বাদাবনের বিজ্ঞান

সারসংক্ষেপ

একক আয়তনে দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। স্থানীয়ভাবে বাদাবন হিসেবে পরিচিত এই বনটি সচরাচর বর্ণিত হয় বিদ্যায়তনিক ও জ্ঞানকাণ্ডের অধিপতি তল থেকে। সুন্দরবনের মৌয়াল, বাওয়ালি, জেলে, মাঝি, চুনারি, মুন্ডা, বাগদী—মূলত সুন্দরবননির্ভর বনজীবীদের জ্ঞানভাষ্যে এই বৃহত্ বনের কোনো বিবরণ ও রচনা দেখা যায় না। চলতি আলাপখানিতে মূলত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গবেষণার ভেতর দিয়ে সুন্দরবনের লোকায়ত বিজ্ঞান জিজ্ঞাসাসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। মোট ৫৩টি ভিন্ন শিরোনামে সুন্দরবনের প্রাণ, প্রকৃতি, প্রতিবেশের জটিল সম্পর্কের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে, যা কেবল সুন্দরবন নয়, ম্যানগ্রোভ-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এক নতুন সংযোজন।

মুখ্য শব্দগুচ্ছ

বাদাবন, সুন্দরবন, লোকায়ত জ্ঞান, বনজীবী, মৌয়াল, স্থানীয় জ্ঞান, বাঘ, মধু

উত্সর্গ

নিদু মোড়ল, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।

বিখ্যাত গুনিন ছিলেন। বনের বাঘকে কাছে ডেকে এনে মাছ খাওয়াতেন, গোলপাতা বিছিয়ে ঘুম পারাতেন। প্রবীণ বয়সে বাঘের কামড়ে মারা যান।

কবিরাজ সুশীল মণ্ডল, পূর্ব কালিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, সাতক্ষীরা, শ্যামনগর

সুন্দরবনের বাঘের আক্রমণে আহত রোগীর বিখ্যাত চিকিত্সক। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ বাঘে ধরা মানুষের চিকিত্সা করেছেন এবং প্রায় ২০ জন কুমির ও কামটে কাটা। তাঁর চিকিত্সাবিদ্যা জানতে ইতালি, জাপান ও ইউরোপ থেকে অনেকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে এসে চাপ দিয়েছেন অনেকবার। তিনি এই বিদ্যা সুরক্ষা করেছেন।

ভূমিকা

প্রতিটি জ্ঞানকাণ্ড একটা ক্ষমতা নিয়েই হাজির হয় এবং বহাল থাকে। কখনো কখনো অনিবার্য হয়ে ওঠে। যেখানে লেপ্টে থাকে বাহাদুরি, বাণিজ্য আর বারুদের ঝাঁজ। যা অস্বীকার করে বিরাজিত আরও নানা জ্ঞানভাষ্য ও বিবাদ। জুলুম আর জবরদস্তি বহাল রেখে যা অনিবার্য হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান যেখানে দলিত আর দর্শন বিশৃঙ্খল। জ্ঞানকাণ্ডের এই অধিপতি প্রশ্নহীন ময়দানে চলতি আলাপখানি শুরু হচ্ছে সুন্দরবন নিয়ে। সুন্দরবনকে সচরাচর পাঠ করা হয় কীভাবে? সুন্দরবনকে সচরাচর আমরা পাঠ করি অধিপতি জ্ঞানকাণ্ডের ব্যাকরণ ও ভাষ্যে। ‘একক আয়তনে দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন’, ‘বিশ্বঐতিহ্য’, ‘রামসার এলাকা’, ‘বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন যেখানে বাঘ বেঁচে আছে’, ‘বাংলা বাঘ ও ইরাবতী ডলফিনের বৃহত্ বিচরণস্থল’ কিংবা ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানকাণ্ডে সুন্দরবনকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এমনসব তকমায়, যা এই জনপদের অরণ্যদর্শন থেকে এই বনকে এক বিচ্ছিন্ন, অনৈতিহাসিক ও অপর অঞ্চল বানিয়ে রেখেছে। রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী হিসেবে দক্ষিণবঙ্গের এই অঞ্চল পরিচিত হলেও মৌলঙ্গী নামের এক পেশাজীবী জনগোষ্ঠী যে এই বনাঞ্চলে নদীর জল থেকে লবণ তৈরির কারিগরি বিকশিত করেছিল সেই হদিস তো একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছে অধিপতি দলিল-দস্তাবেজে। তার বাদেও সুন্দরবনকে আগলে বিকশিত হয়ে চলেছে প্রাণ ও প্রকৃতির এক জটিল সংসার। কেবল বাঘ, বনবিবি, বাগদা বা বাউলে লতা নয়; এই সংসারের বাসিন্দা সুন্দরবননির্ভর বনজীবীরাও। বনজীবীরা নিজেদের পরিচয় দেন ‘বাদা করা লোক’ হিসেবে, কখনো মৌলে-বাউলে। মৌয়াল/মৌয়ালি, বাওয়ালি, চুনারি, জোংরাখুটা, মাঝি, জেলে। এদের কেউ বন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করে, কেউ গরানের ছিটে, কেউ গোলপাতা, কেউ মাছ, কেউ জোংরা। এই মানুষদের জন্ম কি মরণ সবই এই বনের কোলে। ১৯৬০ সালের দিকে উপকূলীয় বাঁধ দিয়ে জলপ্রবাহ ও জঙ্গলের মেলামেশায় প্রথম বড় আকারের রাষ্ট্রীয় বাধা দেওয়া হয়। তার পরপরই নদীর লোনা পানি আটকে কৃষিজমিকে হত্যা করে শুরু হয় বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের। শহরের ধনী মানুষেরা বড় বড় চিংড়ি মাছ খাবে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আর বিশ্বব্যাংকের চোখরাঙানিতে বনের আশপাশের সব গ্রাম হয়ে যায় বাণিজ্যিক চিংড়িঘের। খেতকৃষি হারিয়ে দিশেহারা মানুষ নামে বনের জোয়ার-ভাটায়। চিংড়ি পোনা ধরা শুরু হয়, এখন বাচ্চা কাঁকড়া। হাজার বছর ধরে এই অরণ্যগর্ভে জন্ম নিয়ে টিকে আছে যে বনজীবী জনগণ তারা কীভাবে বহুল আলোচিত সুন্দরবনকে পাঠ করে? বনজীবী জনগণের জ্ঞানভাষ্যে সুন্দরবন কেমন? এমন প্রশ্ন কি আমরা করেছি কখনো? তাহলে বনজীবী নিম্নবর্গের সেই জ্ঞানভাষ্য কোথায়? সুন্দরবনের বনজীবী জ্ঞানভাষ্যের দুটি বিষয় কেবল তথাকথিত মূলধারায় কিছুটা আলোচিত হয়। এর একটি হলো গাজীর গান এবং অন্যটি বনবিবির আখ্যান। মূলত এসব জ্ঞানভাষ্যের উপস্থাপন হয় সব সময় ‘লোকসংস্কৃতির’ মোড়কে, যাপিত জীবনের বিজ্ঞান হিসেবে নয়। একসময় পচাব্দী গাজীর বাঘ শিকারের কাহিনি শিশুশ্রেণির পাঠ্য হয়েছিল। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনীর সোরা এলাকার বিজ্ঞ বাওয়ালি পচাব্দী গাজীর অরণ্য অভিজ্ঞতা কিন্তু অধিপতি জ্ঞানকাণ্ডে পাঠের বিষয় হয়নি, হয়েছিল তার বাঘ শিকারের পুরুষালি কীর্তি। কারণ রাষ্ট্রবাহাদুর আর বন বিভাগের হুকুম পালন করেই তাকে বাঘ মারতে হয়েছিল। সেই বাঘ হত্যা সুন্দরবনের অরণ্যবিজ্ঞানের অংশ ছিল না। তার মানে সুন্দরবনকে আমরা বরাবর দেখি এই বন-সংসার থেকে বহুদূরের কিছু অন্য মানুষের নির্দেশ ও উপস্থাপনায়। এমনকি বাঘ থেকে শুরু করে বন্য প্রাণ গবেষণায় সুন্দরবনের আগত মহান গবেষকেরা বরাবর স্থানীয় বনজীবীদের দিয়ে তাদের নানা কিসিমের কাজ করান, বনজীবীদের সঙ্গে বনেবাদায় ঘুরে বেড়ান। বিস্ময়করভাবে বনজীবীদের কাছ থেকে জানা বন্য প্রাণ-সম্পর্কিত জ্ঞানভাষ্যই হয়ে ওঠে তাদের গবেষণা দলিল। সেসব দিয়ে তাদের বিদ্যায়তনিক ডিগ্রি হয়, নানা কিসিমের ক্যারিয়ার হয়। বইপুস্তক ছাপা হয়। গবেষণার নামে সুন্দরবনের বনজীবীদের জ্ঞানবিজ্ঞান ডাকাতি হয়ে আজ কোথায় কতভাবে বিক্রি হচ্ছে তার হদিস কে রাখে!

চলতি আলাপ এই জ্ঞানডাকাতি বা নিম্নবর্গের মেধাস্বত্ব সুরক্ষা নিয়ে নয়। চলতি আলাপখানি সুন্দরবনের বনজীবীদের লোকায়ত অরণ্যবিজ্ঞানের কিছু নমুনাকে একত্র করে সুন্দরবন নিয়ে নিম্নবর্গীয় জ্ঞানকাণ্ডের ময়দানে শামিল হতে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও খুলনা রেঞ্জের ধারেকাছের বনজীবীদের অরণ্যভাষ্য থেকে চলতি আলাপখানি শুরু হচ্ছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার সুন্দরবনসংলগ্ন মোট ১৬০ জন বনজীবীর সরাসরি জ্ঞানভাষ্যে চলতি আলাপখানি তৈরি হয়েছে। এই বনজীবীদের ভেতর জাতি, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ, বয়স, অঞ্চল ও পেশাগত ভিন্নতা আছে। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মোট চার বছরের নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য, ব্যাখ্যা ও সূত্রের ভেতর দিয়ে চলতি আলাপের বিবরণ দাঁড়িয়েছে। চলতি আলাপখানির একটা সংক্ষিপ্ত ও সহায়ক রূপ কোনো ধরনের সূত্র উল্লেখ ছাড়াই (যদিও সেটিও হয়তো একটা আলাদা লেখা) একই শিরোনামে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সর্বজনকথার তৃতীয় বর্ষের প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬ সালের নভেম্বরে।

সুন্দরবন ও লোকায়ত জ্ঞান: পূর্বের গবেষণার হদিস

সুন্দরবনের নিজস্ব লোকায়ত বিজ্ঞান নিয়ে কতখানি এবং কী ধরনের কাজ হয়েছে তা কিছু খতিয়ে দেখা জরুরি। চলতি আলাপে বিষয়টি বোঝার তাগিদে আমরা কেবল বাংলাদেশের নয়, ভারতীয় সুন্দরবন এবং সারা দুনিয়ার ম্যানগ্রোভ বন ও উদ্ভিদ নিয়ে এর লোকায়ত জ্ঞান বিষয়ে কী ধরনের গবেষণাকাজের নজির আছে তা জানার চেষ্টা করব। সুন্দরবন নিয়ে বাংলা ভাষায় রচিত গবেষণাধর্মী পুস্তক ও সাহিত্যকর্ম খুব একটা নেই। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভারত থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু পুস্তক প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশের সুন্দরবন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একেবারেই নেই। ভারত থেকে প্রকাশিত সুন্দরবন-বিষয়ক পুস্তকগুলোতে১ মূলত সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের জনজীবন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে ‘লোকসংস্কৃতির’ মোড়কে। সুন্দরবননির্ভর বনজীবীদের অরণ্য অভিজ্ঞতাকে সেসব পুস্তকে বিজ্ঞান নয়, মূলত ‘অন্যদের সংস্কৃতি’ বা ‘অপরের সংস্কৃতি’ হিসেবেই পাঠ করা হয়েছে।

স্টিফেনরিস্ট ও ফরিদ দাদাহ গুয়েবাস (২০০৬) ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার ম্যানগ্রোভ বনের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জ্ঞান বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় বৈজ্ঞানিক ও লোকায়ত জ্ঞানের সমন্বয় জরুরি।২ মেলিসা (১৯৯৯) কম্বোডিয়ার পিএম ক্রাসাওপ বন্য প্রাণী ম্যানগ্রোভ অভয়ারণ্যের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় পরিবেশজ্ঞানের উপযোগিতা উল্লেখ করে তার বিদ্যায়তনিক অভিসন্দর্ভে৩ দেখান, স্থানীয় জ্ঞান ম্যানগ্রোভ বনের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সংরক্ষণ-প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। ম্যানগ্রোভ বনের সুরক্ষা ও বিকাশে স্থানীয় লোকায়ত জ্ঞান অনিবার্য হলেও দুনিয়াব্যাপী লোকায়ত জ্ঞানের ময়দান থেকে ম্যানগ্রোভ বনকে তালাশ করার রচনা একেবারেই কম। সেখানে বাংলাদেশের সুন্দরবন ঘিরে এমনতর রচনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য ও জীবনযাত্রা নিয়ে তথাকথিত মূলধারার গবেষণা ও চিন্তাগুলো সব সময় সুন্দরবনকে একটা সম্পদের আধার এবং বননির্ভর জনগোষ্ঠীকে গরিব অসহায় হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। যাদের নিয়ে এবং যাদের জন্য বন ব্যবস্থাপনাকে কোনো কোনো গবেষণা৪ দেখে সেসব চিন্তাকে সাধারণত ‘জনমুখী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এসব তথাকথিত ‘জনমুখী’ গবেষণাগুলোয় কখনোই বনজীবীদের চিন্তা ও জ্ঞানপদ্ধতির উল্লেখ থাকে না। আবার এমনসব গবেষণাও৫ আছে যেখানে সুন্দরবন নিয়ে স্থানীয় চিন্তাভাবনার কথা উল্লেখ করলেও কোথাও সেই চিন্তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

ম্যানগ্রোভ বন নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা ও কাজের নজির আছে। কিন্তু অধিকাংশ গবেষণা দলিল৬ উপস্থাপিত হয় বিদ্যায়তনের একটা অধিপতি কাঠামোর ঘের থেকে, যেখানে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের লোকায়ত বিজ্ঞানের জায়গা নেই। বনবীজীরা নানাভাবে ম্যানগ্রোভ বন ও এর বৈচিত্র্যকে শ্রেণিবিন্যস্ত করে থাকেন এবং এই জনশ্রেণিবিন্যস্ত জ্ঞান খুব গুরুত্বপূর্ণভাবেই আজ স্বীকৃত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, মূলধারার গবেষণা ও রচনাগুলোতে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদ্ভিদের বিবরণ ও শ্রেণিবিন্যাস উপস্থাপনের৭ ক্ষেত্রে লোকায়ত জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

আমরা এখন দেখার চেষ্টা করব বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন ঘিরে যেসব রচনায় লোকায়ত জ্ঞানের কিছু বিবরণ পাওয়া যায় সেখানে কীভাবে এই অরণ্য প্রকাশিত হয়েছে। রায় (২০১৩) ভারতীয় সুন্দরবন অংশের মৌয়ালদের জীবনযাত্রা ও আর্থসামাজিক এক গবেষণায় জানান, মৌয়ালরা তাদের নিজস্ব জ্ঞানের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই নিজস্ব জ্ঞানের কোনো বিবরণ তাঁর লেখায়৮ নেই। মিয়া ও অন্যরা (২০০৩) এক যৌথ গবেষণায়৯ জানান, বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাগেরহাট অঞ্চলে গ্রামবাসী কৃষকেরা গোলপাতা চাষ করতে জানেন এবং তাঁরা গোলপাতা চাষে তাঁদের নানা লোকায়ত পদ্ধতির বর্ণনা করেছেন। ইন্দ্রানী ঘোষাল (২০০৬) উল্লেখ১০ করেছেন, সুন্দরবনের জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যেও নিজস্ব চিকিত্সাপদ্ধতি আছে। যেমন ঝাড়-ফুঁক, মন্ত্রের ব্যবহার, বিভিন্ন গাছের পাতার রস, শিকড় ইত্যাদির ব্যবহার। নিজস্ব চিকিত্সার কোনো বিবরণ কি ব্যাখ্যা তাঁর লেখায় পাওয়া যায় না। মাহমুদ ও অন্যরা (২০১৪) এক সমীক্ষায়১১ বলেছেন, সুন্দরীগাছের পাতা, কাণ্ড ও শিকড় সুন্দরবন অঞ্চলের স্থানীয় মানুষেরা ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া, বাত, চর্মরোগসহ নানা কাজে ব্যবহার করে। পূর্বকৃত কিছু গবেষণাকাজের সূত্র উল্লেখ করলেও বাংলাদেশের সুন্দরবনের কোন অংশ থেকে এসব তথ্য সংগৃহীত হয়েছে এবং কাদের কাছ থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে তার কোনো বিবরণ ও সূত্র রচনাটিতে নেই। মূলধারার এ রকম সূত্রবিহীন রচনাগুলো কেবল মেধাস্বত্ব অধিকারই লঙ্ঘন করে না, বরং করপোরেট প্রাণডাকাতিকে উসকে দেয়। রায় (২০১৪) তাঁর এক লেখায়১২ সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের মৌয়াল, বাওয়ালি ও মুন্ডা আদিবাসীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ২৫টি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের কেবল ঔষধি ব্যবহার উল্লেখ করেছেন।

এ তো দেখা গেল সুন্দরবনের মতো এক ‘দলিত’ অরণ্যের কথা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ম্যানগ্রোভ অরণ্য নিয়ে রচনার ক্ষেত্রে লোকায়ত জিজ্ঞাসার জায়গাখানি খুবই কম ও সংকীর্ণ। দেখা যায়, দুনিয়াজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনের লোকায়ত জিজ্ঞাসাকে কেন্দ্র করে কী ধরনের রচনা তৈরি হয়েছে? দাদাফগুয়েবাস ও অন্যদের (২০০৬) এক সমীক্ষা১৩ থেকে দেখা যায়, ভারতের পূর্ব গোদাবরী বদ্বীপের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বাসিন্দারা বাইনগাছ জ্বালানি ও গৃহনির্মাণে, গরানের বাকল মাছ ধরার জাল মজবুত করতে, খলসিগাছের বাকল মাছ ধরার ‘বিষ’ হিসেবে, বাইন ও গেওয়ার পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। রিভাথি ও অন্যরা (২০১৩) তাঁদের এক গবেষণায়১৪ দেখিয়েছেন, বাইনগাছের আধিক্য যেখানে থাকে সেখানে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও ডেঙ্গু জীবাণু মরে যায়। মিরেরা ও অন্যরা (২০১৩) ম্যানগ্রোভ বনের কাঁকড়া ধরার ক্ষেত্রে স্থানীয় কৌশল ও লোকায়ত জ্ঞানের বর্ণনা দিয়েছেন তাঁদের গবেষণায়১৫। মাসারু ও অন্যরা (২০১০) তাঁদের বইয়ে১৬ তাঞ্জানিয়ার সমুদ্র উপকূলে প্রবাল দ্বীপ ও মাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লোকায়ত জ্ঞানের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ও সামাজিক নিষেধাজ্ঞাগুলো আলোচনা করেছেন। গার্ডনার ও অন্যরা (২০১৬) মাদাগাস্কারের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে পাখিগণনা শীর্ষক এক সমীক্ষায়ী১৭ দেখান, পাখিগবেষকেরা নিজেরা ৭৩ প্রজাতির পাখি গুনেছেন কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা আরও ১৮ প্রজাতির পাখিকে গণনায় যোগ করেন, যা আগে কখনোই কেউ যুক্ত করেনি। এই সমীক্ষার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানান, ম্যানগ্রোভ বনে পাখিগণনার কাজে লোকায়ত জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফিলিপাইনের শ্বাসমূলীয় বনে গরান বৃক্ষের আধিক্য থাকায় গরান পরিচিতি পেয়েছে ‘হলুদ ম্যানগ্রোভ’ হিসেবে। সেখানকার ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের মানুষ জ্বালানি, গৃহনির্মাণ, মাছ ধরার উপকরণ, রং তৈরি, জাল মজবুত করতে এবং হাত-পা কেটে গেলে ক্ষত ও রক্তক্ষরণ সারাতে গরানের বাকল ব্যবহূত হয়১৮। রোসা ও অন্যরা (২০০৫) দেখিয়েছেন ব্রাজিলের সমুদ্র উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের জেলেদের লোকায়ত জ্ঞান সমুদ্রঘোড়া সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে১৯।

