সম্পাদকীয়

পুঁজিবাদী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্রটি সাম্প্রতিক কালে বারবার সামনে চলে এসেছে। ফরাসি অর্থনীতিবিদ থমাস পিকেটি তাঁর একবিংশ শতকে পুঁজি গ্রন্থে বর্তমানকালে পুঁজিবাদী অর্থনীতিরই শুধু সমালোচনা করেননি, কার্ল মার্ক্সের অনেক মতামত প্রসঙ্গেও ভিন্নমত পোষণ করেছেন। সেই বিবেচনায় পুঁজিবাদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ পাঠের পাশাপাশি মার্ক্সবাদের পাঠকে সঠিকভাবে উপস্থাপন অত্যাবশ্যকীয়। এম এম আকাশ তাঁর প্রবন্ধে মার্ক্স থেকে পিকেটি পর্যন্ত পুঁজিবাদ ও মার্ক্সবাদকে পাশাপাশি উপস্থাপন করে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, প্রবন্ধটি চলতি বছরের ৫ মে কার্ল মার্ক্সের ১৯৮তম জন্মবার্ষিকীতে ‘পাঠশালা’ আয়োজিত একটি পাবলিক লেকচারে পঠিত হয়েছিল।

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তিটি ভারতের জাতীয় সংসদে অনুসমর্থন পেয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিবদমান কিন্তু অমীমাংসিত এ চুক্তিটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ছিটমহলবাসী রাষ্ট্রহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা দরকার, কেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এত লম্বা সময়েও বাস্তবায়িত হয়নি এবং বাস্তবায়নের পথে উল্লেখযোগ্য কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী।

প্রথম আলোর পুরস্কারপ্রাপ্ত আহমদ রফিকের দেশবিভাগ: ফিরে দেখা গ্রন্থটির একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে পর্যালোচনা নিবন্ধটি লিখেছেন লেখক ও গবেষক রাহমান চৌধুরী। ভারতভাগ নিয়ে প্রচলিত জ্ঞানকর্ম জিন্নাহ ও গান্ধীর মধ্যে জিন্নাহকেই বেশি দায়ী করে থাকে। কিন্তু এই নিবন্ধে গান্ধী তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের ভূমিকা জিন্নাহ তথা মুসলিম লীগ থেকে বেশি বলেই দাবি করা হয়েছে। ভারতভাগ ও এর প্রভাব উপমহাদেশের রাজনীতিতে এখনো প্রবল। এর পাশাপাশি বাংলাভাগের পেছনে কার কতটুকু দায় রয়েছে, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। এসব নিয়ে আরও বিস্তর ইতিহাস আলোচনার তাগাদা থেকেই এ ধরনের পর্যালোচনা নিবন্ধ ছাপাতে উত্সাহী হলাম।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে নেপাল উল্লেখযোগ্য একটি দেশ। চারদিক থেকে ভূখণ্ডবেষ্টিত দেশটির ওপর ভারতের যেমন রয়েছে প্রবল প্রভাব, তেমনি চীনের রয়েছে প্রচণ্ড আগ্রহ। ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেপালের মাধেস আন্দোলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলন দেশটির ওপর ভারতের প্রভাব বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম। এসব আর্থ-রাজনৈতিক উপাদান বিবেচনায় রেখেই লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ ‘নেপালের মাধেস আন্দোলন: পূর্বাপর’ প্রবন্ধে মাধেস আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থেকেও যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে ভালো করা যায়, তার অন্যতম উদাহরণ লাতিন আমেরিকার দেশ কিউবা। সুদীর্ঘকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের কবলে থাকা সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবা বিভিন্ন সূচকে কীভাবে উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করল, তার একটি চিত্র এঁকেছেন এমিলি মরিস তাঁর ‘অপ্রত্যাশিত কিউবা’ প্রবন্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে এসে কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক   সম্পর্কোন্নয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে কিউবা সম্পর্কে আলোচনা নতুন আঙ্গিকে সামনে এসেছে। যার ফলে এ দেশের মানুষের জানার কৌতূহল আরও বেড়েছে। কিউবা সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এ প্রবন্ধটি যথেষ্ট কার্যকরী হবে বলে আশা করি।

ভূকৌশলগত কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সব সময়ই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজমান। আরব বসন্ত নামে পরিবর্তনের যে ঢেউ সেখানে লেগেছিল, তার ভবিষ্যত্ নিয়ে রয়েছে নানা মত। স্বৈরশাসনের পতনের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আবির্ভাব ঘটায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নোআহ ফেল্ডম্যানের দ্য ফল অ্যান্ড রাইজ অব দ্য ইসলামিক স্টেট গ্রন্থটি ইসলামি শরিয়া আইনের সঙ্গে গণতান্ত্রিক শাসনের সংমিশ্রণের একটি চেষ্টা দেখিয়েছিল। সেটার প্রাসঙ্গিকতা আরব বসন্ত-পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বে রয়েছে বলে মনে হয়। আইরিন খান এই বইটি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ সংখ্যার মাধ্যমে প্রতিচিন্তা তার পাঁচ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। এ সুযোগে আমরা  বিগত পাঁচ বছরের প্রতিচিন্তার লেখক, গ্রাহক, পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি প্রতিচিন্তা পরিবারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে, যাঁদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি।