বাংলাদেশে কিশোরীদের যৌন হয়রানির প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা

সারসংক্ষেপ

নারীর ওপর যৌন সহিংসতা এবং হয়রানির নজির প্রায় সব সমাজেই বিদ্যমান, যার নানা ধরনের নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। এই প্রবন্ধে একটি নির্দিষ্ট ধরনের যৌন হয়রানি—যথা ‘ইভ টিজিং’-এর বিভিন্ন মাত্রা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের কিশোরীরা (১২ থেকে ১৮ বছর) যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, সেটি যুবক-যুবতীদের দ্বারা সংঘটিত বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন আচরণ-সম্পর্কিত এই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে। এই গবেষণায় গুণগত পদ্ধতিসমূহ এবং একটি অংশগ্রহণমূলক অ্যাপ্রোচ, যেমন ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনস, মূল জ্ঞাপকের সাক্ষাত্কার এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীরা যৌনতা, যৌন-কামনা উদ্রেককারী আনন্দ এবং রোমান্স বিষয়ে সক্রিয়ভাবে জানতে আগ্রহী এবং এসব তারা জেনে যায়। এসব তথ্য খুব সহজেই ভিডিও, মোবাইল ফোন ক্লিপস এবং পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিন থেকে পাওয়া যায়। নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় যে, একদিকে অবদমিত সামাজিক ব্যবস্থা, অন্যদিকে অবাধ তথ্যের বিচরণ দুই দুইয়ের বহিঃপ্রকাশ লিঙ্গবৈষম্যকে উসকে দেয়। কিশোরদের যৌন অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের একটি মাধ্যম হচ্ছে ‘ইভ টিজিং’, তারা এটি করে আনন্দ পায় এবং তাদের পৌরুষত্ব প্রকাশ করতে পারে। কিশোরীরা এটা অপছন্দ করে এবং এটা করতে প্ররোচিত করার দায়ে দোষী হওয়ার ভয়ে থাকে। সুতরাং, ‘ইভ টিজিং’ বাংলাদেশে যৌনতা-সম্পর্কিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক আদর্শসমূহ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্য ও সেবার অপ্রতুলতার ফল। এই তথ্যসমূহ একটি সমন্বিত যৌন-শিক্ষার গুরুত্বকে নির্দেশ করছে, যা নিছক স্বাস্থ্যকেন্দ্রিকতার বাধা ডিঙাবে এবং জেন্ডার-সম্পর্কিত আদর্শসমূহ তুলে ধরবে এবং তরুণ-তরুণীদের সামাজিক-যৌনতা মিথস্ক্রিয়ার দক্ষতাসমূহ অর্জনে সাহায্য করবে।

মুখ্য শব্দগুচ্ছ: ইভ টিজিং, কিশোর-কিশোরী, যৌন হয়রানি, জেন্ডার বৈষম্য, যৌনতা-শিক্ষা, বাংলাদেশ।

প্রারম্ভিক আলোচনা

২০০৯ সালে বাংলাদেশি চারজন ছেলে এবং চারজন মেয়ের (যাঁদের বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছর) একটি দলকে দুজন নৃবিজ্ঞানীর সহযোগিতায় সহগবেষক হিসেবে প্রশিক্ষিত করা হয়। এই দলের কাজ ছিল কিশোর-কিশোরীদের যৌনতা-সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা, চাহিদা, চিন্তাভাবনা এবং এই বাস্তবতা সম্পর্কে জানা। তারা কীভাবে যৌনতাবিষয়ক তথ্য পায় এবং সেই চাহিদা এবং প্রাপ্তি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের সঙ্গে মিলে যায় কি না, সে সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা।

ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন এবং সাক্ষাত্কারগুলো থেকে দেখা যায় যে কিশোরীরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে যে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ বার উল্লেখ করেছে, তা হলো প্রকাশ্য স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা, যা সাধারণত ‘ইভ টিজিং’ নামে পরিচিত এবং সাংস্কৃতিকভাবে নির্মিত। ‘ইভ টিজিং’ একটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় ইংরেজি শব্দ। এ শব্দটি দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল ব্যবহূত। প্রকাশ্যে ছেলে ও পুরুষেরা যখন মেয়ে ও নারীদের উত্পীড়ন করে, ছেলেরা গণপরিবহন, রাস্তা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের পথরোধ করে, মেয়েদের উদ্দেশ করে চেঁচিয়ে কটুবাক্য বলে, হাসাহাসি করে, অপহরণের হুমকি দেয় এবং এমনকি অযাচিতভাবে মেয়েদের স্পর্শ করে তখন তাকে ‘ইভ টিজিং’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।১ দক্ষিণ এশিয়ার জনসংস্কৃতিতে ‘ইভ টিজিং’কে নারী ও পুরুষের মধ্যে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় ধারার অনেক বাণিজ্যিক হিন্দি/বাংলা চলচ্চিত্রে বিয়ে-পূর্ব প্রেমের সম্পর্কের শুরু হিসেবে নায়ক বা খলনায়ককে চপলতায় নিয়োজিত হতে দেখা যায়২ এবং পরিমিত যৌন হয়রানিকে প্রায়ই মজার এবং রোমান্টিক হিসেবে গণ্য করা হয়।৩ যে রোমান্টিক মজার ব্যাপারটিতে নায়িকার ব্যাপক আপত্তি থাকে তবে নায়ক তা সত্ত্বেও সেই মজাটি করতে থাকে। নায়ক-নায়িকার প্রথম মিথস্ক্রিয়ায় নায়ক নির্লজ্জ চপল আচরণের মাধ্যমে নায়িকাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে আর নায়িকা এই আচরণের ব্যাপক আপত্তি জানাবে। নায়ক-নায়িকার এই আচরণ সামাজিক লিঙ্গ সম্পর্কবিষয়ক শিক্ষারও একটা প্রতিফলন। শিক্ষাকে প্রভাবিত করায়, বিশেষত মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের মিথস্ক্রিয়ার বিষয়টি নির্ধারণে অবদান রাখায় (এ ক্ষেত্রে হিন্দি চলচ্চিত্রের গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে তরুণ-তরুণীদের বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম) বিশেষভাবে বিপজ্জনক। এভাবে জনপ্রিয় ধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নারী-পুরুষের যোগাযোগের একটা মডেল সরবরাহ করে।

যা হোক, ‘ইভ টিজিং’ শব্দটির দ্বারা যে পরিসরের ব্যবহারকে বোঝায় তা ততটা গুরুত্ব পায় না। একজন গবেষক২ এই বিষয়টিকে দেখেছেন নারীদের প্রতি সহিংসতাকে স্বাভাবিকীকরণের একটি কৌশল হিসেবে, যার অর্থ হলো নারী একই সঙ্গে ঠাট্টার পাত্র এবং ঠাট্টাই তার প্রাপ্য। দ্ব্যর্থহীনভাবে যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে ভারতীয় নারী আন্দোলনই প্রথম এই সাংস্কৃতিক আচরণ এবং বোধকে চ্যালেঞ্জ করে।

ঐতিহাসিকভাবে উত্তর-উপনিবেশকালের শুরুতে ভারতীয় নারীরা ‘ইভ টিজিং’কে প্রথম নথিভুক্ত করে, যখন তারা চাকরি এবং সামাজিকীকরণের জন্য জনপরিমণ্ডলে যুক্ত হওয়া শুরু করেন।২ বাংলাদেশেও সম্ভবত ১৯৮০ সাল থেকে এই একই গতিপ্রকৃতি অনুসরণ করে এর চর্চা শুরু হয়, যে সময়টিতে অবৈতনিক নারী শিক্ষা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের অংশগ্রহণ এবং এনজিও প্রবর্তিত শ্রমশক্তি যেমন: স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ শুরু হয়।৪ অন্যদিকে বাংলাদেশের নারীশিক্ষাকে স্বাস্থ্য অবস্থার উন্নতি এবং সার্বিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও সক্রিয়তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করা হলেও, নির্দিষ্ট ধরনের জেন্ডারবৈষম্য এখনো রয়ে গিয়েছে, যেমন: অসম বেতন, জোরপূর্বক বাল্যবিবাহ এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা।৫, ৬