ম্যানগ্রোভ বন ও ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ নিয়ে সুন্দরবন বাদে ভারতের অন্যান্য সমুদ্র উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার অঞ্চলে বেশ কিছু গবেষণা ও রচনায় কিছু লোকায়ত চর্চা ও স্থানীয় জ্ঞানের বিবরণ জানা যায়। তবে সেসব রচনার অধিকাংশই ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের ঔষধি গুণাগুণ ও ব্যবহার নিয়ে। মূলত কাঠামোবদ্ধ মূলধারার জন-উদ্ভিদ গবেষণা। কিন্তু ম্যানগ্রোভের বনের বাসিন্দাদের জ্ঞানভাষ্যে বনের বিবরণ রচনাসমূহে দেখা যায় না। যেমন গোবিন্দস্বামী ও কান্নান (২০১২) যৌথ গবেষণায়২০ জানান, বিশ্বব্যাপী ১৮ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ লোকায়ত চিকিত্সায় স্থানীয়ভাবে ভারত, কেনিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহূত হয়। কাঁকড়াগাছের কাণ্ডের নির্যাস মানুষের দুই জটিল টিউমারের চিকিত্সায় ব্যবহূত হয়। স্মরণরাজ ও সুজিতা (২০১৫) এক যৌথ গবেষণায়২১ দেখান, ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নির্যাস মশা নিরোধ, ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়ানাশক, ভাইরাসনাশক, ক্যানসার প্রতিরোধ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সারান্য ও অন্যরা হরগোজা উদ্ভিদের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাঁদের গবেষণায়২২ জানিয়েছেন, এই উদ্ভিদ সাপে কাটা চিকিত্সা থেকে শুরু করে বাত ব্যথায় ব্যবহূত হয়। বন্দরনায়েকে (১৯৯৮) ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদগুলোর ঔষধি ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যদিও লেখাটিতে২৩ এসব সর্বজনীন প্রাকৃতিক সম্পদ ঘিরে একটা করপোরেট বাণিজ্যিক আহ্বান আছে। কাশেম ও অন্যরা (২০১৪)২৪ পাকিস্তানের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের এক জন-উদ্ভিদ সমীক্ষায় ৫৪টি গাছের ব্যবহার জানান। কিন্তু সেগুলো ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদবৈচিত্র্য নয়। রবীন্দ্রান ও অন্যরা (২০০৫) ভারতের তামিলনাড়ুর পিচাভারাম ম্যানগ্রোভ বনের ওপর এক জন-উদ্ভিদ সমীক্ষায়২৫ ১১ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের লোকায়ত ব্যবহার বর্ণনা করেন। ভারতের ওডিশা রাজ্যের ভেতর কানিকা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য থেকে ৫১ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের স্থানীয় ব্যবহার বর্ণনা করেছেন পট্টনায়েক ও অন্যরা (২০০৮) আরেক সমীক্ষায়২৬।

সুন্দরবন নিয়ে মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত ‘চিহ্ন’ হলো বাংলা বাঘ। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে মো. মনিরুল এইচ খানের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম আছে। তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভে২৭ বনজীবীদের বাঘ-জ্ঞান স্বীকৃতিসহ উল্লিখিত না হলেও তিনি জানান, সুন্দরবনের আশপাশের মানুষের কাছে বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহারের চাহিদা আছে, যা বাত ব্যথা, শক্তিবৃদ্ধি, যৌনশক্তি ইত্যাদি চিকিত্সায় ব্যবহূত হয়। এমনকি বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলের বাংলা বাঘ নিয়ে করা এডাম বার্লোর (২০০৯) পিএইচডি অভিসন্দর্ভের২৮ কোথাও বাঘসম্পর্কিত লোকায়ত জিজ্ঞাসার কোনো সূত্র নেই। অথচ এসব গবেষণায় বাংলা বাঘ নিয়ে উত্থাপিত অনেক কিছুই সুন্দরবনের বনজীবীদেরও জ্ঞান।

গবেষণা ও লেখালেখির জায়গা থেকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দীর্ঘ সময়জুড়ে জীববিজ্ঞানীদের দখলে ছিল। করমিয়ের-সালেম (১৯৯৯) আফ্রিকার ম্যানগ্রোভ বনবিষয়ক গবেষণাসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, প্রকৃতিবাদী গবেষণার পাশাপাশি দুই যুগ ধরে ম্যানগ্রোভ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণাও শুরু হয়েছে২৯। যদিও সামাজিক গবেষণাগুলোও সুন্দরবনের লোকায়ত জিজ্ঞাসাসমূহ তুলে ধরছে না। সুন্দরবন ও বননির্ভর জনগণের চিন্তায় কাহিল৩০ মূলধারার উন্নয়ন ডিসকোর্সগুলো ‘জনগোষ্ঠীভিত্তিক পর্যটনের’ সাফাই শুরু করেছে মূলত ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার পরপর। মোটা দাগে ২০০৭ থেকে সুন্দরবনে এমনতর পর্যটন সম্ভাবনার প্রসঙ্গ তুলছে অনেকেই। এসব জনগোষ্ঠীভিত্তিক পর্যটন কর্মসূচি যাঁরা চিন্তা করছেন তাঁদের কোনো চিন্তাসূত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চোখে বনকে দেখা হয় না। সুন্দরবনের জনগোষ্ঠীভিত্তিক ‘ইকোট্যুরিজমের’ পরিকল্পনা করে রচিত এক যৌথ লেখায়৩১ হক ও অন্যরা (২০১৬) সুন্দরবনের লোকায়ত জ্ঞানের কোনো হদিস না রেখে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে ‘আধুনিক’৩২ পর্যটকের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন।

আলাপের এ পর্যায়ে আমরা সরাসরি বনজীবীদের লোকায়ত জ্ঞান ও ভাষ্যে বাদাবনের বিজ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করব। মোট ৫৩টি ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে বনজীবীদের হাজারো বছরের লোকায়ত বয়ানের ভেতর দিয়ে বাদাবনের বিজ্ঞানকে জানাবোঝার এক ক্ষুদ্র চেষ্টা করা হয়েছে। সুন্দরবন ও ম্যানগ্রোভ বন-সম্পর্কিত পূর্ববর্তী গবেষণা ও রচনা বিশ্লেষণ করে এটি দেখা যায়, লোকায়ত জ্ঞানভাষ্যে সুন্দরবন কি ম্যানগ্রোভ বন-সম্পর্কিত রচনা খুব একটা নেই। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মূলত পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল থেকে সংগৃহীত সুন্দরবন-সম্পর্কিত চলতি আলাপে উত্থাপিত সব ভাষ্য, তথ্য ও বিবরণই এ বিষয়ের একেবারেই প্রথম উপস্থাপন।

১. বাদাবন ও বনবিবি

সুন্দরবন স্থানীয়ভাবে বাদা বা বাদাবন, হুলোবন, শুলোবন, মাল, মহাল হিসেবে পরিচিত। বাদা মানে জোয়ার-ভাটা বয়ে যায় যে বনে। ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় এই বাদার নাম হয়ে যায় মহাল। মধুমহাল, গোলমহাল। সুন্দরবনে বৃক্ষবৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও অনেকে বলে থাকেন ‘সুন্দরী’গাছের আধিক্যর কারণেই এই বন সুন্দরবন নাম পায়। তবে স্থানীয়ভাবে এই বন ‘বাদা’ নামেই পরিচিত। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে শ্বাসমূলীয় অরণ্য স্থানীয় ব্যক্তিরা তেলেগু ভাষায় ‘মাদাআদাভি’ বলেন। যদিও ‘মাদা’ বলতে স্থানীয় ব্যক্তিরা বাইনগাছকে বোঝান এবং অন্ধ্রপ্রদেশের শ্বাসমূলীয় বনে বাইনেরই আধিক্য বেশি৩৩। বাদাবনের এক এক অংশে এক এক বন্য প্রাণের বিচরণ। বাদাবনে পাখিদের বিশেষ আবাসস্থলকে বাদাল বলে। সাতক্ষীরা রেঞ্জে চুনকুড়ি নদীর পাশে সুবদে-গোবদে খালের পাশে বাংলাদেশের বড় বাদাল। এক নদীর সঙ্গে আরেক নদীর সংযোগ খালকে ভাড়ানি বলে। অনেক জায়গায় একে দুইনে বা দোনেও বলে। আবার এক মুখ বন্ধ খালকে জোলা বলে। সুন্দরবনে অনেক জায়গার নাম হুলো। হুলো মানে নদীর বাঁক। এসব জায়গায় একটা বাঁক অনেক সময় বৃত্তাকার বা অর্ধবৃত্তাকার ঘুরে একটা জঙ্গল-দ্বীপের মতো আদল তৈরি করে।

বাদাবনের ভেতর হঠাত্ প্রাকৃতিকভাবে ফাঁকা জায়গাকে চটক বলে। চটক জায়গায় গেওয়া, পশুর, বাইন, কাঁকড়ার মতো বড় বড় গাছ থাকে। বড় গাছের নিচে ঝোপজঙ্গল কম থাকে। চটক জায়গায় বাঘ কম থাকে। নদীর ভেতর হঠাত্ নতুন ছোট্ট চরে বন জন্ম নিলে তাকে টেক বলে। বাদাবনে নদীর তীর থেকে বনের ভেতর পর্যন্ত নানা গাছের নানা সারি। এক এক গাছের এক এক পরিবার। ধানি বা ধানচি চর থেকে শুরু হয়, তারপর তীর থেকে বনের ভেতরের দিকে থাকে হরগোজা, হেন্তাল, গোলপাতা, কেওড়া, বাইন, গেওয়া ও সুন্দরী। তুলনামূলকভাবে সাতক্ষীরা ও চাঁদপাই রেঞ্জে বাঘ, বনশূকর বেশি। এখানে মধুও বেশি। খুলনা রেঞ্জে সুন্দরীগাছ বেশি, সুন্দরীর শুলো বেশি বলে সেখানে বাঘ কম বিচরণ করে। খুলনা রেঞ্জে হরিণ বেশি। সাতক্ষীরা রেঞ্জে প্রবীণ কেওড়া, বাইন ও পশুরগাছের আধিক্য আবার খুলনা রেঞ্জে সুন্দরীর। বাদাবনের রক্ষাকবচ হলেন মা বনবিবি। মা বনবিবি ও শাহজঙ্গলি ধর্মে মুসলিম, কিন্তু বাদাবনে তাঁরা পূজিত হন। তাদের নামে মুরগি ছেড়ে উত্সর্গ করে তারপর বাদায় প্রবেশ করতে হয়। মুসলিম কি সনাতন হিন্দু, বাঙালি কি আদিবাসী মুন্ডা, মাহাতো বা বাগদি সবাই মা বনবিবিকে মান্য করে বাদাবনে। বাদাবনের অনেক জায়গায় বনবিবির থান আছে। এমনতর থানগুলো পবিত্র জঙ্গল হিসেবে সুরক্ষিত হয়। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের শামাগাজীর হুলো এমন এক বনবিবির থান। এসব থানে প্রতি মধু মৌসুমের শুরুতে বা কোনো মানত নিয়ে বনজীবীরা গিয়ে মোরগ-মুরগি উত্সর্গ করে ছেড়ে দেয়। এসব পবিত্র থানের গাছগাছড়া কেউ কাটে না। এই থানগুলোতে বৃক্ষ ও প্রাণীবৈচিত্র্য বেশি দেখা যায়। আজ পর্যন্ত বনবিবির থান এলাকায় কোনো বনজীবী বা বাঘ কেউ আক্রান্ত হয়নি।

২. আঠারভাটির পথ

বাদাবন দিনে চারবার রূপ বদলায়। দিনে দুবার ভাটা ও দুবার জোয়ার হয়। বাদাবনের সবচেয়ে দূরতম এবং কঠিনতম অঞ্চলের নাম আঠারভাটির পথ। বনজীবীদের কাছে এটি এক পবিত্র অঞ্চল। ১৮টি ভাটি এবং ১৮টি জোয়ার পাড়ি দিয়ে সে জায়গায় পৌঁছাতে হয়। একটি বাঘ এক দিনে এই আঠারভাটির পথের সমান দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। বাদাবনের বহুল চর্চিত মা বনবিবির পালা ও পুঁথিতে বারবার এই আঠারভাটির পথের বিবরণ আছে।

৩. মাছের নামে স্থানের নাম

একটি অঞ্চলকে সার্বিকভাবে বুঝতে হলে অঞ্চলটির স্থানের নামের আদ্যন্ত জানা জরুরি। অধিকাংশ সময় কেবল ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের আওতায় একটি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয় মূলধারার রচনাগুলোতে। যেখানে স্থানীয় জনজীবনের ইতিহাস ও জনসংস্কৃতি একেবারেই অনুচ্চারিত থাকে। সুন্দরবন নিয়ে মূলধারার রচনাগুলোয়ও স্থানের নামের সার্বিক বিশ্লেষণ দেখা যায় না। কেবল ‘সুন্দরবন’ নামটি কেন সুন্দরবন হয়েছে এটি নিয়ে রচনাসমূহে একটা ‘প্রারম্ভিক বাহাস’ থাকে। বুহনেনের (১৯৯২) এক গবেষণায় দক্ষিণ সেনেগাল, গাম্বিয়া ও জার্মানির উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের স্থানের নামের সঙ্গে ঐতিহাসিক কারণগুলোর কিছু যুক্ততা দেখা যায়৩৪। বাদাবনের নদীতে নানা জাতের মাছ। মাছের নামেই বাদাবনের স্থানের নাম পরিচিত হয়েছে। পারশেখালী, কৈখালী, দাঁতিনাখালী, ভেটখালী, ভেটকীখালী, আমাদি, চিংড়াখালী, জোংড়াখালী। সুন্দরবনের আশপাশের এই স্থানগুলোর নাম মাছের নামে গড়ে উঠেছে। পারশে, দাঁতিনা, ভেটকী, চিংড়ি, আমাদি, জোংড়া সবই সুন্দরবনের নদী-খালে পাওয়া যায়। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সুন্দরবন লাগোয়া এক প্রাচীন গ্রামের নাম দাঁতিনাখালী। সুন্দরবনের বিখ্যাত দাঁতিনা মাছের স্মৃতি নিয়ে এই গ্রাম। গ্রামের পাশে মালঞ্চ ও চুনো নদীর খালে দাঁতিনা মাছের আধিক্য ছিল বেশি। এই অঞ্চলটি দাঁতিনা মাছের বড় বিচরণস্থল ছিল। সুন্দরবনে তিন প্রকারের দাঁতিনা মাছ দেখা যায়। কাঁকরভাঙা, রুচো ও সাদা দাঁতিনা। দাঁতিনা মাছকে অনেকে দাঁইতনে মাছও বলে। কাঁকরভাঙা দাঁতিনা মাছের গায়ে কালো কালো ফুট (দাগ) আছে। দাঁতিনার ভেতর এদেরই ওজন বেশি হয়। দেখতে বড় হয়। বনের ভেতরের খালে থাকে। রুচো দাঁতিনার শরীরে সাদা সাদা দাগ থাকে। এদের ওজন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। জঙ্গলের পাশের খালে এদের দেখা যায়। একদম সাদা রঙের দাঁতিনা, এরা রুচো থেকে বড় হয়।

৪. বন থেকে গ্রামে উড়ে আসা মাছ

বাদাবনের এক বিশেষ মাছের নাম বাঙশ। মাঝবয়সী কোনো বনজীবী নারীর ডান হাতের মাপে প্রায় চার হাত লম্বা হয় এই মাছ। বর্ষাকালে নদীতে এর আধিক্য বেশি থাকে। তবে শীতকালে এই মাছ বাদা থেকে উড়ে গ্রামে চলে আসে। বাদাবনের আশপাশের গ্রামে ধানের গোলা হয় উঠানের মাঝে। বাঙাশ মাছ ধানের গোলা থেকে ধান খেয়ে আবার উড়ে বাদায় ফিরে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বাদাবন থেকে কেওড়া ফল ঝরে পড়ে নদীতে। ঝরে পড়া কেওড়া ও বাইন ফল খেতে আসে পাঙাশ মাছ। কেওড়াভোজী পাঙাশ গায়েগতরে বড় হয় এবং খেতে কিছুটা টক স্বাদের হয়ে পড়ে। পাঙাশ মাছের আকার ও ওজন দেখে বোঝা যায় কেওড়ার ফলন কেমন হয়েছে। মাছের আকার বেড়ে যাওয়া মানে কেওড়ার ফলন বেশি হওয়া। কেওড়ার ফলন বেশি হওয়া মানে বনে ফুলের পরাগায়ন ভালো হয়েছে। পরাগায়ন ভালো হয়েছে মানে মৌমাছিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ আছে। মৌমাছিরা নিরাপদে আছে মানে মধু-মোমের পরিমাণও ভালো হয়েছে। মৌয়ালিরা যদি ভালোভাবে মধু আহরণ করে এবং জেলেরা মাছ ধরতে পারে তবে বন বিভাগও ভালো রাজস্ব পায়। বনজীবী পরিবারগুলোও ভালো থাকে। মাছ, ধান, মৌমাছি, মানুষ, বন বিভাগ সব নিয়ে এক জটিল সংসার বাদাবন।

৫. পাকলে খাওয়া যায় এমন কোনো ফল নেই

পাখি, হরিণ, বানর, মাছ বা পতঙ্গ বাদাবনের ফলমূল খেয়ে বাঁচে। তাদের অনেকেই কাঁচা ও পাকা ফল খেতে পারে। কিন্তু পাকলে মানুষ খেতে পারে, এমন কোনো ফল নেই বাদাবনে। কেওড়া হলো বাদাবনের সবচেয়ে বেশি আহরিত ও ভোজ্য ফল। কেওড়া দিয়ে সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামে নোড়া, আচার, টক নামের নানা পদের খাবার তৈরি হয়। কেওড়া, হেন্তাল, ধুতল, বাবলে, জানা, ছইলা, গোল, বান্দা, ঘড়িয়া ও হরিণআড়ুগাছের ফল কাঁচা অবস্থাতেই খায় মানুষ। পাকলে এসব ফল মানুষ খেতে পারে না। তবে একমাত্র হরিণআড়ুর ফল পাকলেও কেউ কেউ খেয়ে দেখেন। কাঁচা সুন্দরী ফল পোক্ত হলে সিদ্ধ করে কষ-পানি ফেলে দিয়ে এর শাঁস চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।

৬. বাদাবনের উল্কি

বনজীবীরা উল্কি করাকে বলেন ‘ঠেংনা করা’। এটি বাদাবনের একধরনের প্রাচীন চিকিত্সারীতি। মানুষের ‘লিভার’ অসুখ হলে এটি করা হয়। লিভার হলে পেট বড় হয়ে যায়, বেশি বেশি খিদে পায়। পায়খানা অনিয়মিত হয়, পায়খানা পাতলা হয় এবং একসময় স্বাস্থ্য ভেঙে যায়। বনজীবীদের গ্রামে গুনিনের বাড়িতে কোথাও বাঘ মারা গেলে সেখান থেকে এক টুকরো জিব সংগ্রহ করে রাখা হয়। লিভারের চিকিত্সায় ঠুঁটে কলার ভেতর শস্যদানার পরিমাণ মরা বাঘের জিবের মাংস পুড়িয়ে ভরে খাওয়া হয়। পাশাপাশি হরগোজাগাছের শিকড় পুড়িয়ে হাতে ঠেংনা করা হয়। সাধারণত বাম হাতে এটি করা হয়। ঠেংনা করা হাত দুটি সাক্ষ্য দেয়, ব্যক্তিটি হয়তোবা বনজীবী পরিবারের কেউ এবং তার কখনো লিভার হয়েছিল।

৭. সব গাছে মৌচাক হয় না

বাদাবনের গাছেরা নোনা জলের গাছ। এদের হুদো বা হুলো আছে। মাটির তলা থেকে ওপরে উঠে আসা হুলো দিয়েই গাছেরা শ্বাস নেয়। বাদাবনের প্রায় গাছের পাতাই রসে ভরপুর। পাতা টিপলে নোনা স্বাদের পানি বের হয়। অনেক গাছে ফলের পেটেই চারা জন্মায়। নানা জাতের গাছ হলেও সব গাছে মৌমাছি চাক বানায় না। মৌমাছিরা সবচেয়ে বেশি চাক বানায় কাঁকড়া, জানা, পশুর ও গেওয়াগাছে। এসব গাছে চাক বানানোর কারণ গাছগুলোর কাণ্ড চওড়া এবং তাদের আশপাশ খোলামেলা থাকে। কারণ এসব গাছ একাই বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে বিস্তৃত থাকে। এসব গাছে চাক তৈরি করলে মৌচাকগুলো ভালো হাওয়া-বাতাস পায়। তারপরই মৌমাছিদের পছন্দ বাইন ও গরান। তুলনামূলকভাবে জানা, পশুর ও কাঁকড়াগাছে বানানো চাকের আকার বড় হয়। এসব চাকে অনেক মৌমাছি একসঙ্গে থাকে। এদের সমাজ বড় সমাজ। কিন্তু গরানগাছে বানানো চাক ছোট হয় এবং এখানে মৌমাছিদের সংখ্যাও কম থাকে, মধুও কম হয়। হেন্তাল ও হরগোজার ঝোপও মৌমাছির প্রিয় আবাসস্থল, অনেক মৌচাক গেওয়া, ধুন্দল, পশুরের বড় বড় ঢোঁড়ের ভেতর দেখা যায়। কাঁকড়াগাছের ডালপালা সব সময় হেলা (বাঁকা) হয়ে লম্বা হয়, যা চাক বানাতে মৌমাছিদের পছন্দ। কারণ বাঁকানো ডালে ও ঝোপে চাক বানালে চাক টেকসই বেশি হয়। ঝড়, বাতাস ও জোয়ার থেকে সুরক্ষিত থাকে।

চান্দা, বনলেবু ও গোলগাছে সাধারণত মৌমাছি চাক বানায় না। বনলেবুর গাছের ডাল চিকন ও গোলের ডাল পিচ্ছিল ও দ্রুত পচে যায়। চান্দাগাছের ডালের ছালে একধরনের গন্ধ আছে। এসব কারণে এসব গাছে মৌমাছি চাক বানায় না। সুন্দরীগাছ থেকে মধু সংগ্রহ না করলেও এই গাছের ধরন এমন যে মৌমাছি চাক বানাতে পছন্দ করে। হেন্তাল গাছের ঝোপে চাক বানাতে পছন্দ করে মৌমাছি, কারণ ঝোপের ভেতর সরাসরি রোদ লাগে না এবং জায়গাটি তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে। সাতক্ষীরা রেঞ্জে গরান ও খলসিগাছ বেশি বলে মৌচাক বেশি ও মধু বেশি। তুলনামূলকভাবে খুলনা রেঞ্জে গাছের উচ্চতা বেশি, তাই মৌমাছি সেখানে সাতক্ষীরা রেঞ্জের পর চাক তৈরি করে। বাইন ও সুন্দরীগাছে বানানো চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা খুব কঠিন। গাছগুলো সোজা ও লম্বা ধরনের, গাছে ওঠার জন্য ধরার মতো কোনো ডালপালা নেই। চান্দাগাছে মৌমাছি কখনোই চাক বানায় না। চান্দাগাছের বাকল চিবালে মুখ লাল হয়ে যায়। বনলেবুগাছে মৌমাছি চাক বানায় না। বনলেবুর ডাল খুব চিকন, চাকের ভার সইতে পারে না। গোলফলের ডালেও চাক হয় না। কারণ গোলের ডাল খুব পিচ্ছিল ও তেলতেলে। খুব সহজেই পানি লেগে ডাল পচে যায়।

৮. ফুলপঞ্জিকা

বাদাবনে একেক ফুলের একেক রং। আর ফুলের রঙেই বদলে যায় মধুর স্বাদ। জানাগাছের ফুল নীলচে সাদা, সুন্দরীর লাল, হরিণআড়ুর ফুল লালচে, বাইনের লাল, গেওয়ার সোনালি, কিরপি-ঢালচাকা-পশুরের লালচে সাদা, কাঁকড়ার সবুজ, গোলের লালচে ও হরগোজার ফুল বেগুনি। এ ছাড়া বাদাবনের প্রায় গাছের ফুলের রংই সাদা। ‘হিন্দুদের ঢাকে বাড়ি পড়লে’ মানে শারদীয় দুর্গোত্সবের সময় কেওড়ার ফুল ফোটা শুরু হয়। মাঘ মাসে ফোটে গরানের নীলচে ফুল ও তরার সাদা ফুল খলিসা ফুটতে শুরু করে ফাল্গুন থেকে। কিরপি, ঢালচাকা, পশুর, ধুন্দল, গুঁড়ে, কাঁকড়া, কালোলতা, হরগোজা, গোল, জানা, বনলেবু, কেয়া, লাটমে, সুন্দরী, ধানি, বাউলে লতা, বাঁকঝাঁকা, হরিণআড়ু, কেওড়া, বাইন, গেওয়ার ফুল ফাল্গুন-চৈত্র থেকে ফোটা শুরু হয় এবং প্রায় আষাঢ়-শ্রাবণ পর্যন্ত অনেকের ফুল থাকে। এক ফোঁটা মধু সংগ্রহ করতে একটি মৌমাছিকে প্রায় আশিটি ফুলে যেতে হয়। চাকের ভেতর এক কেজি মধু জমাতে মৌমাছিদের নিজের বসতি চাক থেকে নানা ফুলে ফুলে যাতায়াত করতে হয় প্রায় দেড় লাখবার। নানান মধুর ভেতর আগুনে মৌমাছিদের চাকের পদ্মমধু স্বাদে ও গন্ধে সেরা। এটি খলসি ফুলের মধু। বাদাবনের প্রায় ফুল থেকে আহরিত মধু সাদা রঙের হলেও ঢালচাকার মধু লালচে ও গেওয়ার মধু কিছুটা সোনালি আভার। গরান ফুল থেকেই পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি মধু, লাল রঙের এই মধুর স্বাদ ঝাঁজালো মিষ্টি। কেওড়ার মধু হালকা টক, গেওয়ার মধু একটা কষা তিতকি স্বাদের। বাইন ও গেওয়ার মধু তিতা স্বাদের। রং হলদে এবং ঝাঁজ বেশি।

৯. গুটলিবৈচিত্র্য

গুটলি হলো পরাগরেণুর দলা। ফুল থেকে পরাগরেণু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা গুটলি করে চাকে জমিয়ে রাখে। গুটলি দিয়ে তারা চাকের মুখ বন্ধ করে। এসব গুটলির ওপর নির্ভর করে চাকের স্থায়িত্ব। কোনো গুটলি বেশি আঠালো, কোনোটা ঝুরঝুরে। বৃষ্টি ও বাতাসের ঝাপটা থেকে গুটলিই মধুকে সুরক্ষা করে চাকের ভেতর। একেক ফুল থেকে সংগ্রহ করা গুটলিও একেক রকম। গেওয়া ও সুন্দরীগাছ থেকে সংগ্রহ করা পরাগরেণুর গুটলি হলুদ রঙের। কেওড়া ও গরানের গুটলি খয়েরি রঙের। বাইনের গুটলি হলদে-খয়েরি। চাকের গুটলির রং দেখেও বোঝা যায় চাকে কোন গাছ থেকে বেশি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। হেন্তালগাছ থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে না, শুধু পরাগরেণু সংগ্রহ করে। তাই অনেক চাকে হেন্তালের গুটলি দেখা যায়।

১০. মৌমাছিদের আত্মাহুতি

কখনো কখনো মৌমাছিরা দলবেঁধে নদীতে ঝাঁপিয়ে আত্মাহুতি দেয়। বাংলা ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বেশি দেখা যায়। দেখা যায় ঝাঁক বেঁধে একদল মৌমাছি উড়ে উড়ে নদীর মাঝবরাবর এসে তারপর পানিতে পড়ে যায়। তারপর পানিতে তাদের মৃতদেহ ভেসে ওঠে। তবে হেন্তাল ও হুদোগাছের ঝোপে যেসব চাক থাকে চৈত্র মাসের গরমে সেসব চাকের মধু অনেক গরম হয়ে যায়। মধুর গরমে থাকতে না পেরে চাক থেকে মৌমাছিরা তখন বাইরে বেরিয়ে আসে।

১১. বাঘের সঙ্গম

বাদাবনে বাঘের সঙ্গম সচরাচর দেখা যায় না। আশ্বিন-কার্তিক মাসের শেষে সাতক্ষীরা রেঞ্জে কোনো কোনো বনজীবী পুরুষ তা দেখেছেন। সঙ্গমের সময় মেছি বা মাদি বাঘ (নারী বাঘ) খুব উন্মত্ত থাকে। হলা বা মদনা বাঘ (পুরুষ বাঘ) শব্দ করতে থাকে। হলা বাঘের গায়ে পশম বেশি থাকে, তাই গায়ের ডোরাকাটা কম বোঝা যায়। দূর থেকে দেখতে হলুদ রঙের মনে হয়। মেছি বাঘে ডোরাকাটা বেশি বোঝা যায় এবং দেখতেও সুন্দর। বাঘের লিঙ্গ সোনালি বিড়ির মতো চিকন ও লম্বাটে ধরনের এবং এটি প্রায় এক হাত লম্বাও হয়। সঙ্গমের সময় বাঘের লিঙ্গ বের হয়। সঙ্গমের সময় মদনা বাঘ মাদি বাঘের পেছন পেছন অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে এবং লাফিয়ে ওপরে উঠতে চায়। দুজনেই বনের কাদায় আছারিপিছারি খায় এবং কাদায় উভয়ের শরীর লেপ্টে যায়। সঙ্গমের পর বাঘেদের হলুদ-কালো ডোরাকাটা শরীর যেভাবে কাদায় মাখামাখি হয় অন্য কোনো সময় সচরাচর এমন হয় না।

১২. বাঘের স্বভাব

কাদামাটিতে বাঘের পায়ের কড় বা ছাপ দেখে বোঝা যায় বাঘটির স্বভাব। মেয়ে না ছেলে বাঘ। কড় দেখে বাঘের বয়স ও তার কিছু আচরণ বোঝা যায়। সঙ্গমের পর কড়গুলো স্পষ্ট সব বোঝা যায় না। মাটিতে থেবড়ে আচড়ে যাওয়া কড়, কখনো গভীর হয়ে গর্ত হয়ে যাওয়া কড়। হুলো বাঘের পায়ের কড় মেছি বাঘের চেয়ে বড় হয়। প্রতিটি বাঘের পায়ের ছাপ আলাদা। বাঘের দুধ কুকুরের দুধের মতো। বাঘের জিব খুব ধারালো, চিরুনির মতো। বাঘের বাচ্চা হওয়ার পর মাদি বাঘ বাচ্চা পাহারা দেয়, মর্দা বাঘ অনেক সময় বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাঘ মৌপোকাকে ভয় করে। কারণ রেগে গেলে মৌপোকারা বাঘকে আল ফুটিয়ে দেয়। বাঘ তখন হেন্তালগাছের গোড়ায় শরীর ডলাডলি করে।

১৩. মানুষ খেতে পারে এমন কোনো পাতা নেই

কখনো কেউ কেওড়ার কচি পাতা চিবিয়ে দেখে। কিন্তু বাদাবনে কোনো গাছের পাতাই মানুষের খাওয়ার জন্য নেই। তবে বনের ভেতরের দিকে উঁচু জায়গায় কোথাও কোথাও বনপুঁই ও কলমি নামে গাছ আছে। যার পাতা ও ডগা বাদায় থাকাকালীন বনজীবীরা রান্না করে খান। সাগরের কাছাকাছি চরে অনেক সময় জেইত্তপালং বা জেইদ্দপালং নামের একপ্রকার গাছ দেখা যায়, যার পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে খুবই বিরল এসব গাছ মূল ছোট গাছ এবং বনে খুব একটা পাওয়া যায় না। বড় গাছের ভেতর কোনো গাছের পাতাই খাওয়া হয় না।

১৪. মাছেদের ডিম-পঞ্জিকা

বাদাবনের নদীতে একেক মাছের আবাসস্থল একেক জায়গায়। নদীর ওপরের দিকে থাকে টেংরা মাছ। পায়রা, রুছো, কাইন ও ভেটকি মাছ থাকে মাঝবরাবর। নিচের দিকে গভীর পানিতে থাকে মেদ মাছ। দাঁতিনা, পার্শে ও চিংড়ি মাছ থাকে চরের কাছাকাছি। সব মাছের প্রজননকাল এক সময় নয়। প্রজনন ঋতুতে বনজীবী বিশেষত জেলে ও বাগদি আদিবাসী মাছ ধরেন না। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা রাতেও মাছ ধরা হয় না। জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম ছাড়ে টেংরা ও কাইন মাছ। আষাঢ় মাসে ডিম ছাড়ে দাঁতিনা, শ্রাবণ মাসে পায়রা মাছ। মেদ ও আইড় মাছও শ্রাবণ মাসে ডিম ছাড়ে। পৌষ মাসে ডিম ছাড়ে পার্শে মাছ। মাছ যখন ডিম ছাড়ে তখন পোনা মাছেদের নিরাপদে বড় হওয়ার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করা হয়। ভাদ্র মাসে সাধারণ মাছেরা ডিম ছাড়ে না।

১৫. গোলবনে মাছের ঝাঁক

বাদাবনে নদীর তীর ধরে ধানি ঘাস, হেন্তাল, হরগোজা ও গোলপাতা জন্মে। গোল বনে মাছেদের ঝাঁক বেশি দেখা যায়। বিশেষত পায়রা, পার্শে, ভাঙ্গান, গলদা ও ছাটি চিংড়ি মাছ। গোলের ডাঁটায় যে শেওলা জন্মায় তা এসব মাছের খুব প্রিয়। বিশেষত বিকেলের দিকে এবং ভোরবেলা এসব মাছ ঝাঁক বেঁধে গোলবনের ভেতর থাকে। তাই অনেক জেলেকে ওই সময় গোলবনের ধারে ঝিম মেরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

১৬. বাদাবনের নৌকা

সুন্দরবনে একেক নদী এবং একেক অংশে একেক কাজের জন্য নৌকার গড়ন একেক রকম। বাদাবনের প্রতিটি নৌকায় দুটি পবিত্র অঞ্চল থাকে। একটি হলো নৌকার সামনের দিক এবং আরেকটি হলো নৌকার মাঝামাঝি অংশ, যাকে নৌকার নাভি হিসেবে কল্পনা করা হয়। এই অংশ দুটিতে পা দিয়ে মাড়ানো হয় না। ভারতীয় সুন্দরবন অংশের দারুশিল্পীরা যখন দেশি নৌকার শিরদাঁড়া (মাঝখানের মেরুদণ্ডস্বরূপ) তৈরি করেন তখন তুলসী, সোনা, রুপা, তামা দিয়ে বিশ্বকর্মার পূজা করেন৩৫। ভারতীয় সুন্দরবন অংশে ঘুঘু, বেতনাই, ছিপ, পানসি, বালায়, ভাউলে, কিস্তি, ভড়, বজরা নৌকা দেখা যায়৩৬। বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে গল্লাবাড়ি, বেতনা, মধুকাটার নৌকা, ডিঙে, মাছ ধরার নৌকা, খেওয়া ও বাইচের নৌকা দেখা যায়। সুন্দরবনের জেলেরা নৌকাকে মায়ের গর্ভ হিসেবে দেখে এবং নৌকার নাভি অংশকে ‘যোনি’ অঙ্গ হিসেবে দেখে। বনেবাদায় তাই যখন নৌকায় কেউ অবস্থান করে তখন সে নিরাপদ থাকে। কারণ মায়ের গর্ভ থেকে কখনোই কারও ক্ষতি কেউ করে না বা করতেও পারে না। ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে নৌকায় ঘুমাতে নেই, যেহেতু মায়ের গর্ভ ও স্ত্রী অঙ্গ হিসেবে কল্পনা করা হয় তাই। নৌকায় থাকাকালে সাধারণত চিত হয়ে ঘুমানোর নিয়ম। চিত হয়ে ঘুমালে খাল ও জঙ্গলের নানা কিছু দেখাও যায় সহজে।

১৭. বনের বিস্তার

বাদাবনে মানুষ গাছ লাগায় না। এখানে জোয়ার-ভাটাই গাছ থেকে ঝরে পড়া ফল ও বীজ কাদা মাটিতে পুঁতে দেয়। সেখান থেকেই চারাগাছ জন্মে। জোয়ারের জলে ভেসে আসা বীজ ও ফল বনের ধারে চরের কাদামাটিতে আটকে যায়। কাদামাটিতে প্রথম জন্মায় ধানচি ঘাস। এসব ঘাস না থাকলে বীজ আটকাতে পারে না। যেসব ফল জোয়ারের স্রোতে বনের ভেতরে গিয়ে হুলোতে আটকায় সেসব গাছের চারা সেখানেই জন্মে। এভাবে দেখা যায় জোয়ারের টান এবং ফলের আকার ও ওজন বনের একেক স্তরে একেক গাছের বীজ নিয়ে যায়। আর তাই বাদাবনে একেক স্তরে একেক গাছের জন্ম হয়। আবার বনের ভেতর কোনো কোনো গাছের চারা ফল থেকেই গজিয়ে নিচে কাদামাটিতে আটকে যায়। এভাবেই বাদাবনের বিস্তার ঘটে। বাদাবনে অধিকাংশ গাছেরই জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ফুল হয় এবং আষাঢ় মাসে বীজ ঝরে পড়ে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বনতলজুড়ে নতুন চারা দেখা যায়।

১৮. ঢোঁড়

গাছের খোঁড়ল বা গর্তকে ঢোঁড় বলে। বাদাবনে সব গাছে ঢোঁড় হয় না। গেওয়া, পশুর, বাইন, কেওড়া, ধুতল গাছে ঢোঁড় বেশি হয়। আর এসব ঢোঁড় বন্য প্রাণের আবাসস্থল। মৌমাছি চাক বানায় এসব ঢোঁড়ে। পশুর, বাইন ও কেওড়ার ঢোঁড়ে মধুর চাক বেশি পাওয়া যায়। বাইন ও কেওড়ার ঢোঁড়ে বনমুরগি বেশি থাকে। ধুতল ও পশুরের ঢোঁড়ে সাপ থাকে। বাইনগাছের ঢোঁড়ে তাইরকেল (গুইসাপ) বেশি থাকে। ঢোঁড়ের মধু খেয়ে বোঝা যাবে না কোন ফুলের মধু। ঢোঁড়ের মোমের রং কালচে।

১৯. গোণ ও ভাটিকা

বাদাবনের সবকিছুই চন্দ্রনির্ভর। বনজীবীদের জীবন গোণ ও ভাটিকার গণিত মেনে চলে। প্রতি ছয় ঘণ্টা পর পর জোয়ার-ভাটা হয়। প্রতি মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথির তিন দিন আগ থেকে তিন দিন পর্যন্ত প্রায় এক সপ্তাহ হচ্ছে গোণমুখ। গোণমুখে বনজীবীরা বাদায় থাকে। এ সময় জোয়ারের প্রাবল্য বেড়ে যায়। প্রতি মাসে দুটি গোণমুখ আসে। প্রতি দশমী তিথিতে একটি নতুন গোণের জন্ম হয়। চতুর্দশী পর্যন্ত গোণ থাকে। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত অমাবস্যা বা পূর্ণিমা হবে। গোণমুখের পর সাত দিন ভাটিকা পড়ে। ভাটিকার সময় বনজীবীদের গ্রামে থাকার নিয়ম। একটি গোণমুখ ও একটি ভাটিকা হয় পূর্ণিমা তিথিতে, পরের গোণমুখ ও ভাটিকা মিল অমাবস্যা। ভাদ্রসংক্রান্তি থেকে শুরু করে আশ্বিনের শুরুতে হয় বছরের সবচেয়ে বড় গোণমুখ। একে বলে কলাকাটা গোণ। ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহে যে গোণ হয় তাকে বলে পান্তাভাসান গোণ। গোণেই বছরের সবচেয়ে বড় জোয়ার ওঠে। গোণ ও ভাটিকা বাদাবনের জীবনে এমনই জড়িয়ে আছে গোণমুখের সময় মহাজন থেকে বনজীবীরা যে টাকা ধারকর্জ করে তাকে বলে গোণমুখী দাদন বা গোণদাদন। গোণমুখের সময় চিংড়ি ও কাঁকড়া বেশি পাওয়া যায় এবং ভাটিকার সময় সাদা মাছ বেশি পাওয়া যায়। কোকো নামে এক পাখি আছে, যা জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফুটায়। কোকো পাখি কু-কু-কু-কু করে ডাকে। কোকো পাখি ডাকলে বোঝা যায় ভাটিকা লাগার সময় হয়েছে।

২০. রাতে গাছ ঘুমায়

দিনের বেলা গাছ সজাগ থাকে এবং রাতের বেলা গাছ ঘুমায়। রাতের বেলা গাছের শরীরে হাত দিয়ে তাকে জাগাতে নেই। এতে গাছ বিরক্ত হয়। রাতের বেলা গাছের পাতা ও ফল ছিঁড়তে নেই। এতে গাছ খুব কষ্ট পায়। রাতের বেলা গাছের গায়ের চাক থেকে মধুও সংগ্রহ করতে নেই। মূলত দিনের বেলায়ই সব কাজ করতে হয়। রাতের বেলা বাদা ঘুমিয়ে পড়ে। বনজীবীরা তাই সন্ধ্যার আগেই বন থেকে নৌকায় চলে আসেন। রাতের বেলা বাদায় বনবিবি, দক্ষিণরায় এরা ঘুরে বেড়ায়। দক্ষিণরায়ই বাঘের রূপ ধরে অনেক সময় মানুষকে আক্রমণ করে।

২১. একেক গাছের একেক অংশ

বাদাবনের সব গাছই বনজীবীরা ব্যবহার করেন না। সব গাছের সব অংশও ব্যবহূত হয় না। গোলগাছের পাতা ঘর ছাওয়ার কাজে লাগে। হেন্তাল পাতা দিয়ে মধু সংগ্রহের সময় ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছিকে চাক থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারু বানানো হয়। কেওড়া ও গেওয়াগাছের পাতা ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। কেওড়া, হেন্তাল, ধুতল, বাবলে, জানা, ছইলা, গোল ও হরিণআড়ুগাছের ফল কাঁচা অবস্থায় খায় মানুষ। সুন্দরী, গেওয়া ফলের বীজের শাঁস হাঁস-মুরগিকে খাওয়ানো হয়। পশুর, বাইন, গরানগাছের ডাল দিয়ে ঘরের বেড়া হয়। সুন্দরী ও পশুরের কাঠে আসবাবপত্র হয়। মধু চাক কাটার দায়ের বাঁট/আছাড় বানানো হয় খলসি ও গেওয়া কাঠ দিয়ে। গরান ও কেওড়ার ডালপালা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয়। গরানের ছাল দিয়ে লাল রং বানানো যায় এবং কাপড় রাঙানো যায়। সুন্দরীগাছের ছাল বেটে মাথাব্যথায় লাগানো হয়। গেওয়া ও সেজিগাছের আঠা দিয়ে মাছ ধরা যায়। হরগোজা ও কেওড়ার চারা জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগে। পশুরগাছের শুলো দিয়ে নারীরা চামচ, হাতা এসব নানা গৃহস্থালি জিনিস বানায় এবং বাচ্চারা খেলনা গুটি বানায়।

২২. শুলো দিয়ে দম নেয় গাছ

বাদাবনের গাছেরা শুলো বা হুলো দিয়ে দম নেয়। বাদাবনে সবচেয়ে লম্বা শুলো হয় সুন্দরীগাছের। আদিবাসী মুন্ডা নারীর কোমর সমান উচ্চতার। মাথা ভোঁতা। সুন্দরীর পর কেওড়ার শুলো বড় হয়। তবে অনেক সময় বাঁক নিয়ে নিয়ে কেওড়ার শুলো মাটিকে গুচ্ছাকারে ছড়িয়ে যায়। পশুরের শুলো বেশ চওড়া ও মোটা এবং প্রায় অর্ধেক চাঁদের মতো দেখতে। বাইনের শুলো খুব ছোট ও কালো রঙের ও চিকন। এসব শুলো বাদায় হাঁটার সময় পায়ে খুব লাগে। বাইনগাছের লম্বা ও মোটা শিকড় হয়। এই শিকড় ঠেস দিয়ে মাটিতে বিস্তার লাভ করে।

২৩. বনের খাবার

বনবাসী বনের নানা গাছপালা ও বন্য প্রাণের ওপর একে অপরে নির্ভর করে। বানর কেওড়ার ফল, ধানচিগাছের শিকড়, কেওড়ার ছোট শুলো, হেন্তালগাছের মাথি খায়। কেওড়া, পশুর ও গেওয়ার পাতা হরিণের প্রিয়। হরিণ কেওড়া, হেন্তাল ও আমুগাছের ফলও খায়। খলিসা ও বাইনের পাতাও খায় হরিণ। সুন্দরীগাছে জন্মানো চিলি নামে পরগাছার পাতাও হরিণ খায়।

২৪. বোঝাই পোকা ও খালিন পোকা

গাছ থেকে মধু খেয়ে এবং সংগ্রহ করে যেসব মৌমাছি চাকের দিকে ফিরে আসে তাদের বোঝাই পোকা বলে। এসব পোকা চাকবরাবর উড়ে আসে, অন্য কোনো দিকে তারা যায় না। তাদের শরীর ভার থাকে। শরীরে একটা ভাব থাকে। চাকা থেকে মধু সংগ্রহ করতে বের হওয়া মৌমাছিদের খালিন পোকা বলে। তারা মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগে চাকের নানা দিকে ঘোরাফেরা করে অন্যদের দেখায় কোথায় ভালো মধুর উত্স আছে। মৌপুদের এই নাচ খুব সুন্দর লাগে দেখতে। তারা সোজা যায় না, তাদের শরীর হালকা থাকে। বোঝাই পোকা দেখে তাদের পেছন পেছন এলে মধুর চাক পাওয়া যায়।

২৫. মৌপোকাদের নাচ

বনে গাছে গাছে ফুল ফুটলে বনজুড়ে মৌমাছিরা নাচে। প্রতিটি মৌচাকে নানা জাতের মৌপোকা থাকে। প্রতিটি চাকের প্রধান পোকাটি থাকে অনেক বড়, এর কাজ শুধু বাচ্চা জন্ম দেওয়া। এই পোকাকে মাইয়ে পোকা বা আলসি পোকা বলে। এই পোকা কখনোই মধু আনতে যায় না। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করার সময় খুব সাবধানে প্রথমেই চাকের ভেতর এই আলসি পোকা ও চাকের বাচ্চা পোকাদের বাঁচাতে হয়। মৌয়াল পরিবারে ছোট থেকেই এই শিক্ষা দেওয়া হয়। চাকের যে অংশে পোকারা থাকে সেই অংশটি খুব যত্ন করে সুরক্ষা করা হয়। কারু জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিয়ে চাকের মধু জমানো অংশের বড় মৌমাছিদের তাড়ানো হয়। আলসি পোকাকে পবিত্র প্রাণ হিসেবে দেখা হয়। আলসি পোকা ও বাচ্চা পোকাদের মারলে পাপ হয় এবং মা বনবিবি রুষ্ট হন। এসব পোকা না বাঁচলে নতুন চাক হবে না, চাক না হলে মধু হবে না। মৌপোকারা বন ঘুরে ঘুরে মধুর সন্ধান করে। কোথায় কেমন জাতের মধু আছে তার নমুনা নিয়ে আসে। তারপর চাকের কাছে এসে নেচে নেচে মধুর উত্সস্থল কোথায় আছে তা দেখায়। মৌপোকার নাচন দেখে বনের কোন অংশে কেমন ফুল ফুটেছে তা বোঝা যায়।

২৬. মধুর চাক না কাটলে কী হবে

শ্রীপঞ্চমীর দিনে মৌপোকারা উড়ে আসে বাদাবনে। বন ঘুরে ঘুরে চাক বানানোর গাছ পছন্দ করে। এ সময় তারা আড়াইঘর চাক তৈরি করে প্রথম। প্রতিবছর নিয়ম করে মৌয়ালরা মধুচাক না কাটলে পরের বছর মৌচাক ও মধুর পরিমাণ অনেক কমে যাবে। এক ফোঁটা হলেও মধুচাক কেটে ঝরাতে হবে। মধুর চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয় বলেই মৌমাছিরা আবার মধু সংগ্রহ করে। তা না হলে চাকে জমা মধু খেয়ে খেয়ে তারা অলস ও ভারী পোকা হয়ে যায়। এভাবে তাদের শক্তি কমে যায়। মৌমাছিরা যদি অলসভাবে চাকে বসে থাকে এবং বনের ফুলে ফুলে না যায় তবে গাছের মিলন বন্ধ হয়ে যাবে। মৌমাছির চাকে গুটলি দেখেই বোঝা যায় কেমন মিলন হয়েছে বনের গাছে। ঠিক একইভাবে এক বছর গোলপাতা না কাটলে, গোলের ঝাঢ় পরিষ্কার করে না দিলে পরের বছর গোলপাতা জন্মাবে কম। গোলের মাইঝ পাতা রেখে নিয়ম করে কাটতে হয়। পাতা না কাটলে এমনিতেই মরে শুকিয়ে পচে গিয়ে তা নতুন পাতার বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধা দেয়।

২৭. বাঘ-কুমিরের কামড় শনাক্তকরণ

কীভাবে বোঝা যায় বাঘ না কুমির কামড় দিয়েছে? বাঘের কামড়ে ক্ষতস্থান ২৪ ঘণ্টার ভেতর পচে যায়। আক্রান্তের শরীরে একধরনের বোঁটকা গন্ধ হয়। গাল দিয়ে অনবরত নাল (লালা) ঝরে। আক্রান্ত স্থানটি পচে সাদা ঘা হয়ে যায় এবং সেখান থেকে একধরনের মাছি পোকার জন্ম হয়। আক্রান্ত স্থানে খিলেন দাঁতের দাগ থাকে। আক্রান্ত স্থানটি একেবারে কুড়াল দিয়ে কেটে নেওয়ার মতো মনে হয়। বাঘের আক্রমণে অধিকাংশ সময়ই বোঝা যায় না, কারণ বাঘকে দেখা যায় না। ঘটনাটি খুবই দ্রুত ও চোখের নিমিষে ঘটে। কিন্তু সচরাচর পানিতেই কুমির ও কামটে কামড়ায়, তাই সেখানে বোঝা যায়। কুমিরের কামড়ে আক্রান্ত স্থানে আট পাটি দাঁতের বড় গর্তওয়ালা দাগ থাকে। কুমির মাংস কামড় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।

২৮. বাঘ ও কুমির-বন্দনা

বাদাবনে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। বাঘ ও কুমির মানুষের আরাধনা ও বন্দনার অংশ। বাদাবনের রক্ষাকবচ মা বনবিবির বাহন হলো বাঘ। বনবিবির পূজার সময় মাটি দিয়ে বাঘ বানানো হয়, তার ওপর চেপে বসে বনবিবি। চৈত্র মাসে বাদাবনের ধর্মদেল উত্সবে মাটি দিয়ে কুমির বানানো হয়। কুমির, ধনামনা, সাগরপিড়ি, সূর্যপিড়ি, কামদেব, নীলদেব, মালঞ্চ মাটি দিয়ে বানানো হয়। ধানজমিন বা পুকুরের নরম মাটি দিয়ে কুমির বানানো হয় এবং সারা শরীরে খেজুর ফল গেঁথে দেওয়া হয়। বনবিবি পূজা ও ধর্মদেল উত্সবে বাঘ ও কুমিরের সুস্থ থাকার জন্য প্রার্থনা করা হয়। পাশাপাশি বাঘ ও কুমির যাতে মানুষের কোনো ক্ষতি না করে এ জন্যও আবদার করা হয়। বাদাবনে কুমিরকে সাধারণত গন্ধকালী হিসেবে দেখা হয়। ত্রেতা যুগে গন্ধকালী নাচতে নাচতে একদিন ধনপতি কুবেরের বাড়ি যায়। কিন্তু নাচতে নাচতে তার পা লেগে যায় কুবের মুনির শরীরে। মুনির অভিশাপে গন্ধকালী কুমির হয়ে গন্ধমাদন থেকে বাদাবনে চলে আসে। পাশাপাশি বাদাবনে বাঘকে মনে করা হয় দক্ষিণরায়।

২৯. মানুষশিকারি বাঘ

বাঘ যখন মানুষকে আক্রমণ করে তখন মনে করা হয়, দক্ষিণরায় বাঘের রূপ ধরে সেটি করেছে। বাঘ অসুস্থ হলে বা দীর্ঘ সময় রোগে ভোগার পর কিংবা আহত হলে এবং বয়স বাড়লে আশপাশে শিকার ধরতে না পেরে মানুষের ওপর আক্রমণ করে। কারণ তুলনামূলকভাবে মানুষকে আক্রমণ করা সহজ। একবার বাঘ মানুষের শরীরের রক্তের স্বাদ পেলে সে আর তা না খেয়ে থাকতে পারে না। মানুষের রক্তে বাঘের বুদ্ধি ও শক্তি বেড়ে যায়। বাঘ তখন উন্মত্ত হয়ে ওঠে। বাদা থেকে নদী সাঁতরে মানুষের গ্রামে চলে আসে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ধরতে গিয়ে অনেক সময় মানুষের হাতে বেঘোরে প্রায় হারায়। মানুষশিকারি বাঘ চলার সময় একেবারেই কোনো শব্দ করে না। এমনকি কাদামাটিতে তার পায়ের কড়ও স্পষ্টভাবে পড়ে না। কারণ হাঁটার সময় সে পা পাক দেয়, তাই ছাপ থেবড়ে যায়। বাঘ যখন প্রথম মানুষকে আক্রমণ করে শিকার করে তখন সেই বাঘের ভেতর একধরনের উত্তেজনা থাকে। বাঘের তখন পেছনের পায়ের দুই ঊরু অনবরত কাঁপতে থাকে। বাঘ ফিনকি দিয়ে ছোটা রক্ত চেটে চেটে খায়। প্রথমবার বাঘ মাংস কামড়ে ছিঁড়ে খায় না। রক্ত খায় আর একটু পরপর পানি খেতে যায়। কয়েক দিন ধরে বাঘটি লাশের কাছে থাকে, যদি লাশটি সরিয়ে না নেওয়া হয়। তারপর সে মাংস কামড়ে খাওয়া শুরু করে। কিন্তু প্রথমবার শিকারের পর বাঘের পা কাঁপা কমতে থাকে। যে বাঘ যত বেশি মানুষ শিকার করে ধীরে ধীরে এই পা কাঁপা বন্ধ হয়ে যায়। বাঘের পায়ের কড় দেখেও বোঝা যায় এটি মানুষশিকারি বাঘ কি না। এমনিতে বাঘের পায়ের কড় থেকে মেছি ও হুলো শনাক্ত করা যায়। কিন্তু মানুষখেকো বাঘের ক্ষেত্রে মেছি ও হুলো শনাক্ত করা কঠিন। তাদের বাঁ পায়ের কড়ে পাঁচটি আঙুলের ছাপ এবং ডান পায়ের কড়ে চারটি আঙুলের ছাপ দেখা যায়। মানুষশিকারি বাঘ বেশিদিন বাঁচে না। কারণ সে বেশিদূর দৌড়ে যেতে পারে না, খাবার খাওয়ার পর অলস বসে ঝিমায়। মানুষশিকারি বাঘের ঘুম ভালো হয় না। শরীরে একটা ঝিমুনি এসে যায়। মানুষশিকারি বাঘের কোনো কারণে মাথা ও কপালে ঘা হলে সে আর বাঁচে না। কারণ বাঘ নিজের জিব দিয়ে সারাক্ষণ শরীর পরিষ্কার করে ও চাটে। জিব উল্টিয়ে মাথা ও কপাল চাটা সম্ভব হয় না বলে এই ঘা ভালো হয় না এবং শরীরে ছড়িয়ে যায়।

৩০. বাঘ মানুষের যে অংশ প্রথম খায়

প্রাণিকুলের ভেতর বাঘ হচ্ছে হিংসা জাত। কারণ বাচ্চা হওয়ার পর অনেক সময় নিজের বাচ্চাদেরও খেয়ে ফেলে হুলো বাঘ। তবে মেছি বাঘ বাচ্চাদের সামলে রাখার জন্য যুদ্ধ করে। মানুষশিকারি বাঘ মানুষকে আক্রমণ করলে প্রথমে ফিনকি দিয়ে ছোটা রক্ত খায়। তবে এরপর শরীরের মাংস খাওয়া শুরু করে। বাঘে ধরলে প্রথমেই পুরুষদের ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তন খায় বাঘ। পুরুষাঙ্গ ও স্তন দিয়েই বাঘ খাওয়া শুরু করে। সাধারণত বাঘ মানুষের মাথা খায় না। কোমরের নিচের অংশ থেকে পা পর্যন্ত, পেট এবং ঘাড়ের অংশ এসবও খায় বাঘ। বাঘ সাধারণত মানুষের ভেতর পুরুষদেরই বেশি আক্রমণ করে। বাঘ নারীদের মাংস খায় না। যদিও বাঘের আক্রমণে কিছু নারীর মৃত্যু হয়েছে, তবে বাঘ তাদের শরীর খায়নি। বাঘ নারীদের খায় না, কারণ নারীরা সব সময় হক খায়, পাপ করে না। তারা এমনি এমনি কোনো জিনিস জোরজবরদস্তি করে তুলে নেয় না, চুরি করে না। এসব কারণে বাঘ নারীদের খায় না। মানুষের ঘাড়ে শরীরের সব শিরা এসে জোড়া লাগে। বাঘ যখন পেছন থেকে কোনো মানুষকে আক্রমণ করে তখন ঘাড়ে কামড় বসায় এবং ঘাড় মটকে দেয়। মানুষ তখন বিড়ালের মতো ছটফট করে অজ্ঞান হয়ে যায়। বাঘের নখ ও দাঁত অনেক বড়, তা মানুষের ঘাড়ে ঢুকিয়ে দেয়।

৩১. জঙ্গলে জোংড়া পোড়ানো যায় না

বাদাবন থেকে জোংড়া নামের এক ঝিনুক জাতীয় প্রাণী সংগ্রহ করা যেত। মূলত চুন বানানোর জন্য চুনারি ও জোংড়াখুটারা এসব সংগ্রহ করত। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা জোংড়া নদীর চরে, গোলফলের ডাঁটা এবং বড় গাছের কাণ্ডে লেগে থাকত। জোংড়া সংগ্রহকারীরা শীতের সময় বেশি জোংড়া পায়। ভাটার সময় জোংড়া সংগ্রহ করা হতো। জোংড়া খুঁটতে গিয়ে অনেকে বাঘের কামড়ে মরেছে। বাড়িতে এনে চুন বানানোর জন্য জোংড়া ধুয়ে তারপর শুকিয়ে পোড়ানো হয়। পোড়ানো ছাই থেকে চুন তৈরি হয়। জঙ্গলে কোনোভাবেই জোংড়া পোড়ানো হয় না, কারণ সেখানে সেটি পোড়ে না। কাঁচা জোংড়া পোড়ালে সাঁ সাঁ শব্দ হয়। বাড়ি ফিরেই জোংড়া পোড়ানো হয়।

৩২. মানুষ বাদায় পড়ে

বাদাবনে বাঘের আক্রমণে মানুষ মারা গেলে কখনোই বলা হয় না বাঘে মেরেছে বা বাঘে খেয়েছে। বলা হয় মানুষটি বাদায় পড়েছে। সাধারণত বাওয়ালি ও জেলেদের চেয়ে মৌয়ালরাই বেশি বাদায় পড়ে। মৌয়ালরা মধুর চাক খোঁজার জন্য গাছের ওপরের দিকে তাকিয়ে হাঁটে, তাদের দৃষ্টি ওপরের দিকে থাকে বলে বাঘ পেছন থেকে আক্রমণ করতে পারে। তবে বনজীবী নারীরা নদীতে যখন মাছের পোনা ধরে তখনো তাদের পেছন লাগোয়া বন থাকে, কিন্তু বাঘ খুব কমই এমন নারীদের আক্রমণ করে। বনে বাঘের উপস্থিতিকে বলা হয় ‘বাদা গরম’, মানে জঙ্গলে ধারেকাছে বাঘের উপস্থিতি আছে। কখনোই বলা হয় না জঙ্গলে বাঘ আছে।

৩৩. বাঘের রূপ

বনজীবীরা বিশ্বাস করে বাঘ মানুষ খায় না, বাঘের রূপ ধরে দক্ষিণরায় বা অতৃপ্ত আত্মা মানুষকে ধরে। বনসংলগ্ন জেলে, বাগদি ও বনজীবীরা মৃত্যুর পর জঙ্গলের চরেই লাশ সমাধি দেন। এ ক্ষেত্রে বাঘ-কুমিরের কামড়ে নিহত ব্যক্তিদের লাশও জঙ্গলের চরেই রাখা হয়। এসব মানুষের আত্মা বাঘের রূপ ধরে জলে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। মলয় দাস (২০১১) জানান, ভারতীয় সুন্দরবনে যাদের বাঘের হাতে মৃত্যু হয় তাদের আত্মা ‘বেঘোমুড়ি’ হয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। তারা ‘কুই’ আওয়াজ দিয়ে মানুষকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যায় এবং অনেক সময় বাঘের রূপ ধরে আসে৩৭। বাদাবনে বাঘ এতখানিই অপরিহার্য যে বাস্তবেও বাঘ, রূপকল্পনায়ও বাঘ।

