'অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন'

বইয়ের প্রচ্ছদ
বইয়ের প্রচ্ছদ

ডিজঅ্যাপিয়ারিং প্যালেস্টাইন: ইসরায়েল’স এক্সপেরিমেন্ট ইন হিউম্যান ডিসপেয়ার
জোনাথান কুক; লন্ডন; জেড বুকস লিমিটেড, ২০০৮।

ফিলিস্তিনিরা কি শেষ পর্যন্ত সত্যিই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাবে? ফিরে পাবে কি নিজেদের হারানো ভূখণ্ডের ওপর মালিকানার অধিকার? অন্যদের মতো তারাও কি ভবিষ্যতে নিজভূমিতে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে? ঘুচবে তাদের ছয় দশকের বেশি সময়ের অপমান-লাঞ্ছনার উদ্বাস্তু-জীবন? সময় যত গড়াচ্ছে, এসব প্রশ্নের নেতিবাচক জবাবের পাল্লা যেন তত ভারী হচ্ছে। বরং প্রশ্ন আসছে, ফিলিস্তিনিরা কি নিয়মিতই শিকার হবে ইসরায়েলি বোমার? আর খাঁচায় বন্দী দীনহীন জীবনই তাদের শেষ পরিণতি? নিজভূমেও অধিকারহীন অবমাননাকর জীবন? এসব প্রশ্নের ইতিবাচক জবাবই যেন জোরদার হয়ে উঠছে ক্রমেই। ব্রিটিশ সাংবাদিক জোনাথান কুকও এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন দুই দশক ধরে। এই সময়কালে যেসব উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, সেগুলো গুছিয়ে তুলে এনেছেন তাঁর ডিজঅ্যাপিয়ারিং প্যালেস্টাইন (অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন)১ গ্রন্থে। বইটার উপশিরোনাম হলো, ‘ইসরায়েল’স এক্সপেরিমেন্ট ইন হিউম্যান ডিসপেয়ার’ (মানুষে হতাশা নিয়ে ইসরায়েলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালনা)২। উপশিরোনামের মধ্য দিয়েই লেখক আসলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল কী করছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে, ইসরায়েল রাষ্ট্র কি না সে প্রশ্ন অবশ্য তোলা যায়। কেননা, আজ পর্যন্ত এই রাষ্ট্রটির সঠিক সীমানা চিহ্নিত হয়নি। তারপরও ইসরায়েল রাষ্ট্র তার জন্মের পর ৬৬ বছর অতিক্রম করছে, ‘বিভিন্ন ধরনের গণবিধ্বংসী অস্ত্রসহ পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা সামরিকভাবে সুরক্ষিত; বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি (যে কি না জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ পর্যন্ত ৩৯ বার ভেটো দিয়েছে ইসরায়েলের হয়ে) দ্বারা রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষিত; যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী লবি ও বেশির ভাগ পশ্চিমা বিশ্বে একই রকম গোষ্ঠী দ্বারা সুরক্ষিত; বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া মুসলমান-বিরোধী মনোভাবে উল্লসিত হয়ে ইসরায়েল এখনো বেড়ে চলেছে।’৩

ইসরায়েলের এই বেড়ে চলা আসলে পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নিরন্তর প্রক্রিয়াও বটে। জাতি বা গোষ্ঠী হিসেবে ফিলিস্তিনিদের দুনিয়া থেকে বাস্তবে একেবারে মুছে দেওয়া যদিও কখনোই সম্ভব হবে না। তবে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোটা ক্রমেই অসম্ভবের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাংবাদিক জোনাথান কুক তাঁর আলোচ্য বইটিতে এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন। বলপূর্বক ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এবং ফিলিস্তিনিদের নাকবার (বিপর্যয়) ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার বছরে ২০০৮ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তবে এর গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা এখনো বহাল আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। লেখক এ প্রসঙ্গে ভূমিকায় বলেছেন, ‘যে বছরটিতে দুনিয়া ইসরায়েলের ৬০তম জন্মবার্ষিকী “উদ্যাপন” করেছে, সে বছর এই ধরনের একটি বই জরুরিভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন। বেশির ভাগ পতাকা-নাড়া লোকজন ভুলে গিয়েছিল অথবা পাত্তাই দেয়নি যে এই বছরটি একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের আবাসভূমির বেশির ভাগটা হারানোর ৬০ বছরও বটে। কেননা, ঐতিহাসিক স্মৃতি থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড মুছে ফেলার ও এই ভূখণ্ডে মানুষের আবাসভূমিহীন উদ্বাস্তু থাকা নিশ্চিত করার জন্য গত ছয় দশক ধরে ইসরায়েল কাজ করে যাচ্ছে। ১০০ বছর ধরে চলা এই দ্বন্দ্বের অন্যতম ভয়াবহ বক্রাঘাত হলো, ফিলিস্তিনিরা শেষ পর্যন্ত জনগণ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও সত্যিকারের একটি রাষ্ট্র পাওয়ার জন্য তাদের সুযোগ একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ফিলিস্তিনিরা হয়তো ছায়া থেকে উত্থিত হবে, কিন্তু ফিলিস্তিন হারিয়ে গেছে। একটি “প্রক্রিয়ার” শেষ হিসেবে একটি “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র” নিয়ে অশেষ কথা বলা হলেও তা আসলে এখন স্বপ্ন ছাড়া আর দৃশ্যমান কিছু নয়।’ (জোনাথান কুক, ২০০৮, পৃ. ৯-১০)।

২.

জোনাথান কুক ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের ভেতর থেকে প্রতিবেদন করছেন, বিশ্লেষণ লিখছেন। বিলেতের গার্ডিয়ান ও অবজারভার পত্রিকায় কাজ করার পর ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিজের মতো (ফ্রিল্যান্স) সাংবাদিকতা করছেন। বসবাস করছেন ইসরায়েলের নাজারেথ শহরে। খুব কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনকার দুর্দশা দেখেছেন ও দেখছেন। গভীরভাবে ইসরায়েলের শাসকগোষ্ঠী, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিকদের চিন্তাভাবনা পর্যবেক্ষণ করেছেন, কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। এখনো করে যাচ্ছেন। ফিলিস্তিনিদের ছয় দশকের বেশি সময়ের রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস নিবিড়ভাবে জেনেছেন ও ব্যাখ্যা করেছেন। জোনাথান কুকই বিশ্বে একজন বিরল পশ্চিমা সাংবাদিক, যিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বিরোধ-সংঘাতের ওপর সবচেয়ে ভালো জানেন ও বোঝেন। তিনি এই বিষয়ে কাজ করাটাকে পেশাদারির পাশাপাশি কিছুটা নৈতিক জায়গা থেকেও নিয়েছেন। দুর্দশাগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা অনেক সময়ই তাই পশ্চিমাদের নিন্দা-সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু জোনাথান কুক তথ্য-উপাত্ত ও দলিল-প্রমাণাদির বাইরে গিয়ে বাড়তি কোনো কিছু করেননি। তবে দলিল-তথ্যাদির ভিত্তিতে ঘটনাপরম্পরা বিশ্লেষণে তিনি যেসব উপসংহারে এসেছেন, অনেকেই তা পারেননি। আসলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বিরোধ-সংঘাত নিয়ে গত ছয় দশকে লাখ লাখ প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা হয়েছে, হাজার খানেক বই লেখা হয়েছে। এর বেশির ভাগই ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল পশ্চিমা ইতিহাসবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের লিখিত। এসব লেখার অনেক আবার অন্ধভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে লেখা, ইসরায়েলের যাবতীয় অন্যায় কর্মকাণ্ডকে নৈতিক, আইনি ও আন্তর্জাতিক বৈধতা দেওয়ার প্রয়াসে লেখা। সেই সঙ্গে আছে ইতিহাস বিকৃতির নিরন্তর প্রয়াস। এর বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ-দুর্দশার ইতিহাস ও পথপরিক্রমা নিয়ে লেখার সংখ্যা কম। বিশেষ করে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির ও মিথ্যাচারের বিপরীতে জোরালোভাবে লেখা ও গবেষণা। এর একটি কারণ হলো পশ্চিমা গণমাধ্যম ও শিক্ষায়তনগুলোয় এসব কাজকে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন না করা। বরং বস্তুনিষ্ঠ কাজকে নানাভাবে নিন্দা-সমালোচনার মধ্যে ফেলে নিরুত্সাহিত করা, এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা আর এসব কাজকে সিমেটিক-বিরোধী প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে ইসরায়েলের কোনো সমালোচনা করলেই তাকে সিমেটিক-বিরোধী৪ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এটিও একটি পরিকল্পিত চর্চা, যা ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জোনাথান কুকও একই রকম আখ্যা পেয়েছেন, নিন্দাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি।

