জামদানির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভৌগোলিক নির্দেশনা

সারসংক্ষেপ

বয়নশিল্পের ঐতিহ্য দক্ষিণ এশিয়ায় চার হাজার বছরের। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলা ব-দ্বীপে তুলার চাষ ও উত্পাদন, বিভিন্ন রকম অসাধারণ মসৃণ কাপড়ের জন্য বিশেষ জায়গা দখল করে আসছে। ব-দ্বীপ অঞ্চলের মধ্যে বৃহত্তর ঢাকা প্রাচীনকাল থেকে মসলিনের উত্পাদন ও বাণিজ্যের জন্য অন্যতম জায়গা ছিল। অনুমান করা হয় যে মসলিনের মধ্যে ৩৬টি ভিন্ন ভিন্ন পণ্য রয়েছে।  জামদানি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। জামদানি তৈরির কলাকৌশল শুধু ঢাকার আড়ংয়ের কারিগরদের আয়ত্তাধীন। মধ্য ঊনবিংশ শতকে ওয়াটসন যে ১ হাজার ৪০০ নমুনা সংগ্রহ করেন। তার ১৫টি নমুনার মধ্যে দুটি জামদানির নমুনা ছিল। দক্ষিণ এশিয়া বা পৃথিবীর অন্য কোথাও জামদানি নামে কোনো পণ্য পরিচিতি পায়নি। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে দক্ষিণ এশিয়ার বয়নশিল্পের নকশা, কৌশল, গঠনবিন্যাস নির্ভর করে আসছে। ভৌগোলিক নির্দেশনা (Geographical Indication) আইন অনুযায়ী ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক দিক দিয়ে জামদানি বিশেষভাবে ঢাকা অঞ্চলেরই। সে বিবেচনায় ঢাকা ভৌগোলিক নির্দেশনা দাবি করে।

মুখ্য শব্দগুচ্ছ: ঢাকাই জামদানি, বয়ন-প্রক্রিয়া, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জামদানি বাণিজ্য, ভৌগোলিক নির্দেশনা।

জামদানির পরিচিতি

জামদানি শব্দটি ফারসি শব্দ জামা(ই) থেকে এসেছে, যার অর্থ কাপড়।১ ফারসিতে জামেদান অর্থ জিনিসপত্র রাখার ছোট ঘর অথবা আলমারি। বয়নশিল্পের ইতিহাসে জামদানিকে শাড়ি হিসেবে দেখা হয়, যা বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় পোশাক। এখানে জামদানির তিনটি সংজ্ঞা দেওয়া হলো:

ক. একধরনের কাপড়, যেখানে ফুল বোনা হয় (সাধারণত মসলিন) (হান্টার ১৮০৮)।

খ. ফুল এবং অন্যান্য নকশায় বোনা ঢাকার মসলিন (নাইট ১৮৮১)।

গ. নকশা করা ও ফুলেল ঢাকার মসলিন।

জামদানির বিশিষ্টতা বুঝতে হলে ফুলময়তা ছাড়াও অন্যান্য সূক্ষ্ম জিনিসে নজর দিতে হবে। এর গঠন জ্যামিতিক এবং নকশায় ফুল ছাড়াও অন্যান্য জিনিস যেমন—গাছ, মাছ বা লতাপাতা থাকতে পারে। জামদানির বৈচিত্র্য অনেক কিন্তু তিনটি মূল নকশা আছে। ‘জাল’ সবচেয়ে জটিল, যেখানে পুরো জমিনজুড়ে কাজ থাকে; ‘তেরচি’তে জ্যামিতিক নকশা থাকে এবং ‘বুটি’তে ফুল ও ঝরনা পুরোটা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে (গুজনাভি ২০০৬: ৪৭ ; আরও দেখুন গিলো ও বার্নার্ড ২০০৮: ১৮৬)। এর বয়ন-প্রক্রিয়া এবং বাস্তবায়নের ধরন অনন্য। এককথায়, নকশার ঐশ্বর্য, তাঁতিদের দক্ষতা ও কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে জামদানি খাঁটি বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে বিকশিত হয়েছে। ওয়াটসন দাবি করেন, জামদানি অথবা মসলিনকে ভারতীয় কারিগরদের সেরা শিল্পকর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়, যা অত্যন্ত চমত্কার, নিখুঁত, সুকৌশলী। কঠিন নকশার কারণে তারা ঢাকা তাঁতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পণ্য উত্পাদন করে।

উত্পাদনের ভৌগোলিক পরিবেশ

জামদানির ঢাকাভিত্তিক ভৌগোলিক নির্দেশনা আমরা দুটি বিষয়ের মাধ্যমে বিবেচনা করতে পারি। প্রথমত, এই অঞ্চলে তুলা উত্পাদনের জায়গা এবং পরিবেশ। দ্বিতীয়ত, জামদানি উত্পাদনের পরিবেশগত অবস্থা। আমরা এখানে দেখব ঢাকা অঞ্চলে জামদানিশিল্পের প্রসারের ক্ষেত্রে কতটুকু ভৌগোলিক অবস্থার প্রভাব রয়েছে।

তুলা চাষের ভৌগোলিক ও পরিবেশগত অবস্থা

ঢাকা অঞ্চলে জামদানির আবির্ভাব ও প্রসার বুঝতে হলে আমাদের তুলা চাষের ক্ষেত্র ও চাষ সম্পর্কে বুঝতে হবে। কারণ, তুলার সঙ্গে সাধারণত মসলিন এবং বিশেষ করে জামদানির সংযোগ রয়েছে। তুলা ইংরেজিতে কটন, যা আরবি ‘কুটন’ থেকে আগত, বাংলার সবচেয়ে পুরাতন বাণিজ্যিক পণ্য। বসু (১৯৫৫: ২৮১-৮২) চার ধরনের তুলার কথা বলেছেন, গসিপিয়াম, বারবাদেনস, গসিপিয়াম হারবাসিয়াম, গসিপিয়াম অ্যাবোরিয়াম বা হিরাসাতাম এবং গসিপিয়াম পারুভিয়ানাম, দক্ষিণ এশিয়া ও চীনের। তুলা দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন রকম হয়। তুলাগাছ সাধারণত তিন ফুট লম্বা ঝোপের মতো হয়। এই ধরনের তুলাকে সংস্কৃতে কার্পাস এবং বাংলায় কাপাস বলা হয় (রক্সবার্গ ১৮৩২: ১৮৪)। রক্সবার্গের মতে, যেহেতু গসিপিয়াম হারবাসিয়াম যা থেকে সমগ্র বাংলা ও করোমানডেল এলাকায় সূক্ষ্ম মসলিন তৈরি হয়, রক্সবার্গের মতে, এই তুলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম ও কোমল (রক্সবার্গ ১৮৩২: ১৮৪)।

সাধারণত বাংলা ব-দ্বীপ, বিশেষত ঢাকা কাপাস উত্পাদনের জন্য বিখ্যাত। প্রাক ঔপনিবেশিক ও ঔপনিবেশিক যুগের কর্মদক্ষ কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করেছে যে ঢাকার সুতার অনন্য মানের কারণ হলো এগুলো মেঘনার শাখাগুলো এবং ব্রহ্মপুত্রের তীরে উত্পাদিত হয় (গুজনাভি: ৩৮)। ঊনবিংশ শতকে জন টেইলর ঐতিহাসিকভাবে তুলা উত্পাদনের এলাকার নাম উল্লেখ করেছেন: ফিরিঙ্গি বাজার, রাজেন্দ্রপুর, ইদিলপুর, বিক্রমপুর ও কার্তিকপুর। শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর এলাকা এখনো কাপাসিয়া নামে পরিচিত এবং এটি দেশের একটি উপজেলা।

