হরতাল ও একটি অপ্রকাশিত গল্প

আঁকা: শিখা
আঁকা: শিখা

‘ভাই, এই খামটা ঢাকায় যাবে।’ কুরিয়ারের দোকানে গিয়ে বললাম আমি। লোকটা নিঃশব্দে খামটা নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঠিকানা?’ আমি ঠিকানা বললাম, ‘ভাই, এটা শুক্রবারের মধ্যে পৌঁছাবে না?’ প্রশ্ন শুনে বিস্মিত হলেন লোকটা, ‘আরে মিয়া, ১০ দিন আগের কুরিয়ার এখনো পাঠাইতে পারি নাই। আর আপনের কুরিয়ার কেমনে শুক্রবারের মধ্যে পাঠাব?’ আমার প্রশ্ন, ‘ক্যান ভাই, বৃহস্পতিবার গাড়ি যাবে না? আপনাদের গাড়ি কি নষ্ট?’
‘আরে কয় কী! গাড়ি যাইব কেমনে? বৃহস্পতিবার যে হরতাল, সেই খেয়াল আছে?’
‘ও আচ্ছা, হরতাল! জানতাম না ভাই।’
‘দেশের খবর তো কিছুই রাখেন না দেখি। কিসের খবর রাখেন তাইলে?’
‘আসলে ভাই কিছুই জানি না। আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন গল্পটা রস+আলোতে পাঠায় দিয়েন।’ বলেই আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলাম। কী ভয়ংকর লোকরে বাবা! সব সময় রেগে রেগে কথা বলে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটা ফোন এল। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বলল, ‘হ্যালো, আপনি যেই চিঠিটা কুরিয়ার করতে দিসিলেন, সেইটা তো আইজকা রাতের গাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কালকে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হরতাল। কুনু গাড়ি ছাড়তাছে না। পরের শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবার চাইলে থাক। আর না চাইলে কালকে আইসা আপনের চিঠি নিয়া যাইয়েন।’ এই বলে লোকটা সঙ্গে সঙ্গে ফোন রেখে দিলেন।
হায়! হায়! গল্প জমা দেওয়ার শেষ দিন তো রোববার! এখন কী হবে?
পরদিন সকালে দোকানটায় গিয়ে চিঠিটা ফেরত নিলাম। অন্য যত কুরিয়ার আছে সব কটিতেই খোঁজ করলাম, কোনো গাড়িই ছাড়বে না। অগত্যা গল্পটা ফেরতই নিয়ে আসতে হলো। সব রাগ গিয়ে পড়ল রস+আলোর ওপর। হরতালের সময়েই কেন ‘হরতাল’ নিয়ে পাঠকসংখ্যা বের করতে হবে! এই হরতালের জন্য আমার লেখক হওয়ার স্বপ্ন মাঠে মারা গেল। আমার গল্পটা আর রস+আলোতে ছাপাই হলো না!
 তাহমিদ আনজুম খান, রংপুর