আসলে নাজারেথ শহরে অবস্থান করে সেখান থেকে স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন ও নিবন্ধ লেখার কাজটির পেছনে কুকের নিজস্ব কিছু যুক্তি আছে।৫ প্রথমত, নাজারেথ হলো ইসরায়েলের ভেতরে সংখ্যালঘু ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর রাজধানী। এখান থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ঘটনাপ্রবাহগুলো ভিন্নভাবে দেখা যায়। ইসরায়েলের ভেতরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের (যারা ইসরায়েলি নাগরিক, তবে সব অধিকার পায় না) সঙ্গে পশ্চিম তীর ও গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার বৈসাদৃশ্য ও সাদৃশ্য দুটোই আছে। কেননা তারা সবাই জায়নবাদীদের অব্যাহত নৃতাত্ত্বিক নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়ার হুমকির মুখে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বেশির ভাগ বিদেশি সাংবাদিক জেরুজালেম অথবা তেল আবিবে অবস্থান করে নিত্য সংঘাত-বিরোধের সংবাদ সংগ্রহ করছেন ও লিখছেন। অল্প কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আছেন, যাঁরা পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরে থাকেন। এসব জায়গা থেকে সংগৃহীত খবরাখবরগুলো সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের সম্পাদকদের কিছু পূর্ব ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। এঁরা বিশ্বাস করেন যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ভালোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব শুধু ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে নেওয়ার পর থেকে ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণের মাধ্যমে। এ কারণেই এসব গণমাধ্যম ইসরায়েলের ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের যে কর্তব্য রয়েছে, তা অবজ্ঞা করার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। একই কারণে ইসরায়েলি নাগরিক হিসেবে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ-দুর্দশার বিষয়টি বেশির ভাগ সাংবাদিকের মাথায় আসেই না। তৃতীয়ত, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা চলছে এবং এটি যে এই সংঘাতের মূলে রয়েছে, তাও অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। পশ্চিমা গণমাধ্যমও এ বিষয়ে কথা বলতে বা লেখা ছাপতে অস্বস্তি বোধ করে। লন্ডন ও অন্যান্য পশ্চিমা গণমাধ্যম, যেখানে একসময় জোনাথানের লেখা ছাপা হতো, তারা ক্রমেই তাঁর সম্পর্কে সতর্ক হয়ে ওঠে। ইসরায়েলের ভেতরকার ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে তিনি লিখতেন, তা এসব পত্রপত্রিকার জন্য অস্বস্তিকর হয়। কেননা, বেশির ভাগ পশ্চিমা গণমাধ্যমই মনে করে যে ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সূত্রপাত। ১৯৪৮ সালের প্রসঙ্গ চলে এলে বা ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরলেই পত্রিকাগুলো পিছিয়ে যায়।

অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ মদদে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়, তখন এই ভূখণ্ডের দুই-তৃতীয়াংশ ছিল ফিলিস্তিনি। আর এক-তৃতীয়াংশ ছিল ইহুদি। ব্রিটিশ ম্যান্ডেট বা ব্রিটিশ-শাসিত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির ওপর ১৯৪৮ সালের ১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শেষ হয়। ব্রিটিশরা এই ভূখণ্ডটি ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে এর ৫৮ শতাংশ নবঘোষিত ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দ করা হয়। অবশ্য তার আগেই ওই বছর ১৫ মে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি অবশ্য ব্রিটিশদেরই দেওয়া। ‘১৯১৭ সালে যে মুহূর্তে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর জায়নবাদী আন্দোলনকে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় আবাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেন, সেই মুহূর্ত থেকেই তিনি এক অশেষ সংঘাতের দ্বার খুলে দিলেন, যা শিগগিরই দেশটি ও তার জনগণকে গ্রাস করে। তাঁর সরকারের নামে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাতে বেলফোর অ-ইহুদি জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা সুরক্ষারও প্রতিশ্রুতি দেন, যা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি এক অদ্ভুত মনোভাবের প্রকাশ। কিন্তু এই ঘোষণা ফিলিস্তিনিদের জাতিসত্তা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও জন্মগত অধিকারের সঙ্গে পরিষ্কারভাবে সংঘাতপূর্ণ। ১৯২০-এর শেষ দিকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই প্রস্তাব সহিংসতা ডেকে আনবে। ইতিমধ্যে কয়েক শ ফিলিস্তিনি ও ইহুদির প্রাণহানি হয়েছে। আর তাই ব্রিটিশরা কিছুট

অনীহা সত্ত্বেও ধূমায়িত সংঘাত সমাধানে পদক্ষেপ নিতে তত্পর হয়।’৬ সোজা কথায়, ব্রিটিশরা এই সমস্যা তৈরিতে এক বিরাট ভূমিকা রেখেছে এবং সমস্যা বিরাট আকার ধারণ করিয়ে ফিলিস্তিনিদের সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলে সেখান থেকে সরে এসেছে।