৩৪. জঙ্গলেই মঙ্গল

জঙ্গলই জীবনের পাঠশালা, জঙ্গলই জীবনের চিকিত্সাঘর। সব বালামুসিবত সামলানোর হদিস জঙ্গলে আছে। বাঘে আঁচড় দিলে বা কামটে কামড়ালে হেন্তাল পাতার রস লাগাতে হয়, গরানের শিকড় কাটাছেঁড়াতে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত বন্ধ করে, আমাশয়ে খলসির ছাল বেটে রস বা জ্বর হলে পশুর পাতার রস গরম করে খেতে হয়। জঙ্গলে হাত-পা কাটলে গরান ফুলের পরাগরেণু কাটা ক্ষতে লাগানো হয়। জঙ্গলে পানির পিপাসা লাগলে চিলেগাছের ডাঁটা ছুলে চিবিয়ে খেলে পিপাসা মেটে। মুন্ডা আদিবাসীরা বাদাবনের সিন্দ্রি বা সুন্দরীগাছের পাতা সারহুল পূজায় ব্যবহার করে। গনগনে মাছ খেলে প্রসূতি মায়ের বুকে দুধ বাড়ে। মেন মাছ পুরুষের শরীরের বল বাড়ায়। বাদায় প্রবেশের আগে বনজীবীরা শরীরে পশুর পাতার রস মেখে নেন। এই রস গায়ে মাখলে বারী পোকা কামড়ায় না। গরানগাছের তলায় গরান ফুলের রেণু নিচে পড়ে হলুদ হয়ে থাকে। বনের ভেতর মধুর চাক, গোলপাতা বা গরানের ছিটে কাটতে গেলে অনেক সময় শরীরে দায়ের কোপ লাগে। গরানের ওই হলুদ রেণু কাটা ক্ষতে দিলে ক্ষত সেরে যায়। জঙ্গলে পানির পিপাসা লাগলে চিলেগাছের ডাঁটা ছিলে চিবিয়ে খেলে তৃষ্ণা দূর হয়। চিলেগাছ একটু ভেতরের দিকে গভীর বনে এবং বড় গাছের আশপাশে হয়। পাতা দেখতে তেঁতুল পাতার মতো। বনের যেসব খালের ধারে কেওড়াগাছ বেশি সেসব খালের গর্তে সেজিগাছের কষ ঢেলে দিলে কাইন মাছ কিছুটা সময়ের জন্য বেহুঁশ হয়ে ঘোলা পানিতে কিছু দেখতে না পেয়ে পানির ওপরে চলে আসে। এভাবে অনেকেই কাইন মাছ ধরেন।

৩৫. ফুলপটি মধু

বাদাবন থেকে সংগৃহীত বছরের প্রথম মধু হয় সাধারণত খলসে বা খলিসা ফুলের। বছরের প্রথম চাক কাটা মধুকে ফুলপটি মধু বলে। এই মধু পূজা কৃত্য ওষুধ উত্সবের জন্য আলাদা করে রাখা হয়। নৌকা পূজার সময় এই ফুলপটি মধু দিয়ে নতুন নৌকাকে স্নান করানো হয়। ফুলপটি মধুমাখা নৌকার ভেতর বিপদ মোকাবিলার শক্তি জন্মায়। আর এই নৌকা দিয়েই তো বাদাবনে ঘুরে বেড়াতে হয়।

৩৬. ঝরা পাতায় মেথানি, নয়া পাতায় মধু

বাদাবনে গাছের পাতা থেকে মাছ, মাছ থেকে মাটি, মাটি থেকে মানুষ জন্ম নেয়। পুরো বাদাবন যেন পাতার খেলা। ঝরা পাতা, নয়া পাতা, মরা পাতা। রংবেরঙের নানা পাতা। বাদাবনের পাতা দেখেই বলে দেওয়া যায় বনের শরীর কেমন আছে। কি গাছে থাকা পাতা, কি ঝরা পাতা। পাতার বর্ণ ও গন্ধ জানান দেয় বাদাবনের সুস্বাস্থ্য। জোয়ার-ভাটায় ঝরা পাতারা এক খাল থেকে আরেক খালে, এক চর থেকে আরেক চরে জমা হয়। কাদামাটিতে নানা বয়সী নানা জাতের পাতা জমে জমে স্তূপ তৈরি হয়। কাদাজলে জমে জমে এই স্তূপ রং বদলায়। একসময় ঝুরঝুরে নরম কালচে স্তরীভূত মণ্ড হয়ে ওঠে। ঝরা পাতার এই অবস্থাকে ‘মেথানি’ বলে। এই মেথানিতেই চিংড়ি মাছের জন্ম হয়। মেথানি হলো বাদাবনের চিংড়ির আঁতুড়ঘর। তারপর জোয়ার-ভাটার স্রোতে মেথানি থেকে চিংড়ি পোনা খালে খালে জঙ্গলে জঙ্গলে নদীময় ছড়িয়ে পড়ে। এই পোনা ধরেই টিকে আছে বাণিজ্যিক চিংড়িঘের। বাদাবনে মেথানি না জন্মালে চিংড়ির জন্ম হবে না। চাপড়াজাতীয় (চাকা) চিংড়ি বেশি দেখা যায় মেথানিতে। সাধারণত সুন্দরী, খলিসা, বাইন, পশুর, কাঁকড়া, গেওয়া ও জানাগাছের ঝরা পাতা বেশি জমেই মেথানি তৈরি হয়। ঝরা পাতা থেকে যেমন মেথানি, ঠিক তেমনি জঙ্গলে নতুন পাতা দেখা দিলেই মধু মৌসুমের সূচনা হয়। নয়া পাতা মানেই মৌমাছিদের আগমন এবং নতুন মধুর বার্তা। বাদাবনের এই ঝরা পাতা ও নয়া পাতা দেখেই বনজীবীরা মাছ ও মধুর ভবিষ্যত্ হিসাব করেন।

৩৭. শঙ্খ লাগা

বাদাবনে প্রাণিকুলের সঙ্গমকে বলা হয় ‘শঙ্খ লাগা’। যখন এ সঙ্গম মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীতে প্রাণীতে ঘটে। এ এক মধুর মিলন। ভরপুর অমাবস্যা কি পূর্ণিমার সময় কাইন মাছ ও টেপা মাছের সঙ্গে সঙ্গম হয়। সাপ ও মাছের এ শঙ্খ লাগা দীর্ঘ সময় ধরে চলে। তখন কেউ এ সময় তাদের অবিচার করে না, বিরক্ত করে না। বাদাবনের কাইন ও টেপা মাছ নাভি ফেলে রান্না করা হয়। কারণ সাপের সঙ্গে এসব মাছের শঙ্খ (সঙ্গম) লাগে। এসব মাছের বিষ থাকে নাভিতে। বাদাবনের নারীরা জানেন কীভাবে এই বিষ-নাভি সরিয়ে ফেলতে হয়। তুলনামূলকভাবে শীতকালে বিষ-নাভিতে বেশি বিষ জমে।

৩৮. বাদাবনের মন্ত্র

বাদাবন থেকে যেকোনো কিছু আহরণ ও সংগ্রহ করতে হলে বনের দারে অনুমতি নিতে হয়। মা বনবিবির কাছে এই অনুমতি নিতে হয়। সাধারণত গুনিন বাওয়ালিরা বনে প্রবেশের অনুমতি নেন। তাঁরা নানা ধরনের মন্ত্র দিয়ে এই কাজটি করেন। বনবিবি, গাজী কালু, চম্পাবতী, আলীবদর, খোয়াজখিজির, দুখে, শাহ জঙ্গলি, দক্ষিণরায়, রায়মণি, বড় খাঁ এদের কাছে প্রার্থনা করা হয়, যাতে বাদায় কোনো বিপদ-আপদ না ঘটে। বনবিবির কাছে প্রার্থনা করা হয়, যাতে এক যাত্রায় জুটে যায় বছরের খোরাক। গুনিন বাওয়ালিরা খিলান মন্ত্র, ছুকে মন্ত্র, চালান মন্ত্র দিয়ে বনের সুন্দরীগাছের গায়ে ‘মাল’ করেন। এটি বনের কাছে বনজ দ্রব্য সংগ্রহের অনুমতি প্রার্থনার প্রথম কৃত্য। বাদা রক্ষাকারী বনবিবি এই ‘মাল’ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করেন, মালের সীমানায় যেন কোনো আপদ-বিপদ না ঘটে।

৩৯. সবারই কর্মভাগ আছে

কর্মগুণে কেউ মাছ, কেউ বাঘ, কেউ গাছ আর কেউ মানুষ। বাদাবনে সবারই কর্মভাগ আছে। একটি মৌচাকে একেক মৌপোকার একেক রকম কাজ। তেমনি একটি মৌয়াল দলের প্রত্যেকে নিজেদের ভেতর আলাপ-আলোচনা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে নিজেদের দলগত কর্মবিভাজনগুলো তৈরি করেন। দলের সবাই মিলে দলের দলপ্রধান নির্বাচন করেন। মৌয়াল দলের দলপ্রধানকে সাজুনী বা মাঝি বলা হয়। সাত থেকে দশজনের একটি দল তৈরি হয়। কিন্তু গোল-গরান আহরণের ক্ষেত্রে আটজনের দল থাকে। গোলপাতা কাটতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাওয়ালি দলের প্রধানকে মাঝি বলে। আটজনের ভেতর চারজন গোলের পাতা পছন্দ করে, সেই পাতা নিয়মমতো কেটে নেয়, এরা কাটা বাউলি। বাকি চারজনের কাজ হচ্ছে সেসব পাতা ফেঁড়ে নৌকা বোঝাই করা, এরা ফাঁড়া বাউলি। এ ছাড়া এ দলে একজন বাবুর্চিও থাকেন, যিনি রান্না সামলান ও নৌকা তদারক করেন।

মৌয়াল দলে সাজুনী ছাড়া কাটনি বাউলি থাকেন দুজন। কাটনি বাউলিদের মূল কাজ হচ্ছে মধুর চাক কাটা। একটি দলে দুজন আড়ি বাউলি থাকেন, যারা মধু কাটার সময় চাকের নিচে বাঁশ-বেতের তৈরি আড়ি ধরে রাখেন। তারাই মধু ও মধুর চাক বন থেকে বহন করে নৌকায় এনে বোঝাই করেন। একটি দলে একজন বাবুর্চি বা ভার বাওয়া লোক থাকে। তার কাজ হলো নৌকায় বসে সবার জন্য রান্নাবান্না করা। খাল থেকে তীরের কাছাকাছি এলাকার জ্বালানি সংগ্রহ করা। যখন সবাই মধু ও মোম খুঁজতে বনের ভেতর চলে যায়, তখন এই বাবুর্চি রান্নাবান্না করে নৌকা বেয়ে নৌকা দলের কাছাকাছি নিয়ে যান। দলে একমাত্র বাবুর্চিই শিঙ্গা বাজান। এই শিঙ্গা দলের অবস্থান জানার জন্য, আবার কখনো কখনো বেশি মধু-মোমপ্রাপ্তির আনন্দ প্রকাশের জন্য। একটি মৌয়াল দলের সবাইকে নৌকা বাইতে হয়। দলের সাজুনীর কাজ হচ্ছে বন বিভাগ থেকে বনে প্রবেশ ও আহরণের আইনি অনুমতি সংগ্রহ করা। দলের নেতৃত্বও পরিচালনা করা। কখনো কখনো সাজুনী মধু কাটেন এবং বনের ভেতর বা নৌকায় এনে মৌচাক চাপেন। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে মৌয়াল দলের প্রধানকে দোহাসি বলে। এ ছাড়া দলে গাছি (যে গাছে ওঠে), গাঙ নেয়ে (নৌকায় থেকে যিনি রান্নার দায়িত্বে থাকেন), বগরদার (গুনিন), আড়িদার (মধুপাত্র বহনকারী) ও ছাটার লোক থাকে৩৮।

৪০. মালযাত্রার নিয়ম

বাদাবনে বনজ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে মালযাত্রায় যাওয়ার আগে পরিবার-পরিজনের বাজার সদাই, খরচাপাতি সব দিয়ে যান। কারণ একবার মালযাত্রা থেকে গ্রামে ফিরতে ফিরতে এক সপ্তাহ থেকে পনেরো দিন লেগে যায়। এই দীর্ঘ সময় পরিবারের নারীরাই ঘরসংসারের যাবতীয় দিক সামলান। মালযাত্রার আগে বনজীবী সনাতন হিন্দু পরিবারের মালযাত্রীরা বেশ কিছু নিয়ম পালন করেন। মালযাত্রীরা তেল-মসলা জাতীয় খাবার বা নেশাজাতীয় খাবার গ্রহণ করেন না। শরীর অসুস্থ হয় বা শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এমন কাজ করা থেকে মালযাত্রার আগে কিছুটা বিরত থাকা হয়। শুক্রবার বাদাবনে বনবিবির দিন। এ দিনে মা বনবিবি বাদায় বের হন। তাই শুক্রবারে বাদায় নামে না কেউ। এ দিন বন থেকে কোনো কিছু সংগ্রহও করা হয় না। মালযাত্রার আগে শুক্রবার সনাতন হিন্দু পরিবারের অনেকেই উপবাস থাকেন। আবার হিন্দু কি মুসলিম বনজীবী পরিবারের নারীরা যত দিন তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাদায় থাকেন তত দিনই রোজা রাখেন এবং উপবাস পালন করেন। যত দিন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাদায় থাকেন তত দিন বনজীবী পরিবারের নারীরা মাথায় তেল মাখেন না এবং সাবান ব্যবহার করেন না। যত দিন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাদাবনে থাকেন, তত দিন চুলার ছাই বাইরে ফেলা যায় না। মাটিতে দা বা ধারালো কিছু দিয়ে আঁচড় কাটা হয় না। এ সময় কোনো কিছু ঋণ বা কর্জ করে আনা যায় না। মালযাত্রায় যাওয়ার সময় পরিবারের নারীরা গুনগুনিয়ে গান করেন। তবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশে কৃত্য ও রীতিগত ভিন্নতা দেখা যায়। মলয় দাস (২০১১) জানিয়েছেন, ভারতীয় সুন্দরবন অঞ্চলে যাঁরা বনে যান সেই পরিবারের নারীরা পুরুষদের জন্য হাঁড়িতে চাল নেন না রান্নার জন্য, কারণ তাঁরা বেঁচে ফেরত আসবেন কি না বিষয়টি অনিশ্চিত৩৯। সুন্দরবনের কোনো কোনো জায়গায় হিন্দু পরিবারে জঙ্গলে যাওয়ার আগে স্ত্রীদের শাঁখা খুলে দিয়ে যেত, যদিও এই রীতি বর্তমানে খুব কম দেখা যায়৪০। বনে গিয়ে স্বামী নিখোঁজ হলে স্ত্রীরা ১২ বছর শাখা-সিঁদুর পরে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে৪১। তিনি আরও জানান৪২ কাঠুরেরা বনে ঢুকেই কাষ্ঠবুড়ি বিশালাক্ষীর পূজা করে। তারা জঙ্গলে চুল, নখ কাটে না। বাড়িতে ওই সময় নারীরা কাপড়-চোপড় কাচে না, সিঁদুর পরে না ও আয়নায় মুখ দেখে না।

৪১. নিহত বলা গাছ ও ঝলসানো বনতল

বনতলের উদ্ভিদবৈচিত্র্য দেখে সুন্দরবনের সুস্থতা বোঝা যায়। যদি উদ্ভিদের বৈচিত্র্য ও বিন্যাস বেশি থাকে তবে বোঝা যায় সুন্দরবনের স্বাস্থ্য ভালো এবং লবণের মাত্রা কম। জার্মানির হোয়েনহেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এস হারুন রশিদ, কানাডার লেকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেইনহার্ড বকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম এনায়েত হোসেন ও আবু সালেহ খান ২০০৭ সালে সুন্দরবনের বনতলের উদ্ভিদবৈচিত্র্য এবং এর সঙ্গে লবণাক্ততার সম্পর্ক নিয়ে একটি যৌথ গবেষণায়৪৩ দেখিয়েছেন, বনতলের লতাগুল্ম তীব্র জোয়ার ও উচ্চ লবণমাত্র সহ্য করতে পারে না। বনের স্তরবিন্যাসের ধরন অনুযায়ী দেখা যায়, পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জে বারবার আগুন লেগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ধকল সইতে হচ্ছে বনতলকে। এমনকি সুন্দরবনের নদী-খাল ও খাঁড়ি থেকে বনের ভেতরের দিকে প্রাণবৈচিত্র্যের যে বিন্যাস তা উল্টেপাল্টে গেছে। বিপর্যস্ত হয়েছে খাদ্যশৃঙ্খল এবং আঘাত লেগেছে সামগ্রিক খাদ্যজালে। কারণ আগুন লাগছে মূলত বনপ্রান্তে এবং সেখানে হরগোজা, ধানচি, বাঘ-ফার্ন, সিংড়া, বলা, কালিলতা, গোলপাতা, কেয়া, হেন্তাল, আঙুরলতা, বাওয়ালি লতারই আধিক্য বেশি। এটিই সুন্দরবনের বৃক্ষসমাজের অবস্থান বৈশিষ্ট্য। সুন্দরবনের জন্য এই বনতল খুবই গুরুত্ববহ এবং এখানকার সব প্রাণসম্পদ পুরো বনের টিকে থাকা ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। বারবার আগুনে সবচেয়ে বেশি পুড়েছে বলা, সিংড়া ও লতাগুল্ম। বনের এই অংশটুকু নানা প্রাণীর আশ্রয়স্থল। বিশেষত কাঁকড়া, শামুক, গুইসাপ, ব্যাঙ, সাপ, পতঙ্গ ও নানা জলচর পাখির। বলা গাছের ঝোপে বাটাং, ঘুঘু, বক ও কুকু পাখি বাসা বানায়। বলা গাছের ঝোপ এই পাখিদের আশ্রয়স্থল। এই গাছের ছাল সুন্দরবন অঞ্চলে দড়ি হিসেবে ব্যবহূত হয়। নানা কিছু বাঁধার কাজে এই দড়ি কাজে লাগে। সিংড়া গাছের কাণ্ড ঘরের খুঁটি হিসেবেও অনেকে ব্যবহার করেন। বনের আশপাশের অনেকের কাছেই শুকনো বলা ও সিংড়াগাছ জ্বালানির উত্স। বলা ও সিংড়ার ঝোপে মৌমাছি চাক বানায়। এসব চাক ঘন ঝোপের আড়ালে থাকে বলে অনেক সময় নানা আকৃতির হয় এবং এসব ঝোপের মধু মিশ্র স্বাদের হয়। বলা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ জে উদ্দিন, ডারেন গ্রেস ও এভেলিন টিরালংগো ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ১২টি ঔষধি উদ্ভিদের সাইটোটক্সিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা৪৪ করেন। এতে দেখা যায়, বলা গাছের এই গুণ যথেষ্ট, যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বারবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ও নাংলী অঞ্চলে আগুন লাগায় বনতল পুড়ে যাওয়ায় এর বৃক্ষবৈচিত্র্য ও বিন্যাসে এক পরিবর্তন তৈরি হচ্ছে। দশ বছরে এই অঞ্চলের ঝোপে মৌচাকের সংখ্যা নিদারুণভাবে কমে এসেছে। এটি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরাগায়ন ও নতুন বন জন্ম এবং বিকাশের জন্য এক বিপদবার্তা।

৪২. জোয়ার-ভাটার সংকেত

বাদাবন হলো জোয়ার-ভাটার বন। বাদাবনের জীবেরা নানানভাবে জোয়ার-ভাটার জানান দেয়। কালো বর্ণের কোকো নামে এক পাখি বনে উড়ে বেড়ায়। কোকো পাখি কু-কু-কু-কু করে ডাকে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফুটায়। কোকো পাখির ডাক ভাটার নির্দেশনা দেয়। কোকো পাখি ডাকতে শুরু করলে বোঝা যায় ভাটার সময় হয়েছে। কাঁকড়া ও শামুক যখন নদীর চর থেকে বনের ভেতরে গাছের ডালে উঠতে শুরু করে তা জোয়ার আসার নির্দেশনা দেয়। আবার তারা মাটিতে নেমে আসা ভাটার জানান দেয়।

৪৩. বকুলজানা

সুন্দরবনের খুব কম গাছের ফলমূল কি পাতা মানুষ রান্না করে খায়। রান্না করে খাওয়া যায় বকুলজানাগাছের ফল। পৌষ মাসে বকুলজানাগাছের ফুল আসে। আষাঢ় মাসে ফল হয়। ভাদ্রের শেষে ফল পাকে। ভাদ্র-আশ্বিনে বকুলজানাগাছের ফল গাছ থেকে কাদামাটিতে ঝরে পড়ে। এভাবেই অঙ্কুর গজায় ও নতুন গাছ হয়। সাধারণত খালের কিনারে এই গাছ বেশি দেখা যায়। বকুলজানাগাছের সবুজ রঙের জালি (কাঁচা) ফল শজনের মতো ছিলে গরম জলে সিদ্ধ করে কষ ফেলে দিতে হয়। কুচে চিংড়ি দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়। বকুলজানা খেতে পেঁপে সিদ্ধর মতো লাগে কিছুটা। এই ফলকে অনেকে বাদাবনের শজনে বলে।