যদিও একটা গবেষণায় দেখা দেখা গেছে যে, ইদানীং নারী ও মেয়েদের জনপরিসরে চলাফেরা খুব সাধারণ বিষয়ে পরিণত, এবং বয়স্ক মহিলাদের ৪৯ শতাংশ এবং তরুণীদের ৩৮ শতাংশ তাদের নিজেদের আশপাশের এলাকার মধ্যে বের হতে নিরাপদ বোধ করে।৫ প্রকৃতপক্ষে, এর বিপরীত একটি চিত্রও রয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় এবং গণপরিবহন ব্যবহারের সময় ‘ইভ টিজিং’-এর শিকার হওয়াকে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া এবং মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।৭

১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে নারীবাদী আন্দোলন যৌন হয়রানি-সম্পর্কিত একটি নতুন আইন পায়, যে আইনে ‘ইভ টিজিং’-এর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।৮, ৯ ২০১০ সাল থেকে ‘ইভ টিজিং’ বাংলাদেশেও একটি অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র কর্তৃক তা এখন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ‘ইভ টিজিং’ বিষয়টি এত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে যে নারীদেরকে যৌন হয়রানির অপরাধ বিচারের জন্য সরকার মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই নীতি অনুযায়ী যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত যেকোনো ব্যক্তির ৭০০০ টাকা (৮৯ মার্কিন ডলার) জরিমানা থেকে শুরু করে এক বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে। গণমাধ্যমে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হয় যখন কোনো ব্যক্তি এই অপরাধে ধৃত এবং দণ্ডিত হন, বিশেষত যে ঘটনাগুলো সহিংস হয়। নারীদের প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদে কিছু সামাজিক আন্দোলন চলমান থাকে, যেমন মিউজিক কনসার্ট।

এই প্রবন্ধে আমরা ইভ টিজিংয়ের একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা অনুসরণ করেছি, যে সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি এমন একটি যৌন আচরণ যেখানে বিপরীত ব্যক্তির প্রতি সম্মান অনুপস্থিত থাকে, যা অপর পক্ষের জন্য বেদনাদায়ক হয়ে থাকে। ধর্ষণের বিপরীতে, ইভ টিজিং যৌন সহিংসতার একটি ধূসর অবস্থানে থাকে, যেটি তুলনামূলক কম পরস্ফুিট, বিপরীত পক্ষের অসম্মতিতে যৌন আচরণ বা অভিব্যক্তির সমন্বয়ে ঘটে থাকে, যা যৌন স্বাতন্ত্র্যকে লঙ্ঘিত করে এবং যেটি কর্তৃত্বপূর্ণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিতে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।১০

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, বাংলাদেশে ইভ টিজিং বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সঙ্গে অন্যান্য যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতা এবং এগুলোর ফলাফল যেমন: অপহরণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, খুন ও আত্মহত্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।৫, ১১-১৬ ‘ইভ টিজিং’-এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা বন্ধ হচ্ছে। ২০১০ সালে বারবার এই যৌন হয়রানির খবর পাওয়া যায়, যা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশে ২৮ জন মেয়ে/নারী আত্মহত্যা করে এবং অন্য ৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে।৪ ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি মেয়েদের ৯০ শতাংশই ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।১৪, ১৭

এই প্রবন্ধের মূল আলোচিত বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে কিশোরীরা (১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী) কীভাবে ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় এবং তারা এর ওপর কী অর্থ আরোপ করে এবং মেয়েদের ইভ টিজিং করার বিষয়ে কিশোরদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যাখ্যার ধরন। এই প্রবন্ধে আমরা দেখাব যে যৌনতা এবং জেন্ডার-সম্পর্কিত ক্ষতিকর সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতি থেকেই ইভ টিজিংয়ের উদ্ভব হচ্ছে। যৌনশিক্ষা, সরকারি, বেসরকারি পরিষেবা প্রদান এবং সামাজিক পরিবর্তনের নিরিখে বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন এবং প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার উত্সাহিতকরণে প্রাপ্ত তথ্য এবং উপলব্ধিসমূহ কী বার্তা প্রদান করছে, তাও খতিয়ে দেখা হবে।

গবেষণাপদ্ধতি

সহগবেষকদের বাছাই করা হয় ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফপিএবি) যুব কর্মসূচির একদল সহপ্রশিক্ষক থেকে, যারা সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছিল। তারা সবাই ‘তারা’ নামক একটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল।১৮ তরুণ-তরুণীদের যৌনতা-বিষয়ক অভিজ্ঞতা, চাহিদা ও চিন্তাভাবনা এবং তরুণ-তরুণীদের যৌনতা-বিষয়ক তথ্য ও সেবার চাহিদা কতটুকু তারা প্রকল্প পূরণ করতে পারে, এ বিষয়ে সহগবেষকেরা তথ্য সংগ্রহ করে। গবেষণাটি বাংলাদেশের পূর্ব-পশ্চিম অঞ্চলের একটি শহর যশোরে এফপিএবির একটি যুব কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এফপিএবি কাজ করে এ রকম বাংলাদেশের চারটি জেলা (যশোরসহ) থেকে নবীন গবেষকেরা এসেছিলেন এবং সহপ্রশিক্ষক থাকার সময় তাঁদের কৃতিত্ব এবং তাঁদের প্রণোদনাপত্রের ভিত্তিতে তাঁদের বাছাই করা হয়েছিল। তাঁরা সবাই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং অবিবাহিত ছিলেন। গুণগত গবেষণা দক্ষতার ওপর তাঁদের দুই সপ্তাহের একটি নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং গবেষণা পরিকল্পনা এবং সাক্ষাত্কার প্রশ্নমালা তাঁদের সঙ্গে মিলে তৈরি করা হয়।

এফপিএবি এবং প্রথম লেখকের সহযোগিতায় গবেষণা দল গুণগত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিচের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে: ২৩৭ জন অবিবাহিত ছেলে ও মেয়ে সঙ্গে ২৮টি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি); ৬ জন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১৫ জন মেয়ে এবং ১৬ জন ছেলে, সেই ৪৮ সঙ্গে বিস্তারিত সাক্ষাত্কার; সমাজের নেতারা, পিতা-মাতা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্যক্তিবর্গ এবং এফপিএবির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত দুটি প্যানেল আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া একটি যুববান্ধব সেবাকেন্দ্র, দুটি রাস্তার পাশের জায়গা, যেখানে ফেরিওয়ালারা যৌন সমস্যার স্থানীয় ওষুধ বিক্রয় করে, দুটি পাবলিক পার্ক এবং দুটি সাইবার ক্যাফে—(যেগুলো তরুণ-তরুণীরা ডেটিং প্লেস হিসেবে ব্যবহার করেন) পর্যবেক্ষণ করা হয়। যশোর পৌরসভার বিভিন্ন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের কিশোর-কিশোরীদের তথ্য-প্রদানকারী হিসেবে বাছাই করা হয় এবং এর মধ্যে আরও ছিল: শহরাঞ্চলের রাষ্ট্রীয় এবং ইসলামিক বিদ্যালয় এবং কলেজের (মাদ্রাসা) ছাত্রছাত্রী, বস্তিবাসী, এতিমখানার কিশোর-কিশোরী, কিশোরী যৌনকর্মী, যুববান্ধব সেবাকেন্দ্রের অভ্যাগত এবং যশোর শহরের আশপাশের গ্রামীণ এলাকার কিশোর-কিশোরী। ছেলে ও মেয়েদের সঙ্গে পৃথকভাবে এফজিডি সম্পন্ন হয় এবং এই সময় তাদের ১২-১৫ বছর এবং ১৬-১৮ বছর বয়সী দুটি দলে ভাগ করা হয়।

