মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অস্ত্র ও গ্যাসপ্রবাহ

সারসংক্ষেপ

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তভূমি জায়গাটি বিশ্বের প্রান্তিক এলাকা ধরা হয় বলে সাম্প্রতিক বিশ্বের শক্তির তালিকায় বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনোটাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তভূমির সীমানা চিহ্নিত নেই এবং না থাকার কারণে সাগরে মিয়ানমারের এলাকা চিহ্নিত করার জন্য এবং বঙ্গোপসাগর থেকে আগত জাহাজগুলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য নাফ নদীর মুখে বয়াগুলো অবস্থিত। সীমানা চিহ্নিত না থাকার কারণে সীমান্তে বসবাসকারীদের সম্পত্তি লুট করা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং যখন তারা আত্মরক্ষা করতে যায়, তখন সহজেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের চোরাচালান, হেরোইনের ব্যবসার কাজে সীমান্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে কাজ করছে। সীমান্ত এলাকার জনগণ বহু বছরের ভাষা, ধর্ম ও সামাজিক গোষ্ঠীর মিশ্রণের ফল। মিয়ানমার ও পাকিস্তান বা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সীমান্তে কিছু শক্তির ভারসাম্যে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকা দুটি ভূরাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠেছে। প্রথমটি হলো এশিয়ান হাইওয়ে, দ্বিতীয়টি হলো মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাকৃতিক গ্যাস। জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আগ্রহ হঠাত্ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারের ক্যাম্পেইনের ফলে মিয়ানমার-বাংলাদেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া এবং বহির্বিশ্বে এই সীমান্ত এলাকা পরিচিতি পাচ্ছে। অন্যান্য সীমান্তের মতো মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত গবেষণার জন্য জরুরি। প্রবন্ধটি লেখকের অনুমোদন সাপেক্ষে কিয়োটো রিভিউ অব সাউথইস্ট এশিয়া (আগস্ট ২০০৬) থেকে নেওয়া হয়েছে।

মুখ্য শব্দগুচ্ছ: মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত, নদীর বয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, সীমান্ত অধিবাসী, সীমান্তে অবাধে যাতায়াত, সীমান্ত বাণিজ্য, সীমান্তে সংখ্যালঘু ও প্রবাসী, সীমান্তের ভূরাজনীতি।

প্রারম্ভিক কথা

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তভূমি প্রথম দর্শনে বিশ্বের প্রান্তিক এলাকা বলে মনে হয়। সাম্প্রতিক বিশ্বের শক্তির তালিকায় বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনোটাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এসব সমাজের সীমানা বা ঘটনাপ্রবাহের আবেদন বিশ্ব গণমাধ্যমে নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জাতীয় গণমাধ্যম, এমনকি সীমান্তসংক্রান্ত লেখায়ও তাদের সংযোগকারী সীমান্তভূমির কথা খুব কমই দৃশ্যপটে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যখন আমরা মিয়ানমারের সীমান্ত সম্পর্কে পড়ি, তখন সেটাকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকে সংযোগকারী সীমানা ধরে নিই; আবার যখন বাংলাদেশের সীমানা সম্পর্কে পড়ি, তখন সেটা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। 

তাই এমন সীমানা সম্পর্কে আলোকপাত করা কেন দরকার, যার কোনো গুরুত্ব সেখানকার অধিবাসী ছাড়া বিশ্বের কোথাও নেই? এর অনেক কারণ আছে। প্রথমত, প্রচলিত ধারণা বা রাজনীতিবিদেরা যেসব বিষয়কে প্রান্তিক করে ফেলেন, বাস্তবে তা এতটা প্রান্তিক হওয়া মোটেও উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র ও সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতি, রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা একই বলে যে অনুমান রয়েছে, সীমান্ত থেকে বিশ্বকে দেখলে এই অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করে।তৃতীয়ত, ট্রান্সন্যাশনালিজম সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে শুধু প্রবাসী ও আর্থিক বাজার সম্পর্কে আলোচনা করলে চলবে না, আরও কমিউনিটি ‘যারা সীমান্তে বসবাস করে, বেঁচে থাকে, নিয়মিত পার হয় এবং সেখানে নেটওয়ার্ক তৈরি করে’, তাদেরও আলোচনায় আনতে হবে।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তকে খুব কাছ থেকে দেখলে কিছু অপ্রত্যাশিত কাজের গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। আমি এখানে সীমান্ত সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক প্রবাহের মধ্যে সংযোগ তুলে ধরব, যা বৃহত্ পরিসরে গবেষণার কাজে লাগবে।

নদীর বয়া

নাফ নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মেশার আগে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্বতমালা পার হয়ে এসেছে। পেছনে আরাকান পর্বতমালা এবং সামনে একটি বয়া, যার গুরুত্ব সাধারণ পর্যবেক্ষকের মতো স্পষ্ট বা দৃশ্যমান নয়।

এই বয়াটি দুটি বিশ্বের মধ্যে সীমানা চিহ্নিত করে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সর্বদক্ষিণের সীমানা চিহ্নিতকারী হিসেবে কাজ করে এবং দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূমি অধিকারের মধ্যে বৈধ কর্তৃত্ব স্থাপন করে। অনেক রাজনীতিবিদের জন্য এটি বিশ্বের দুটি রাজনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সীমানা নির্ধারণকারী হিসেবে পরিচিত। এখানে আসিয়ান সার্কের সঙ্গে মিলিত হয়। আসিয়ান মানে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিসমূহের সংস্থা, কিছু দেশের সমন্বয়, যারা নিজেদের দশ জাতি, এক সম্প্রদায় হিসেবে পরিচয় দেয়। মিয়ানমার ১৯৯৭ সালে এখানে যোগ দেয়। অপরপক্ষে, বাংলাদেশ সাত সদস্যবিশিষ্ট পূর্বের সংস্থা সার্কের (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) সদস্য। বয়াটি এভাবে বিশ্বের দুটি অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে পৃথক করেছে। দুটি অঞ্চলই তুলনামূলকভাবে নতুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে রাজনীতিকদের দ্বারা গঠিত। একাডেমিকগণ অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষা তৈরি করেছেন। এটি তাঁরা এমনভাবে তৈরি করেছেন, যা রাজনৈতিক সীমারেখা অনুসরণ করে এবং এটি অনুমান করা হয় যে মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ এবং বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অংশ। এর ফলে ৬০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী নিজেদের আলাদা ভেবে এসেছে।

কিন্তু ওই সময়ের পূর্বে দৃশ্যপট ভিন্ন ছিল। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ পূর্বে একটি রাষ্ট্র দ্বারা শাসিত হতো, তা হলো ব্রিটিশ ভারত। আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে পৃথককারী লাইন তুলনামূলকভাবে নতুন। এটি ব্রিটিশ ভারতের জেলাসমূহের পৃথককারী লাইন হিসেবে এসেছে। ১৯৩৭ সালে যখন এই বিশাল কলোনি বা উপনিবেশ ব্রিটিশ মিয়ানমার ও ব্রিটিশ ভারতে বিভক্ত হয়, তখন এই সীমান্ত আধা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। এটি সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক হয় যখন ব্রিটিশরা ভারত বা পাকিস্তান (১৯৪৭) এবং মিয়ানমার (১৯৪৮) ছেড়ে যায়। ব্রিটিশ ভারত বিভাজনের ফলে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সূচনা হয়। এ দুটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তখন স্বাধীন মিয়ানমারের সীমান্ত সংযুক্ত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে একটি যুদ্ধ হয়, যার ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের সূত্রপাত ঘটে। এর ফলে মিয়ানমার-পাকিস্তান সীমান্ত মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে পরিণত হয়। এই প্রবন্ধে শুধু মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আশ্চর্যজনকভাবে এসব বিন্যাসের পরও এখন পর্যন্ত সীমান্ত কোথায় অবস্থিত অথবা কতটুকু, সে ব্যাপারে কোনো চুক্তি নেই। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও বাংলাদেশ সরকারের মতে, এটি ১৯৩ কিলোমিটার, কিন্তু মিয়ানমার উেসর মতে এটি ২৭২ কিলোমিটার। এটিই একমাত্র সীমান্ত, যা ১৯৬৬, ১৯৮০ ও ১৯৯৮-এর ভূমি সীমান্ত চুক্তিতে চিহ্নিত নেই।স্বাভাবিকভাবেই সীমানা চিহ্নিত না থাকার কারণে সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শুধু সাগরে মিয়ানমার এলাকা চিহ্নিত করার জন্য এবং বঙ্গোপসাগর থেকে আগত জাহাজগুলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য নাফ নদীর মুখে বয়াগুলো অবস্থিত। সীমানা খুবই অস্পষ্ট যখন থেকে এটি তৈরি হয়েছে। বিভক্তির পর নাফ নদীর কিছু দ্বীপে মিয়ানমার কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। তখন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কার্যালয়ে কাগজপত্র ও মানচিত্রের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে, যাতে দ্বীপগুলোর মালিকানা দাবি করতে পারে। কিন্তু তারা স্বীকার করে যে ১৯৩৭ সালে মিয়ানমারের পৃথককরণের পর নাফ নদীসহ চট্টগ্রাম ও আরাকান জেলাসমূহের সীমানা চিহ্নিত হয়নি। এ সম্পর্কে সাম্প্রতিক রেকর্ড হলো রাজস্ব নিষ্পত্তি মানচিত্র, যা ১৯২৯ সালে তৈরি।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নাফ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত তাম্বুরু জলপ্রণালি নিয়ে এত দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে আসা নাসাকা বাহিনী ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে বিবাদ হয়। ২০০০ সালের এপ্রিলে মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে যে এই জলপ্রণালি তাদের নাগালের বাইরে। আরও পূর্ব দিকে সীমান্ত ভূমির ওপর দিয়ে গেছে এবং এখানে সীমান্তের অনিশ্চয়তার ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোত্রের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে কর্তৃপক্ষ সীমান্তে মাইন পোঁতা শুরু করেছিল।

এসব বোমা বা মাইন জীবন নেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করে না। এর শিকার যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড, নাসাকা বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষী, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী ও বাংলাদেশি কাঠুরে রয়েছে। ছয় বছরে বোমায় ৩৫ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন এবং ২২টি বন্য হাতি ধ্বংস হয়েছে।

সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী ও কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী যেমন রোহিঙ্গা সলিডারিটি সংস্থার (আরএসও) মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। একবার আরএসও বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের সীমান্তে মানব মাইন পুঁতে রাখা ১১ জন রক্ষীকে হত্যা করেছিল। আরেক সংঘর্ষে একজন সীমান্তরক্ষী এবং দুজন রোহিঙ্গা যোদ্ধা নিহত হয়েছিলেন এবং দুই পক্ষ থেকে ৩২ জন আহত হয়েছিলেন।১০

সংঘাতপূর্ণ ফলাফল কমানোর জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে রেঙ্গুনে একটি সভার আয়োজন করে।১১ নভেম্বরে একটি ভূ-সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং তখন থেকে সীমান্ত আলাদা হওয়া শুরু হয়। রাষ্ট্র দুটি এই চুক্তির কোনো রকম অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। কারণ, যখন থেকে সীমানা চিহ্নিতকরণ শুরু হয়, তখন থেকে লেমুছড়ি সীমান্তে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয় এবং সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০১ সালে যখন নাফ নদীতে বাঁধ তৈরির ব্যাপারে মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধ হওয়ার ফলে এবং সীমানা চিহ্নিতকরণের অভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন ছিল।১২ এসব সংঘর্ষের পর একটি জয়েন্ট সার্ভে কমিশন গঠিত হয়, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সীমান্ত অধিবাসী হিসেবে

দুই প্রজন্ম ধরে এখানকার অধিবাসীরা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের অন্তর্ভুক্ত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হচ্ছে। তাদের অভ্যস্ততার ধরন বিভিন্ন রকম: একটি অথবা দুটি ভাষা আয়ত্ত করা (যদিও সবাই বাংলা অথবা মিয়ানমারের ভাষায় কথা বলে না), দুটি মুদ্রা ব্যবহার করা, অবৈধ সীমান্ত ব্যবসা রোধ করা, সীমান্তের অপর প্রান্তের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, সীমান্তে শরণার্থী খোঁজা এবং যখন জরুরি দরকার হয়, তখন সেখানকার সৈন্যদের শান্ত করা। সীমান্ত অধিবাসী হওয়া মানে একটি আজীবন অসমাপ্ত প্রকল্প। এটি যেমন স্থানীয় বিষয় দ্বারা গঠিত, তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি দ্বারাও গঠিত হয়। নিম্নলিখিত উদাহরণগুলোয় এসবের ভিন্ন সমন্বয় প্রকাশ পায়।

সীমান্ত উপেক্ষা করা

যদি রাষ্ট্রগুলো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, তাহলে অচিহ্নিত সীমান্তে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের অধিকাংশ অংশই সীমান্তরক্ষীহীন থাকে। তাই সীমান্তে জনগণের যাতায়াত তেমন পর্যবেক্ষণে নেই। পূর্বের কঠিন পার্বত্য ভূখণ্ডে মাত্র কয়েকটি সীমান্ত ঘাঁটি রয়েছে এবং রাষ্ট্র এখানে অনুপস্থিত। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের মহাপরিচালক অভিযোগ করেন, ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সীমানা চিহ্নিত নেই এবং নিরাপত্তা নেই কারণ, এখানে কোনো সীমান্ত ঘাঁটি নেই।১৩ অদৃশ্য বা প্রহরীবিহীন সীমান্ত কোনো সামাজিক বাস্তবতা নয়। যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে সীমান্তের কাছে বসবাসকারী স্থানীয় লোকজন যেমন: ম্রু, মারমা, সাক ইত্যাদি অবাধে যাতায়াত করছে, দুটি দেশের জমিতে চাষাবাদ করছে এবং দুই জায়গাতেই আত্মীয়তা ও সামাজিকতা বজায় রাখছে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকায় তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে থাকে। সীমান্তে বসবাসকারীদের সম্পত্তি লুট করা সাধারণ ব্যাপার এবং যখন তারা নিজেদের আত্মরক্ষা করতে যায়, তখন সহজেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশি ম্রু অধিবাসীদের যখন মিয়ানমার দিক থেকে ডাকাত আক্রমণ করেছিল, তখন তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। গ্রামবাসী তিনজনকে মেরেছে এবং ১৩ জনকে আহত করেছে, যেখানে শুধু দুজন গ্রামবাসী আহত হয়েছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় আরেক রকম সীমান্ত অপরাধ, যা কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্বারা সংঘটিত হয় তাদের অর্থনৈতিক জোগানের জন্য। যেমন: আরাকান গণতান্ত্রিক সংস্থা মারমা পুরুষদের জোর করে অপহরণ করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমায় নিয়ে যায়।১৪

বাণিজ্যপ্রবাহে এগিয়ে যাওয়া

বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে কিছু ভূমি মিয়ানমারের দিকে প্রসারিত হয়েছে। রাস্তাটি টেকনাফের ছোট নদীবন্দরে শেষ হয়েছে। নাফ নদীর প্রশস্ততার ফলে সূর্যের আলো মিয়ানমার দিকের একটি প্যাগোডার ওপর পড়ে। মরিচাপড়া উপকূলের মরিচাপড়া জাহাজ এবং কাঠের নৌকাগুলো জোয়ার আসার অপেক্ষায় থাকে। নৌকাগুলো শুধু উচ্চ জোয়ারের সময় কর দিয়ে ঢুকতে পারে। যে নৌকাগুলো মিয়ানমার ও বাংলাদেশি পতাকা বহন করে, তারা ছোট ও পুরোনো। ফলে টেকনাফ একটি ঘুমন্ত এলাকার মতো দেখায় এবং এটি নিরাশাজনক।

 টেকনাফ ও মংডুতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে অবৈধ পণ্য পাচার হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দিনের বেলা যাতায়াতের অনুমতি পান এবং অনেকে অনুমতি ছাড়াই আসা-যাওয়া করেন। বৈধ পণ্য সিঙ্গাপুর থেকে আগত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ব্যবসা প্রমোশন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের মতে, এসব পণ্যসহ বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে ১৭০ মিলিয়ন ডলার আমদানি করে।১৫ আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যে কিছু পণ্যকে দেখানো হয় কিন্তু বেশির ভাগ বাণিজ্য অবৈধ পণ্যের মাধ্যমেই হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের ওপর চোরাচালান পণ্য রয়েছে।১৬ মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে যেসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, সেগুলোর অবস্থা আশাব্যঞ্জক। মিয়ানমারের দিক থেকে পণ্য থাইল্যান্ড থেকে আসে নাইলন, দড়ি, হোসপাইপ, প্রসাধনী, মাছ। চায়না থেকে আসে ইলেকট্রনিক পণ্য ও চিনামাটির তৈরি বাসনপত্র, যা সড়কপথে মিয়ানমার হয়ে আসে। মিয়ানমার নিজে কাপড়, মসলা, চিংড়ি, ধান, সিগারেট, হুইসকি, বিয়ার, লবণ ও প্রাচীন জিনিসপত্র সরবরাহ করে। অস্ত্র ও যুদ্ধের উপকরণ এখান দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবেশ করে।