৪৪. গরানের ভাগ

বাদাবন থেকে সংগৃহীত কাঠবহির্ভূত উল্লেখযোগ্য এক বনজ সম্পদ গরান গাছের ডাল। গরানের ডালের তিনটি ভাগ। কচা, ছিটে ও খুঁটি। কচা হলো সবচেয়ে চিকন ও ছোট ডাল। এটি ঘরের বেড়া তৈরিতে কাজে লাগে। ছিটে হলো মাঝারি আকারের ডাল। ঘরের পাইর ও চাল তৈরিতে কাজে লাগে। খুঁটি হলো সবচেয়ে বড় ও মোটা আকারের ডাল। ঘরের খুঁটি তৈরিতে কাজে লাগে। সাধারণত গরানের ছিটেই বেশি সংগ্রহ করা হয়।

৪৫. নতুন চাক ও পুরান চাক

মৌমাছি যখন চাক তৈরি শুরু করে তখন প্রাথমিক চাকটি দেখতে বাঁকা কাস্তে বা অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো দেখতে হয়। প্রাথমিক এই চাককে ‘চান চাক’ বলে। বনজীবীদের কাছে চান চাক খুব পবিত্র। কোনোভাবেই চান চাক স্পর্শ করা হয় না। চাক দেখে চাকের বয়স আন্দাজ করা যায়। নতুন ও পুরোনো চাকের পরীক্ষাটি করা হয় কারু দিয়ে। হেন্তাল ও হরগোজা পাতা দিয়ে কারু বানানো হয়। কারু দিয়ে চাকের তলে ধোঁয়া দেওয়া হয়। চাকটি যদি পুরোনো হয় ধোঁয়া দিলে সব মৌপোকা উড়ে যায় না। চাকটি যদি নতুন হয় এবং মধুভর্তি না থাকে তবে ধোঁয়া দিলে সব মৌপোকা উড়ে চলে যায়। দ্রুত চাক পোকাশূন্য হয়ে যায়।

৪৬. চাকের প্রলেপ

চাক করলে মৌপোকারা গাছের ডালে একধরনের প্রলেপ তৈরি করে। ওই প্রলেপই মৌপোকাদের বসতি চিহ্ন। যা দেখে পরের বছর ওই ডালে আবার চাক তৈরি করে তারা। মধু সংগ্রহের সময় মৌয়ালরা খুব সাবধানে চাক কাটে। যেন গাছের ডালে কোনো দায়ের কোপ না পড়ে, প্রলেপে কোনো ক্ষত তৈরি না হয়। কখনোই এই প্রলেপ চেঁছে তুলে ফেলা হয় না। কোনোভাবে প্রলেপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরের বছর আর মৌপোকারা এই ডালে বসে না।

৪৭. চোঙের আঠা

মৌচাকের প্রতিটি ষড়ভুজাকৃতির একক ঘরকে চোঙ বলে। নিজেদের মুখের লালা ও চরের পলি মাটির সর দিয়ে চোঙ বানায় মৌপোকারা। একটি চোঙের সঙ্গে আরেকটি চোঙ খুব কায়দা করে আঠা দিয়ে লাগায় মৌমাছিরা। কাজটি কর্মী মৌমাছিরা করে। আঠার জন্য তারা দুটি উত্স ব্যবহার করে। জঙ্গল ও জল। বনের সুন্দরী, কাঁকড়া, পশুর ও বটগাছের কষ থেকে আঠা সংগ্রহ করে। শুধু গাছের কষ নয়, পাতা থেকেও আঠা সংগ্রহ করে মৌপোকারা। যখন গাছের জালি পাতা (নতুন পাতা) বের হয় তখন সেই পাতা থেকে আঠা সংগ্রহ করা যায়। আবার ভাটির সময় যখন নদীর জল থুমথুমি (একেবারে স্থির ও ঠান্ডা) হয় তখন জলের স্রোত ও পলিমাটিতে তৈরি হওয়া সরানি (জলের গ্যাজা) জমে চরের মাটির ওপরের স্তরে। মৌমাছিরা সেই সরানি চুষেও আঠা সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করা আঠা দিয়ে একটি চোঙের সঙ্গে আরেকটি চোঙ জোড়া লাগানো হয়। চোঙ তৈরি করে মৌপোকারা নিজেদের শরীরের মাপে। তাই সব চোঙ সমান মাপের হয় না, কিন্তু নকশা ও গড়ন একই থাকে।

৪৮. ফুলহারা মৌসুম

চৈত্র থেকে আশ্বিন এই সাত মাস সুন্দরবনে নানা ফুল ফোটে। এই মৌসুম ফুলের মৌসুম। মৌমাছিরা তখন বনে ঘুরে ঘুরে ফুলের মধু খায় এবং চাকে মধু জমায়। কার্তিক থেকে মাঘ এই তিন মাস মৌমাছিরা চাকের মধু খায়। এ সময় মৌপোকারা চাকে বসে বাচ্চা ফুটায় ও বাচ্চাকে দেখাশোনা করে। এ সময়টিই সুন্দরবনের ফুলহারা মৌসুম। এ সময় মৌমাছিরা বাচ্চার জন্য অপেক্ষা করে। বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করেই তারা চলে যায়।

৪৯. সূর্যপাতালি ও দক্ষিণপাতালি মৌ

একেক দিকে মুখ করে একেক চাক তৈরির রেওয়াজ সুন্দরবনের মৌমাছি সমাজে। পুবমুখী চাকের কদর বেশি মৌপোকা কি মানুষের মাঝে। গাছের প্রজাতি ও এলাকার ওপর নির্ভর করে চাক কোনমুখী হবে। পুব দিকে মুখ করে বানানো চাকের মধুকে সূর্যপাতালি মৌ বলে। দিনের প্রথম আলো পড়ে এসব চাকে। এসব চাকের পোকার রাগ খুব বেশি। এদের মধুর পরিমাণও বেশি হয়। প্রতিটি চাঙে বা খোপে অন্য চাকের তুলনায় রস জমে বেশি। সাধারণত বাইন ও গেওয়া গাছে বেশি সূর্যপাতালি চাক দেখা যায়। দক্ষিণ দিকে মুখ করে বানানো চাকের মধুকে দক্ষিণপাতালি মৌ বলে। এসব চাকের পোকার রাগ কম। মধুও কম হয়। সাধারণত জানাগাছে এই চাক দেখা যায়। এ ছাড়া উত্তর ও পশ্চিমমুখী চাকও মাঝেমধ্যে দেখা যায়।

৫০. লেজ ও দাঁত

সুন্দরবনের একেক মাছের লেজ ও দাঁতের গড়ন একেক রকম। সবচেয়ে বড় লেজ মুইল্যে মাছের। খাটো/ছোট লেজ দাঁতিনা, পায়রা, রুচো, পানখাগি ও কাঁকরবাঙা দাঁতিনার। হাঁ করলে সবচেয়ে বড় মুখ হয় কামট মাছের। তবে সুন্দরবনের সবচেয়ে ছোট হাঁ করে পায়রা মাছ। খরগুল্লো মাছের চোখ গোল গোল এবং সবচেয়ে বড়। এদের চোখ মাথায় থাকে। কেকশেল মাছের চোখ ছোট। যেসব মাছ জলের গভীরে যায় ও যেতে পারে তাদের চোখ বড় হয়। যেসব মাছ জলের গভীরে যায় না, সাধারণত জলের ওপরে ভেসে বেড়ায় তাদের চোখ ছোট হয়। সুন্দরবনে যত মাছ আছে তার ভেতর মুচর মাছের পেটেই সবচেয়ে লম্বা ডিম থাকে।

৫১. চাকের দেশ

সুন্দরবন যেন চাকময়, এই দেশ চাকের দেশ। এখানে মৌমাছির বসতিকে চাক বলে এবং মাছের ঝাঁককেও চাক বলে। মাছেরা ‘গেজাগেজি’ করে এবং  ‘কেত্তন’ (কীর্তন) করে বেড়ায়। গাংগুয়া মাছ, খয়রা মাছ ও গনগনে মাছ বেশি কেত্তন করে বেড়ায়। পারশ্যে মাছও গান করে। এই মাছগুলো প্রথম নিজেরা কোনো এলাকায় যায়। কোনো খাবারের উত্স পেলে বা কোনো বিপদ ঘটলে তারা গানে গানে একটা সংকেত পাঠায়। তখন অন্য মাছেরাও ছুটে চলে আসে। খরগুল্লো মাছ সব সময় এক জায়গায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়। এরা এক খাল ছেড়ে অন্য খালে সবাই মিলে চলে যায়। একটি চাকে মাইয়ে মাছ ও ছাওয়াল মাছ থাকে। মাইয়ে মাছের সংখ্যা বেশি থাকে। মাইয়ে মাছ খেতে ভালো না। পেটে ডিমঅলা মাইয়ে মাছকে পবিত্র হিসেবে দেখা হয়। জালে ধরা পড়লেও এদের ছেড়ে দেওয়া হলো নিয়ম। কারণ মা মাছ ধরে খেলে সেই মাছের আত্মা বনে ঘুরে বেড়ায় এবং মানুষের ক্ষতি করে।

৫২. ডুবি চাক

সুন্দরবনের বেশির ভাগ চাকই হাওয়ায় ভাসে। তবে জলের তলায় ডুবে যাওয়া চাকও তৈরি করে মৌপুকেরা। জোয়ারের পানিতে এসব চাক ডুবে যায়, আবার ভাটায় ভেসে ওঠে। সাধারণত গেওয়াগাছের হেলানো নিচের দিকের কাণ্ডে এবং হুদোবনের ঝোপে এসব চাক বেশি হয়। জলে ডুবে যাওয়া চাককেই ডুবি চাক বলে। এসব চাকের মৌমাছিদেরও খুব রাগ। জোয়ারের জলে ডুবে থাকা চাক থেকে কাঁকড়া কামড়ে কামড়ে রস খেয়ে ফেলে।

৫৩. বনের কোন দিকে মধু পাওয়া যাবে

মধু মৌসুমের শুরুতেই বনজীবীরা এই পরীক্ষা করে। শ্রীপঞ্চমীর দিন ঘরের কোণে মাটির প্রদীপ সলতে দিয়ে জ্বালিয়ে রাখতে হয়। সারা রাত ধরে জ্বলা প্রদীপের শিখা যেদিকে যায় ওই বছর বেশি মধু মিলে তার উল্টো দিকে। পূর্ব হলে পশ্চিমে আর উত্তরে হলে দক্ষিণে।

আসুন নতজানু হই

এভাবেই নানাভাবে নানা ব্যঞ্জনায় বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবনের বনজীবীরা বিকশিত করে চলেছেন এক জীবনদায়িনী বিজ্ঞানভাষ্য। বিস্ময়কর ও নির্দয়ভাবে বাদাবনের বনজীবীদের এই অরণ্যভাষ্য কখনোই কোনো দিন তথাকথিত মূলধারায় স্বীকৃতি বা গুরুত্ব পেল না। অথচ এখানেই আছে টিকে থাকার কারিগরি এবং বেঁচে থাকার দর্শন। চলতি আলাপখানি ওপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর কোনো বিস্তর ব্যাখা-বিশ্লেষণে যাচ্ছে না। কারণ এসব নিয়ে বিস্তর বহুমাত্রিক বহুপক্ষীয় তর্ক ও তালাশ সম্ভব। কিন্তু এটি তো মানতেই হবে হাজার হাজার বছর ধরে বাদাবনে টিকে থাকার ভেতর দিয়েই বিকশিত হচ্ছে এখানকার লোকায়ত জ্ঞানকাণ্ড। বনজীবী নিম্নবর্গের যাপিত জীবনের ময়দান থেকে আসুন একটিবার বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবনকে জানাবোঝার চেষ্টা করি। বাদাবনের করুণ রক্তদাগ আর আহাজারির পাশে শামিল হই। আসুন চুরমার করি সুন্দরবন নিয়ে প্রবল জ্ঞানকাণ্ডের বাহাদুরি। সুন্দরবন কোনো বিচ্ছিন্ন করে রাখার মতো উদ্ভিদ উদ্যান বা নয়াউদারবাদী উন্নয়ন প্রকল্পের ময়দান নয়। এটি বাঘ, বনজীবী, বনবিবিদের এক জটিল ঐতিহাসিক সংসার। এই সংসার যেমন দেশকে আগলে আছে, আগলে আছে দুনিয়াকেও। দেশ ও দুনিয়ার প্রতি আসুন নতজানু হই, কৃতজ্ঞ হই।

তথ্যসূত্র:

১.         বাংলা ভাষায় রচিত এবং বিশেষত ভারত থেকে প্রকাশিত সুন্দরবন-সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা ও লেখালেখি জানতে পড়ুন: ধুর্জটি, নস্কর, ১৯৯৭, সুন্দরবনের লোকায়ত দর্পণ, প্রথম খণ্ড, শ্যামলী পাবলিকেশন, কলকাতা। তুষার কান্তি কাঞ্জিলাল, ১৪০৬, সুন্দরবনের প্রকৃতি, মানুষ ও উন্নয়ন; পশ্চিববঙ্গ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাসংখ্যা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কমল চৌধুরী, ১৯৯৯, চব্বিশ পরগনা উত্তর-দক্ষিণ সুন্দরবন, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা। ড. নির্মলেন্দু দাস, ১৯৯৬, সুন্দরবনের লোকসংস্কৃতি, জ্ঞানপ্রকাশ, কলকাতা। ড. দিলীপ কুমার নাহা, ২০০০, প্রান্ত সুন্দরবনের কথ্যভাষা, সাহিত্যশ্রী পাবলিশার্স, কলকাতা। ড. দেবব্রত নস্কর, ১৯৯৯, চব্বিশ পরগনার লৌকিক দেবদেবী: পালাগান ও লোকসংস্কৃতি জিজ্ঞাসা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা। মনোজ বসু, ১৩৮৭, পঞ্চম সংস্করণ, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা। মুনশী মোহাম্মদ খতের সাহেব, ১৪০১, বোনবিবী জহুরানামা, গাওসিয়া লাইব্রেরি, কলকাতা। রত্নাংশু বর্গী, ১৯৮৪, সুন্দরবন, কথাশিল্প, কলকাতা। শিবশঙ্কর মিত্র, ১৯৯৫, সুন্দরবন সমগ্র, আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা। দাস, মলয় দাস, ২০১১, সুন্দরবনের জনজীবন ও সংস্কৃতি, অক্ষর প্রকাশনী, কলকাতা।

২.         বিস্তারিত দেখুন: Rist, Stephan and Dahdouh-Guebas, Farid. 2006, “Ethnosciences- a step towards the integration of scientific and traditional forms of knowledge in the management of natural resources for the future,” Environment, Development & Sustainability 2006, 8 : 467-493

৩.        দেখুন: Marschke, Melissa. 1999, “Using Local Environmental Knowledge: A case-study of mangrove resource management practices in PeamKrasaop Wildlife Sanctuary, Cambodia,” Submitted in partial fulfillment of the requirements for the degree of Master of Environmental Studies, Dalhousie University, Halifax, Nova Scotia, Copyright by Melissa Manchke, 1999

৪.         বাংলাদেশের সুন্দরবন নিয়ে খুব কম গবেষণা আছে, যা বননির্ভরতাকে গুরুত্ব দেয়। কালেভদ্রে যদিওবা কেউ দেয়, সেই গবেষণাগুলোও বনজীবীদের জ্ঞান ও চিন্তাপদ্ধতিকে কোনো উল্লেখই করে না। এমন একটি কাজ দেখতে পারেন: Islam, M.S. 2011. “Biodiversity and livelihoods: A case study in Sundarbans Reserve Forest, World Heritage and Ramsar Site (Bangladesh),” A Master thesis submitted of the requirements for the degree of Master of Science (M.Sc.) in Management of Protected Areas at the University of Klagenfurt, Austria

৫.         এমন একটি গবেষণা দেখতে পারেন: Ghosh, Aditya; Susanne Schmidt; Thomas Fickert and Marcus Nüsser. 2015, “The Indian Sundarban Mangrove Forests: History, Utilization, Conservation Strategies and Local Perception,” Diversity 2015, 7, 149-169; doi:10.3390/d7020149

৬.        ম্যানগ্রোভ বন নিয়ে এ রকম অজস্র গবেষণাকাজ দেখা যেতে পারে, যেখানে বিদ্যায়তনিক জ্ঞানকাঠামোর প্রবলতাগুলো স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। এ রকম কিছু গবেষণাকাজ দেখা যেতে পারে: a) Cornejo, Rubi Hernandez; NicoKoedam; Arturo Ruiz Luna; Max Troell and Farid Dahdouh-Guebas. 2005, “Remote sensing and ethnobotanical assessment of the mangrove forest changes in the Navachiste-San Ignacio-Macapule Lagoon complex, Sinaloa, Mexico,” Ecology and Society 10 (1): 16. b) Islam, Md. Shahidul. 2003, “Perspectives of the coastal and marine fisheries of the bay of bengal, Bangladesh,” Ocean and Coastal Management 46 (2003) 763-796. c) Gilman, Eric L; Joanna Ellison; Norman C. Duke and Colin Field. 2008, “Threats to mangroves from climate change and adaptation options: a review,” Aquatic Botany 89 (2008) 237-250. d) Giri, Chandra; Bruce Pengra; Zhiliang Zhu; Ashbindu Singh and Larry L. Tieszen. 2007, “Monitoring mangrove forest dynamics of the Sundarbans in Bangladesh and India using multi-temporal satellite data from 1973 to 2000,” Estuarine, Coastal and Shelf Science 73 (2007) 91-100. e) Salam, M Abdus. 2000, “Eco-tourism to protect the reserve mangrove forest the Sundarbans and its flora and fauna,” Anatolia, 2000 11:(1), 56-66. f) Baran E, Hambrey J. 1998, “Mangrove conservation and coastal management in Southeast Asia : what impact on fishery resources?,” Marine Bulletin 1998, 37(8-12): 431-440

৭.         এ সম্পর্কিত অনেক গবেষণা আছে। দেখুন: Blasco F. and Azipuru M. 1997, “Classification and evolution of the mangroves of India,”  Tropical Ecology 1997, 38(2):357-374 ‰es Jayatissa LP, Dahdouh-Guebas F, Koedam N. 2002, “A review of floral composition and distribution of Mangroves in Sri Lanka,” Botanical Journal of the Linnean Society 2002, 138:29-43

৮.        দেখুন: Ray, Dr. Tapan. 2013, “Traditional Honey Collecting: Emerging Livelihood Problems and Socio-economic Uplift of Mawallis Community in Sundarbans,” Pratidhwani the Echo, A Journal of Humanities & Social Science, Published by: Dept. of Bengali, Karimganj College, Karimganj, Assam, India, Website: www.thecho.in

৯.         বিস্তারিত দেখুন: Miah, MD. Danesh; Romel Ahmed and Sheikh Jahidul Islam. 2003, “Indigenous Management Practices of Golpata (Nypafruticans) in Local Plantations in Southern Bangladesh,” Palms 47(4): 185–190

১০.       দেখুন: ঘোষাল, ইন্দ্রানী। ২০০৬, সুন্দরবনের মত্স্যজীবীদের জীবন, তাদের লোকসংস্কৃতি এবং লোকসাহিত্য, সলিল ঘোষাল কর্তৃক প্রকাশিত, গ্রথন, দক্ষিণগড়িয়া, কলকাতা, পৃ. ১১৩

১১.       দেখুন: Mahmud, Imran; Md Khirul Islam; Sanjib Saha, Apurba Kumar Barman, Md Mustafizur Rahman, Md Anisuzzman, Taufiq Rahman, Abdullah Al-Nahain, Rownak Jahan and Mohammed Rahmatullah. 1998. “Pharmacological and Ethnomedicinal Overview of Heritierafomes: Future Prospects,” International Scholarly Research Notices, Volume 2014, Article ID 938543, 12 pages

১২.       Roy, Tapan. 2014, “Customary use of mangrove tree as a folk medicine among the Sundarban resource collectors,” Humanities, Arts and Literature (IMPACT: IJRHAL), Vol. 2, Issue 4, April 2014, 43-48

১৩.      দেখুন: Dahdouh-Guebas F, S Colil, D Lo Seen, P Ronnback, D Depommier, T Ravishankar and N Koedam. 2006, “Analysing ethnobotanical and fishery-related importance of mangrove of the East-Godavari delta (Andhra Pradesh, India) for conservation and management purposes,” Journal of Ethnobiology and Ethnomedicine 2006, 2:24, p-14

১৪.       দেখুন: Revathi P, T Jeyaseelan Senthinath, P Thirumalaikolundu Subramanian and N Prabhu. 2013, “Medicinal properties of mangrove plants – an overview,”  Int. J. Bioassays, 2013, 02 (12), 1597-1600

১৫.       দেখুন: Mirera, David Oersted;  Jacob Ochiewoa, Fridah Munyi, Tabitha Muriuki. 2013. “Heredity or traditional knowledge : Fishing tactics and dynamics of artisanal mangrove crab (Scylla serrata) fishery,” Ocean & Coastal Management 84 (2013) 119e129

১৬.      দেখুন: Masalu, D. C. P., Shalli, M. S. and Kitula, R. A. 2010, Customs and Taboos : The role of indigenous knowledge in the management of fish stocks and coral reefs in Tanzania. pp.64