এসব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় উন্মুক্ত এবং অ্যাক্সিয়াল কোডিং পদ্ধতিতে। উপরন্তু যুবকেন্দ্রের বেনামী প্রশ্ন বাক্সে কিশোর-কিশোরীদের তোলা প্রশ্ন এবং কিশোর-কিশোরীরা যৌনতা-সম্পর্কিত তথ্যের উত্স হিসেবে চিহ্নিত করেছে এমন স্থানীয় গান, ম্যাগাজিন, কৌতুক ভিডিও, সিডি, চলচ্চিত্র এবং মোবাইলে ডাউনলোড করা তথ্যসমূহের কন্টেন্ট অ্যানালাইসিস করা হয়। সম্প্রদায়ের সদস্যরা এবং এফপিএবির কর্মী সদস্যদের কাছে গবেষণার তথ্যসমূহ উপস্থাপন করা হয় এবং এই বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল: সংগৃহীত তথ্য সম্পর্কে তাঁদের মূল্যায়ন পাওয়া, প্রারম্ভিক সিদ্ধান্তগুলো যাচাই করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ প্রণয়ন। প্রক্রিয়া এবং ফলাফল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এই গবেষণাভিত্তিক লিখিত আরেকটি প্রবন্ধে।১৯ নবীন গবেষক দলের গভীর বিশ্লেষণমূলক জোগানের সাহায্যে চূড়ান্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লেখার কাজ করেন প্রথম লেখিকা।

প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা-প্রক্রিয়া চলার সময় নবীন গবেষকেরা ক্রমাগত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেন এবং কীভাবে গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হয় তা শেখে। তথ্য প্রদানকারীকে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তা নির্বাচনের, যেভাবে প্রশ্ন করেছে, যেভাবে তথ্যসমূহ ব্যাখ্যা করেছে, তার মধ্য দিয়ে তাঁরা তথ্য প্রদানকারীর তথ্যকে প্রভাবিত করা থেকে কীভাবে বিরত থাকতে পারে, সে সম্পর্কে শিখেছেন। পক্ষপাতিত্ব কমানোর জন্য সাক্ষাত্কার গ্রহণের পরপরই তাঁদের প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করতে বলা হয় এবং প্রতিদিনের তথ্য সংগ্রহের পর রিপোর্ট এবং অনুধ্যায় পর্বের আয়োজন করা হয়। এই পর্বগুলো কীভাবে তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যাখ্যা করতে হবে, সে সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং প্রারম্ভিক সিদ্ধান্তে মতৈক্য অর্জনেও সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের জন্য যৌনতাবিষয়ক কথা বলা একটা দুঃসাহসিক কাজ, এফজিডিতে তথ্য প্রদানকারীরা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাগুলো প্রকাশ করতে লজ্জা বা ভয় পাচ্ছিল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বন্ধুবান্ধব বা জ্ঞাতি ভাইবোনের অভিজ্ঞতার কথা বললেও, নিজেদের কথা বলছিল না। এটা গবেষণাকে ব্যাহত করেনি, কারণ আমরা কিশোর-কিশোরীদের কাছে যৌন বাস্তবতার সাধারণ ধরন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। যা হোক, এফজিডি থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ নিয়মাত্মক ছিল, ফলে এর সঙ্গে অন্য উত্সগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের যতটা সম্ভব বেশি সমন্বয় সাধন করা হয়। গবেষণার শেষের দিকে ওই সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে আটটি অবধারণমূলক ঘটনা-বিবরণ তৈরি করা হয়, যা যুবকেন্দ্রের অভ্যাগতদের কাছে উপস্থাপন করা হয় এবং এই বিষয়ে তাদের মতামত নেওয়া হয় (বিস্তারিত১৯)।

গ্রামীণ নিরক্ষর যুবক-যুবতীদের কাছে যৌন বিষয়গুলো সম্পর্কে মতামত, গ্রামীণ বাণিজ্যিক যৌনক্রিয়ার ধরন বা গ্রামীণ মাতা-পিতা ও ধর্মীয় নেতাদের মতামত সংগ্রহ করতে আমরা সক্ষম হইনি। উপরন্তু, এতিম ও বস্তিবাসী মেয়েদের অভিজ্ঞতার বিষয়েও যথেষ্ট তথ্যানুসন্ধান করা হয়নি, যা হয়তোবা এই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ভিন্নতা বিষয়ে আরও সমন্বিত অন্তর্জ্ঞান দিতে পারত।

ফলাফল

এই গবেষণায় ছেলে ও মেয়েদের পার্থক্যমূলক সামাজিক অবস্থান উন্মোচিত হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, যদি মেয়েরা তাদের যৌন আচরণ-সংক্রান্ত কঠোর রীতিনীতিগুলো মেনে না চলে, তবে তারা কঠোর সামাজিক কলঙ্কের সম্মুখীন হয় (ছেলেদের চেয়ে যা অনেক বেশি), একজন উপযুক্ত স্বামী নির্বাচনের সম্ভাবনা কমে যায় এবং তার পরিবারকে তার বিয়ের সময় বেশি যৌতুক দিতে হয়। এটা অনেক মেয়েকে তাদের কুমারীত্ব রক্ষায় প্রণোদিত করে। বিবাহ-পূর্ব যৌনতা-বিষয়ক সামাজিক নিয়মসমূহ প্রধানত মেয়েদের ওপর আরোপ করা হয়, ফলে তাদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ হয় এবং সামাজিকভাবে ছেলেদের সঙ্গে তাদের মেলামেশা বাধাগ্রস্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক এবং ছোটদের মধ্যে পারস্পরিকভাবে যৌনতা-বিষয়ক আলোচনাও সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। এই গবেষণায় দেখা যায়, লিঙ্গ পৃথক্করণ এবং যৌনতাকেন্দ্রিক সামাজিক বিধিনিষেধসমূহ বাংলাদেশে অবিবাহিত ব্যক্তিদের যৌনতা-বিষয়ক শিক্ষা এবং সেবা প্রদানকে কঠিন করে তুলেছে।

যৌন আনন্দের অন্বেষণ এবং যৌনতা-বিষয়ক উপকরণ

সামাজিক বিধিনিষেধ ও রীতিনীতি সত্ত্বেও অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীরা সক্রিয়ভাবে যৌন-কামনা উদ্রেককারী আনন্দ এবং রোমান্সের পন্থাসমূহের পথ খোঁজে। প্রধানত ছেলেরা কিন্তু মেয়েরাও তাদের বন্ধুবান্ধবী, বয়সে বড় জ্ঞাতি ভাইবোন এবং/বা বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়দের সঙ্গে রোমান্স এবং যৌনতা-বিষয়ক আলাপ করে। যাদের কাছে কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ আছে (বাসায় বা সাইবার ক্যাফেতে) তারা ইন্টারনেট এবং অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য এবং পর্নোগ্রাফিক উপকরণ খোঁজ করে। পর্নোগ্রাফিক ক্লিপস দেখতে ছেলেরা ব্যাপকভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এই ক্লিপগুলো সাত মিনিট দীর্ঘ হয় এবং মোবাইলের দোকান থেকে এগুলো কিনতে মাত্র ৩ টাকা (০.০৪ মার্কিন ডলার) খরচ হয়। ছেলেরা তাদের বন্ধুদের মোবাইল ফোন থেকে ব্লুটুথের মাধ্যমে বিনা মূল্যে পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদান করে থাকে এবং তাদের স্থানীয় যৌনতা উদ্রেককারী গান, কৌতুকের ভিডিও, যৌনতা উদ্রেককারী দৃশ্যসংবলিত চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র-রহিত ক্লিপস দেখার সুযোগ পায়। যৌনতা উদ্রেককারী ছবি এবং গল্পসংবলিত সস্তায় ছাপানো ম্যাগাজিনও জনপ্রিয়, তবে প্রধানত ছেলেদের মধ্যে। শুধু অল্প কয়েকজন মেয়ে বলেছিল যে তারা গভীর রাতে ছেলেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যৌনতা উদ্রেককারী আলাপ করে। ছেলেরা যৌন আনন্দ পাওয়ার উপায় হিসেবে হস্তমৈথুনের উল্লেখ করেছে। তবে কোনো মেয়ে হস্তমৈথুনের কথা স্বীকার করেনি, এটার প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা এই ভয় পায় যে হস্তমৈথুন করলে তাদের কুমারীত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।

