ধর ব্যাটাকে!

আঁকা: আসিফুর রহমান
আঁকা: আসিফুর রহমান

সারা দেশের চিত্র যা-ই হোক, আমাদের জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর তো দারুন জনপ্রিয় শব্দ। শুনলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। যা হোক হরতাল-অবরোধের তোয়াক্কা না করেই চলে এল ২০১৪ সাল। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম, থার্টি ফার্স্ট নাইটে হবে গ্র্যান্ড পার্টি। কিন্তু সবার বাড়ি থেকে জারি করল কারফিউ! বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ।
কী আর করা! অগত্যা থার্টি ফার্স্ট নাইটের বদলে থার্টি ফার্স্ট ইভিনিংয়ের আয়োজন করা হলো। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যাকে বলে। থার্টি ফার্স্ট ইভিনিংয়ের আয়োজনে কোনো কমতি নেই। দুপুরের পর কেনাকাটা করলাম আমরা ১২ বন্ধু মিলে। সব কেনাকাটা শেষে কিনতে গেলাম মুরগি। ব্রয়লার নয়, পাকিস্তানিও নয়, কিনলাম খাঁটি দেশি মুরগি।
সব আয়োজন শেষে এবার মুরগি কাটার পালা। শুভ্রর হাতে চাকু, আমি ধরলাম মুরগির পা আর ডানা। কিছু না ভেবেই শুভ্র নামিয়ে দিল মুরগির গলা। এর মধ্যে বাকি বন্ধুরা দা, বঁটি ও চাকু নিয়ে রেডি, যেন বড় মহিষ জবাই হচ্ছে। দ্বিতীয় মুরগিটাকে খুব আদর-যত্নে ধরে আছি। শুভ্রও রেডি চাকু হাতে। এর মধ্যে কেমন করে যেন আমার হাত থেকে পালিয়ে গেল পাজি মুরগিটা! দিল এক দৌড়। আমরাও দৌড়াতে লাগলাম মুরগির পেছনে। পাড়া পেরিয়ে আমরা গেলাম বাজারে। যার হাতে যা ছিল তা নিয়েই সবাই চলে এসেছে। শুভ্রর হাতে চাকু, প্রান্তর হাতে বঁটি, রাহাদের হাতে দা। হামীম আখ খাচ্ছিল, সেই আখদণ্ড নিয়েই চলে এসেছে মুরগি ধরতে। আশপাশের সব দোকান দেখি দড়াম দড়াম করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার সব মানুষ দেখি রাস্তা ফাঁকা করে আমাদের মুরগি ধরতে সাহায্য করছে। সব যানবাহনও দেখি থেমে গেছে। আমরা আরও উত্তেজিত হয়ে মুরগির পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। ‘ধর ব্যাটাকে! ধর!’—চিৎকার করতে করতে দৌড়াচ্ছি আমরা। কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমাদের পেছনে বুট পরে কেউ দৌড়াচ্ছে।
এর পরের কথা আর মনে করতে চাই না!
 রুদ্র প্রামাণিক
জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট