হরতাল দিবি কিনা বল?

আঁকা: জুনায়েদ
আঁকা: জুনায়েদ

দৃশ্য ১
বিরোধী দল আনারস পার্টির টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে সফলভাবে পিকেটিং করে বাড়ি ফিরল আনারস পার্টির নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও নায়ক মানিক।
মানিক: মা! মা!
মানিকের মা: কী রে খোকা? এতক্ষণে আসার সময় হলো?
মানিক: মা, আজ তোমাকে একটা খুশির সংবাদ শোনাব।
মানিকের মা: কী, খুশির সংবাদ, বাবা?
মানিক: মা, আজ আমি পিকেটিং করে চারটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছি!
মানিকের মা: সত্যি? সত্যি বলছিস, খোকা? আজ আমার অনেক খুশির দিন। আজ যদি তোর বাবা বেঁচে থাকত! (এখানে বেদনা ও আনন্দের সংমিশ্রিত ভেঁপু বাজবে)

দৃশ্য ২
(৪৮ ঘণ্টা হরতালের পরদিন যখন মানিক আনারস পার্টির প্রধান, বিশিষ্ট শিল্পপতি কাশেম চৌধুরীর বাসায় যায়, তখন তার সঙ্গে ধাক্কা লাগে চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে পিংকির)
পিংকি: ইউ ইডিয়ট! ননসেন্স! দেখে পথ চলতে পারো না?
মানিক: ইউ শাটআপ মেম সাহেব, আপনি দেখে পথ চলতে পারেন না?
পিংকি: আরেকবার যদি এই রকম পথ দেখে না চলো, তাহলে কিন্তু আমি হরতাল ডাকতে বাধ্য হব।
মানিক: আপনার এই ধরনের ইস্যুবিহীন হরতাল কেউ মানবে না, মেম সাহেব!

দৃশ্য ৩
(কাশেম সাহেবের বাড়ির সিঁড়ির সামনে মানিক দাঁড়িয়ে। সিঁড়ি বেয়ে ওপর থেকে নেমে আসছেন কাশেম সাহেব)
কাশেম চৌধুরী: ওয়েলকাম ওয়েলকাম, ইয়াং ম্যান! কাল তুমি হরতালে চারটা গাড়িতে আগুন দিয়েছ। তোমার সাহসিকতায় আমি মুগ্ধ, মানিক!
মানিক: দোয়া করবেন, স্যার।
কাশেম চৌধুরী: অবশ্যই, অবশ্যই!
(কলেজে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল পিংকি)
পিংকি: ড্যাডি, আমি কলেজে যাচ্ছি।
পিংকি: ইউ! (মানিককে দেখে পিংকি অবাক)
কাশেম চৌধুরী: কী রে, তুই মানিককে চিনিস নাকি? ও হচ্ছে মানিক। তুই বিশ্বাস করতে পারবি না, ও কাল হরতালে চারটা গাড়িতে আগুন দিয়েছে।
পিংকি: হুম্... (মুখে বিরক্তিভাব)
কাশেম চৌধুরী: তুই কলেজে যাচ্ছিস তো, ও গাড়িতে তোর সঙ্গে যাবে।
পিংকি: ড্যাডি, আমি একাই যেতে পারব। আমার সঙ্গে কাউকে যেতে হবে না।
কাশেম চৌধুরী: না মা, ও অনেক সাহসী ছেলে। ও সঙ্গে থাকলে তোর আর কোনো ভয় নেই। এমনিতেই জামরুল পার্টির বদমাশ কালিয়াটা তোর পেছনে লেগে আছে। কখন কী করে ফেলে কিচ্ছু বলা যায় না। তুই মানিককে সঙ্গে নিয়ে গেলে আমি নিশ্চিন্তে থাকব।
(কিছু করতে না পেরে মানিককে সঙ্গে নিয়ে পিংকির বিরক্তিসহ প্রস্থান)

দৃশ্য ৪
(গাড়ি থেকে মানিক নামল, তারপর পিংকির দরজা খুলে দিল। এদিকে দৃশ্যটা দেখে ফেলল পিংকির সখীরা)
পিংকি: হাই!
পিংকির বান্ধবী: কী রে পিংকি, ও কে রে তোর গাড়িতে? হুম্? বেশ হ্যান্ডসাম তো!
পিংকি: আর বলিস না! ড্যাডির পার্টির ছেলে! ড্যাডি জোর করে আমার সঙ্গে দিয়ে দিল। উফ্! ডিসগাস্টিং!
(পিংকি আর কিছু না বলে সবাইকে নিয়ে ক্লাসে গেল)