ছেলে ও মেয়ে উভয়ই রোমান্টিক চলচ্চিত্র (হিন্দি ও বাংলা উভয়ই) দেখতে পছন্দ করে এবং কেউ কেউ যৌন সম্পর্ক ছাড়াই রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িত আছে। যেসব ছেলে ও মেয়ে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িত আছে তারা উল্লেখ করেছে যে প্রকাশ্যে দেখা করা বা একসঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া সহজসাধ্য নয়, কারণ তারা পরিবারের সদস্য, পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে থাকে। পার্ক হচ্ছে একমাত্র প্রকাশ্য স্থান, যেখানে উচ্চবিদ্যালয় এবং কলেজের ছেলে ও মেয়েরা দেখা করতে পারে। তবে তা সাধারণত বিদ্যালয় বা কলেজ চলার সময় বা ক্লাস শেষ হওয়ার পর। কারণ সন্ধ্যার পর মেয়েদের বাসার বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় না। শহরের উত্তরদাতারা দেখা করার স্থান হিসেবে চলমান রিকশা, সাইবার ক্যাফে, সিনেমা হল, বন্ধুবান্ধবী বা আত্মীয়ের বাসা এবং শ্রেণিকক্ষের (ক্লাস শেষে) কথা উল্লেখ করেছে। গ্রামের ছেলে ও মেয়েরা দেখা করার স্থান হিসেবে ঝোপঝাড়, পাট, আখ বা ধানখেত এবং বাঁশবাগানের কথা উল্লেখ করেছে। শুধু কিছু ছেলে যৌনক্রিয়ার কথা স্বীকার করেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ যৌনকর্মীর কাছে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে বা এমনকি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও উল্লেখ করেছে। সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীরা বাধা সত্ত্বেও গর্ভপাত এবং (জরুরি) গর্ভনিরোধের মতো সেবা নিতে আসে। সুতরাং, কঠোর রীতিনীতি সব সময় নিবৃত্ত করে না, বরং সতর্কতা ও গোপনীয়তাও সৃষ্টি করে।

যৌনক্রিয়া-সম্পর্কিত প্রকাশনায় প্রবেশগম্যতা

যুবক-যুবতীরা নানা উত্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে যৌনক্রিয়া ও যৌনতা সম্পর্কে তাদের জানার আগ্রহ পূরণ করে। অন্যতম জনপ্রিয় উত্স হচ্ছে যৌনতা উদ্দীপক বই, যা সাধারণত ‘চটি বই’ হিসেবে পরিচিত—এগুলো যৌনতা উদ্দীপক ছবিসহ গল্পের বই; যেখানে গল্পের চরিত্ররা যখন-তখন যৌনক্রিয়ার লিপ্ত হয়। লেখক এসবের জীবন্ত বর্ণনা দেন এবং গল্পের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত যৌনক্রিয়া ও অজাচার থাকে। অদ্ভুতভাবে যে সমাজে বিবাহবহির্ভূত যৌনক্রিয়াকে পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেখানে আমাদের তথ্য সংগ্রহের সময় সংগৃহীত চটি বইগুলোতে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্কের বর্ণনা পাওয়া যায় না; বরং, সত্মা এবং ছেলে, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, মামা-মামি, ভাইঝি, ভাগনি, ভাইপো, বোনপো বা বন্ধুদের মধ্যে যৌনক্রিয়া প্রাধান্য পেয়েছে। এই বইগুলোতে লিঙ্গের আকার, যৌনক্রিয়ার স্থায়িত্ব এবং মেয়েদের করা কিছু যৌন কর্মকাণ্ডের সম্পর্কে মিথ্যা এবং অবাস্তব তথ্য দেওয়া থাকে। অন্যদিকে ধর্মীয় জীবনাচরণের নির্দেশসংবলিত বইগুলোতে, যেগুলো সাধারণত শিক্ষিত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের বাসায় পাওয়া যায়, সেগুলোতে যৌন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রার্থনার একটি অধ্যায় থাকে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যা বিবাহিত দম্পতিদের উদ্দেশ করে লেখা হয়। বইগুলোর পাঠ্যসূচিতে যৌনক্রিয়ার ওপর লিখিত এসব অধ্যায়ে ‘শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ চিহ্নিত থাকে। ফলে, এমনকি যেসব তরুণ-তরুণী ধর্মের প্রতি ততটা আগ্রহী নন, তাঁরাও এই বইগুলো পড়তে আগ্রহী হন এবং গোপনে এসব অধ্যায় পড়তে উত্সুক থাকেন।

যৌন উদ্দীপক ছবি প্রধানত বিদেশি পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিন এবং সস্তায় ছাপানো বাংলা ম্যাগাজিনও জনপ্রিয়। এগুলো প্রধানত সিনেমা হলের সামনে, স্থানীয় স্টেশনারি দোকানে বা বাজারে বসা হকারের দোকানে পাওয়া যায়। এই পণ্যগুলো প্রকাশ্যে রাখা হয় না, সাধারণত অন্য বই বা ম্যাগাজিনের আড়ালে রাখা হয় এবং কোনো ক্রেতা কিনতে চাইলে শুধু তখনই তাকে সরবরাহ করা হয়। মোবাইল ফোন পর্নোগ্রাফি ছাড়াও গ্রামীণ, আধা-শহুরে এবং শহুরে বিন্যাসে নির্মিত যৌন উদ্দীপক সংগীত এবং কৌতুক ভিডিও রয়েছে। এগুলো মূলধারার চলচ্চিত্র এবং সংগীতশিল্পে অপরিচিত অপেশাদার অভিনয়শিল্পীদের দ্বারা তৈরি করা হয়, যদিও মাঝে মাঝে এগুলোর আবরণের গায়ে জনপ্রিয় গায়ক বা অভিনয়শিল্পীদের ছবি সাঁটা থাকে। তারা সাধারণত সস্তায় সহজলভ্য এই পণ্যগুলো কেনে এবং পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করে। তারা বাসায় এগুলো গোপন জায়গায় রাখে, যেমন ম্যাট্রেসের নিচে বা বইয়েরই ভেতরে। অধিকাংশ মেয়ের ধর্মীয় বইগুলোতে প্রবেশগম্যতা ছিল। কয়েকজন মেয়ে অন্যান্য উপকরণে নিজেদের প্রবেশগম্যতা থাকার কথা স্বীকার করে, তবে তারা বলেছিল, তারা কখনো এগুলো কেনেনি, শুধু বন্ধুবান্ধবীর কাছ থেকে দেখেছে।

সাক্ষাত্কার নেওয়া প্রাপ্তবয়স্করা বলেন যে যদিও অতীতে কিছু কিছু ধর্মীয় এবং চটি বই পাওয়া যেত, কিন্তু তখন সম্ভবত শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই এগুলো পড়ার সুযোগ পেতেন। তাঁরা এসব পণ্যের বিস্তার ও বৈচিত্র্য এবং কিশোর-কিশোরীদের এগুলোতে প্রবেশগম্যতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। অধিকন্তু, কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ই স্বীকার করেছেন যে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি সম্পর্কে অধিকাংশ মাতা-পিতাই জানে না। এটা নবীনদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের যৌনতা-বিষয়ক আলোচনার ওপর সামাজিক নিষেধাজ্ঞার ফল। যুবকেরা তাঁদের প্রশ্নের উত্তর এবং তথ্য ও সাহায্যের জন্য ফেরিওয়ালা এবং ভেষজ ওষুধবিক্রেতাদের কাছে যান (বিনা মূল্যে তাঁদের উপদেশ পাওয়া যায়, ওষুধ কিনতে অল্প টাকা খরচ হয়)। এসব উত্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য সাধারণত অসম্পূর্ণ এবং প্রায়ই অসত্য হয়। এ ছাড়া যুবকদের ভ্রান্ত ধারণা, অনিরাপত্তা এবং ভয়ের পথে পরিচালিত করে। শুধু তা-ই নয়, এই তথ্য জগত্ নিষিদ্ধ বলে এখানে প্রবেশ অপরাধবোধের উত্স বলে গণ্য হয়। এসব তথ্য জেন্ডারের ভূমিকা এবং পুরুষের যৌন ক্ষমতার সাংস্কৃতিক ধারণাকেও পাকাপোক্ত করে। যেমন পুরুষের ক্ষমতায়ন মানে নারীর অধস্থনতা। অতঃপর, ছেলে ও মেয়েরা যখন যৌন চাহিদা অনুভব বা তাদের যৌনতাকে উপভোগ করার জন্য নিজেদের মধ্যে ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয়; বা যখন তারা তথ্য, যৌন উদ্দীপনা, পুলক, ঘনিষ্ঠতা এবং রোমান্সের তালাশ করে, তখন তারা ভয় বা পাপবোধ অনুভব করে।