অন্য কথায়, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর সংযোগস্থল তুলা উত্পাদনের জন্য উর্বর ভূমি (ম্যাপ ১) (তালুকদার : ৫৭)। হান্টার এক বিশেষ ধরনের তন্তু সম্পর্কে বলেন, যা ‘দেশি’ নামে পরিচিত, এটি ঢাকা বিভাগের উত্তরে কাপাসিয়ার কাছাকাছি অনাদিকাল থেকে উত্পাদিত হয় (হান্টার ১৮৭৭: ৮৪)। জন টেইলর বলেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে সূক্ষ্ম তুলা এই অঞ্চলে (কাপাস) উত্পাদিত হতো (গুজনাভি: ৮৪-৮৫-তে উদ্ধৃত)। কিছু নির্ভরযোগ্য কাজ দ্বারা বোঝা যায়, এই অঞ্চলে জন্মানো কাঁচা তুলার মানের তুলনায় ঢাকা মসলিনের মান বেশি ভালো। ঔপনিবেশিক কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন যে মাটির নির্দিষ্ট বাস্তুসংস্থান অনুযায়ী এই অঞ্চলের নদীর পানিতে লৌহমিশ্রিত সিলিসিয়াস ও চুনসংবলিত মাটি রয়েছে, যা একটি বিশেষ জাতের তুলা চাষে সাহায্য করে (এলেন ১৯১২: ৮, টেইলর ১৮৫১)। বসু (১৯৫৫: ২৮৯) বলেছেন, কাপাসের মূল কাণ্ড যত গভীরে যাবে, তুলার মান ও পরিমাণ তত ভালো হবে। তুলার মান ও পরিমাণ ভালো হবে, যদি মাটি দো-আঁশ বা সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ও তাপ ধারণকারী হয়। বাংলা ব-দ্বীপ অথবা ঢাকা অঞ্চলের আশপাশের এলাকা এই অবস্থার জন্য মানানসই। সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস কার্পাস চাষে সাহায্য করে। ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ুজনিত অনুকূল পরিবেশের কারণে এই অঞ্চলের মধ্যে ঢাকা তুলা উত্পাদনের অনন্য ক্ষেত্র ছিল। এই সত্য প্রতিফলিত হয় যখন ১৭৯০ ও ১৭৯১ সালে ব্রিটিশরা অন্য জায়গায় কার্পাস চাষ করে ব্যর্থ হয় (গুজনাভি: ৮৪-৮৫)।

ম্যাপ-১: বৃহত্তর ঢাকার ঐতিহাসিকভাবে তুলা চাষের অঞ্চলসমূহ

জামদানি উত্পাদনস্থানের ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশগত প্রসঙ্গ

মধ্য উনিশ শতকে জেমস টেইলর বলেছেন, ঢাকা জেলার প্রতিটি গ্রামে কিছু না কিছু বয়ন প্রতিষ্ঠান ছিল, কিন্তু বড় উত্পাদন অঞ্চলগুলো ছিল ঢাকা শহর, সোনারগাঁ, ধামরাই, তিতাবাড়ী, জংলাপুর ও বাজিতপুর। বর্তমান সময়ে উত্পাদন এলাকা হলো সোনারগাঁ। ঐতিহাসিকভাবে, উত্পাদন এলাকা ছিল ঢাকার কাছাকাছি জলবেষ্টিত মেঘনা অববাহিকার ওপর, সোনারগাঁ ছিল নিকটতম উত্পাদন অঞ্চল, যা উত্তরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রসারিত হয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে নদীর ধারে জামদানি উত্পাদন অঞ্চলগুলো হলো নরসিংদীর (ঘোড়াশাল) পাশে কাপাসিয়া, রূপগঞ্জ (কাজীপাড়া, রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভা, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে, পুবানকূল, মরগাকূল, রূপসী, নওয়াপাড়া) ও সিদ্ধিরগঞ্জ। গ্লাসি (২০০০: ৪০৩) রিপোর্ট করেছেন যে এই অঞ্চলে দুই থেকে তিন হাজার তাঁতকল আছে, যার অর্ধেক শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। সাইদুর (১৯৯৩: ৩৩-৩৪) নদীর দুই তীরে ৫ হাজার ৪৮০টি তাঁতকলসহ ২৬টি জামদানি গ্রামের কথা বলেছেন।

এবার আলোচনা করা যাক এই অঞ্চলে জামদানির উত্পাদনের কারণ কী? প্রথমত, এটা বোঝা যায় যে এসব উত্পাদনক্ষেত্র তুলা চাষের জায়গার কাছাকাছি অবস্থিত। দ্বিতীয়ত, এই এলাকার নদ-নদীগুলো কাঁচা তুলার সরবরাহ ও বিতরণ এবং তৈরি করা পণ্যের বিপণনের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দেয়। তাই সব বাজার নদীর তীরে অবস্থিত। হোসাইন (২০১০: ১৪১-১৪৪) এবং এলেন (১৯১২: ৭) নিম্নোক্ত বাজারগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন: বার্মি, কাপাসিয়া, লক্ষ্মীপুর, জামালপুর, কালীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, মুরাপাড়া, দার্মা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ।