মনে রাখা দরকার যে বেলফোর ঘোষণার সূত্র ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার জন্য দুই দফা পরিকল্পনা দিয়েছিল দুটো ব্রিটিশ কমিশন। ১৯৩৭ সালে পিল কমিশন যে বিভাজন পরিকল্পনা দেয়, তাতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ৩০ শতাংশ ইহুদিদের প্রদানের কথা বলা হয়। পরের বছর দুটো বিকল্প বিভাজন পরিকল্পনা দেওয়া হয়। এভাবে ক্রমাগত বিভাজন ও সংঘাতকে উসকে দেওয়া হতে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলে আসে। এই যুদ্ধের সময় সংঘটিত হলোকাস্টে ৬০ লাখ ইহুদির প্রাণহানি হয়। এটিকে ইহুদিদের নিজেদের আবাসভূমির দাবির বিরাট এক যৌক্তিকতা রূপে ভিত্তি দেওয়া হয়। আর ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের অনুরোধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিন বিভাজন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যেখানে ভূখণ্ডটিকে ‘আরব রাষ্ট্র, ইহুদি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে জেরুজালেম’—এই তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। আরবরা এর বিরোধিতা করে। এদিকে ইউরোপ থেকে ইহুদি অভিবাসীর স্রোত তখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বিরাট আকার ধারণ করেছে ব্রিটিশ সরকার নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করলেও তা সেভাবে কাজে দেয়নি। বরং ইহুদি রাষ্ট্রের দাবিতে ইহুদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তত্পর হয়ে ওঠে। জায়নবাদী৭ নেতারা তাঁদের মদদ দিতে থাকেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের দুই মাস আগে ১৯৪৮ সালের ১০ মার্চ ডেভিড বেন গুরিয়ান ও অন্যান্য শীর্ষ জায়নবাদী নেতা গোপনে মিলিত হন ফিলিস্তিনিদের নৃতাত্ত্বিক শুদ্ধি অভিযান৮ চরমে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে। এর সাংকেতিক নাম দেওয় হয় প্ল্যান দালেত (প্ল্যান ডি)। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৩০-এর দশকে, যখন ন্যাশনাল মিলিটারি অর্গানাইজেশন ও স্টার্ন গ্যাঙের মতো ইহুদি সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো গঠন করা হয়। প্ল্যান ডির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি গ্রাম ও শহরগুলোয় বোমা হামলা ও লুটতরাজ চালিয়ে মানবশূন্য করে ফেলা হয়, যেন ন্যূনতম আরব জনগোষ্ঠী নিয়ে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি সময়ের ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়ান ১৯৩৭ সালেই লিখেছিলেন, ‘আরবদের অবশ্যই চলে যেতে হবে। এ জন্য একটা সুযোগময় মুহূর্ত সৃষ্টি করতে হবে। যেমন একটি যুদ্ধ।’ তিনি কঠোর নির্দেশনা জারি করেছিলেন এই বলে, ‘প্রতিটি আক্রমণ শেষ হতে হবে দখল, ধ্বংস ও বিতাড়ন দিয়ে।’ আর তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে পরবর্তী সময়ে দার ইয়াসিনের মতো গণহত্যা সংঘটিত হয়। তেল আবিব, হাইফা, জেরুজালেম ও অন্যান্য এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম ও শহর হামলা চালিয়ে উজাড় করে ফেলা হয়, যা কিনা আট লাখ ফিলিস্তিনিকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করে। হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়, যার বেশির ভাগটাই হয় ঠান্ডা মাথায়। সমপ্রদায়ের নেতাদের বিশেষভাবে নিধনযজ্ঞে আনা হয়। সকল প্রকার দুর্ভোগ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের ‘নাকবা’ শুরু হয়। ইসরায়েলের যুদ্ধবীর মোশে দায়ান দম্ভভরে তাই লিখে গেছেন, ‘আরব গ্রামগুলোর স্থলে ইহুদিদের গ্রাম গড়ে উঠেছে। আপনি ওসব আরব গ্রামের নাম জানবেন না। কেননা, সেগুলোর আর কোনো অস্তিত্বই নেই। এই দেশে এমন একটি স্থানও নেই, যেখানে আগে আরবরা থাকত না।’ আসলে এটা ছিল পদ্ধতিগত ও নৃশংসভাবে ফিলিস্তিনি মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের নৃতাত্ত্বিক শুদ্ধি অভিযান, যা কিনা ৬০ বছর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি করেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিশ্চিহ্নকরণ শেষ হয় ইসরায়েলের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর, দেশটির ভেতরে থেকে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সন্ত্রাসী তত্পরতা অব্যাহত থাকে।৯

৩.

বইটি দুই খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে চারটি অধ্যায়ে লেখক মূলত জায়নবাদের উত্থান ও ইহুদিদের নিজের আবাসভূমির নামে ফিলিস্তিনিদের মাটি দখল করে তাদের বিতাড়িত, নির্যাতিত ও অবরুদ্ধ করে রাখার কৌশল ও প্রক্রিয়ার তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় খণ্ডে বিভিন্ন সময়ে তিনি যেসব বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন, সেগুলো থেকে বাছাইকৃত কিছু নিবন্ধ ঠাঁই পেয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে তিনি যেভাবে কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা ও ইসরায়েলি রাষ্ট্রযন্ত্রের সহিংসতা ও কূটচাল প্রত্যক্ষ করেছেন, সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনাসহ বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণ রয়েছে। যেহেতু এসব ঘটনা ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে সংঘটিত, তাই এখন পড়তে গেলে কিছুটা ধাক্কা খেতে হয়। তবে ঐতিহাসিক বিবরণী হিসেবে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। বরং এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে প্রতীয়মান হয় যে বারবার একই ঘটনা ঘটছে। আর তা ঘটানো হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা বাড়ানোর জন্য। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে নিস্তেজ করার জন্য।

জোনাথান কুক বইটি রচনায় সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞের দক্ষতার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। যাঁরা ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডি সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন এবং যাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের পটভূমি জানেন, তাঁদের জন্য বইটি সুপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কুক এই বইয়ের মাধ্যমে যে থিসিস বা প্রতিপাদ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, তা এ রকম: ‘ইসরায়েলি নীতির লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনিদের চিরতরে মুছে ফেলা।’ তথ্য-উপাত্ত, যুক্তি ও বিশ্লেষণ দিয়ে এই প্রতিপাদ্য প্রমাণ বা প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ কাজ নয়। ইতিহাস যখন খুব নিবিড়ভাবে নিরীক্ষা করা হয়, তখন অনেক সময়ই তা দুর্ঘটনার জোড়াতালি বলে প্রতীয়মান হয়। আর তাই প্রকৃত কাজটি কঠিনতর হয়ে ওঠে। কুক কঠিনতর কাজটি বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেছেন। এ জন্য তিনি প্রচুর বই ও নথিপত্র ঘেঁটেছেন এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি জড়ো করেছেন। এরপর সেগুলোর বিন্যাস ঘটিয়েছেন ও বিশ্লেষণ করেছেন।