ছোটখাটো অস্ত্রের চোরাচালান দেখে বোঝা যায়, কীভাবে এই এলাকার বিদ্রোহ ও অননুমোদিত বাণিজ্য একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আরাকান ও চিন রাষ্ট্রের (মিয়ানমার) বিদ্রোহী গোষ্ঠী, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সীমান্তপথ দিয়ে আসা সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। কিছু অস্ত্র নদীপথে বাংলাদেশ সমুদ্রবন্দরে আসে, তারপর ভারতে পাচার হয়। বাকিগুলো মিয়ানমারের মাধ্যমে সড়কপথে আসে। পাচারকৃত অস্ত্র বিভিন্ন রকম যেমন: হাতবন্দুক ও চকলেট বোমা মহেশখালীতে তৈরি হয়; রাইফেলস, সাবমেশিন বন্দুক, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক যন্ত্র, রকেট লঞ্চার তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরায়েল, চীন ও বেলজিয়ামে।১৭ স্মল আর্মস সার্ভে ২০০১ অনুযায়ী এই অঞ্চলে অস্ত্রের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ট্রানজিট পয়েন্ট। একদিকে এসব অস্ত্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে এবং অন্যদিকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকে বাংলাদেশে আসে। সেখান থেকে এসব অস্ত্র সাধারণত উত্তরে ভারতের বিদ্রোহীদের কাছে এবং উত্তর-পূর্ব বা দক্ষিণে এলটিটিইর কাছে যায়।১৮

সমুদ্রের কাছের শহর কক্সবাজার এসব ক্ষুদ্র অস্ত্র বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভবান হয়। এখানে বাইরের ও বাংলাদেশের ক্রেতারা বহুলাংশে সমুদ্রপথে আসা নতুন বাণিজ্যপণ্যের জন্য আসে। কক্সবাজার সীমান্তের স্থানীয় অস্ত্র বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত। যেমন বলা যায় ‘ত্রিমুখী পয়েন্ট’, যেখানে ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ মিলিত হয়েছে। চিন আর্মির সদস্য লালদিনা বলেছেন, এখানে সব পাবেন। যেমন: ছোট বন্দুক থেকে রকেট লঞ্চার, রাশিয়ান কালাশনিকভ থেকে চায়নিজ একে-৪৭, আমেরিকান এম-১৬ থেকে জার্মান এইচকে-৩৩।১৯সীমান্তে বাণিজ্য বাড়ার ফলে আগের তুলনায় স্থানীয় উদ্যোক্তা ও রাজনীতিকদের কাছে অবৈধ অস্ত্র বেশি পাওয়া যায় এবং সীমান্ত রাজনীতি আগের চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী হয়ে গেছে।

আশির দশকে মিয়ানমার হেরোইনের ব্যবসায় সীমান্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ হিসেবে ব্যবহূত হতো। শান প্রদেশে (পূর্ব মিয়ানমার) হেরোইন তৈরিতে সামরিক বাহিনীর বাধার কারণে এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে চিন প্রদেশ স্থাপিত হয়। বিপুল পরিমাণ মিয়ানমার হেরোইন উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাজারে প্রবেশের জন্য চালান করা হতো। এসব বাণিজ্যপথের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারগুলোর উন্নতি হয়। শিগগিরই টেকনাফ সীমান্ত হেরোইন ব্যবহারকারীদের মনোযোগের জায়গায় পরিণত হয়। বর্তমানে এই অঞ্চল বিশ্বব্যাপী হেরোইন চলাচলের জন্য অখণ্ড ভূমিতে পরিণত হয়েছে। হেরোইন একটি নিয়মিত বাণিজ্যপণ্যে পরিণত হয়েছে এবং বাংলাদেশের সীমান্তে কিছু আফিম, পপি উত্পাদন শুরু হয়েছে।২০

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম পণ্য বাণিজ্য হয়, কিন্তু টেকনাফের নৌকাগুলোতে একইভাবে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাহিত হয়ে মংডু যায়। এর মধ্যে কিছু পণ্য বাংলাদেশের, বাকিগুলো ভারত অথবা আরও দূর থেকে আসে। মিয়ানমায় বাংলাদেশি ও ভারতের পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সার, পুরোনো ধাতু, ডাল, বিস্কুট, কেরোসিন, ডিজেল, গর্ভনিরোধক পণ্য, এমনকি চাল।

স্থানীয় অর্থনীতি এই বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল এবং এখান থেকে সুবিধা পেয়ে থাকে। এই ব্যবসা পরিচালনাকারীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় নন, তাঁরা শহরে বসবাসকারী বড় ব্যবসায়ী এবং তাঁদের সঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে, যার ফলে এই বাণিজ্য নিষিদ্ধ হয় না। প্রকৃতপক্ষে উচ্চপদস্থ আমলা ও রাজনীতিক এসব অবৈধ ব্যবসার পরিচালক ও অর্থ জোগানদাতা হিসেবে কাজ করেন। কখনো কখনো এগুলো সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মংডুতে সীমান্তের কাছে অবস্থিত মিয়ানমার মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ব্যাটালিয়ন এমআই-১৮-এর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছিল। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ধরার আগে এই ইউনিট তাদের ছয়জন ক্রুবিশিষ্ট সমুদ্রগামী জাহাজ ‘স ম্র্যাট রাদানা’ নিয়মিত চোরাচালানের কাজে ব্যবহূত হতো।২১

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সব রকম অবৈধ বাণিজ্যে অনেক লাভ হয় কিন্তু এটি কিছুটা বিপজ্জনকও। সীমান্ত ব্যবসায়ীদের আইনের চাইতে বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করতে হয় এবং নাফ নদী এমন একটি জায়গা হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিশ্বাস সহজেই ভাঙে এবং ব্যবসায়িক অংশীদার লুটেরা হিসেবে পরিণত হতে পারে। এভাবে মংডুর লোকজন (যারা এখন বাংলাদেশের সীমান্তে বসবাস করে) মিয়ানমার পাচারকারীদের কাছ থেকে পণ্য লুট করে এবং তাদের নদীর পানিতে ডুবিয়ে মারে।২২ 

সংখ্যালঘু ও প্রবাসী

১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সীমানা জাতীয় নাগরিকত্বের নতুন ধারণা সৃষ্টি করে। সীমান্ত এলাকার জনগণ বহু বছরের ভাষা, ধর্ম ও সামাজিক গোষ্ঠীর মিশ্রণের ফলাফল। মিয়ানমার ও পাকিস্তান বা বাংলাদেশে জাতি গঠন সীমান্তে শক্তির ভারসাম্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে, যার ফলে সেখানে কিছু গোষ্ঠী জাতীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। কখনো কখনো সংখ্যালঘুত্বের কারণ অর্থনৈতিক হয়ে থাকে।২৩ পাকিস্তান বা বাংলাদেশের দিকের রাখাইন, আরাকানভাষী বৌদ্ধদের বেলায় এটি হয়েছে। সীমান্ত প্রতিষ্ঠার পর তারা আবিষ্কার করে যে তাদের জীবিকা বয়নশিল্প হুমকির মুখে এবং তাদের কোথাও যাওয়ার ক্ষমতা নেই। বিভক্তির ফলে তাদের কাঁচামাল, সিল্ক ও বাজার দুটিই বন্ধ হয়ে যায়। নতুন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বাধার কারণে তাদের তৈরি করা সিল্ক টেক্সটাইল মিয়ানমারের বাজারে পৌঁছাতে পারে না। অনেকে সিগারেট ও চুরুট উত্পাদনে ঝুঁকেছে, যা স্থানীয় তামাক ব্যবহার করে করা যেত। পাকিস্তান সরকার দ্বৈত কর প্রথমে তামাকের ওপর, পরে সিগারেট ও চুরুটের ওপর আরোপ করার আগে এর একটা সমাধানের সম্ভাবনা ছিল। এই কর বসানোর পর বাজার খুঁজে না পাওয়ায় সিগারেট ও চুরুট উত্পাদন বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় পণ্যের চাইতে বিদেশি সিগারেট ও চুরুটে বাজার ছেয়ে যায় এবং সেগুলো অনেক কম মূল্যে বিক্রি হয়। এর ফলে রাখাইনরা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জীবন বাঁচানোর তাগিদে মিয়ানমায় চলে যায়।২৪ তার পর থেকে বাংলাদেশ থেকে রাখাইন সম্প্রদায় মিয়ানমায় চলে যেতে থাকে এবং এখানে তাদের পরিমাণ ক্রমশ কমে যায়।

সহিংস রাজনৈতিক ধরনের সীমান্ত সংখ্যালঘু তৈরি করার আরেকটি উদাহরণ পাওয়া যায় রোহিঙ্গাদের ভাগ্য দেখলে, যারা চট্টগ্রামের বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী। মিয়ানমার রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের মেনে নিতে পারেনি, কারণ তাদের কেউ কেউ উত্তরে আরাকানে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল আবার কেউ একে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছিল।২৫ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেছিল।২৬ শত শত গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং হাজার লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যার ফলে তখনকার পাকিস্তানে অনেকে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছিল। এ ঘটনার ফলে মিয়ানমার রাষ্ট্র পাকিস্তানে ও পরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করার একটা পদ্ধতি পেয়ে যায়।২৭ রোহিঙ্গাদের সন্ত্রস্ত ও তাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অনেকবার এ কাজ করেছে। প্রথমে এখানকার কর্তৃপক্ষ তাদের মোহাজির (ইসলামিক উদ্বাস্তু) হিসেবে অভিনন্দন জানায় এবং কোলখোজের মতো আদর্শ গ্রামে পরিণত করার পরিকল্পনা করে।২৮ এটাকে কখনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং রোহিঙ্গাদের বহিরাগত হিসেবে গণ্য করা হয়। ৯০ দশকের শুরুতে দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থিত জাতিসংঘের সীমান্ত ক্যাম্পে বাস করছিল। কিছু মিয়ানমায় ফিরে গেছে, কিছু বাংলাদেশের সমাজে মিশে গেছে এবং ২৮ হাজারের মতো এখনো টেকনাফের কাছে ক্যাম্পে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের অবৈধ হিসেবে গণ্য করে। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে ১৯৯৯ সালে ১৭০০ জনকে কারাগারে থাকতে হয়েছিল।২৯

নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত রোহিঙ্গারা সীমান্ত এলাকায় থাকতে পারেনি। নব্বইয়ের দশকে দুই লাখের বেশির ভাগ বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে দেশান্তরিত হয়েছে।৩০ কিছু রোহিঙ্গা যুদ্ধরত ইসলামিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা পেয়েছে এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধে যোগ দিয়েছে, যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক বিপজ্জনক কাজ করতে দিয়েছে।৩১ মিয়ানমার স্টেটের অবিশ্বাসের কারণে ব্যাপক আন্তর্জাতিক প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্ম হয়েছে, যাদের নিজেদের রোহিঙ্গা ইন্টারনেট সম্প্রদায় ও নতুন উত্স তৈরি হয়েছে।৩২

অবহেলিত সীমান্তের ভূরাজনীতি

সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকা দুটি ভূরাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠেছে। প্রথমটি হলো এশিয়ান হাইওয়ে, যার উদ্যোগ ১৯৫৯ সালে ইকাফে (এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক কমিশন) এবং এখন ইউনেসকেপ (ইউনাইটেড নেশন ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক) নিয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে এখনো বাস্তবতার চাইতে প্রকল্প হিসেবেই রয়ে গেছে। ইউনেসকেপের মানচিত্রে দেখা যায়, এশিয়ান হাইওয়ের বাংলাদেশের অংশটি মাঝখান হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং উত্তর মিয়ানমার দিয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার এটিকে দক্ষিণ দিক দিয়ে মিয়ানমার (আরাকান) উপকূল হয়ে রেঙ্গুন (ইয়াঙ্গুন) পর্যন্ত নিতে চেয়েছিল। এভাবে বাংলাদেশ ভারতকে না জড়িয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। ২০০২ সালে মিয়ানমার-বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে টেকনাফ ও মংডু দিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছিল কিন্তু সম্প্রতি মিয়ানমার উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে নেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমার এখন ইউএন এন্টারগভর্নমেন্টাল এগ্রিমেন্ট অন দি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে (২০০৪) স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ পিছু হটেছে।৩৩ এটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে নিয়ে কাজ শুরু করেছে, যা টেকনাফের মধ্য দিয়ে সড়কপথে ঢাকা ও ব্যাংকককে যুক্ত করেছে।৩৪টেকনাফে একটি বড় সমুদ্রবন্দর বানানো, নাফ নদীতে সেতু তৈরি করে মংডুর সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো—এসব নিয়ে অনেক দিন যাবত্ আলোচনা চলে আসছে, কিন্তু মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে এসব পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে।

দ্বিতীয়টি হলো মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাকৃতিক গ্যাস। ২০০০ সাল থেকে মিয়ানমার সরকার দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের তেল কোম্পানিগুলোকে (ডাইউ, দক্ষিণ কোরিয়া গ্যাস করপোরেশন, ওএনজিসি ভিদেশ এবং গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড) বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার উপকূলে গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। এই উত্তোলন প্রকল্পের নাম ‘স প্রকল্প’, যা বেশ সফল। এখানে চার থেকে ছয় ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস রয়েছে এবং আরও সাত থেকে ১২ ট্রিলিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।৩৫ ভারত এই গ্যাস কেনায় আগ্রহী। সবচেয়ে সাশ্রয়ী হলো বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপ বসানো, কিন্তু রাজনৈতিক সুবিধার কারণে অন্যান্য অগ্রাধিকার প্রাধান্য পাবে। তাই বাংলাদেশ-মিয়ানমার যখন টেকনাফ মংডু সড়ক ও পানিসংযোগ নিয়ে কাজ করছিল, তখন ভারত পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। জরিপকারী দল ইতিমধ্যে রাস্তা ও গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এটি মিজোরাম (ভারত) ও চিন স্টেটকে (মিয়ানমার) সংযোগকারী দুর্গম পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ট্রাইজাংশন পয়েন্টের পূর্বে অবস্থিত একটা পয়েন্টে শেষ হবে।

যদি মিয়ানমার এ প্রকল্পে সম্মত হয়, তাহলে ভারত মিয়ানমার গ্যাসের জোগান ঝামেলা ছাড়াই পেতে পারে এবং টেকনাফ থেকে বাণিজ্যের কাজ কোনো সমস্যা ছাড়াই বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে করতে পারে।৩৬ চাপ বাড়তে থাকে, যখন ২০০৫ সালে তিনটি রাষ্ট্র একটি সংযুক্ত পাইপলাইনের কথা আলোচনা করে, যা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমানা পেরিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর একটি ভারতের ত্রিপুরায়, আরেকটি পশ্চিম বাংলায় যাবে। বাংলাদেশ চেয়েছিল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার গ্যাস নেওয়ার সুবিধার বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুত্ আমদানি করার জন্য ট্রানজিট দেবে। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও দূর করবে।

জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আগ্রহ হঠাত্ করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, ও মিয়ানমারের আন্দোলনকারী যারা ‘স গ্যাস আন্দোলন’ পরিচালনা করছে, তারা এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেছে।৩৭ এগুলো হলো জোরপূর্বক শ্রম, জনগণের স্থানচ্যুতি, ভূমি বাজেয়াপ্তকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অবৈধ সামরিক অঞ্চলের সহায়তা করা এবং সীমান্তে পরিবেশের ক্ষতি করা।৩৮

এই ক্যাম্পেইন এবং দিল্লি, রেঙ্গুন ও ঢাকায় যে আলোচনা হয়েছে, তা নির্ধারণ করবে যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের অবহেলিত সীমান্তে কাঠামোগত উন্নয়ন, সীমান্ত অর্থনীতি, বৈধ ও অবৈধ পণ্যের এবং মানুষ পারাপারের একটা পরিবর্তন আসবে, নাকি এখন যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে।