ডেটিং এবং যৌনতা সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের অনুভূতি

ছেলে ও মেয়েরা উল্লেখ করেছে যে রোমান্স এবং আনন্দ তাদের নিজেদের, তাদের আত্মসম্মান এবং তাদের পরিণত হওয়া স্ত্রীসুলভ বা পুরুষালি—অনুভব করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এসব কিছু অবশ্যই লুকিয়ে হতে হবে, বিশেষত বড়দের কাছ থেকে। তারা কলঙ্ক এবং শাস্তির ভয়ে থাকে, বিশেষত মেয়েরা। প্রাপ্তবয়স্করা রোমান্টিক সম্পর্ককে যৌন সম্পর্ক হিসেবে সন্দেহ করে। ছেলে ও মেয়েরা পরিবারের বিপক্ষে যাওয়াকে ভয় করে। মেয়েদের জন্য এর ফলাফল অধিক খারাপ, যেমন চলাফেরায় বাধা-নিষেধ, বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, অনাথাশ্রম থেকে বহিষ্কার করা, জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া, ভবিষ্যত্ স্বামীর খিস্তির সম্মুখীন হওয়া, সম্পৃক্ত পরিবারগুলোর জন্য অবমাননা বয়ে আনা এবং ভবিষ্যতে বিয়ের পথগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। যদি একটি রোমান্টিক সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত না গড়ায়, মেয়ের পরিবারকে তার জন্য হয়তোবা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি যৌতুকও দিতে হতে পারে।

রজঃস্রাব সম্পর্কে এবং বিয়ের রাতে নিজেদের কুমারীত্ব প্রমাণ করতে পারবে কি না—এই বিষয় নিয়েও মেয়েরা ভয়ে থাকে। ছেলেরা হস্তমৈথুন বা স্বপ্নদোষের ফলে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ে থাকে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই যৌন ক্ষমতা, যৌন অঙ্গসমূহ এবং স্তন; যৌনক্রিয়ায় রত হওয়ার এবং ভবিষ্যতে সন্তান প্রজননের সক্ষমতা নিয়ে অনিরাপত্তায় ভোগে। তারা ভালোবাসে না এমন কারও সঙ্গে পারিবারিকভাবে আয়োজিত এবং জোরপূর্বক বিয়েতে এবং নিজের পছন্দের রোমান্টিক সঙ্গীকে হারাতে ভয় পায়। উপরন্তু, ‘খারাপ’ কোনো কাজ করার সময় ধরা পড়ে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়া এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপ করার ভয়েও তারা থাকে।

মেয়েদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইভ টিজিং

কিশোর-কিশোরীরা যৌনতা-সম্পর্কিত যে বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মেয়েরা ছেলেদের দ্বারা বারবার প্রকাশ্যে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, বিশেষত পথচারী মেয়েরা যৌন উদ্দীপক উক্তির শিকার হয়। অধিকাংশ উক্তি মেয়েদের বাহ্যিক রূপ এবং শরীর লক্ষ্য করে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ তারা উল্লেখ করেছে—‘ওহ! সাইজ দেখ! নিতম্ব ৪০ এবং বুক ৩৬’, ‘সেই একখান মাল!’ ‘হাই সেক্সি! এত বড় বুক বানালে কী করে?’ ‘হাঁটছে, দুলছে’। মাঝে মাঝে ছেলেরা মেয়েদের স্তনকে এক জোড়া নারকেল বা আপেলের সঙ্গে তুলনা করে। তাই সে ক্ষেত্রে মেয়েরা তাদের বইগুলো নিজেদের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করে। তখন ছেলেরা কটূক্তি করে: ‘ইশ্! যদি আমি তার হাতের বই হতে পারতাম, তবে আমি তার বুকের বা হূদয়ের আরও কাছে যেতে পারতাম।’

মেয়েরা বলেছে যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েদের মুখে বা শরীরে একটি চিঠি ছুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ছেলেরা প্রেমের সম্পর্কের প্রস্তাব দেয় এবং ছেলেরা মনে করে, মেয়েরা তত্ক্ষণাত্ এই প্রস্তাবে সাড়া দেবে। যদি এই প্রেম প্রস্তাবের কোনো সাড়া না থাকে বা না বোধক উত্তর হয়, তখন তার প্রতি ইভ টিজিংয়ের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। মেয়েদের মতে, ছেলেরা যে তাদের উক্তির মাধ্যমে কোনো মেয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ প্রকাশ করে তা-ই নয়, ছেলেরা যখন কোনো মেয়েকে অপছন্দ করে, তখন তাও তাদের আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন তারা একজন কৃশতনু মেয়েকে ডাকতে পারে শুঁটকি বা একজন লম্বা মেয়েকে লগি (বাঁশ)। যখন তারা একজন মোটা মেয়েকে দেখে, তখন তারা বলতে পারে, ‘এরে দিয়ে আমরা কী করব?’ যদি একজন মেয়ে একজন ছেলের প্রস্তাবে রাজি না হয়, ছেলেটি বলতে পারে: ‘মেয়েটি কাঁচা আমের মতো টক’। মাঝে মাঝে ছেলেরা মেয়েদের লক্ষ করে শিস দেয়, চোখ টেপে, তালি দেয়, উচ্চ স্বরে হাসে, গান গায় (সাধারণত অশ্লীল), চুমু ছোড়ে বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে যৌনক্রিয়ার ইঙ্গিত করে।

যখন ছেলেরা কটূক্তি করে বা স্পর্শ করতে চায়, তখন অধিকাংশ মেয়ে মাথা নিচু করে নীরবে হেঁটে চলে যায়। কোনো কোনো মেয়ে তাদের বড় ভাইদের এই বিষয়টি দেখতে বলে। এক মেয়ে বলেছে যে সে এই বিষয়টি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিল এবং সে তার মাকে মেয়েটির জন্য একটি বোরকা বানিয়ে দিতে বলে, যাতে ছেলেরা কটূক্তি করা বন্ধ করে। কিন্তু বোরকা পরা মেয়েরাও নিরাপদ নয়। মাদ্রাসার এক মেয়ে বলেছে যে তখন ছেলেরা কটূক্তি করে, বলে: ‘হাই সেক্সি, অ্যারাবিয়ান নাইটস’। এ ধরনের কটূক্তির ফলে মেয়েরা ভয় পায় এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

মৌখিক হয়রানির পর অনেক মেয়ে শারীরিকভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে, যেমন চিমটি কাটা, লাথি দেওয়া, বুকে স্পর্শ করা এবং ঘেঁষাঘেঁষি করা দাঁড়ানো। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে একটি ছেলের একজন মেয়েকে অ্যাসিড ছুড়ে মারা, অপহরণ করা এবং একই কারণে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে মেয়েরা জানিয়েছে। কোনো মেয়েই এই মনোযোগ পছন্দ করে না, কারণ ছেলেগুলো তাদের কাছে ‘অপরিচিত’ থাকে, ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে ঘটে, এটা মেয়েদের মধ্যে প্রকাশ্যে একধরনের সার্বক্ষণিক অনিরাপত্তার বোধ তৈরি করে এবং তারা এই বিষয়টি কাউকে জানালে, হয়তোবা তাদেরই এই ঘটনার উসকানিদাতা হিসেবে দোষারোপ করা হবে। প্রকৃতপক্ষে, মেয়েদের সঙ্গে করা সব ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনস থেকে দেখা গেছে যে যদি কোনো মেয়ে কারও কাছে হয়রানির শিকার হওয়ার কথা বলে বা যদি সে হয়রানির শিকার হিসেবে চিহ্নিত হয়, তবে সমাজ বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার নিজের পরিবারও তার ওপর দোষারোপ করে এবং তার পরিবারের অবমাননা হয়।

ছেলেদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইভ টিজিং

ছেলেরা স্বীকার করেছে যে তারা মৌখিকভাবে মেয়েদেরকে হয়রানির সঙ্গে জড়িত এবং অনেকে শারীরিকভাবে হয়রানির সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে। বস্তিবাসী কয়েকজন ছেলে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে, দুজন গণধর্ষণে অংশগ্রহণ করেছিল বলে জানায়। অনেকে স্বীকার করে যে তারা প্রকাশ্য স্থানে, যেমন মেলা বা আনন্দোত্সব, সিনেমা হল, হাটবাজার, বাসে বা ট্রেনে, ভিড়ের মধ্যে মেয়েদের স্পর্শ করার চেষ্টা করেছে। যেমন একজন বলেছে, ‘...যখন বিদ্যুত্ চলে গিয়েছিল, তখন আমি একটি মেয়ের সংবেদনশীল অংশ টিপে দিই।’

যখন ছেলেদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তারা মেয়েদের জ্বালাতন/হয়রানি করে; অধিকাংশ ছেলে উত্তর দিয়েছিল, এটা করতে তাদের ভালো লাগে এবং এটা থেকে তারা আনন্দ পায়। কেউ কেউ বন্ধুদের সামনে নিজের পুরুষত্ব দেখানোর জন্য এবং কেউ কেউ বন্ধুদের চাপে এমনটা করে। যেমন একজন ছেলে বলেছিল যে তার বন্ধুরা তাকে বলেছিল, বন্ধুদের সামনে একটা মেয়ের বুক স্পর্শ করলে সে তাদের সামনে নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করতে পারে। তাই ছেলেটি নিজেকে বাহাদুর প্রমাণের লোভে দৌড়ে একটি মেয়ের কাছে যায় এবং তার পুরুষত্ব প্রমাণ করার জন্য রাস্তায় তার বন্ধুদের সামনে হঠাত্ মেয়েটির সংবেদনশীল অংশ টিপে দেয়। অন্যরা মেয়েদের ইভ টিজিং করলে শাস্তি পাওয়ার ভয়ে থাকে, তাই তারা এমনটা করা থেকে বিরত ছিল।

অনেক ছেলের কাছে ইভ টিজিং সাধারণ একটি বিষয়। তাদের মতে, প্রকাশ্য স্থানে মেয়েদের উদ্দেশে কটূক্তি করা এবং তাদের স্পর্শ করা ক্ষতিকর কিছু নয়, কারণ এতে মেয়েরা গর্ভবতী হয়ে যাবে না এবং বড়রাও এ সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে না। এমনকি তারা একে অপরকে না চিনলেও এবং পরস্পরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কিছু ছেলে মনে করে যে প্রত্যেক অবিবাহিত ছেলেরই রাস্তায় প্রত্যেক অবিবাহিত মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার আছে। যা হোক, এ ধরনের আচরণে একজন মেয়ের কী ধরনের অনুভূতি হতে পারে, অধিকাংশ ছেলেই এ বিষয়টি কখনো চিন্তা করে দেখেনি।

আলোচনা

এই প্রবন্ধে বাংলাদেশের কিশোরীদের ইভ টিজিংকে একটি জেন্ডারভিত্তিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রসঙ্গায়ন করা হয়েছে, যা মেয়েদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। লিঙ্গবৈষম্য, যা যৌন হয়রানিতে রূপ নিচ্ছে, বাংলাদেশি সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।২০-২৪ বাংলাদেশে পিতৃতান্ত্রিকতা, জেন্ডার রীতি এবং পর্দাপ্রথার কারণে মেয়েরা জন্মের পর থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়২৫, ২৬ এবং এগুলো তাদের যৌন হয়রানির অজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।২৭ আইন এবং বিচার-সংক্রান্ত প্রক্রিয়াসমূহ সমস্যাটিকে আরও শোচনীয় করে তুলছে।২৮, ২৯ মেয়ে এবং নারীদের যৌন হয়রানির অপরাধে ছেলে এবং পুরুষদের বিচারের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করা সত্ত্বেও, রাতারাতি সাংস্কৃতিক আচারগুলো পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়।৭, ১১ সমাজ মেয়েদের দোষারোপ করে থাকে, ফলে যৌন নিপীড়ন এবং সহিংসতার কথা প্রকাশ করা তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে যায়, যা কিশোরী বয়স পার হওয়ার পরও বন্ধ হয় না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি-সম্পর্কিত ২০০৪ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, কর্মজীবী নারীরাও হয়রানির অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে কুণ্ঠিত বোধ করেন। কারণ তাঁরা কলঙ্কিত হওয়ার, প্রতিশোধের শিকার হওয়ার এবং চাকরি হারানোর ভয়ে থাকেন।৩০

যৌন সম্পর্কে ছেলে ও মেয়েরা নিজেদের ভূমিকাকে কীভাবে দেখবে, তা জেন্ডারবৈষম্যের দ্বারা নির্ধারিত হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বস্তিবাসী বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে যৌন অভিজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণের ধারণা খুবই ক্ষীণ।৩১ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য গবেষক দেখিয়েছেন যে যৌন হয়রানি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল, যা পিতৃতান্ত্রিকতা এবং ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত এবং নারী ও মেয়েদের যৌন অবমাননা এবং শোষণ প্রকাশে একধরনের অনাগ্রহ রয়েছে।৩২-৩৪ একটি নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় রূপান্তরের ফলে পুরুষদের পুরুষালি সনাতন ভাব সংকটের মুখে, যেটি মিসরের রাস্তায় নারীদের হয়রানির অন্যতম কারণ।৩৫

যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কিত মূল্যবোধ এবং নিয়মগুলোও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে বিবাহপূর্ব যৌনক্রিয়া নিষিদ্ধ।৩৬-৪০ আমাদের গবেষণা থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, যৌনতার ওপর সাধারণ এবং গোঁড়া সামাজিক নিষেধাজ্ঞা, বিবাহপূর্ব যৌনতার প্রতি সমাজের যৌন নিপীড়নমূলক আচরণের ফলে জেন্ডার পৃথক্করণ এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য অপ্রতুল তথ্যের ব্যবস্থার ফলে যৌনতা-বিষয়ক ভুল ধারণা ও ভয় তৈরি হয়। ফলে যৌনতা রহস্যাবৃত হয়ে পড়ে এবং কিশোর-কিশোরীরা বিপরীত লিঙ্গের যেকোনো ধরনের মিথস্ক্রিয়ার সঙ্গে যৌন অর্থ জড়াতে শেখে। এর ফলে তাদের আরও স্বাভাবিকভাবে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলামেশা এবং বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে অযৌন অন্তরঙ্গতা তৈরির যে ক্ষমতা তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা আরও প্রকট হচ্ছে কারণ, এমন খুব কম প্রকাশ্য স্থান আছে যেখানে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন ছেলে ও মেয়েরা পরস্পর দেখা এবং যোগাযোগ করতে পারে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফিক উপকরণসহ বৈশ্বিক গণমাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের বর্ধিত প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য সামাজিক পরিবর্তনও নির্দিষ্ট কিছু গঁত্বাধা জেন্ডার এবং যৌন নিয়ম ও প্রত্যাশা, যেমন পুরুষদের কর্তৃত্ব এবং আনন্দ, জোরদার করতে ভূমিকা পালন করছে। কোনো কোনো লেখক দক্ষিণ এশিয়ায় যৌন সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম এবং হিন্দি চলচ্চিত্রকে দায়ী করেন।২, ৩, ১১-১৪