কুকের এই প্রতিপাদ্যের সমর্থন মেলে আরও অনেকের বিশ্লেষণেই। যেমন ভারতীয় বিশ্লেষক জন চেরিয়ানের ভাষায়, ‘ইসরায়েল সৃষ্টির আগে ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি গ্রাম যে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, তা যেন বিশ্ব ভুলে যায়, ইসরায়েল এটাই চাইছে। আরও চাইছে, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতির অব্যাহত সমপ্রসারণ। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। তাই তারা ইসরায়েলের “মেমোরিসাইড” মোকাবিলায় ক্রমাগত নিজেদের কথ্য ইতিহাস, লেখনী ও সাহিত্যের দিকে জোর দিয়ে যাচ্ছে। অসলো চুক্তির তামাশা ও ২০০০ সালে ক্যাম্প ডেভিড পদক্ষেপের পর তা আরও জোরালো হয়েছে। এই দুটি ঘটনাই ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের ও তার গুরুদের দ্বিচারিতার প্রকাশ ঘটেছে।...পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই এটাই প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে যে আক্রান্তরা নয়, বরং আগ্রাসীরাই ভুক্তভোগী হচ্ছে। ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণ বিনা বাধায় অব্যাহত রাখছে আর ফিলিস্তিনিরা শান্তিপ্রক্রিয়া অবনমনের জন্য দায়ী হচ্ছে।’১০ ইসরায়েলি শান্তিবাদী আন্দোলনের সংগঠক ও লেখিকা ইয়ায়েল লোটান তাই লিখেছিলেন, ‘জায়নবাদকে সফল হতে হলে অবশ্যই নির্দয় হতে হবে। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে এর নেতারা এমনটাই ঘোষণা করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদি নেতাদের মনে হলো যে ইউরোপে ইহুদিদের যেভাবে গণহত্যা করা হয়েছে, তারপর আর অন্য কারও প্রতি কোনো সদয় বিবেচনা দেখানো থেকে তারা (ইহুদিরা) যেন ছাড় পেয়েছে। বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত হলোকাস্ট ও অচিন্তনীয় ধ্বংসযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে তাই কয়েক ডজন গ্রামবাসীকে গণহত্যা এবং কয়েক হাজার বেসামরিক ক্ষুব্ধ মানুষকে গণহারে নতুন সৃষ্ট সীমান্তের ওপারে বিতাড়িত করার মতো ঘটনাগুলো প্রায় উপেক্ষিতই হয়েছে। ডেভিড ও গোয়ালিথ কাহিনি, মিসর থেকে ইসরায়েলিদের বিতাড়িত হওয়া এবং পবিত্র ভূমিতে ইসরায়েলিদের প্রত্যাবর্তনের মতো কাহিনিগুলো বাইবেলের সঙ্গে মিলিয়ে জায়নবাদী বিবরণ তৈরি করা হয়েছে, যা কি না পশ্চিমা বিশ্বের কল্পলোকে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং পশ্চিমারা ইসরায়েলকে আঁকড়ে ধরেছে এবং সব ধরনের সুবিধা প্রদান করেছে। পশ্চিম জার্মানি থেকে ব্যাপক প্রত্যাবর্তন ইসরায়েলকে নিখাদ অবকাঠামো গড়তে সহায়তা করেছে আর জনসংখ্যা দ্রুতই বহুগুণ হয়েছে ইউরোপ ও আরব বিশ্ব থেকে ইহুদিদের অভিবাসনের জোয়ারে।’১১

৪.

বইয়ের প্রথম খণ্ডে কুক সংঘাতের একটি সুবিন্যস্ত পরিক্রমা তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অভ্যুদয়ের অনেক আগে জায়নবাদের বেড়ে ওঠার ইতিহাস থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠার ছয় যুগ পেরিয়ে এসে পশ্চিম তীর ও গাজাকে পরীক্ষাগার বানিয়ে ফিলিস্তিনিদের গুম করার যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে, তার বিবরণী এতে ঠাঁই পেয়েছে। কুক দেখিয়েছেন, জায়নবাদীরা গোড়া থেকেই জাতি বা গোষ্ঠী হিসেবে ফিলিস্তিনিদের অস্বীকার করার একটি নীতি গ্রহণ করে। ‘ফিলিস্তিনিদের জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আপত্তি জানানো ছিল এমন একটি আদর্শিক ধারণার অপরিহার্য উপাদান, যেখানে ফিলিস্তিনে কোনো অ-ইহুদির উল্লেখযোগ্য অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়। গত শতকের শেষ দিকেই জায়নবাদীরা এই ধারণা জনপ্রিয় করে তুলতে শুরু করে যে ফিলিস্তিন একটি “শূন্য ভূমি”, যা কিনা ইহুদিদের উপনিবেশ হওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে’ (পৃ. ২২)। কিংবা জায়নবাদীদের আরেকটি যুক্তি হলো, ‘ফিলিস্তিনিরা কখনোই জনগোষ্ঠী হিসেবে বিরাজ করত না, কেননা তারা হলো আরব, যা কি না একটি বৃহত্তর জাতির অংশ আর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে রয়েছে’ (পৃ. ১৪)। তবে জায়নবাদীদের এই ধরনের বক্তব্য ও প্রচারণা যে মিথ্যা তা তারা নিজেরাও জানে। তবু ভূখণ্ড দখলের ব্রতে বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের ভেতর এই মিথ্যাই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। আবার এই মিথ্যা নিয়ে জায়নবাদী ইহুদিরা চিন্তিত, তা তাদের কথা ও কাজেই ফুটে উঠেছে। ইসরায়েলের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মায়ার ১৯৬৯ সালে বিলেতের সানডে টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে তাঁর সেই কুখ্যাত মন্তব্য করেন: ‘ফিলিস্তিনি বলে কোনো কিছু ছিল না। কখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী নিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছিল? হয়তো এটা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে দক্ষিণ সিরিয়ায় আর তারপরে ফিলিস্তিন ছিল জর্ডানকে নিয়ে। এটা এমন নয় যে একটি ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনে ছিল, যারা নিজেদের ফিলিস্তিনি জনগণ ভাবত আর আমরা এসে তাদের বিতাড়িত করে তাদের দেশ তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিই। কখনোই তাদের অস্তিত্ব ছিল না’ (পৃ. ১৮)। কুকের বক্তব্য হলো, ‘যদি গোল্ড মায়ারের পর্যবেক্ষণ যে ফিলিস্তিনিদের “কখনোই অস্তিত্ব ছিল না” ব্যাপকভাবে গৃহীত হতো, বাস্তবে ইসরায়েলের এই নীতি প্রয়োগ হতো না। ১৯৪৮ সালের পর ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে মানচিত্র থেকে ফিলিস্তিনিদের এলাকার নামগুলো অপসারণ শুরু করে যেন সাবেক ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতির বিষয়টি অদৃশ্য করে দেওয়া যায়। সরকার একই প্রক্রিয়ায় সরকারি মানচিত্র থেকে সবুজ রেখা মুছে ফেলতে থাকে। সবুজ রেখা হলো জর্ডানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে পশ্চিম তীরের সঙ্গে সীমানা রেখা, যা কি না ইসরায়েলের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। স্কুলের পাঠ্যবই থেকেও সবুজ রেখা তুলে দেওয়া হয় বৃহত্তর ইসরায়েলকে সরকারি স্বপের মধ্যে না রেখে শ্রেণিকক্ষের বাস্তবতায় নিয়ে আসার জন্য’ (পৃ. ৫৫)।

