্ধান্ত প্রণয়ন-প্রক্রিয়া, যৌক্তিকতা, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনার একটি নির্মোহ আলোচনা এ প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিগত দুই দশক ধরে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও সেনা প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া বিষয়ে সঠিক নীতি-সিদ্ধান্তের ওপর এ খাতের উন্নয়ন নির্ভরশীল। বাংলাদেশের জন্য শান্তিরক্ষা মিশনটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক, নিরাপত্তাসম্পর্কিত, অর্থনৈতিক এবং সামরিক বাহিনীর মাননির্ধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক যৌক্তিকতার সঙ্গে জড়িত। শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য দেশীয় ও বৈশ্বিক কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা বিশ্লেষণের পাশাপাশি ভবিষ্যত্ সম্ভাবনার দিকটি আলোকপাত করা হয়েছে।
মুখ্য শব্দগুচ্ছ: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ, সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি
প্রারম্ভিক কথা
বাংলাদেশ গত দুই দশকের অধিক সময়কাল ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছে। এর মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি এ দেশের আগের যে নেতিবাচক রূপ, যা বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্যের কশাঘাতে প্রভাবিত, তা অনেকখানি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে জাতিসংঘের সর্ববৃহত্ সেনা প্রদায়ক দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয়। কীভাবে বাংলাদেশ এ রকম একটি নেতৃস্থানীয় অবস্থান অধিকারে সমর্থ হলো, তা আরও গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের কারণসমূহ কী? জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ধরনে যে আবশ্যিক পরিবর্তন সামনের সময়ে দৃশ্যমান, এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী ধরনের হতে পারে তা বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন। এই প্রবন্ধ বহুমুখী এই চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিতে এই অংশগ্রহণের ভবিষ্যত্ তাত্পর্য বিস্তারিত বিশ্লেষণের একটি প্রয়াস রেখেছে।
স্বাধীনতার ১৭ বছরের মধ্যে ১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। তার পরের বছর, ১৯৮৯ সালে, ২৫ জন সেনা ও ৩৪ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক ইউনাইটেড নেশনস ট্রানজিশন্স অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপ ইন নামিবিয়া মিশনে প্রেরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার দীর্ঘমেয়াদি অংশগ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া ১৯৯০-৯১ সালে প্রথম আরব উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীতে বাংলাদেশের ২১৯৩ জন সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করে। সেটিই ছিল জাতিসংঘের বাইরে কোনো একক দেশের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কম্বোডিয়া মিশনে প্রথমবারের মতো এক ব্যাটালিয়ন সেনা প্রেরণ করে। বাংলাদেশি সেনাদের পেশাদারি দক্ষতা, আন্তরিকতা ও পক্ষপাতশূন্যতা অল্পদিনের মধ্যেই এ দেশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে আরও বেশি মাত্রায় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়।