সম্ভবত ছেলেমেয়েদের সামাজিক মিশ্রণ, রোমান্টিক সম্পর্ক এবং ডেটিংয়ের ওপর বাধা-নিষেধ—যা পর্নোগ্রাফির প্রভাবে এবং যৌনতা ও ছেলেমেয়েদের সম্পর্ক শিক্ষার অনুপস্থিতিরই একটি ফল হচ্ছে ইভ টিজিং। এটা প্রমাণিত যে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা করে এবং তাদের মধ্যকার মেলামেশা সংকীর্ণ করে কিশোর-কিশোরীদের যৌনতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কুমারীত্ব এবং পারিবারিকভাবে বিয়ের নিয়ম রক্ষার যে প্রচেষ্টা বয়স্করা করেন, তা ভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার দক্ষতা অর্জনের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। কিশোর-কিশোরীদের যৌন এবং যৌনতাসম্পর্কিত আচরণ অনেকটা নির্ভর করে তাদের যৌন-সামাজিকীকরণের দক্ষতার (Sexual Interaction Competency) ওপর। অধিকন্তু, যৌন সামাজিকীকরণের সঙ্গে সমাজজীবনের অন্য অনেক অযৌন বিষয় জড়িয়ে আছে।৪১ যৌনক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জন যৌন সামাজিকীকরণের একটি অংশ;৪২, ৪৩ এখানে যোগাযোগ এবং সামাজিক দক্ষতা, সংবেদনশীলতা এবং আচরণগত কৌশল জড়িত। এটি মানুষকে তাদের পারস্পরিক আনন্দদায়ক যৌনক্রিয়ার বন্দোবস্ত করতে সাহায্য করে।৪৪ এই সামাজিক দক্ষতার অভাব ইভ টিজিংয়ের মতো বিকৃত আচরণকে আরও সহজে সাড়ম্বরে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।

পরিশেষে, বাংলাদেশে প্রজনন এবং যৌন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা প্রদানে ঘাটতি রয়েছে। এই গবেষণায় কিশোর-কিশোরীদের দ্বারা প্রকাশিত তাদের দেহ এবং যৌন অনুভূতি-সম্পর্কিত অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ এবং অনিরাপত্তা এটাই দেখায় যে নবীনদের সমন্বিত যৌনতা শিক্ষায় প্রবেশাধিকার থাকা উচিত এবং যা শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক না হয়ে জেন্ডারবৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকেও সামনে নিয়ে আসবে এবং যা সামাজিক-যৌন মিথস্ক্রিয়ার দক্ষতা তৈরি করবে। এই গবেষণার সময়ে বাংলাদেশের বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে যৌনশিক্ষার কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে কি না, তা নিরীক্ষা করা হয় এবং দেখা গেছে, এ বিষয়ে খুবই অপর্যাপ্ত তথ্য আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্র্যাক তাদের কিশোর-কিশোরীদের জন্য গ্রামীণ বিদ্যালয়ে যৌনশিক্ষা চালু করেছে এবং এফপিএবি ও আরও চারটি এনজিও সমন্বিত যৌনশিক্ষা পাঠ্যক্রম তৈরি করছে এবং কয়েকটি জেলার বিদ্যালয়ে চালু করেছে। বন্ধুবান্ধব, রাস্তার ফেরিওয়ালা, ইন্টারনেট, পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য উত্স থেকে বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা যে ভ্রান্ত তথ্য ও বার্তা পাচ্ছে, সেগুলোর ভারসাম্য রক্ষার্থে তাদের সম্পূর্ণ এবং সঠিক তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম এবং সামাজিক শাস্তি যতই কঠিন হোক না কেন, কিশোর-কিশোরী ও নবীনেরা স্বাভাবিক যৌন অভিব্যক্তির অংশ হিসেবে প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে তথ্য, আনন্দ এবং যৌন উদ্দীপনার খোঁজ করবে। প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা তাদের রক্ষা এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ার সর্বোত্তম পথ হচ্ছে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য, দক্ষতা এবং মনোবল জোগানো।

একইভাবে, নবীনদের লক্ষ্য করে পরিচালিত যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষাকে শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত এবং কিশোর-কিশোরীদের উদ্বেগের প্রধান কারণগুলোর বিষয়ে সঠিক উপদেশ প্রদানে যত্ন নেওয়া এবং নিবারণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে যারা যৌন সক্রিয় এবং যারা (এখনো) যৌন সক্রিয় না, সবাইকে তাদেরও সম্পৃক্ত করা উচিত। শারীরিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গ ছাড়াও এখানে আরও সেবা যুক্ত করতে হবে, যেখানে কিশোর-কিশোরীরা তাদের ভয় আর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং জোরপূর্বক বিয়ে, যৌন হয়রানি ও কলঙ্ক এবং জোরপূর্বক যৌনক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে পারে। অধিকন্তু, মেয়েদের প্রতি হয়রানির বিষয়গুলো প্রকাশ করা, যাতে আরও সহজ হয়, তার অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। ছেলে ও মেয়েদের তাদের নিজেদের এবং অন্যের যৌন অধিকার নিয়ে আরও বেশি সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন এবং বাবা-মা ও প্রাপ্তবয়স্কদের সমাজে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে (শুধু নীরবে সমর্থন না করে) তাদের ভূমিকা উপলব্ধি করা উচিত। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে একটি ভিন্ন ধরনের মিথস্ক্রিয়া থাকা প্রয়োজন এবং এর দ্বারা কঠোর জেন্ডার বিভক্তি বন্ধ হওয়া উচিত। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া জনগণকে যৌন সহিংসতা বিষয়ে আলোচনা বৃদ্ধি করতে এবং চালিয়ে যেতে উত্সাহিত করতে পারে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশনের (আইপিপিএফ) অধীনে এই গবেষণায় অর্থায়ন করে ডাচ সরকার। মাঠপর্যায়ের কাজে সহযোগিতা করে এফপিএবি। লেখকেরা বিশেষভাবে তথ্যদাতা কিশোর-কিশোরীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যাদের মতামত ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এই প্রবন্ধ রচিত এবং আটজন নবীন, যারা এই গবেষণার একটি বড় অংশের কাজ সম্পন্ন করেছে: মোছাম্মাত্ সাবিনা আকতার, ময়নুল হাসান ইসলাম, মোহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম, পারিজাত খাতুন, পারভেজ কামাল, মাহফুজা রহমান, মিঠুন কুমার রায়, আফরোজা খানম সুমি ও আজমারিনা তানজির। আইপিপিএফ লন্ডন এবং আইপিপিএফ দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের নবীন ও কিশোর-কিশোরী দলের আমাদের সহকর্মীদের, এফপিএবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সম্পাদনায় সাহায্য করার জন্য ক্যাথি ডে ক্রাফকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তথ্যসূত্র

1.       Gangoli G., Indian Feminisms: Law, Patriarchies and Violence in India. London: Ashgate Publishing, 2007.

2.       Baxi P. “Sexual harassment,” 2001. www.india-seminar.com/2001/ 505/505pratikshabaxi.htm.

3.       Ramasubramanian S, Oliver MB, “Portrayals of sexual violence in popular Hindi films, 1997-99,” Sex Roles 2003;48(7-8):327-36. DOI: 10.1023/A:1022938513819.

4.       Das MB, Ahmad JK, Bernard C, et al. “Whispers to Voices. Gender and Social Transformatioin Bangladesh,” World Bank and Aus AID, 2007.

          http://siteresources.worldbank.org/INTBANGLADESH/Resources/ 2956571205740286726/genderReport.pdf.

5.       Rashid M., “Letting eve-teasing go unpunished.,” The Daily Star, 9 September 2007.

          www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=5952.