কুক বলছেন যে বৃহত্তর ইসরায়েলের মানে হলো পশ্চিম তীর ও গাজাকেও শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলে বিলীন করে ফেলা। তাই বইয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে পশ্চিম তীর ও গাজাকে ঔপনিবেশীকরণের ইতিহাস, যার শুরু ১৯৬৭ সালে। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর মিসরের কাছ থেকে সিনাই ও গাজা, জর্দানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম আর সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান উপত্যকা দখল করে নেয়। পরবর্তী সময়ে ক্যাম্প ডেভিড শান্তি চুক্তি অনুসারে মিসর সিনাই ফেরত পায়। কিন্তু বাকি এলাকাগুলো ইসরায়েলের দখলেই থেকে যায়। এটি আজও অব্যাহত আছে ভিন্ন রূপে। দখল করার পর ধীরে ধীরে শুরু হয় ইহুদি বসতি স্থাপন, যেন বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর করে ফেলা যায়। কুক লিখছেন, ‘যদি পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করা না যায়, তাহলে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে। ইসরায়েলের একই সঙ্গে দুটি জিনিস প্রয়োজন: জীবনযাপন অসহনীয় করে তুলে ফিলিস্তিনিদের অভিবাসনকে উত্সাহিত করা এবং অধিকৃত ভূখণ্ডে খালি হওয়া জমিতে ইহুদিদের উপনিবেশ গড়ে তোলা’ (পৃ. ৬০)। সমস্যা হলো, দখলকৃত ভূখণ্ডগুলো ইসরায়েলে সংযোজন করে নিতে গেলে আন্তর্জাতিক নিন্দা ও চাপের মুখে পড়তে হয়, আবার এই ভূখণ্ডের অধিবাসী ফিলিস্তিনিদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হয়, যা ইহুদি রাষ্ট্রে ইহুদিদের আনুপাতিক হার কমিয়ে দেয়। এই দুই সমস্যা মোকাবিলায় কিছু কূট কৌশলের আশ্রয় নেয় জায়নবাদী রাষ্ট্রটি। প্রথমত, তারা ‘গোপনে সংযোজন’ (ক্রিপিং অ্যানেকজেশন) নীতি গ্রহণ করে। ১৯৭০-এর দশকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ান তাই ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোমরা কুকুরের মতো বেঁচে থাকবে আর যখন ইচ্ছে চলে যেতে পারো। আমরা দেখব পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে।... পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা হয়তো দুই লাখ মানুষ কম পাব, আর তা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ (পৃ. ৫৯)। তবে এই গোপন সংযোজনের কাজেও আন্তর্জাতিক আইন বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, ‘সামরিক দখলদারির ক্ষেত্রে অধিকৃত ভূখণ্ডের বেসামরিক জনগণের অধিকার হেগ রেজল্যুশন ও চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন দ্বারা সুরক্ষিত। এসব কনভেনশনের দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: অধিকৃত ভূখণ্ডে দখলদার রাষ্ট্র নিজেদের জনগণকে স্থানান্তর করতে পারবে না এবং অধিকৃত ভূখণ্ডের বিদ্যমান আইন মানতে হবে। এর উদ্দেশ্য হলো দখলকৃত ভূখণ্ডের রাজনৈতিক, জনসংখ্যাগত ও ভৌত বাস্তবতা নিজেদের অনুকূলে পরিবর্তন করা থেকে দখলদারি শক্তিকে বিরত রাখা। কিন্তু ইসরায়েলে তো এসব কাজই করা দরকার। কেননা, পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে এই ভূখণ্ডগুলো বৃহত্তর ইসরায়েলে বিলীন করতে হবে। আইনজীবীতে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে ইসরায়েল তাই আন্তর্জাতিক আইন অপব্যবহার করাকে বৈধতায় রূপ দিতে কোনো দেরি করেনি। ...ইসরায়েল যুক্তি দেখাতে থাকে যে পশ্চিম তীর ও গাজা আসলে দখলকৃত নয়, প্রশাসিত ভূখণ্ড, যেগুলো কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌম আইনের অধীনে ছিল না এবং ইসরায়েল সেগুলো যুদ্ধে অধিগ্রহণ করেছে। জর্ডান ও মিসর উভয়েই ১৯৪৮ সাল থেকে এই দুই ভূখণ্ড দখল করে ছিল। আর তার আগে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটে শাসিত হতো’ (পৃ. ৬১-৬২)। যদিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞ ইসরায়েলের তৈরি করা জেনেভা কনভেনশনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি, তার পরও দেশটির ভেতরে তা বেশ সমর্থন পায়। কিছু পশ্চিমা দেশও নীরবে এই ব্যাখ্যা মেনে নেয়।

কুক দেখিয়েছেন যে এভাবে আইনি মারপ্যাঁচ দিয়ে দখলকৃত ভূখণ্ডগুলো শাসনের নামে এখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জমি-সম্পত্তি-বাগান থেকে শুরু করে জলাধার ও রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের জন্য এক আইন আর ইহুদিদের জন্য আরেকটি—এই চর্চা শুরু হয়। ‘অবশ্যই দখলকৃত ভূখণ্ডগুলোয় ইহুদি উপনিবেশ বৃদ্ধি ও সমপ্রসারণ সম্ভব হতো না যদি বসতি স্থাপনকারী সেটেলাররা একই ধরনের আইন ও শাসন প্রয়োগের সম্মুখীন হতো, যা কি না ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত। এসব ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা আইনকানুন চালু করে ইসরায়েল এই সমস্যার সমাধান করে ফেলে’ (পৃ. ৬৭)। একই ভূখণ্ডে দুই জনগোষ্ঠীর একটি ইহুদি, আরেকটি আরব বসবাস করলেও দুটি ভিন্ন আইনি ব্যবস্থা দ্বারা প্রশাসিত হওয়ার এই চর্চা আন্তর্জাতিকভাবে বর্ণবাদনীতি হিসেবে স্বীকৃত। তবে ইসরায়েলের সেরা আইন বিশেষজ্ঞরাও এটি মানতে অস্বীকার করেছেন। এভাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নাগরিক, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কেড়ে নেয়। শুধু তা-ই নয়, ‘ইসরায়েল একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পধ রুদ্ধ করে দেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ লুটে নেয়। যেমন সামরিক আদেশ ৯২ দ্বারা দখলকৃত ভূখণ্ডের সব পানির ওপর ক্ষমতা ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয় যেন ইসরায়েল সব পাহাড়ি ভূগর্ভস্থ জলাধার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা কালক্রমে দেশটির বহনযোগ্য পানির অন্যতম প্রধান উত্স হয়ে ওঠে। তদুপরি এই আদেশ অনুসরণ করে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি পানি সরবরাহ গ্রিডে যুক্ত করা হয়, যা কার্যত দুই অঞ্চলের পার্থক্যকে অস্বীকার করার শামিল হয়। ১৯৭৯ সালের পর পশ্চিম তীরের পানির দায়িত্ব সামরিক সরকারের হাত থেকে ইসরায়েলি পানি কোম্পানি মেকোরোতের হাতে দেওয়া হয়’ (পৃ. ৬৯-৭০)।

ইহুদি আবাস গড়ে তোলার জন্য জমি দরকার। ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে বলপূর্বক জমি কেড়ে নিয়ে নিন্দা কুড়ানোর চেয়ে আইনি কৌশলে জমি অধিগ্রহণ করা কম নিন্দনীয়—এই নীতি অনুসরণ করে ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জমি কেড়ে নেওয়া হতে থাকে। কুক দেখিয়েছেন যে ১৯৪৮ সালের নাকবার সময় যেসব ফিলিস্তিনি বিতাড়িত হয়েছিল, তাদের জমি পরিত্যক্ত দেখিয়ে দখলে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল এমনভাবে আইন তৈরি করে যেন ওসব ফিলিস্তিনি বা তার উত্তরাধিকারীরা আর কখনোই জমির ওপর অধিকার দাবি করতে না পারে।

৫.