এই ক্যাম্পেইনের ফলে এই সীমান্ত এলাকা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর কাছে, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া এবং বহির্বিশ্বে পরিচিতি পাচ্ছে। এটি এশিয়ার (দক্ষিণ-পূর্ব) বিশেষজ্ঞদের সীমান্ত গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে সজাগ করে দিচ্ছে। সীমান্তের দুর্বোধ্যতা শুধুই দৃষ্টিবিভ্রাট এবং একে সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা মানে বেশির ভাগ সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়কে রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রিকতায় আটকে ফেলা।৩৯ অন্যান্য সীমান্তের মতো মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত গবেষণার জন্য জরুরি। কীভাবে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাহিনী মানুষের জীবনকে গঠিত করে এবং কীভাবে সীমান্ত সম্প্রদায় ও বহুজাতিক প্রবাহ সংযুক্ত, তা দেখায়।৪০ সীমান্ত-সম্পর্কিত গবেষণা শতাব্দীর কিছু নতুন উপায় সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ধারণা ব্যাপকভাবে অপর্যাপ্ত মনে হয়।

তথ্যসূত্র

1. Anderson and Dowd, 1999, 602-603.
2. Rabinowitz, 1998, 142.
3. Van Schendel, 2005.
4. Van Schendel, 2002.
5. Resist, 1999; World, 2000; Basic Facts, 1996.
6. Haque, 1980, 218; Border, 2001.
7. National Archives of Bangladesh (Dhaka), Government of East Bengal, Home (Political) Department, Branch Political, B. Proceedings (20M-60/50 (3-53)), 1950.
8. Nasaka, 2000.
9. Islam, 1999.
10. Three Reported, 1998; Tension, 2000.
11. Bangladesh, 1999.
12. Flag meet, 2001.
13. DG, 2000.
14. Myanmar, 1998; Two, 1999.
15. Trade, 1999; Yangon, 2003.
16. Cf. Smith, 1986; Ghafur, Islam and Faiz, 1990-91.
17. Van Schendel, 2005, 165-168, 185-186.
18. Small Arms, 2001, 182.
19. Mizoram,. 2000; Bullet, 2001.
20. Crackdown, 2002; Poppy, 2005.
21. Bangladesh, 2003.
22. Smugglers, 2000.
23. Van Schendel, 2001.
24. U Chin, 1953.
25. Burma, 1996, 10.
26. Yunus, 1995, 3.
27. Smith, 1994a; 1994b; Ahmed, 2004.
28. Chottograme, 1949.
29. State, 1997, 254; Twenty-Five, 1999.
30. Lintner, 1993;Malaysia, 2000.
31. Lintner, 2002.
32. E.g. www.rohingyatimes.com/; www.rohingya.org/; www.geocities.com/rohingyalanguage/; www.helprohingya.tk/; Declaration, 2004.
33. Intergovernmental, 2004.
34. Highway, 2004.
35. Naing Htoo et al., 2004, 1.
36. Dhaka, 2002: Indo-Burma, 2003.
37. Arakan, 2005a; Arakan, 2005b; Mukherjee, 2005; Jockal, 2005.
38. E.g. www.shwe.org/; www.earthrights.org/burma/shwepipeline.shtml; www.oilwatch-sea.org/new/shwe.html; www.geocities.com/arakangasmovement/arakangasmovement.htm; www.petitiononline.com/agm0401/petition.html.
39. Donnan and Wilson, 1999.
40. Van Schendel, 2006.