6.       Kabeer N. “The decline in “missing women” in Bangladesh,” November 2012. www.opendemocracy.net/5050/naila-kabeer/ decline-in-missing-women-in-bangladesh

7.       “Eve teasing” - a social curse. Studz Mode.com, 2013.

          www.studzmode.com/essays/EveTeasing-A-Social-Curse-505336.html.

8.       Agnes F., “Protecting women against violence: review of a decade of legislation, 1980-89,” Economic and Political Weekly 1992; 27(17):19-33.

9.       Kapur R, Khanna S. “Memorandum on the Reform of Laws Relating to Sexual Offences,” Delhi: Centre for Legal Research, 1996.

10.      Working definition.Youth Incentives and WGNRR.2006.

          http://www.rutgerswpf.org/sites/default/files/Grey%20Areas.pdf.

11.      UNICEF. Bangladesh: “When sexual harassment leads to suicide,” 2009. www.unicef.org/sowc09/docs/SOWC09_Table_9.pdf.

12.      Mawson J. “UNICEF supports efforts to end sexual harassment of girls and women in Bangladesh,” Government, NGO partners and adolescents target “eve teasing”. 2010.

          www.unicef.org/ infobycountry/bangladesh^55216.html.

13.      Ain O Salish Kendra. 2010. www.askbd.org/web/.

14.      Bangladesh National Women Lawyers Association.. “Eveteasing.”

          www.bnwla.org.bd/content/view/165/133/lang,en/.

15.      Bangladesh National Women Lawyers Association, “Violence against Women in Bangladesh,” Annual Report, 2000.

          www.thp.org/ system/files/Harassment.pdf.

16.      Ethirajan A. “Bangladesh “Eve teasing” protest draws students,” BBC News, Dhaka, 2010.

          www.bbc.co.uk/news/world-south-asia-11687647.

17.      The Hunger Project, 2000. http://www.thp.org/files/Harassment.pdf.

18.      Rutgers WPF, “Do They Match?” Research reports and training manuals. www.rutgerswpf.org/content/downloads.

19.      Van Reeuwijk M, Nahar P., “The importance of a positive approach to sexuality in sexual health programmes for unmarried adolescents in Bangladesh,” Reproductive Health Matters 2013;21(41):69-77.

20.      Siddiqi MD. “The Sexual Harassment of Industrial Workers: Strategies for Intervention in the Work place and Beyond,” CPD and UNFPA Report 26. 2003.

          www.cpd.org.bd/pub_attach/unfpa26.pdf.

21.      Jahan R. “Family violence: some observations,” in Akandaand Jahan, editors. Collected Articles: Women for Women, Research and Studz Group, Dhaka, 1983.p.41-47.

22.      Jahan R. “Hidden wounds, visible scars: violence against women in Banglades,” in Agarwal B, editor, Structures of Patriarchy. London: Zed Books, 1988.

23.      Nahar P. “Violence against childless women,” in Bolaiah D,et al, editors, Gender-based violence and sexual and reproductive health, Mumbai: National Institute for Research in Reproductive Health, Indian Council of Medical Research, 2010. p.11-30.

24.      Naved RT, Akhtar N. “Spousal violence against women and suicidal ideation in Bangladesh,” Women’s Health Issues 2008; 18(6):442-52.

25.      Marcus R. BRIDGE Development Agenda Report No.10., “Violence against women in Bangladesh, Pakistan, Egypt, Sudan, Senegal and Yemen,” Report prepared for Special Programme WID. Netherlands Ministry of Foreign Affairs, 1993.

26.      Schuler SR, Islam F. “Women’s acceptance of intimate partner violence within marriage in rural Bangladesh,” Studies in Family Planning 2008;39(1):49-58.

27.      Chowdhuri S. “Violence against Women in Bangladesh: Situational Analysis/Existing Interventions,” Monograph Series 4. James P Grant School of Public Health, BRAC University, 2007.

          http://openlibrary.org/books/OL24104307M/Violence_against_ women_in_Bangladesh.

28.      Afsana K, Rashid SF, Thurston W. “Challenges and gaps in addressing women’s health in the health policy of Bangladesh,” World Conference on Prevention of Family Violence, Banff, Alberta, Canada, 23-26 October 2005.

29.      Bhuiyan R. “Bangladesh: personal law and violence against women,” in Schuler M, editor, Empowerment and the Law: Strategies of Third World Women, Washington, DC: OEF International, 1986.

30.      Billah M, Riazuddin AKM. “Workplace environment for women: issues of harassment and need for interventions,” Centre for Policy Dialogue. Report No.65.2004.

          http://unpan1.un.org/intradoc/groups/public/documents/APCITY/ UNPAN021437.pdf.

31.      Rashid SF. “Small powers, little choice: contextualizing reproductive and sexual rights in slums in Bangladesh,” IDS Bulletin 2006;37(5).

32.      Zubair S. “Just a time-pass: acknowledgement/denial (?)of sexual harassment in young women’s discourse,” Hawwa 2005; 3(2):197-219.

33.      Leach F, “Sitaram S. Sexual harassment and abuse of adolescent school girls in South India,” Education, Citizenship and Social Justice 2007;2(3):257-77.Doi: 10.1177/1746197907081262.

34.      Qamar H. “Reasons for eve teasing: a personality assessment, psychological fresh look,” in Qamar H, editor, Applied Psychology and Indian Perspective, Psychology, Health, Sports, Women’s Studies. Delhi: Gayan Publishing House, 1998.

35.      Fatima MP. “Street harassment in Cairo: a symptom of disintegrating social structures,” The African Anthropologist 2008; 15(1/2):1-20.

36.      Lazeena M. Romance and Pleasure: understanding the sexual conduct of young people in Dhaka in the Era of HIV and AIDS, Dhaka: University Press, 2005.

37.      Barkat A, Majid M. “Adolescent and youth reproductive health,” in Bangladesh: status, policies, programs, andissues, Policy Project, January 2003.

38.      Nahar Q, Tuùnon C, Houvras I, et al. “Reproductive health needs of adolescents in Bangladesh,” a studzreport. Working Paper No. 130. Dhaka: ICDDR, B:Centre for Health and Population Research, 2003.

39.      Rob U, Mutahara MU. “Premarital sex among urban adolescents,” Quarterly of Community Health Education 2001;20(1):103-11.

40.      Uddin J, Choudhury AM. “Reproductive health awareness among adolescent girls in rural Bangladesh,” Asia Pacific Journal of Public Health 2008;20(2).

41.      Vanwesenbeeck I, van Zessen G, Ingham R, et al. “Factors and processes in heterosexual competence andrisk: an integrated review of the evidence,” Psychology and Health 1999;14:25-50.

42.      Vanwesenbeeck I. “Sexual socialization,” Background paper: “Sexuality under 18: how the social environment influences sexual development,” International conference organised by Rutgers Nisso Groep and World Population Foundation, Amersfoort,11-12 October 2010.

43.      Vanwesenbeeck I. “Sexual violence and the MDGs,” International Journal of Sexual Health 2008;20:1-2.

44.      Jackson S, Scott S. Theorizing Sexuality, Berkshire:McGraw-Hill; Open University Press, 2010.

শব্দকোষ

            Access to—প্রবেশগম্যতা

            Breasts—বুক (পড়ুন স্তন)

            Cousin—জ্ঞাতি ভাইবোন

            Courtship—বিয়ে-পূর্ব প্রেমের সম্পর্ক

            Erotic pleasure and romance—যৌন-কামনা উদ্রেককারী পুলক এবং শিহরণ

            Flirtatious—চপলতা

            Hypothetical—অবধারণমূলক

            Incest—অজাচার

            Informant—জ্ঞাপক

            Humiliate—অবমানন

            Menstruation—রজঃস্রাব

            Mobility—চলিষ্ণুতা

            Normative—নিয়মাত্মক

            Public sphere—জনপরিমণ্ডল

            Qualitative methods—গুণগত পদ্ধতিসমূহ

            Reflection—অনুধ্যায়

            Reinforced—উসকে দেওয়া

            Taboo—নিষিদ্ধ বিষয়

            Text—পাঠ

            Wetdream—স্বপ্নদোষ