ইসরায়েল একদিকে বসতি স্থাপন করেছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের সকল প্রকার অধিকার ক্রমাগত অস্বীকার করেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিরোধকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে আর তাই সামরিক অভিযান যুক্তিসংগত প্রমাণের চেষ্টা করেছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন বলে কোনো কিছুর অভ্যুদয় যেন হতে না পারে, সে জন্য নানা ধরনের কূটচাল অব্যাহত রেখেছে। ১৯৬৭ সাল থেকেই দখলকৃত ভূখণ্ডগুলোর বিষয়ে ইসরায়েলের সরকার ও নীতিনির্ধারকেরা বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। তবে পশ্চিম তীর ও গাজাকে পৃথক রাখার বিষয়ে কখনোই কোনো দ্বিমত হননি। কুক লিখেছেন যে একপর্যায়ে ‘জর্ডান বিকল্প’ ও ‘মিসর বিকল্প’ নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম তীরকে জর্ডানের সঙ্গে আর গাজাকে মিসরের সঙ্গে যুক্ত করে সীমিত স্বাধীনতা দেওয়া। ২০০৫ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়াল শ্যারন গাজা থেকে ইহুদি বসতি ও সেনা প্রত্যাহার করে নেন। সে সময়ই ‘শ্যারন চেষ্টা করেছিলেন ফিলিস্তিনকে দুই ভাগে ভাগ করতে বা তাঁর কথামতো দুুই ছোট্ট ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র (মিনি স্টেট) গঠনের: পশ্চিম তীরে “পূর্বাঞ্চলীয় ফিলিস্তিন” আর গাজায় “পশ্চিমাঞ্চলীয় ফিলিস্তিন”। শ্যারন চেয়েছিলেন দুই ভূখণ্ডকে ভিন্ন মর্যাদা দিতে এবং দুইয়ের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক ও ভৌত যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে। বরং প্রতিটি ছোট্ট রাষ্ট্র তার আরব দেশের পশ্চাদভূমি হিসেবে পরিচিত হবে, পশ্চিম তীর জর্ডানের আর গাজা মিসরের’ (পৃ. ১১৮-১১৯)। কুক এই পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন এই বলে যে এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল আসলে ফিলিস্তিনিদের দায়দায়িত্ব প্রতিবেশী দুটো আরব রাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। একই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দায়ও তাদের ওপর চাপানোর সুযোগ করতে চেয়েছে। এই পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় ইসরায়েলের অবশ্য তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং পশ্চিম তীরে সবুজ রেখা ধরে প্রাচীর নির্মাণ অব্যাহত রেখে কার্যত পশ্চিম তীরকে সব দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে গাজা থেকে বসতি ও সেনা প্রত্যাহার করা হলেও এর স্থল, সমুদ্র ও আকাশ—সবই অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গাজায় প্রবেশ করতে ও সেখান থেকে বের হতে হলে ইসরায়েলি সেনা প্রহরা অতিক্রম করতে হয়। গাজাবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় ও চিকিত্সাসামগ্রীর চালান পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। আর হামাস ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর পশ্চিমাদের সমর্থনে গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। আর এ পর্যন্ত তিনবার১২ ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে গাজায় হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে, হাজার হাজার পুরুষ-নারী-শিশুকে পঙ্গু করেছে, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, খাদ্য-পানীয় নষ্ট করেছে, অবকাঠামো বিধ্বস্ত করেছে। তিনবারই হামাস প্রতিরোধের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে ও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট ছুড়ে সামান্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। তবে প্রতিবারই একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছে।

আসলে ইসরায়েল ক্রমাগত অবরোধ-আক্রমণ-হত্যা চালিয়ে কী করতে চায়? ইসরায়েলি সমাজবিজ্ঞানী বারুখ কিমমারলিংকে উদ্ধৃত করে জোনাথান কুক লিখেছেন, ‘প্রথমত, ফিলিস্তিনের নেতাদের ও বস্তুগত অবকাঠামোসহ গণবলয় ধ্বংস করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিবলয় ও যেকোনো স্বাভাবিকতা ও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রাত্যহিক জীবন উপর্যুপরি অসহনীয় করে তোলা। ...এ সবকিছুই নকশা করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা নামিয়ে আনার, তাদের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার, পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার, ইসরায়েলিদের কথামতো যেকোনো ব্যবস্থা মেনে নেওয়ার এবং সর্বোপরি এই ভূমি থেকে স্বেচ্ছায় গণহারে অভিবাসী হওয়ার জন্য’ (পৃ. ১৩৩)। কুক আরও লিখেছেন, ‘১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময়ে মোশে দায়ান বলেছিলেন যে “ফিলিস্তিন রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে গেছে।” পরবর্তী তিন দশকে ইসরায়েলি নেতারা এটা নিশ্চিত করেছেন যে তাঁর মূল্যায়ন যেন সঠিক প্রমাণিত হয়। একই সঙ্গে তাঁরা সমালোচনা রুখতে সিমেটিক-বিরোধী স্পর্শকাতরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতাকে কাজে লাগিয়েছে।’ প্রফেসর ইউরাম শাহার দখলকৃত ভূখণ্ডে পরোক্ষভাবে ইসরায়েল নীতির সূত্র বর্ণনা করেছেন, যার মূল কথা হলো যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলি নৃশংসতাকে তাত্ক্ষণিক, অপদ্ধতিগত ও নিরাপত্তার প্রয়োজনজনিত হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় তাদের চোখ বুজে থাকবে। শাহারের ভাষায়: ‘সেখানে কোনো গণহত্যা হয়নি, ভূখণ্ডের কোনো ব্যাপকভিত্তিক ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি, কোনো গণধর্ষণ হয়নি, কোনো নির্যাতন শিবির হয়নি, কোনো গণ-অনাহার হয়নি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের পদ্ধতিগতভাবে নির্বাসনে পাঠানো হয়নি, সেখানে কোনো কসোভো বা রুয়ান্ডা হয়নি—এমন কোনো পরিস্থিতি দেখা দেয়নি, যে জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় সক্রিয় হয়ে উঠবে।’ অন্যভাবে বললে যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল দেখবে যে পলিটিসাইড (ফিলিস্তিনিদের গণ ও ব্যক্তিগত জীবন ক্রমাগত বিধ্বস্ত করে দেওয়ার নিরন্তর লড়াই) জেনোসাইডের প্রচলিত অর্থের (নির্যাতন শিবির ও হত্যাযজ্ঞ) সমার্থক না হয়ে উঠছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এটি চালিয়ে যাবে।১৩ যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতি মাসে ইসরায়েলি বোমা হামলায় বা খাদ্য অবরোধে শত শত বা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি না মরে ডজন খানেক করে ফিলিস্তিনি মারা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমা রাজনীতিকদের বিবেক পরিষ্কারই থাকবে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, যেমনটা বারুখ বলেছেন, জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনকে চিরতরে অদৃশ্য করে দেওয়া। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে, দ্বিতীয় ইনতিফাদার দুই বছর পর ইসরায়েলের এক সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল এইটান বেন এলিয়াহু ইসরায়েলি টেলিভিশনে ঘোষণা করেছিলেন, ‘কালক্রমে এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা আমাদের কমিয়ে আনতেই হবে।’ তাঁর এই নৃতাত্ত্বিক শুদ্ধি অভিযানের ভাবনা ১৯৪৮ সালে নেওয়া বেন গুরিয়ানের সেই নীতিরই শামিল, যখন বোমা মেরে, অনাহারে ফেলে ও পঙ্গু বানিয়ে, ভীতি সৃষ্টি করে ফিলিস্তিনিদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। এলিয়াহুর ঘোষণার পাঁচ বছরের বেশি সময় পরে গাজার অধিবাসীরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু করেছে, যেখানে তাদের জ্বালানি, বিদ্যুত্, ওষুধ এবং নিত্যদিনের খাবার ছাড়া সেই প্রস্তুর যুগে ফিরে যেতে হবে। পশ্চিম তীরেও যে ঘেটোগুলো বানিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোও খুব একটা পিছিয়ে নেই। গাজার কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রামের ইয়াদ আল সেরাজ ২০০৮ সালের প্রথম দিকে এক ই-মেইলে লিখেছিলেন যে ইসরায়েলি নীতি একপর্যায়ে মিসরকে বাধ্য করবে উপায়হীন হয়ে গাজা সীমান্ত খুলে দিতে। এরপর কী হবে? ‘দলে দলে মানুষ কীভাবে ছুটে পালায়,১৪ তা দেখার জন্য অপেক্ষা করুন’, বলে সতর্ক করেছেন তিনি’ (পৃ. ১৩৪-১৩৫)।