দৃশ্য ৫
(কলেজ থেকে গাড়িতে করে বাসায় ফিরছে মানিক আর পিংকি। তখন তাদের গাড়ির ওপর আক্রমণ করল জামরুল পার্টির কালিয়া ও তার দল)
মানিক: মেম সাহেবের হাত ছেড়ে দে, কালিয়া!
কালিয়া: হু হা হা হা! আরে, এই ছোকরা বলছে কী রে?
মানিক: তবে রে...ইয়াআআআআ ঢিশুয়াআআআআ...
(মানিকের মার খেয়ে কালিয়ার সদলবলে পলায়ন)
মানিক: গাড়িতে উঠুন মেম সাহেব।
পিংকি: মানিক, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
মানিক: আপনাদের মতো উঁচু দালানের মানুষেরা আমাদের মতো গরিব পিকেটারদের আর কতটুকুই বা বুঝবে!
পিংকি: মানিক, অ্যাম সরি! আমাকে ক্ষমা করো।

দৃশ্য ৬
(রাত। যার যার বিছানায় শুয়ে মানিক আর পিংকি বুঝতে পারল যে তারা একজন আরেকজনের প্রেমে পড়েছে। রাতে কেউই ঘুমাতে পারল না। শুধু বালিশ নিয়ে এপাশ-ওপাশ করল)

আঁকা: জুনায়েদ
আঁকা: জুনায়েদ

দৃশ্য ৭
(মানিকের হাতে কালিয়ার মার খাওয়ার প্রতিবাদে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকল জামরুল পার্টি। হরতালবিরোধী মিছিল শেষে কাশেম সাহেবের বাসায় যাওয়ার পর মানিককে ছাদে নিয়ে গেল পিংকি)
পিংকি: মানিক, আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
মানিক: কী কথা মেম, সাহেব?
পিংকি: উফ্! তুমি আমাকে আর মেম সাহেব বলে ডাকবে না তো। এখন থেকে পিংকি ডাকবে। ঠিক আছে?
মানিক: আচ্ছা, মেম সাহেব।
পিংকি: উফ্, আবার! মানিক, শোনো, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আই লাভ ইউ, মানিক!
মানিক: না মেম সাহেব, এটা হয় না।
পিংকি: কেন হয় না?
মানিক: আপনি বড়লোক বাবার মেয়ে, আর আমি সামান্য পিকেটার। এ হয় না।
পিংকি: না মানিক, তোমাকে না পেলে আমি এখনি এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করব! (বলেই পিংকি চলে গেল ছাদের কোনায়। মানিকও পেছনে পেছনে ছুটে গেল)
মানিক: পিংকি, দাঁড়াও, দাঁড়াও!
(শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে মানিকও রাজি হয়ে গেল। তারপর বাজল একটা রোমান্টিক গান)

দৃশ্য ৮

(এদিকে বাড়ির ছাদে প্রেম করতে গিয়ে একদিন বাবার কাছে ধরা পড়ল পিংকি ও মানিক)
কাশেম চৌধুরী: মানিক, তুই বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়েছিস। তোর হাত আমি কেটে ফেলব। 
মানিক: চৌধুরী সাহেব, আমি গরিব পিকেটার হতে পারি, কিন্তু আমার আত্মসম্মানবোধ আছে। জেনে রাখুন চৌধুরী সাহেব, প্রেম পবিত্র। প্রেম মানে না গরিব-ধনী।
পিংকি: ড্যাডি, মানিকের কোনো দোষ নেই। আমি ওকে ভালোবাসি।
(তর্কের শেষে চৌধুরী সাহেবের কথামতো মানিককে বেদম মারা হলো। আর পিংকিকে আটকে রাখা হলো ঘরে)

দৃশ্য ৯

(পরদিন গোপনে ছদ্মবেশে পিংকিদের বাড়িতে গেল মানিক। তারপর ওরা পালিয়ে গেল)

দৃশ্য ১০
(এদিকে পিংকিকে না পেয়ে কাশেম চৌধুরী পরদিন হরতাল ডাকলেন আর মানিকের মাকে ধরে এনে বন্দী করে রাখলেন গুদামঘরে। তারপর ফোন করলেন মানিককে)
কাশেম চৌধুরী: মানিক, তোর প্রাণপ্রিয় মা এখন আমার হাতে বন্দী। মুহাহাহাহা! পিংকিকে ফিরিয়ে দে, নয়তো তোর মায়ের লাশ পাবি। পরে লাগাতার হরতাল ডেকেও তোর মাকে ফেরত পাবি না।

দৃশ্য ১১
(গুদামঘরের দেয়াল ভেঙে মানিক আর পিংকির প্রবেশ। তারপর শুরু হলো মারপিট।)
মানিক: ইআআআআআআ...ওয়াই ঢিশুয়াআআআ... ঢিসুম...ঢিসুম! (শেষে ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশ)
পুলিশ: হ্যান্ডসআপ! আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। তুলে নিলে আমরা হরতাল ডাকতে বাধ্য হব।
(চৌধুরী সাহেব ও তার চেলাদের ধরে নিয়ে গেল পুলিশ। পিংকি আর মানিক মায়ের কাছে ছুটে গেল। সেই রাতেই বিয়ে হলো তাদের)
শেষ দৃশ্য
(চৌধুরী সাহেব জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মানিকের বাড়িতে গেলেন। ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন সবার কাছে। তারপর তারা সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। তারপর আর কেউ হরতাল দিয়েছিল কি না, জানা যায়নি)
 কাজী সাকিব আহমেদ, সিলেট