গ্রন্থপঞ্জি

Ahmed, Imtiaz, 2004 ‘Refugees and Civil Society: Rohingya Refugees in Bangladesh,’ in: Imtiaz Ahmed, Abhijit Dasgupta and Kathinka Sinha-Kerkhoff (eds.), State, Society and Displaced People in South Asia (Dhaka: University Press Limited), 281-307.
Anderson, James, and Liam O’Dowd, 1999 ‘Borders, Border Regions and Territoriality: Contradictory Meanings, Changing Significance,’ Regional Studies, 33:7, 593-604.
Arakan, 2005a ‘Arakan bodies opposed the tri-nations MoU on Arakan gas,’ Kaladan News, 14 January.
----, 2005b ‘Arakan gas campaigners hold press conference in Dhaka,’ Narinjara News, 14 January.
Bangladesh, 1999 ‘Bangladesh, Myanmar agree to remove trade barriers,’ The Daily Star, 19 July.
----, 2003 ‘Bangladesh returns a Burmese Military Intelligence-owned smuggling vessel at a flag meeting,’ Narinjara News, 26 February.
Basic Facts, 1996 Basic Facts on the Union of Myanmar (Yangon: Public Relations and Information Division, Ministry of Foreign Affairs, Government of the Union of Myanmar).
Border, 2001 ‘Border tense as Myanmar continues to mass troops: Nasaka refuses to sign joint statement,’ The Daily Star, 22 January.
Bullet, 2001 ‘Bullet smuggling rising on Bangladesh-Burma border,’ Mizzima News, 12 June.
Burma, 1996 ‘Burma: The Rohingya Muslims – Ending a Cycle of Exodus?’ Human Rights Watch/Asia, 8:9.
Chottograme, 1949 ‘“Chottograme Arakani mohajer,” Panuapathare dui hazar loker bostir byobostha,’ Azad, 14 April.
Crackdown, 2002 ‘Crackdown on poppy farmers in Bandarban,’ The Daily Star, 12 May.
Declaration, 2004 ‘Declaration of the Rohingya National Convention,’ Asian Tribune, 20 May.
DG, 2000 ‘DG of BDR concerned at unprotected borders of CHT, Satkhira,’ The Daily Star, 4 July.
Dhaka, 2002 ‘Dhaka, Yangon agree on road link: Two taskforces formed for feasibility study,’ The Daily Star, 18 December.
Donnan, Hastings, and Thomas M. Wilson, 1999 Borders: Frontiers of Identity, Nation and State (Oxford and New York: Berg).
Flag meet, 2001 ‘Flag meet held: Dhaka, Yangon agree to begin joint survey,’ The New Nation, 21 January.
Ghafur, Abdul, Muinul Islam, and Naushad Faiz, 1990-91 Illegal International Trade in Bangladesh: Impact on the Domestic Economy (Dhaka: Bangladesh Institute of Development Studies, Phase I 1990; Phase II 1991).
Haque, Azizul, 1980 ‘Bangladesh 1979: Cry for a Sovereign Parliament,’ Asian Survey, 20:2, 217-230.
Highway, 2004 ‘Highway for closer cooperation,’ Mizzima News, 2 May.
Indo-Burma, 2003 ‘Indo-Burma joint survey in western Burma,’ Narinjara News, 16 January.
Intergovernmental, 2004 Intergovernmental Agreement on the Asian Highway Network (Shanghai, UNESCAP).
Islam, Mohammad Nurul, 1999 ‘Where landmines take a heavy toll,’ The Independent, 28May.
Jockal, 2005 ‘Burma’s Shwe Gas Project: Another Nightmare?’ Mizzima News, 30 April.
Lintner, Bertil, 1993 ‘Distant exile: Rohingyas seek new life in Middle East,’ Far Eastern Economic Review, 156:4, 28 January.
----, 2002 ‘Championing Islamist Extremism,’ South Asia Intelligence Review, 1:9, 16 September.
Malaysia, 2000 Malaysia/Burma: Living in Limbo – Burmese Rohingyas in Malaysia (New York: Human Rights Watch).
Mizoram, 2000 ‘Mizoram border safe haven for gun-runners, insurgents,’ The Northeast Daily, 29 March.
Mukherjee, Supratim, 2005 ‘Myanmar: Cheers, jeers over giant gas find,’ Asian Times, 14 February.
Myanmar, 1998 ‘Myanmar gunmen killed in Bangladesh border battle,’ ShweInc News, 24 October.
Naing Htoo et al., 2004 Another Yadana: The Shwe Natural Gas Pipeline Project (Burma-Bangladesh-India) (Earth Rights Intentional) (www.earthrights.org).
Nasaka, 2000 ‘Nasaka won’t use Tumburu canal,’ The New Nation, 29 April.
Poppy, 2005 ‘Poppy cultivated on 100 acres in Bandarban destroyed,’ The Daily Star, 9 March.
Rabinowitz, Dan, 1998 ‘National identity on the frontier: Palestinians in the Israeli education system,’ in: Thomas M. Wilson and Hastings Donnan (eds.), Border Identities: Nation and State at International Frontiers (Cambridge: Cambridge University Press), 142-161.
Resist, 1999 ‘Resist smuggling Nasim tells BDR personnel,’ The Daily Star, 22 March.
Small Arms, 2001 Small Arms Survey 2001: Profiling the Problem (Geneva/Oxford: Graduate Institute of International Studies / Oxford University Press).
Smith, Martin, 1986 ‘Sold Down the River: Burma’s Muslim Borderland,’ Inside Asia (July-August), 5-7.
----, 1994a Burma: Insurgency and the Politics of Ethnicity (London: Zed Press).
----, 1994b Ethnic Groups in Burma: Development, Democracy and Human Rights (London: Anti-Slavery Society).
Smugglers, 2000 ‘Smugglers robbed at Bangladesh-Burma water,’ Mizzima News Group, 13 July.
State, 1997 The State of the World’s Refugees: A Humanitarian Agenda (Oxford: UNHCR/Oxford University Press).
Tension, 2000 ‘Tension along Bangladesh-Myanmar border,’ The Times of India, 18 November.
Three Reported, 1998 ‘Three reported dead as guards fight rebels,’ The Mekong Digest, 28 January.
Trade, 1999 ‘Trade with Myanmar: Jetty on Naf River Soon,’ The New Nation, 4 August.
Twenty-Five, 1999 ’Twenty-Five Rohingyas languishing in Chandpur jail,’ The New Nation, 27 October.
Two, 1999 ‘Two abducted men released in Bandarban,’ The New Nation, 23 June.
U Chin, 1953 ‘Report on the Migration of Arakanese Buddhists to Burma.’ (National Archives of Bangladesh (Dhaka), Government of East Bengal, Home (Political) Department, Confidential Records B. Proceedings, CR 9M-14/53 (6-54).
Van Schendel, Willem, 2001 ‘Working Through Partition: Making a Living in the Bengal Borderlands,’ International Review of Social History, 46, 393-421.
----, 2002 ‘Geographies of Knowing, Geographies of Ignorance: Jumping Scale in Southeast Asia,’ Environment and Planning D: Society and Space, 20, 647-668.
----, 2005 The Bengal Borderland: Beyond State and Nation in South Asia (London: Anthem Press).
----, 2006 ‘Spaces of Engagement: How Borderlands, Illegal Flows and Territorial States Interlock,’ in: Willem van Schendel and Itty Abraham (eds.), Illicit Flows and Criminal Things: States, Borders, and the Other Side of Globalization (Bloomington: University of Indiana Press (in press)).
World, 2000 The World Factbook 2000 (Central Intelligence Agency; www.cia.gov/cia/publications/factbook/).
Yangon, 2003 ‘Yangon’s strict control creates trade imbalance,’ The New Nation, 3 June.
Yunus, Mohammad, 1995 A Memorandum on the Genocide of the Rohingya Muslims of Arakan in Burma (Arakan: Rohingya Solidarity Organization).