৬.

বইটির দ্বিতীয় খণ্ডে জোনাথান কুক অনেক বিষয় সংক্ষেপে অবতারণা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা কীভাবে প্রতিনিয়ত হয়রানি, নির্যাতন আর অবমাননার শিকার হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া আর কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে তাদের। কার্যত খাঁচায় বন্দী জীবন। জীবিকার সন্ধানে সামরিক চেকপোস্টগুলো পেরিয়ে ইসরায়েলের ভেতর আসতে ও ফেরত যেতে কী নির্মমতার শিকার হতে হয় ছেলে-বুড়ো, নারী-শিশু সবারই। সামরিক কর্মকর্তাদের মর্জিমাফিক প্রবেশের অধিকার মেলে। কখনো গুনতে হয় বড় অঙ্কের অর্থদণ্ড, যা কিনা এক মাসের উপার্জনের চেয়ে বেশি। কুক দেখিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার যেভাবে কালো মানুষদের জন্য ‘বানতুসতানস’ তৈরি করেছিল, তার চেয়েও অনেক খারাপভাবে ফিলিস্তিনিদের বসবাস করতে বাধ্য করছে। আর তাই ইসরায়েলের ভেতর বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের নাগরিক হয়েও নানা বঞ্চনার শিকার। আর এদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর ভয় যেন বাড়ছে। কেননা, এখনই ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা এক-পঞ্চমাংশের বেশি হলো এই ফিলিস্তিনিরা, যাদের ইসরায়েলি আরব বলে অভিহিত করা হয়। কেননা, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে স্বীকার করে না। ভয় এ জন্য যে আরবদের জন্মহার বেশি এবং একপর্যায়ে তারা হয়তো সংখ্যায় ইহুদিদের সমান হয়ে যাবে এবং ছাড়িয়েও যেতে পারে। এই ইসরায়েলি আরবরা তাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে ক্রমেই সোচ্চার হচ্ছে। যদিও আইন করে আরবদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তার পরও নানা সামাজিক আন্দোলনে আরবরা যুক্ত হয়ে পড়েছে।

কুক আরও দেখিয়েছেন, কীভাবে সাংবাদিকেরা ইসরায়েলের ভাষ্যই নিজেদের ভাষায় প্রকাশ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত আর এড়িয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রকৃত কারণ ও ক্রমেই ফিকে হয়ে যাওয়া স্বাধীনতার স্বপ্ন। কুক লিখেছেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের স্বীকৃতি দেয়নি, দখলকৃত জনগণের ওপর বে-আইনি সহিংসতা চালানো পরিত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং সমপ্রতি সময়ে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো বাতিল করেছে। দখলদারি প্রতিরোধ করার অধিকার ফিলিস্তিনিরা ত্যাগ করবে, এই আশা করার আগে গণমাধ্যম কি কখনো এই দাবি করবে যে ইসরায়েলকে এই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে?’ (পৃ. ২২৩)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে অনেক আগেই তীব্র সমালোচনা করে আসছেন নোয়াম চমস্কি। নিজে ইহুদি হয়েও জায়নবাদ ও ইসরায়েলের অন্যায় কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচক এই মার্কিন ভাষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী নিজ দেশকে বারবারই সতর্ক করেছেন ইসরায়েলকে যুক্তিবুদ্ধিহীনভাবে সমর্থন করার ও মদদ দেওয়ার বিষয়ে। দুই দশকের বেশি সময় আগে তিনি বলেছিলেন, ‘দ্বিমুখিতা পরিত্যাগ করাই হবে উপযুক্ত কাজ। হয় আমরা বৃহত্তর ইসরায়েল গঠনে সমর্থন দেব এবং এর ভয়াবহ পরিণতির নিন্দা করা থেকে বিরত থাকব, নয়তো আমরা এসব কাজের সহায়ক উপাদান ও অনুমোদন প্রত্যাহার করব এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের বৈধ দাবি পূরণ হয়, সে জন্য কাজ করব। এটা এখনো সম্ভব যদিও সম্ভাবনা ক্রমেই কমে অপসৃত হচ্ছে। কেননা, প্রতিটি বছর পার হচ্ছে আর আমরা যে বৃহত্তর ইসরায়েল গঠন করছি তা শক্ত মাটি পাচ্ছে। এর সামরিক শক্তি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, যা কি না শুধু যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন থেকে পিছিয়ে আছে বলে মনে করা হয়। শিগগির হয়তো এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হতে হবে যেখান থেকে ফেরার উপায় থাকবে না। আর পরিণতিটা প্রযোজ্য হবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য, এই অঞ্চলের জন্য, এমনকি সম্ভবত গোটা দুনিয়ার জন্য।’১৫