তৃতীয়ত, এই অঞ্চলের পানির মানের সঙ্গে সম্পর্কিত। হান্টার বলেছেন, ৫০ মাইল ধরে এবং গাছপালাবেষ্টিত তীর রয়েছে, যা কখনো প্লাবিত হয় না এবং এটি পানির বিশুদ্ধতার জন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল (হান্টার ১৮৭৭: ২১)। যেহেতু তুলা এবং অন্যান্য পণ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য পানি প্রয়োজন, সেহেতু শীতলক্ষ্যা নদীর পানি জামদানি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এই নদীর পানি ব্লিচিং এবং ধোলাইও খুব ভালো করে হতো।৩ বিস্তারিত দেখুন, বাসু ১৯৫৫: ৩৭৩-৩৮৫, ৪৬৫-৬৯)। আমাদের একজন সাক্ষাত্কার প্রদানকারী সোনারগাঁয়ের মহাজন ওসমান গণি বলেছেন, ধোলাইয়ের আগে সুতা মেঘনা ও শীতলক্ষ্যার পানিতে পরিষ্কারের ফলে তৈরি করা পণ্যে যে চকচকে ভাব আসে, তা অন্য কোনো অঞ্চলে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেছেন, যারা অন্য জায়গায় উত্পাদন করার জন্য এই জায়গা ছেড়ে গিয়েছিল, একই মানের জামদানি উত্পাদন করতে না পেরে তারা ফিরে এসেছে। আরেকজন সাক্ষাত্কার প্রদানকারী আবু তাহেরের কথায়, তিনি চট্টগ্রামে জামদানি তৈরি করতে চেয়েছেন কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা এই অঞ্চলে সফল হয়নি।২

চতুর্থত, কোনো কোনো লেখক এই এলাকার আর্দ্রতাকে গুরুত্ব দেন। বুননের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা সঠিক স্তরের আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে। যেমন— আর্দ্রতার অভাবে বুননের সুতা ভেঙে যেতে পারে (বাসু ১৯৫৫-৭৫)।

পঞ্চমত, নদী পারাপারের সুবিধার কারণে অভ্যন্তরীণ নৌচালনার ফলে পুরো অঞ্চলে এবং বাইরের বিশ্বে বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা হয়। অন্য কথায় এর বৃহত্তর মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক সংযোগ কাপড় উত্পাদনের জন্য লাভজনক।

ষষ্ঠত, মসলিন তৈরির সরঞ্জাম এই অঞ্চলে সহজলভ্য। টেইলর ১২৬টি ভিন্ন ভিন্ন সরঞ্জামের তালিকা দিয়েছেন। যেমন মাকু, শানা, যেগুলো সূক্ষ্ম জামদানি তৈরিতে প্রয়োজন এবং এগুলো সব বাঁশ অথবা নলখাগড়ার তৈরি (টেইলর ১৮৪০: ১৭৪)। আমাদের জরিপে দেখা যায়, এসব উপাদান এখনো জামদানি তাঁতিরা ব্যবহার করে।

সপ্তমত, স্থানীয় পরিবেশ জামদানির নকশায় বেশি প্রভাব ফেলে। নকশার ক্ষেত্রে জামদানি স্থির শিল্প ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পশোভিত নকশা বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে স্থানীয় ফুল ও গাছপালা স্থানীয় অভিযোজন গুরুত্ব পায়। সাধারণত বাংলাদেশের বিশেষত ঢাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীবনধারণ থেকে নকশা নেওয়া হয়। জামদানি তাঁতিদের ব্যবহূত ডিজাইন বৈচিত্র্য প্রতিফলিত করে এমন একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো (গুজনাভি ২০০৬: ৪৭):

আংটি, আঙুর, বাঘনলি বা বাঘের পা, বেলি, ডালিম, দুবলা, গাঁদা ফুল, গোলাপ, কলমিলতা, কাঁকড়া, কচু, কলা, করলা, ময়ূর, মটরদানা, পান, পোনা, সাবুদানা, শঙ্খ, সাপ।

স্থানীয় ও জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে জামদানির অবস্থান

যদিও অনাদিকাল থেকে ঢাকা জামদানির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে অগ্রদূত হিসেবে বিবেচ্য, জামদানি ভারতে মুসলিম শাসকদের আগমনের সঙ্গে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে। উপমহাদেশে মোগলদের আগমনের আগে বাংলায় ফারসি সংযোগ স্থাপিত হয়। ওডোরাডো বারবোসার মতে, যাঁরা ১৫১৬-২১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের মতে, আরব ও ফার্সিরা সাদা কাপড় হিজাব হিসেবে ব্যবহার করত। সম্ভবত সাদা রং জামদানির পটভূমি হিসেবে এসেছে (লাম এ উদ্ধৃত ১৯৩৭: ১৮৯)।

