দৃষ্টি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

নিয়মিত ক্যাম্পাস শ্যাডোতে যাই। চা খাই, গল্প-আড্ডা করি। একদিন খেয়াল করলাম, চশমা পরা একজন মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দোহারা গড়ন, দুধে আলতা গায়ের রং। এলোচুলে মাঝেমধ্যে হাওয়া এসে লাগে। কখনো কখনো বান্ধবীদের খুনসুটিতে হেসে ওঠে সে। চা খেতে খেতে ফটোকপির খোঁজখবর নেয়। বোধ হয় ভীষণ পড়ুয়া। এক দিন দুই দিন নয়, টানা পাঁচ-পাঁচটা দিন তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ও অমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কেন? সে কি আমায় পছন্দ করে ফেলেছে? আমারও যে তাকে ভীষণ ভালো লেগে গেল। প্রহর গুনি, কবে তাকে একা পাব।
একদিন দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেল। একা পাওয়া গেল তাকে। চারপাশে কেউ নেই; নির্জন ক্যাম্পাস শ্যাডো এলাকা। সে কি আমার অপেক্ষায়! এখনো যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব কথা বলতে ইচ্ছে হলো। পাশে যেতেই সে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বলে—ভাই, ফটোকপির দোকান কি বন্ধ?
এই দিনদুপুরে এই মেয়ে এটা কী জিজ্ঞেস করল! এত কথা থাকতে কিনা জিজ্ঞেস করে, ফটোকপির দোকান খোলা আছে কি না, তা-ও দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে! মনে মনে আমি অবশ্য খুশিই হলাম কিন্তু প্রকাশ করার ভাষা বিধাতা আমাকে কম দিয়েই পাঠিয়েছেন। কিছু একটা জবাব দিতে হবে এই ভাবনাই তখন আমার মস্তিষ্কজুড়ে। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে হয়তো উত্তর দেওয়া যায়, কিন্তু তাহলে সংলাপের সেখানেই যতি পড়ে। নিজের ওপর যখন মেজাজ খারাপ হচ্ছে, তখন দেখি সে আনমনে হাঁটতে শুরু করেছে। আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে বলি, ফটোকপির দোকান কিন্তু বন্ধ। আমার এতক্ষণ পর এমন অগোছালো কথা শুনে সে হেসে ফেলে। এমন সুর করে কেউ হাসতে পারে আমার জানা ছিল না। আমার সুর ও সংগীতের এত দিনের দখল এই এক হাসিতেই শেষ।
হাসি থামিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে বলে, ফটোকপির দোকান যে খোলা নেই, সে আমি বুঝতে পেরেছি। আমি তো চোখে দেখি না, তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। পরে ভাবলাম, আপনিও হয়তো আমার মতোই। তারপর আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
নিদেল শরিফ