জোনাথান কুক দেখিয়েছেন যে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতিটা ক্রমেই এই না-ফেরার দিকেই যাচ্ছে, যার পরিণতি ভয়াবহ জেনেও আমেরিকাসহ পশ্চিমারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে কত শত কূটনৈতিক প্রয়াস নেওয়া হয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসার জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনোই অগ্রগতি হয়নি ফিলিস্তিনিদের। সেদিকে লক্ষ রেখে বইয়ের ভূমিকায় তাই লিখেছেন, ‘একটি “প্রক্রিয়ার” শেষ হিসেবে একটি “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র” নিয়ে অশেষ কথা বলা হলেও তা আসলে এখন স্বপ্ন ছাড়া আর দৃশ্যমান কিছু নয়। কূটনীতিকেরা একে “দিগন্ত” বলে অভিহিত করলেও ভুলে যাচ্ছেন অথবা খারাপভাবে বললে বোঝাচ্ছেন যে দিগন্ত সর্বদা রংধনুর মতো, যা কখনোই ধরা যায় না। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পথে অবশ্যই বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইসরায়েল, যে কিনা একটি স্বঘোষিত নৃতাত্ত্বিক রাষ্ট্র১৬ আর যাকে কিনা বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় সত্যভ্রষ্ট হয়ে গণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করে। এই বইয়ের যুক্তিগুলো থেকে এটা খুব পরিষ্কার হবে আর আমিও বিশ্বাস করি যে ইসরায়েল ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কোনো শান্তি বা মিলনসাধন সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিলিস্তিন ও এর জনগণকে ফিরে আসতে দেওয়া হবে’ (পৃ. ১০)।

দুই রাষ্ট্রের বা এক রাষ্ট্রের সমাধান নিয়ে যে বিতর্ক আছে, সেটি দিয়ে কুক তাঁর বইটি শেষ করেছেন। সেখানে তিনি উপসংহার টেনেছেন এভাবে, ‘সত্যি কথা হলো, এক রাষ্ট্র এবং প্রকৃতই দুই রাষ্ট্র উভয় ব্যবস্থাই অসম্ভব। কেননা, ইসরায়েল ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবেই আধিপত্য বিরাজ রাখতে চায়। তাই সমাধানের অন্তরায় ভূখণ্ড ভাগ করা নয়, বরং জায়নবাদ স্বয়ং যার আদর্শ হলো নৃতাত্ত্বিক শ্রেষ্ঠত্ব আর এটাই ইসরায়েলের বর্তমান গোঁড়ামি। যতক্ষণ পর্যন্ত জায়নবাকে কীভাবে পরাস্ত করা যায় এর সঠিক জবাব পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমাধানের আশা নেই। এর সর্বোত্তম উপায় হলো দুই রাষ্ট্রের স্বপ্নে যারা মোহাবিষ্ট, তাদের মোহ কাটানো এবং ব্যাখ্যা করা যে শান্তিপ্রক্রিয়ায় ইসরায়েল কেন স্থায়ীভাবে মন্দ বিশ্বাসের জায়গায় আছে। অন্যভাবে বললে, আমরা যদি দুই রাষ্ট্র সমাধানের হোলি গ্রেইল১৭ নিয়ে মাতামাতি থেকে নিজেদের বিরত করি, তাহলে হয়তো আমরা আমাদের শক্তিকে এমন কিছুতে কাজে লাগাতে পারব, যা কিনা হবে অধিক কার্যকর। সেটি হলো, ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে ও এটিকে মদদ দেওয়া জায়নবাদী আদর্শকে অস্বীকার করা। কালক্রমে জায়নবাদের মর্যাদাপূর্ণ মুখোশ হয়তো খসে পড়বে। আর জায়নবাদ বাদ পড়লে, এক বা দুই রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়ও চূড়ান্তভাবে অপসৃত হবে। অবস্থা যদি তা-ই দাঁড়ায়, তাহলে কেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়ের জন্য ন্যায্য সমাধানটির জন্য আমরা প্রচারণা চালাই না?’ (পৃ. ২৫১)। বলাই বাহুল্য, কুকের কাছে ন্যায্য সমাধান হলো জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ মর্যাদা, স্বীকৃতি ও সব অধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা।

টীকা ও তথ্যসূত্র

1.      Disappearing Palestine

2.     Israel’s Experiment in Human Despair

3.     Sixty Years of Sin-Yael Lotan; Frontline, Vol-25, No-11, May 24-June 6, 2008.

৪.          Anti-Semitic; সেমেটিক-বিরোধী বলতে বোঝায় ধর্মীয় বা নৃতাত্ত্বিক বা জাতীয় গোষ্ঠী হিসেবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, ঘৃণা বা সংস্কার। বাইবেলের ভাষ্য ধরে ইহুদিদের দাবি, যারা প্রাচীন হিব্রু সংস্কৃতির ধারক-বাহক, শুধু তারাই সেমেটিক জনগণ। আর সেই ধারায় একমাত্র ইহুদিরাই শুধু সেমেটিক। বলা যায়, এভাবেই জায়নবাদীরা ইহুদিদের সবার চেয়ে আলাদা ও অধিকতর মর্যাদাশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

৫.          বিস্তারিত রয়েছে জোনাথন কুকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে (http://www.jonathan-cook.net)

৬.         Ilan Pappe, The Ethnic Cleansing of Palestine, Oneworld Publications, London; 2014. pp-13

৭.          বস্তুত, ১৮৯৬ সালে থিওডর হারজেল এই জায়নবাদী ধারণার প্রবর্তন করেন এবং ইহুদিদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি স্থাপনের দাবি তুলে ধরেন। জায়নবাদের মূল কথা হলো, ইহুদিরা নিজেদের পবিত্র ভূমিতে ফিরে যাবে এবং সেখানে নিজেদের রাষ্ট্র ও সরকার গঠন করবে। পবিত্র ভূমি বলতে জেরুজালেমকে (ইয়ারুশালেম) ঘিরে আশপাশের অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। জায়নবাদের আরও দাবি, এটা ইহুদিদের জন্য ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি ভূমি (প্রমিজড ল্যান্ড) আর তাই ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা শুধু বৈধ কাজই নয়, এটি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইহুদিদের একটি অংশ এই ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরোধী। তারা মনে করে, এই রাষ্ট্র পবিত্র ধর্মগ্রন্থ তৌরাতের নির্দেশনারও লঙ্ঘন। আর তাই তারা ইহুদিবাদ ও জায়নবাদকে কখনোই এক মনে করে না।

৮.         Ethnic Cleansing

৯.         John Cherian, ‘The Catastrophe,’ Frontline, Vol-25, No-12, June 7-20, 2008. pp 60-61

10.     John Cherian; ibid, 2008. pp-62

11.     Lotan, ibid, 2008.

১২.        অপারেশন কাস্ট লিড ( ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে ১৮ জানুয়ারি ২০০৯); অপারেশন পিলার অব ডিফেন্স (১৪-২১ নভেম্বর, ২০১২) এবং অপারেশন প্রটেকটিভ এজ ( ২০১৪)

১৩.        ইসরায়েলি সমাজবিজ্ঞানী বারুখ কিমমারলিং ‘জেনোসাইড’ শব্দের বিকল্প হিসেবে ‘পলিটিসাইড’ উদ্ভাবন করেছেন এই অর্থে যে ইসরায়েলিরা গণহত্যা চালাচ্ছে না, তবে রাজনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনিদের সব দিক থেকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে।

১৪.        Wait for the Exodus.

15.     A Self-Declared Ethnic State

17.     Holy Grail -খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিষ্টের শেষ নৈশভোজে ব্যবহূত পবিত্র সুরাপাত্র।