১৭.       দেখুন: Gardner, Charlie J.; ZoAndriamahenina; AudeCarro; Trevor G. Jones ; Louise D. Jasper. 2014, “Rapid assessments and local knowledge reveal high bird diversity in mangroves of north-west Madagascar,” Wetlands Ecol Manage, DOI 10.1007/s11273-016-9501-3, and published online 14 July 2016

১৮.      বিস্তারিত পড়ুন: Primavera JH. 2000, “The yellow mangrove: its ethnobotany, history of maritime collection and needed rehabilitation in the central and southern Philippines,” Philippine Quarterly of Culture and Society 2000, 28(4): 464-475

১৯.      দেখুন: Rosa IML, Alves RRN, Bonifacio KM, Mourao JS, Osorio FM, Oliveria TPR, Nottingham MC. 2005, “Fishers’ knowledge and seahorse conservation in Brazil,” Journal of Ethnobiology and Ethnomedicine 2005, 1:12

২০.       দেখুন: Govindasamy,  C and Kannan R. 2012, “Pharmacognosy of mangrove plants in the system of unani medicine,” Asian Pacific Journal of Tropical Disease (2012)S38-S41

২১.       দেখুন: Saranraj P. and D. Sujitha. 2015. “Mangrove Medicinal Plants: A Review,” American-Eurasian Journal of Toxicological Sciences 7 (3): 146-156, 2015

২২.       দেখুন: Saranya, Arumugam; ThirugnanasambandamRamanathan; Krishnan SelvarajanKesavanarayanan and Aishah Adam. 2015, “Traditional Medicinal Uses, Chemical Constituents and Biological Activities of a Mangrove Plant, Acanthus ilicifoliusLinn. : A Brief Review,” American-Eurasian J. Agric. & Environ. Sci., 15 (2): 243-250, 2015

২৩.      দেখুন: Bandaranayake WM, 1998, “Traditional and medicinal use of mangroves,” Mangroves and Salt Marshes 1998, 2:133-148

 ২৪.      দেখুন: Qasim, Muhammad ; Zainul Abideen; Muhammad Yousuf Adnan; Raziuddin Ansari; Bilquees Gul; Muhammad Ajmal Khan. 2014. “Traditional ethno-botanical uses of medicinal plants from coastal areas of Pakistan,” Journal of Coastal Life Medicine 2014; 2(1): 22-30

২৫.       দেখুন: Ravindran, KC; K Venkatesan; V Balakrishnan; KP Chellappan and T Balasubramanian. 2005, “Ethnomedicinal studies of Pichavaram mangroves of East Coast, Tamil Nadu,” Indian Journal of Traditional Knowledge, Vol. 4(4), October 2005, pp 409-411

২৬.      দেখুন: Pattanaik, Chiranjibi; CS Reddy; NK Dhal and Rashmita Das. 2008, “Utilisation of mangrove founds in Bhitarkanika Wildlife sactuary, Orissa,” Indian Journal of Traditional Knowledge, Vol. 7(4), October 2008, pp 598-603

২৭.       বিস্তারিত দেখুন: Khan, Mohammad Monirul Hasan. 2004, “Ecology and conservation of the Bengal tiger in the Sundarbans mangrove forest of Bangladesh,” A dissertation submitted to the University of Cambridge in partial fulfilment of the conditions of application for the degree of Doctor of Philosophy, Wildlife Research Group Selwyn College , Department of Anatomy Cambridge , University of Cambridge, p-184

২৮.      দেখুন: Barlow, Adam C. D. 2009, “The Sundarbans Tiger Adaptation, Population Status, and Conflict Management,” A Thesis Submitted to The Faculty of The Graduate School of The University of Minnesota, In Partial Fulfillment Of The Requirements For The Degree Of Doctor Of Philosophy

২৯.       দেখুন:  Cormier-Salem MC. 1999, “The mangrove : an area to be cleared ...for social scientists,” Hydrobiologica 1999, 413:135-142

৩০.      বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে ‘প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ’ এবং সুন্দরবননির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চালু আছে সেসব উন্নয়ন প্রকল্পকে তীব্র ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বনজীবীরা বলেন তারা ‘বিপর্যস্ত’ এবং যারা এসব প্রাণ ও প্রকৃতিবিচ্ছন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালাচ্ছেন তারা সুন্দরবন ও মানুষের উন্নয়ন চিন্তায় ‘কাহিল’ মানে ক্লান্ত। কাহিল প্রত্যয়টি মূলতঃ সুন্দরবন নিয়ে চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে বনজীবীদের একটি স্যাটায়ার।

৩১.      দেখুন: Haque, Mohammad Zahirul; Mohammad Imam Hasan Reza; Md. Mahmudul Alam; Zahir Uddin Ahmed; Md. Wasiul Islam. 2016, “Discovery of a potential site for community based sustainable ecotourism in the Sundarbans reserve forests, Bangladesh,” International Journal Conservation Science 7, 2, APR-JUN 2016: 553-566. সুন্দরবনসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে ‘আধুনিকতার উপনিবেশিক তর্ক’ জারি আছে, তা পর্যটন হোক বা সংরক্ষণ হোক। 

৩২.      লেখকগণ তাঁদের লেখায় ‘আধুনিক পর্যটক’ প্রত্যয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে রচনার কোথাও এই আধুনিক পর্যটক বলতে কাদের বোঝায় তারা কী ধরণের বস্তু বা বিষয় তার কোনো ব্যাখ্যা ও বিবরণ নেই। তবে রচনায় যেভাবে কোনো বন এলাকার মানুষদের ভেতর এই পর্যটনের আহবান জানানো হয়েছে সেখানে আধুনিক প্রত্যয়টি সেই ঐতিহাসিক উপনিবেশিকতাকেই টান দেয় এবং জনগোষ্ঠী এবং স্থান ‘অপর’ হয়ে দাঁড়ায়।

৩৩.      দেখুন: Dahdouh-Guebas F, S Colil, D Lo Seen, P Ronnback, D Depommier, T Ravishankar and N Koedam. 2006, “Analysing ethnobotanical and fishery-related importance of mangrove of the East-Godavari delta (Andhra Pradesh, India) for conservation and management purposes,” Journal of Ethnobiology and Ethnomedicine 2006, 2:24, p-9

৩৪.      দেখুন: Bühnen, S.1992,  “Place names as an historical source: an introduction with examples from southern Senegambia and Germany,” History in Africa 19: 45–101

৩৫.      দেখুন: দাস, মলয়। ২০১১, সুন্দরবনের জনজীবন ও সংস্কৃতি, অক্ষর প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ.৬৯

৩৬.     দেখুন: সরকার, প্রদ্যুত্। ২০০৫, সুন্দরবনের নৌ-নির্মাণশিল্প, নিম্নগাঙ্গেয় সুন্দরবন সংস্কৃতিপত্র, ষষ্ঠসংখ্যা, ডিসেম্বর ২০০৫, পৃ.৩

৩৭.      দেখুন: দাস, মলয়। ২০১১, সুন্দরবনের জনজীবন ও সংস্কৃতি, অক্ষর প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ.৭০

৩৮.     প্রাগুক্ত, পৃ.৬১

৩৯.      প্রাগুক্ত, পৃ.৪৭

৪০.       প্রাগুক্ত, পৃ.৬৮

৪১.       প্রাগুক্ত, পৃ.৭১

৪২.       প্রাগুক্ত, পৃ.৬৪

৪৩.      দেখুন: Rashid S., Harun; Reinhard Böcker; A. B. M. E. Hossain; Saleh A. Khan. 2008, “Undergrowth species diversity of Sundarban mangrove forest (Bangladesh) in relation to salinity,” Ber. Inst. Landschafts- Pflanzenökologie Univ. Hohenheim Heft 17, 2007, S. 41-56, Stuttgart

৪৪.       দেখুন: Uddin, Shaikh J.; Darren Grice and Evelin Tiralongo. 2011, “Cytotoxic Effects of Bangladeshi Medicinal Plant Extracts,” Evidence-Based Complementary and Alternative Medicine, Volume 2011, Article ID 578092, 7 pages, Hindawi Publishing Corporation

আমার বাদাবন বিদ্যাঘর ও ঋণস্বীকার

সুন্দরবন ঘিরে আমার শিক্ষালয় বাদাবনের সমগ্র জীবনপ্রবাহ। এ ক্ষেত্রে সুন্দরবনের বনজীবীরাই আমার প্রধান শিক্ষাগুরু। চলতি আলাপখানি গড়ে ওঠার পেছনে যাদের হাজার বছরের জ্ঞান, দর্শন ও চিন্তাধারা কাজ করেছে তাদের সকলের ধারে আমি চির অশেষ ঋণী। এই ঋণস্বীকারের ফর্দে অসাবধানতায় কেউ বাদ থেকে গেলে আমায় ক্ষমা করবেন।

১.         মার্জন আলী সরদার (৮০), লোহার কারিগর, সুন্দরবনের জেলেদের জাল ও নৌকার লোহার উপকরণ ও মৌয়ালদের চাক কাটার দা বানান, মা ফুটি বিবি ও বাবা ফকির সরকার, আমাদি, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩১ মার্চ ২০১১

২.         মোকসেদ আলী (৫৭), সাজুনী, মা সলুক বিবি ও বাবা দুর্লভ গাজী, বালিয়াডাঙ্গা, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩১ মার্চ ২০১১

৩.        আবদুর রহিম (৫০), মৌয়াল, মা আছিয়া বেগম ও বাবা মুন্সী চাঁদ আলী সর্দার, বালিয়াডাঙ্গা, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১১

৪.         আরশাদ আলী গাজী (৭০), মৌয়াল, মা উমেলা খাতুন ও বাবা সুলতান গাজী, বালিয়াডাঙ্গা, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১১

৫.         পীরালি গাজী (৭৫), সাজুনী, মা ছবিজান বিবি ও বাবা নেসের গাজী, বালিয়াডাঙ্গা, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২ এপ্রিল ২০১১

৬.        আন্না বালা সর্দার (৫০), মেলে মাদুর কারিগর, মা লক্ষ্মী দাসী ও বাবা হাজেরা

সর্দার, বালিয়াডাঙ্গা, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২ এপ্রিল ২০১১

৭.         সুবল চন্দ্র দাস (৬৫), মৃিশল্পী, মা প্রিয়বালা দাসী ও বাবা নরেন চন্দ্র দাস, আনুলী পালপাড়া, আশাশুনি, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২ এপ্রিল ২০১১। খুলনার কয়রার আমাদী বাজারে এক যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মেলায় আলাপ হয়।

৮.        গণেশ সরকার (৬৮), মৌয়াল, মা মধু দাসী ও বাবা বিজয় সরকার, চণ্ডীপুর, ১ নম্বর আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ এপ্রিল ২০১১

৯.         আজিজুল হক গাজী (৫৫), কৃষক ও মৌয়াল দলের সঙ্গেও মাঝেমধ্যে বনে যান, মা লাইলা খাতুন ও বাবা রহমান গাজী, নারানপুর, বাগালী ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ এপ্রিল ২০১১

১০.       আশরাফুল শিকারি (৫০), বাওয়ালি, মা সোনাভানু ও বাবা শহিদুল শিকারি, নারানপুর, বাগালী ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তার দাদা অজেত শিকারি সুন্দরবনের ‘বিখ্যাত শিকারি’। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ এপ্রিল ২০১১

১১.       দৌলত আলী সর্দার (৭০), মৌয়াল, মা খোদেজা বিবি ও বাবা ছুরু সর্দার, নারানপুর, বাগালী ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ এপ্রিল ২০১১

১২.       সুপদ মণ্ডল (৬৫), জেলে, মা সুন্দরী মণ্ডল ও বাবা লক্ষণ মণ্ডল, বানিয়াখালী, ৩ নম্বর মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ এপ্রিল ২০১১

১৩.      হরিপদ মণ্ডল (৪৮), সাজুনী, মা বৃন্দেবালা মণ্ডল ও বাবা অনন্ত মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ মে ২০১১

১৪.       নটবর মণ্ডল (৭৪), মৌয়াল ও মুক্তিযোদ্ধা, মা পঞ্চমী বালা মণ্ডল ও বাবা সতীশ চন্দ্র মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ মে ২০১১

১৫.       ফরমান গাজী (৯০), সুন্দরবনের নৌকার কারিগর, মা হেলি বিবি ও বাবা মান্দার গাজী, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ মে ২০১১

১৬.      বদরুল দেওয়ান গাজী (৪৫), মৌয়াল, মা পারভীন ও বাবা হবি গাজী, পানখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৮ ডিসেম্বর ২০১০। ২২ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে তিনি বাঘের কামড়ে মারা যান।

১৭.       আজগর আলী শেখ (৪৫), বাওয়ালি, মা কাঞ্চন বিবি ও বাবা মোসলেম শেখ, টেকেরমাথা, গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৯ জানুয়ারি ২০১০। সুন্দরবনের বিখ্যাত শিকারি মেজ শেখের নাতি।

১৮.      বাসন্তী দাসী (৫৭), জেলে, মা দীন দাসী ও বাবা পাগলা সানা, মুন্সিগঞ্জ জেলেপাড়া, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১১ জানুয়ারি ২০১০

১৯.      নূরুল ইসলাম (৫০), জেলে, মা সায়রা খাতুন ও বাবা কাদের বক্স মোল্লা, মালঞ্চ নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ওপর থাকেন, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১১ জানুয়ারি ২০১০

২০.       আজিবর মোল্লা (২৫), জেলে, মা সায়রা খাতুন ও বাবা কাদের বক্স মোল্লা, মালঞ্চ নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ওপর থাকেন, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১১ জানুয়ারি ২০১০

২১.       মিজানুর রহমান (৩০), জেলে, মা নূরজাহান ও বাবা আবদুর রব, খেওড়াঘাট, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১১ জানুয়ারি ২০১০

২২.       শহীদুল মোড়ল (৪০), জেলে, মা আমেনা বেগম ও বাবা মন্তাজ মোড়ল, মালঞ্চ নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ওপর থাকেন, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১১ জানুয়ারি ২০১০

২৩.      হরিপদ মণ্ডল (৬০), কৃষক ও জেলে, মা সুভদ্র মণ্ডল ও বাবা ফকির চান মণ্ডল, ঠাকুরঘেরি, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৪ জানুয়ারি ২০১০

২৪.       আবদুল জব্বার (৭০), জেলে, মা অমেত্ত বিবি ও বাবা সুখচাঁদ কয়ার, টেংরাখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৪ জানুয়ারি ২০১০

২৫.       রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল (৫০), মৌয়াল ও জেলে, মা বামনী বালা মণ্ডল ও বাবা হারান চন্দ্র মণ্ডল, গোলাখালী, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

২৬.      প্রণব কুমার বিশ্বাস (৪০), চিংড়িঘের মালিক, মা পার্বতী বিশ্বাস ও বাবা দেবীরঞ্জন বিশ্বাস, গোলাখালী, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

২৭.       বসুদেব গায়েন (৪০), মৌয়াল ও বাওয়ালি, মা লক্ষবালা দাস ও বাবা কেদার গায়েন, গোলাখালী, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

২৮.      তুলসী রানী মণ্ডল (৪৫), জেলে, মা সুধানী বালা ও বাবা মহিন্দ্র রপ্তান, কালিঞ্চি, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

২৯.       বিমলা গায়েন (৪০), কৃষক ও জেলে, মা লক্ষ্মী গায়েন ও বাবা দীননাথ গায়েন, ভেটখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

৩০.      অনন্ত মণ্ডল (৭৬), গুনিন, মা পাচী বালা ও বাবা মানিকচান মণ্ডল, ভেটখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

৩১.      অনিল কুমার মণ্ডল (৬৭), বনবিবির পুঁথি পাঠক, মা ভবানী বালা দাসী ও বাবা অশোক কুমার মণ্ডল, ভেটখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

৩২.      মোহর আলী (৪৫), জেলে, মা মোমেনা খাতুন ও বাবা নঈমুদ্দিন গাজী, প্রতাপনগর, আশাশুনি, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহে তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

৩৩.      লক্ষ্মী রানী মণ্ডল (৬৬), জেলে, মা দামনী বালা ও বাবা হলধর মোড়ল, ধুমঘাট, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১০

৩৪.      পঞ্চানন পাইক (৭৩), বনবিবির প্রতিমা কারিগর, মা আরতী পাইক ও বাবা বলরাম পাইক, আড়পাঙ্গাশিয়া, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১০

৩৫.      নূরুল ইসলাম মোল্লা (৭২), মৌয়াল ও ঠেংনা করতে জানেন, মা রূপভান বিবি ও বাবা জয়নাল মোল্লা, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৪ মার্চ ২০১০

৩৬.     নেপাল চন্দ্র মণ্ডল (৪৫), বনবিবি পূজা আয়োজক, মা আমোদী দাসী ও বাবা সন্যাসী

মণ্ডল, কলুখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৬ মার্চ ২০১০

৩৭.      উর্মিলা সর্দার (৫৮), জেলে, মা ফেলী মণ্ডল ও বাবা অধর মণ্ডল, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৭ মার্চ ২০১০

৩৮.     অধীর চন্দ্র মুন্ডা (৭০), জেলে ও দিনমজুর, মা সহচরী দাসী ও বাবা নয়ন মুন্ডা, চুনো, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৮ মার্চ ২০১০

৩৯.      খগেন্দ্রনাথ মুন্ডা (৭০), গুনিন ও কবিরাজ, মা ইচ্ছামতী মুন্ডা ও বাবা হরিপদ মুন্ডা, চুনো, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৯ মার্চ ২০১০

৪০.       ধর্মদাস মুন্ডা (৭০), দিনমজুর ও জেলে, মা দুগ্গো দাসী মুন্ডা ও বাবা অখিল মুন্ডা, চুনো, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৮ মার্চ ২০১০

৪১.       অবিনাশ মুন্ডা (৮০), দিনমজুর ও কৃষক, মা ক্ষ্যান্তদাসী মুন্ডা ও বাবা ভৃগুরাম মুন্ডা, চুনো, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৮ মার্চ ২০১০

৪২.       রবীন্দ্র মুন্ডা (৫০), দিনমজুর ও জেলে, মা বাহামনি মুন্ডা ও বাবা নিতাই মুন্ডা, দাঁতিনাখালী হুলো, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৯ মার্চ ২০১০

৪৪.       সুশীল মণ্ডল (৮২), কবিরাজ ও বাঘে ধরা মানুষের চিকিত্সক, মা লক্ষ্মীবালা মণ্ডল ও বাবা মণীন্দ্র মণ্ডল, পূর্ব কালিনগর (গাভা), মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৯ মার্চ ২০১০

৪৪.       রুহুল আমিন (৭৬), সাজুনী, মা মুর্শিদা বিবি ও বাবা মান্নান মোল্লা, দক্ষিণ কদমতলা, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩১ মার্চ ২০১০

৪৫.       অজেদ আলী খান (৭৭), মৌয়াল, মা নবীজান বিবি ও বাবা মুখা খান, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৪৬.      সাখাত শেখ (৭০), মৌয়াল, মা আদরি বিবি ও বাবা মোলাম শেখ, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৪৭.       নূর আহম্মদ ঢালী (৪০), মৌয়াল, মা আলেয়া বেগম ও বাবা নূরহুদ ঢালী, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৪৮.      শহীদুল গাজী (৩৭), মৌয়াল, মা সফরুন নেছা ও বাবা রাশেদ গাজী, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৪৯.      মোনাজাত ঢালী (৬৫), মাঝি, মা রূপভান ও বাবা কালাচান ঢালী, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৫০.       ঈমান আলী শেখ (৬০), মৌয়াল, মা কাঞ্চন বিবি ও বাবা মালেক শেখ, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৫১.       মহব্বত আলী মোড়ল (৬৫), সাজুনী, মা রূপজান বিবি ও বাবা এন্তাজ মোড়ল, চাঁদনীমুখা, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৫২.       মোনাজাত ঢালী (৭৫), মৌয়াল, মা ফুলন বিবি ও বাবা মছলেম ঢালী, চকবারা-খলসেবুনিয়া, ১২ নম্বর গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ এপ্রিল ২০১০

৫৩.      আবদুর রশীদ (৫০), মৌয়াল, মা জহুরা খাতুন ও বাবা দবিরুদ্দীন গাজী, বিড়ালাক্ষী, আঁটুলিয়া ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২ এপ্রিল ২০১০

৫৪.       কেরামত সরদার (৭৫), মৌয়াল, মা আলেকজান বিবি ও বাবা কওছার সরদার, ধূমঘাট, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২ এপ্রিল ২০১০

৫৫.       নাছিমা বেগম (৩০), দিনমজুর ও জেলে, মা নবিছা বিবি ও বাবা জিয়াদ গাজী, ছোট ভেটখালী (যতীন্দ্রনগর), মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ মে ২০১০। পরের দিন তিনি বাঘের কামড়ে মারা যান।