একসময় জামদানি ও ঢাকা সমার্থক হয়ে ওঠে। এটা শুধু বসুর (১৯৫৫: ২১০) প্রামাণিক গবেষণা নয়, এটা জনপ্রিয় ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ড হিসেবেও রয়েছে।

একটি বড় উদাহরণ হলো, নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত কবিতা বাঁশিতে লিখেছেন;

এগান যেখানে সত্য

অনন্ত গোধূলি লগ্নে

সেইখানে

বহি চলে ধলেশ্বরী,

তীরে তমালের ঘনছায়া—

আঙ্গিনাতে

যে আছে অপেক্ষা করে, তার

পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।

আরও সাম্প্রতিক কালে, অমিতাভ ঘোষ তাঁর একটি জনপ্রিয় উপন্যাসে জামদানির কথা বলেছেন। তাঁর প্রধান চরিত্র, যে একজন দক্ষ বুননশিল্পী, আমরা একজন বহিরাগত থেকে জামদানির গোপন কৌশল শেখার নিষ্ফলতা বুঝতে পারছি: ‘আমরা জানি, আমরা কী জানি। তারা বলে যখন উনি তাঁদের জামদানির গোপন কৌশল শেখানোর চেষ্টা করছিলেন এবং আমরা আর শিখতে চাইনি। একটি কাক যখন ময়ূরের মতো ওড়ার চেষ্টা করে, তখন সে আকাশ থেকে পড়ে যায়’ (ঘোষ ২০০৫: ৬৮)।

জামদানির আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী প্রচার

জামদানির আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী প্রচলন যে ঢাকাকেন্দ্রিক, তা এখানে উল্লেখ করা যায়। ভৌগোলিক নির্দেশনা অনুযায়ী এর প্রচলন ঢাকা থেকে হতে পারে। একটি উদাহরণ হলো Pocahontas, যিনি রেবেকা রলফ (১৫৯৫-১৬১৭) নামেও পরিচিত, যিনি ইন্দো-আমেরিকান ভার্জিনিয়া থেকে এসেছেন। তিনি ইংরেজদের সঙ্গে আলোচনাকারী ছিলেন। রেভ হুইটকার ইংরেজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে রেবেকার সভা সম্পর্কে বলেন: জেমসটাউনের সবাই মুগ্ধ দর্শক ছিলেন। ভজনালয় সবুজে পূর্ণ ছিল, বন্য ফুল এবং চিরশ্যামল গুল্ম ছিল। রেবেকা ঢাকার সাদা মসলিনের জামা পরা ছিলেন (লুসিং ১৯০২)।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে টেক্সটাইল বাণিজ্য যখন ভাটার সম্মুখীন, তখনো আরব (জেদ্দা, মক্কা), ইরাক ও ভূমধ্য উপকূলবর্তী দেশের কিছু অংশ ব্যবহার করা হয়েছিল। এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিকার ছিল (করিম ১৯৬৫:১,১৩০)। ভারতের প্রভাবশালী সম্রাট আওরঙ্গজেব জামদানির অনুরাগী ছিলেন এবং তিনি প্রতিটির জন্য ২৫০ টাকা মূল্য দিতে বলেছেন (টেইলর ১৮৫১: ৪৮)।

উপনিবেশের সময় জামদানি স্থানীয় শাসকদের থেকে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারায় এবং ভারতীয় পণ্য হিসেবে এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হয়। যেমন, ডাক্কার জামদানি স্কার্ফ Great Exhibition of the Works of Industry of All Nations-এ প্রদর্শিত হয় (১৮৫১: ১৫৯)। ১৮৬২ সালে লন্ডন এক্সিবিশনে জামদানি স্কার্ফ প্রদর্শিত হয় (ডাউলিনস: ১)। ১৮৬৫ সালে ডাবলিন আন্তর্জাতিক এক্সিবিশনে জামদানি মসলিন ও জামদানি স্কার্ফ ৬৭৯ ও ৬৮০ নম্বরে প্রদর্শিত হয় (নির্বাহী কমিটি ১৮৬৫: ৫২)। ১৮৬৫ সালে নিউজিল্যান্ড এক্সিবিশনে জামদানি শাড়ি ৮৪৭ নম্বর প্রদর্শিত হয় (ওয়াটসন ১৮৬৫)। উল নির্মাণের (১৮৭৬) ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন জামদানিকে ৩১৮ নম্বরে ‘ঢাকার সবচেয়ে দামি, সূক্ষ্ম ও জটিল ডিজাইনের মসলিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন (জাতীয় উল নির্মাণ সমিতি ১৮৭৬ : ১৮৭)।

প্রাচীনত্ব এবং বিবর্তন

যেহেতু জামদানি ঢাকা মসলিনের একটি সূক্ষ্ম পণ্য এবং ইতিহাসে জামদানির উত্থান সম্পর্কে বলা হয়নি, তাই এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বেঙ্গল মসলিনের রেফারেন্স দেখতে হবে। নিচের লেখাটি তৃতীয় শতাব্দীর Diogenes Laërtius-এর গ্রিক লেখা থেকে নেওয়া:

যখন ফালেরামের দিমিত্রি তাকে রুটি এবং ওয়াইন পাঠালেন তিনি তাঁকে নিন্দার সঙ্গে বললেন, ‘ওহ স্প্রিংস পানিসহ রুটি বদলে দিয়েছে। এটা পরিষ্কার যে তিনি পানি পান করেছিলেন। যখন পুলিশ এটা আবিষ্কার করল যে মসলিন পরার কারণে এ সমস্যা হয়েছে তার উত্তর ছিল, আমি আপনাকে দেখাতে পারি যে থিওফ্রস্টাসও মসলিন পরেছেন।’ ( হিকস ১৯৭২ : ৯১)

প্রাচীন বুদ্ধিজীবীরা কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে মসলিন ব্যবহার করতেন। এটা নির্দিষ্ট নয় যে এটা বাংলার মসলিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কি না কিন্তু গ্রিকরা বাংলার মসৃণতম কাপড় ব্যবহার করতেন (গিলরয়: ৩৩৪)। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে পূর্ব বাংলার সূক্ষ্ম কাপড়ের উল্লেখ রয়েছে। টলেমির সময় রোম ও মিসরে এই অঞ্চলের পণ্যের ভালো সুনাম ছিল। নবম দশকে আরব ভূগোলবিদ সুলায়মান, চৌদ্দ শতকে মরক্কোর ইবনে বতুতা, পনেরো শতকে কিছু চীনা লেখক, ১৬ শতকে মোগল সাম্রাজ্যের লেখক আবুল ফজল বাংলাদেশের মসলিনের অনেক প্রশংসা করেছেন (করিম: ৩-৫)। ষোলো শতকের শেষে আবুল ফজল ও রালফ ফিচ সোনারগাঁকে মসৃণ তুলা উত্পাদনের জায়গা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাতলা ও ফুলেল কাপড় শহর (ঢাকা) ও দেশের সর্বত্র মসলেন তাঁতিরা তৈরি করে (টেইলর ১৮৫১: ৮)। ঔপনিবেশিক সাহিত্যে মসলিনের মান ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট।

ক্লাসিক্যাল মসলিন যুগ ও মধ্যযুগীয় জামদানি যুগের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম লাইন রয়েছে কিন্তু এমনও হতে পারে, মোগলরা আসার আগেই জামদানির উদ্ভব হয়েছে। আমি বলব, এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুহূর্তে এসেছে। টম পেরেস, যিনি ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে এসেছিলেন, বলেন:

বাঙালিরা ভাগ্যবান বণিক, যারা আবর্জনায় পাল তোলে। ফারসি, রোম, তুর্কি ও আরবের বড় অংশ এবং চউল, দাভল ও গোয়ার বণিকেরা বাংলায় বাস করে (পেরেস ২০০৫: ৮৮)।

ওপরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশ মুসলিম শাসনের সময় থেকে ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল এবং শুধু এশিয়ান বণিকেরাই এখানে বসতি স্থাপন করেননি, বাঙালিরাও করেছে। এটি একটি বিশ্বজনীন মুহূর্তে গোল্ডেন পোর্ট সোনারগাঁয়ে যাত্রা শুরু করেছে, যা চীনের ভারতে যাওয়ার পথ ছিল (মুখার্জি ২০১১: ৪৩)। মোগলরা জামদানি উত্পাদন নিখুঁত করে তোলে, যা ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবেশে জায়গা করে নিয়েছে।