৫৬.      শ্রী হরিপদ মণ্ডল (৪৫), জেলে, মা রাধারানী মন্ডল ও বাবা কালীপদ মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ মে ২০১০। ১৭ মে ২০১০ তিনি বাঘের কামড়ে মারা যান।

৫৭.       মো. মজিবর গাজী (৩৭), জেলে, মা সায়রা বিবি ও বাবা ওমর আলী, কলবাড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৫ মে ২০১০। বাঘের কামড়ে চিকিত্সাধীন অবস্থায় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়।

৫৮.      আমেনা বিবি (৫০), জেলে, মা সারা বিবি ও বাবা ছবেদ সর্দার, পানখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ জুন ২০১০।

৫৯.      জের মোড়ল (৬০), নৌকার কারিগর, মা লাইলা বিবি ও বাবা জের আলী মোড়ল, ভামিয়া, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ জুন ২০১০।

৬০.      ইয়াসীন সর্দার (৪০), মৌয়াল, মা সোনাভানু সর্দার ও বাবা নূরআলী সর্দার, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ জুন ২০১০।

৬১.      আবু সামা (৪০), মৌয়াল, মা ইসলাম বিবি ও বাবা আবদুল গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ জুন ২০১০।

৬২.      ছাবিরুন নেছা (৪৫), জেলে, মা আদারি বিবি ও বাবা রহমান সর্দার, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ জুন ২০১০।

৬৩.     আরশাদ সর্দার (৬০), মৌয়াল, মা মান্দারী বিবি ও বাবা দিদার বক্স সর্দার, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ জুন ২০১০।

৬৪.      আসাদুজ্জামান (২৫), জেলে, মা নূরজাহান বিবি ও বাবা আনার গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ জুন ২০১০।

৬৫.      সোনাভানু বিবি (৭০), জেলে, মা ফুলমতী গায়েন ও বাবা মালেক গায়েন, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৫ জুন ২০১০।

৬৬.     খদিজা বিবি (৫০), কবিরাজ, মা লাইলা খাতুন ও বাবা মান্দার গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৫ জুন ২০১০।

৬৭.      কেনা মোড়াল (৬০), জেলে, মা বৃন্দে দাসী ও বাবা যাদব মোড়ল, যতীন্দ্রনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৬ মে ২০১০। ২৬ মে ২০১০ তারিখে বাঘের কামড়ে মারা যান।

৬৮.     পরিতোষ মুন্ডা (৩৪), জেলে, মা শুকরি রানী মুন্ডা ও বাবা রামচরণ মুন্ডা, কালিঞ্চি, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ জানুয়ারি ২০১১।

৬৯.      মায়ারানী কাহার (৪৬), কাঁকড়াশিকারি এবং বংশগতভাবে পালকিবাহক, মা বিজলী কাহার ও বাবা কৃষ্ণপদ কাহার, বুড়িগোয়ালিনী আশ্রয়ণ প্রকল্প, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৬ অক্টোবর ২০১১

৭০.       মজিদ পাঁড় (৫০), জেলে, মা রুপি পাঁড় ও বাবা আজগর পাঁড়, সিংহরতলী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা, তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ অক্টোবর ২০১১

৭১.       নীলকান্ত মুন্ডা (৫০), জেলে ও দিনমজুর, মা গৌরী দাসী মুন্ডা ও বাবা ভুটুক মুন্ডা, মহসিন সাহেবের হুলো, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ অক্টোবর ২০১১

৭২.       সীতা রানী সর্দার (৪৫), জেলে, মা বালা চৌকিদার ও বাবা অমূল্য চৌকিদার, সিংহরতলী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ জুলাই ২০০৯

৭৩.      সন্তোষ গাইন (৫০), জেলে, মা জংগুরী গাইন ও বাবা গৌরপদ গাইন, সিংহরতলী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ জুলাই ২০০৯

৭৪.       রফিকুল গাজী (৪৮), জেলে, মা জামিরুন নেছা ও বাবা মানিকচান গাজী, সিংহরতলী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ জুলাই ২০০৯

৭৫.       রিয়াজুল মোড়ল (৫০), সাজুনী, মা নূরনেছা ও বাবা আক্কাস মোড়ল, সিংহরতলী, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ জুলাই ২০০৯

৭৬.      সখিচরণ মুন্ডা (৫০), জেলে, মা ফুটকী মুন্ডা ও বাবা সমরা মুন্ডা, তারানীপুর, রমজাননগর ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৮ জুলাই ২০০৯।

৭৭.       আবদুল মজিদ (৫৬), মৌয়াল, মা সূর্যভান বিবি ও বাবা মুনসুর আলী গাজী, ডুমুরিয়া, গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৯ জুলাই ২০০৯।

৭৮.      মোসলেম গাজী (৭০), মৌয়াল, মা ভেজালী বিবি ও বাবা গোলাপদী গাজী, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৯ জুলাই ২০০৯।

৭৯.      রেণু মণ্ডল (৫৫), জেলে, মা বাতাসী মণ্ডল ও বাবা বিরেন মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ আগস্ট ২০০৯

৮০.      শ্রীপদ মণ্ডল (৬০), মৌয়াল, মা আলী বালা ও বাবা বিহারী মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩ আগস্ট ২০০৯

৮১.      শরবানু (৪০), জেলে ও দিনমজুর, মা করিমন নেছা ও বাবা নওশের কয়ার, সোরা, গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৪ আগস্ট ২০০৯।

৮২.      আবদুল মজিদ (৫৬), মৌয়াল, মা সূর্যভান বিবি ও বাবা মুনসুর আলী গাজী, ডুমুরিয়া, গাবুরা ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৯ জুলাই ২০০৯

৮৩.     মুকছুস আলী (৭৬), মৌয়াল, মা সলক বিবি ও বাবা দুর্লভ গাজী, বালিয়াডাঙ্গা, আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৭ আগস্ট ২০০৯

৮৪.      মো. ইউনুস আলী গাজী (৬০), মৌয়াল, মা ফিরোজা বিবি ও বাবা বেলায়েত হোসেন গাজী, ফতেকাঠি, বাগালি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৬ আগস্ট ২০০৯

৮৫.      আলম সরদার (৭০), সাজুনী, মা চান্দ বিবি ও বাবা আবদুল কাদের সরদার, বালিয়াডাঙ্গা, আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৭ আগস্ট ২০০৯

৮৬.     সৃষ্টিধর সানা (৭০), মৌয়াল, মা ভাদরী সানা ও বাবা তাঁতীরাম সানা, কাঁটাখালী, আমাদি ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৭ আগস্ট ২০০৯

৮৭.      জয়দেব মণ্ডল (৭৫), জেলে ও মৌয়াল, মা অম্বিকা মণ্ডল ও বাবা ত্রৈলক্য মণ্ডল, পশুরতলা, বেদকাশী ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৮  আগস্ট ২০০৯

৮৮.     লিটু খাঁ (৪৬), গরানের ছিটে বাওয়ালি, মা বেগম বিবি ও বাবা আবদুল আজিজ খান, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ৩১ অক্টোবর ২০০৯

৮৯.     কেলে সাহেব/মোহাব্বত শেখ (৬৫), জেলে, মা সবুরজান ও বাবা কাশেম শেখ, মূল বাড়ি রামপাল, বাগেরহাট। দুবলারচরের আলোরকোলে রাসমেলায় আলাপ হয়। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ নভেম্বর ২০০৯

৯০.      পরিতোষ মণ্ডল (৬৫), বনবিবির পূজারি ও জেলে, মা পাচিবালা মণ্ডল ও বাবা চারু মণ্ডল, ওলা, বাগালী ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। দুবলারচরের আলোরকোলে রাসমেলায় আলাপ হয়। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ নভেম্বর ২০০৯

৯১.      প্রভাষ ঢালী (৪০), জেলে, মা করুণা রানী ঢালী ও বাবা তারপদ ঢালী, দুর্গাপুর, খাজুরা ইউনিয়ন, আশাশুনি, সাতক্ষীরা। দুবলারচরের আলোরকোলে রাসমেলায় আলাপ হয়। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১ নভেম্বর ২০০৯

৯২.       কৃষ্ণপদ মণ্ডল (৭৮), কৃষক, মা সাবিত্রী বালা মণ্ডল ও বাবা গণেশ চন্দ্র মণ্ডল,

বড়কূপট, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৪ আগস্ট ২০০৯।

৯৩.      ওমর সর্দার (৫০), বাওয়ালি ও ঘটক, মা নেদি ও বাবা ওমর সর্দার, ডুমুরিয়া, গাবুরা ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৮ আগস্ট ২০০৯

৯৪.      লুত্ফর রহমান গাজী (৫৭), মৌয়াল, মা কিনে বিবি ও বাবা আবদুল কাদের গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৬ জুলাই ২০০৯

৯৫.      মো. শাহাবুদ্দিন মোড়ল (৬০), সাজুনী, মা ভানু বিবি ও বাবা পচাব্দী মোড়ল, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৬ জুলাই ২০০৯

৯৬.      মো. মুজিবর রহমান গাজী (৪৭), মধুকাটা মৌয়াল, মা কিনে বিবি ও বাবা আবদুল কাদের গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৬ জুলাই ২০০৯

৯৭.      মো. শামসুর রহমান গাজী (৪৬), আড়িটানা মৌয়াল, মা কিনে বিবি ও বাবা আবদুল কাদের গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৬ জুলাই ২০০৯

৯৮.     আব্বাস উদ্দীন গাজী (৪৫), সাজুনীর সহকারী, মা সুফিয়া বেগম ও বাবা ইসলাম গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৭ জুলাই ২০০৯

৯৯.      আবিয়ার গাজী (৫৭), কড় বাওলে, মা সুন্দরী বিবি ও বাবা ওমর গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৭ জুলাই ২০০৯

১০০.    ইব্রাহীম শেখ (৬০), কাটনি বাউলে, মা এলেমান খাতুন ও বাবা এলাহী বকস শেখ, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৭ জুলাই ২০০৯

১০১.    আ. সালাম গাজী (৫৫), মৌয়াল, মা চন্দ্রভান বিবি ও বাবা বকস গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৭ জুলাই ২০০৯

১০২.     ওমর ফারুক সরকার (৪৫), আড়িটানা মৌয়াল, মা নূরজাহান বিবি ও বাবা আমজাদ সরকার, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৭ জুলাই ২০০৯

১০৩.    নিমাই বিশ্বাস (৪৭), কাটনি বাউলে, মা তারাপদ বিশ্বাস ও বাবা উষা রানী বিশ্বাস, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১০

১০৪.    মহেন্দ্র মণ্ডল (৫৫), ছাটা দেওয়া, মা বিনোদিনী মণ্ডল ও বাবা সুধীর মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১০

১০৫.    রামচন্দ্র মণ্ডল (৫০), বারছাটা মৌয়াল, মা সন্ধ্যা রানী মণ্ডল ও বাবা মদন মণ্ডল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১০

১০৬.    আবদুর রাজ্জাক মোড়ল (৫১), ছাটা বাউলে, মা ছরিমন বিবি ও বাবা আবদুল জব্বার, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১০

১০৭.    ইদ্রিস আলী মোড়ল (৫৩), বারছাটা বাউলে, মা ছরিমন বিবি ও বাবা উষা রানী বিশ্বাস, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৩ মার্চ ২০১০

১০৮.   অজিয়ার মোড়ল (৫০), ছাটা দেয়া বাউলে, মা মনোয়ারা বিবি ও বাবা আবদুল বারী মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ মার্চ ২০১০

১০৯.    রহিম বক্স গাইন (৭৫), মাঝি, মা জয়গুন বিবি ও বাবা জাবক্স গাইন, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ মার্চ ২০১০

১১০.    সন্যাসী বিশ্বাস (৪১), আড়িঅলা, মা উষা রানী ও বাবা তারাপদ বিশ্বাস, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ মার্চ ২০১০

১১১.    শফিকুল ইসলাম শেখ (৪৫), কড় ছাটা বাউলে, মা ছফুরা বিবি ও বাবা আবু তালেব শেখ, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ মার্চ ২০১০

১১২.     ছবেদ আলী গাজী (৫০), আড়িঅলা মৌয়াল, মা রহিমা খাতুন ও বাবা জিয়াত আলী গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৩.    গোলাম মোস্তফা সরদার (৪৫), মধুকাটা বাউলে, মা দুলজাহান বিবি ও বাবা আহম্মদ সরদার, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৪.    আনোয়ার গাজী (৬০), মাঝি, মা রওশনআরা ও বাবা নূর ইসলাম গাজী,

দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৫.    মো. লুত্ফর রহমান মোড়ল (৫৭), সাজুনী, মা ভানু বিবি ও বাবা পচাব্দী মোড়ল, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৬.    আনার গাজী (৬০), মাঝি, মা আলকি বিবি ও বাবা নূরানী গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৭.    কওছার আলী গাজী (৪৫), কাটনি বাউলে, মা রহিমা খাতুন ও বাবা জিয়াত আলী গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৮.   ইয়াসিন বিল্লাল সর্দার (৫০), আড়িঅলা মৌয়াল, মা রহিমা খাতুন ও বাবা জিয়াত আলী গাজী, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১১৯.    খালেক সর্দার (৩৫), কাটনি বাউলে, মা আমেনা খাতুন ও বাবা সুরাত সর্দার, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১০ জানুয়ারি ২০০৯

১২০.     মো. আকির হামজা (৩৫), মৌয়াল, মা আনোয়ারা বিবি ও বাবা শামসুর রহমান মোল্লা, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২১.     আবদুর রহমান সর্দার (৪৫), মৌয়াল, মা মরিয়ম বেগম ও বাবা কেরামত সর্দার, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২২.     কেরামত সর্দার (৮০), কাটনি বাউলে, মা আলেকজান বিবি ও বাবা বক্স সর্দার, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২৩.    আনোয়ার হোসেন (৫৫), আড়িটানা মৌয়াল, মা আনোয়ারা খাতুন ও বাবা সামপুর মোল্লা, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২৪.     এবাদুল গাজী (৭৫), ছাটা দেয়া, মা ফুলি বেগম ও বাবা ঝয়নুদ্দিন, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২৫.     তরিকুল ইসলাম (৪৭), ডিঙে লায়ে/মাঝি, মা জবেদা বিবি ও বাবা ফয়েজ উদ্দীন গাজী, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২৬.    মজিদ গাজী (৫০), আড়িঅলা, মা জবেদা বিবি ও বাবা ফয়েজ উদ্দীন গাজী, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২৭.     সামসুর মোল্লা (৬৭), বারছাটা মৌয়াল, মা মুক্ত বিবি ও বাবা মোলাম্বী মোল্লা, হরিনগর মোল্লাপাড়া, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০১১

১২৮.    আজগর আলী শেখ (৫০), কাটনি বাউলে, মা ভানু বিবি ও বাবা মসলেম শেখ, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১২৯.    মহসিন গাজী (৪৫০), মৌয়াল, মা মর্জিনা বেগম ও বাবা জহর আলী গাজী, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩০.    নজু জমাদ্দার (৬৫), মৌয়াল, মা বেলো বিবি ও বাবা আজিরুদ্দিন সমাদ্দার, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩১.    লুত্ফর আলী জমাদ্দার (৬৩), মৌয়াল, মা বেলো বিবি ও বাবা আজিরুদ্দিন সমাদ্দার, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩২.    সাইদুল গাজী (৫২), মৌয়াল, মা তারা বিবি ও বাবা নভেল গাজী, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩৩.   মোকসেদ গাজী (৪৭), মৌয়াল, মা জয়গুন বিবি ও বাবা মুনসুর গাজী, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩৪.    সাবুদ গাইন (৫০), কাটনি, মা ফুলজান বিবি ও বাবা হযরত আলী গাইন, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩৫.    আবদুল বারিক গাজী (৭৫), মৌয়াল, মা তারামন বিবি ও বাবা মোহর আলী গাজী, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩৬.   মজিদ সর্দার (৫২), মৌয়াল, মা গুনা বিবি ও বাবা মান্দার সর্দার, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩৭.    শহীদুল ইসলাম মোড়ল (৩৬), কাটনি বাউলে, মা আমেনা বিবি ও বাবা মুনসুর মোড়ল, নীলডুমুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১১

১৩৮.   অজিত সর্দার (৭৫), ডিঙি লায়ে মৌয়াল, মা দুর্গা রানী ও বাবা যতীন্দ্রনাথ সর্দার, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৩৯.    মন্টুরঞ্জন জোয়ারদার (৪০), কাটনি বাউলে, মা রেণুকাবালা জোয়ারদার ও বাবা গীরেন্দ্রনাথ জোয়ারদার, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪০.    সুভাষ মণ্ডল (৫০), মৌয়াল, মা ভারতী রানী ও বাবা সুধন্য মণ্ডল, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪১.    আবদুল আলিম মোল্লা (৩৫), মৌয়াল, মা মমেনা বেগম ও বাবা ছবেদ আলী, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪২.     পাতিরাম মণ্ডল (৬০), আড়িঅলা, মা বৃন্দেরানী মণ্ডল ও বাবা অনন্ত মণ্ডল, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪৩.    হরিপদ মণ্ডল (৫৬), আড়িঅলা, মা বৃন্দেরানী মণ্ডল ও বাবা অনন্ত মণ্ডল, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪৪.    সুবল চন্দ্র মণ্ডল (৭০), বাউলে, মা ময়না রানী মণ্ডল ও বাবা উপেন মণ্ডল, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪৫.    শাহাবাজ গাজী (৫৫), বারছাটা বাউলে, মা মতি বেগম ও বাবা হামে গাজী, চুনকুড়ি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০০৯

১৪৬.    কওছার মোড়ল (৬৭), কাটনি বাউলে, মা সোনাভান বিবি ও বাবা মোহাম্মদ আলী

মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০

১৪৭.    মাকফুর রহমান মোড়ল (৬৬), কাটনি বাউলে, মা সোনাভান বিবি ও বাবা মোহাম্মদ আলী মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০

১৪৮.   নওশের মোড়ল (৬৫), মাঝি, মা সোনাভান বিবি ও বাবা মোহাম্মদ আলী মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০

১৪৯.    মো. আনছার মোড়ল (৬৪), বারছাটা, মা সোনাভান বিবি ও বাবা মোহাম্মদ আলী

মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০

১৫০.    সিরাজুল ইসলাম মোড়ল (৩৫), আড়িঅলা, মা মিনা বেগম ও বাবা কওছার

মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০

১৫১.    রজব আলী মোড়ল (৬০), আড়িঅলা, মা সোনাভান বিবি ও বাবা মোহাম্মদ আলী

মোড়ল, মীরগাঙ, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০

১৫২.     মহব্বত আলী (৫০), ছাটা দেওয়া বাউলে, মা খদেজা বিবি ও বাবা আরিফ গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৩.    আমিরুল ইসলাম (৪৬), আড়িঅলা, মা আমেনা খাতুন ও বাবা জিয়াদ আলী গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৪.    মো. ইব্রাহীম গাজী (৪০), ছাটা দেওয়া বাউলে, মা ফতেমা বিবি ও বাবা এলাহী বক্স গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৫.    জামাল গাজী (৩৫), কাটনি বাউলে, মা শামসুন্নাহার বেগম ও বাবা রুহুল আমিন গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৬.    মোসলেম আলী গাজী (৬৫), আড়িঅলা, মা পচি বিবি ও বাবা করিম বক্স, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৭.    মজিবর রহমান (৫০), আড়িঅলা, মা টরি বিবি ও বাবা আবুল কাসেম গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৮.   শুকুর আলী গাজী (৪৬), কড় ছাটা বাউলে, মা সুখমনি খাতুন ও বাবা আরশাদ আলী গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৫৯.    আফসার আলী গাজী (৫৪), মৌয়াল, মা হামিদা বেগম ও বাবা মোহাম্মদ আলী গাজী, দক্ষিণ কদমতলা হরিনগর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

১৬০.    ননী দাসী (৬০), জেলে, মা ময়না দাসী ও বাবা মনু সর্দার, কলবাড়ি জেলেপাড়া, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১১

চলতি আলাপে উপস্থাপিত সব তথ্য, উদাহরণ ও বিবরণের মালিক সুন্দরবনের বনজীবী জনগণ। এসব জ্ঞান ও তথ্যের কোনো একতরফা বাণিজ্যিক ব্যবহার মেধাস্বত্ব অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি মেধাস্বত্ব অধিকার লঙ্ঘের কোনো ঘটনা ঘটে, তবে উপরিউক্ত প্রত্যক্ষ তথ্যদাতাগণ আইনগতভাবে সুন্দরবন-সম্পর্কিত লোকায়ত জ্ঞানের অধিকার সুরক্ষায় আইনি লড়াই সংগঠনের অধিকার রাখেন।