জামদানি বাণিজ্য

ভৌগোলিক নির্দেশনার দিক থেকে পণ্য বিশ্লেষণের জন্য বাণিজ্য পরিসংখ্যানের ইতিহাস বোঝার গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যযুগীয় জামদানি সম্পর্কে আমাদের কাছে স্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই। শুধু ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে কিছু বিক্ষিপ্ত তথ্য রয়েছে, তখন থেকে বাণিজ্যের পরিমাণ কমছে। হোসাইন (২০১০: ১৫১) বেঙ্গল কমার্শিয়াল রেকর্ড ১৭৯৫-১৮০২ থেকে দেখান যে ঔপনিবেশিক আমলে জামদানি একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য ছিল। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে একটি তালিকা তৈরি করেন, যেখানে জামদানিসহ পাঁচ হাজার কাপড় ঢাকা আড়ংয়ের মধ্যে গৃহীত হয়েছে। মনে রাখা উচিত, ওই সময়ে জামদানির মহিমান্বিত দিন শেষ হয়ে এসেছে। উনিশ শতকে মসলিন বাণিজ্যের হ্রাসের সময় টেইলর (১৮৪০) ১ হাজার ৭০০ তাঁতি পরিবার খুঁজে পেয়েছেন এই অঞ্চলে। এই শতাব্দীতেই জামদানির আরও পতন ঘটে। ১৯৬১-৬২ সালের একটি জরিপে নারায়ণগঞ্জের তারাবতে ১ হাজার ৪৫৯টি জামদানি এবং অন্য আরেকটি ১৯৬৭ সালের জরিপে ১ হাজার ১৭৩টি ছিল, যা ২০ শতাংশ কম (ইপিএসআইসি ১৯৬৭: ৯)।

সব মতভেদ সত্ত্বেও ঔপনিবেশিক আমলে জামদানি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত পার করেছে এবং ঔপনিবেশিক আমলের পরে ধীরে ধীরে বিশেষত নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের বাজার বিমুক্তকরণের সময় এর পুনর্জাগরণ ঘটেছে। ২০০০ সালের হিসাব অনুযায়ী, ১ হাজার ৬০০ জন তাঁতি, যা ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ১৫ হাজার জন, তিন হাজার পরিবার আছে। একই বছর জামদানি শিল্প ১৫ হাজার ৫০০টি ইউনিট ব্যবহার করেছে (সুমন ২০১৩)। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মতে, বেনারসি/ জামদানি বয়ন ইউনিটের মোট সংখ্যা ১২ হাজার ৩৮৩।৪ এটা অনুমান করা হয় যে প্রতি সপ্তাহে এই অঞ্চলে দুই হাজার পিস জামদানি শাড়ি উত্পাদন হয়। শাড়ির দাম ৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। বিশেষভাবে তৈরি শাড়ি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। দেশের চাহিদা পূরণের পর জামদানি শাড়ি দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকায় রপ্তানি হয়। জামদানির ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বিডব্লিউপিএমবিএ ২০১১ সালে বাংলাদেশ তাঁতবস্ত্র মেলা আয়োজন করে, যেখানে তাত্ক্ষণিক অর্ডার ছিল শূন্য দশমিক ১২ বিলিয়ন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ থেকে জামদানির নেতৃস্থানীয় আমদানিকারক ভারত। ২০১০-১১ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের জামদানি রপ্তানি ৬ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা ছিল ১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার।৫ এটা ধরা হয়, ভারতে জামদানি আরও রপ্তানি হয়, যার কোনো অফিশিয়াল তথ্য নেই। মোট জামদানি রপ্তানির আয় ভারতসহ ২০০৮-৯ সালে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০১০-১১ সালে ১০ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার।৬

এই সব পরিসংখ্যান ঢাকার জামদানিশিল্পের উন্নয়ন নির্দেশ করে।৭ একটি শক্তিশালী ও ভৌগোলিক ভিত্তি, সাংস্কৃতিক দক্ষতা ও অনুশীলনের মাধ্যম ছাড়া এই পণ্য তৈরি করা সম্ভব না।

জিআই পলিসির প্রভাব: জামদানি, ঢাকাই জামদানি নাকি উপ্পাদা জামদানি?

ভারত ২০০৯ সালে অন্ধ্র প্রদেশ থেকে উপ্পাদা জামদানি শাড়ি নিবন্ধন (সিরিয়াল নং ১০৬ এবং আবেদন নং ১২২) করেছে। এই আলোচনায় দেখা যায়, ঢাকা ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জামদানি উত্পাদনের জন্য পৃথিবীর অন্য কোথাও ভৌগোলিক, পরিবেশগত, ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক অবস্থা নেই (শহীদ: ৫৮)। সম্প্রতি কিছু প্রকাশনী ছাড়া অন্য কোনো লেখালেখিতে ঢাকাই জামদানির কোনো উল্লেখ নেই। এখন প্রশ্ন, কী দেখে বোঝা যায় যে জামদানির মূল ভিত্তি ঢাকায়? জামদানির উত্পত্তি অবশ্যই ঢাকায় কিন্তু ঢাকাই জামদানি নামে পরিচিত হতে পারে না। অন্য কথায়, ঢাকা ও জামদানি সমার্থক কিন্তু তার পরও ভারতের উপ্পাদা জামদানির ভৌগোলিক নির্দেশনা আইনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন বেআইনি এবং ট্রিপস চুক্তির লঙ্ঘন।

আমরা কিছু কারণে ঢাকাই জামদানি নামের সঙ্গে একমত নই। প্রথমত, বৃহত্তর ঢাকা জামদানি উত্পাদনের মূল স্থান ছিল, তাই জামদানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢাকার ভৌগোলিক নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত এবং কোনো ভৌগোলিক অবস্থানের প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়ত, ঢাকাই জামদানি নামটি অন্য দেশকে এর ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ে ঢাকার জায়গা বদল হয়েছে কিন্তু আমরা নিশ্চিত না তখন এই অঞ্চলের নাম ঢাকা ছিল কি না (ইকবাল: ২০১১)।

শেষ কথা

জামদানির ঢাকার ভৌগোলিক নির্দেশনা প্রশংসাপত্র ভারতের স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা প্রতিপন্ন হয়। জনাব ঘনশ্যাম সারোদ তাঁর উইব্লগে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন যে জামদানির উত্পত্তিস্থান ঢাকায় এবং উপ্পাদা জামদানি একটি নতুন ব্র্যান্ড তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।৮ ইউনেসকো সম্প্রতি জামদানিকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।৯

যত দূর উপ্পাদা সম্পর্কে বলা যায়, এটি অন্ধ্র প্রদেশের একটি গ্রাম, যা রেশম পণ্যের জন্য পরিচিত কিন্তু জামদানির সঙ্গে ঐতিহাসিক সংযোগ পাইনি। প্রকৃতপক্ষে গত দুই দশকে জামদানির কিছু নকশা উপ্পাদায় ব্যবহার করা হয় এবং উপ্পাদা জামদানি নামটি সম্প্রতি উদয় হয়েছে, যদিও জামদানির সঙ্গে এর কোনো সংযোগ নেই। নিচের কথাটি একে সমর্থন করে:

দ্বিতীয় পরিবর্তনটি হলো শাড়িতে জামদানি নকশা ব্যবহার করা হয়। উপ্পাদায় জমিনে নকশা করা হয় এবং পাল্লু/ আঁচলে জরির নকশা করা হয়। এটা খুব জনপ্রিয়তা পায়।১০

জামদানির ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে আমাদের গবেষণা দেখায় যে ঢাকাই একমাত্র উত্পাদনক্ষেত্র। এখন বাংলাদেশে ভৌগোলিক নির্দেশনা আইন পরিচিতি পেয়েছে এবং বিশ্বসম্প্রদায় একে বাংলাদেশের পণ্য বলেছে, বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা একে ঢাকার নিজস্ব পণ্য হিসেবে পুনঃস্থাপন করার উদ্যোগ নেবে বলে আশা করা যায়।

তথ্যসূত্র

1.      http://www.bhb.gov.bd/statistics.php

2.     Interview taken in Panam Nagar (Sonargaon) by Sahida Khandaker and Abdus Samad. 20 September 2013

3.     Interview taken in Panam Nagar (Sonargaon) by Sahida Khandaker and Abdus Samad. 20 September 2013

4.     http://www.bhb.gov.bd/statistics.php

5.     ‘Country's Jamdani Sarees gaining popularity among Indian women,’ The Financial Express, June 6, 2012.

6.     Ibid.

7.     http://news.priyo.com/business/2011/08/15/jamdani-fair-gets-tk-012b-expo-34687.html

8.     http://sarode1.wordpress.com/2009/05/07/ghanshyam-sarode/

9.     http://archive.thedailystar.net/beta2/news/jamdani-recognised-as-intangible-cultural-heritage-by-unesco/

10.     Kanakalantha Mukund and B. Syama Sundari, Traditional industry in the new market economy: the cotton handlooms of Andhra Pradesh (Delhi: Sage Publications, 2001) p. 108..

অনুবাদ সহযোগীতায়: জোশিতা জিহান