প্রশ্ন

.
.

ছেলেবেলায় বাবাকে প্রায়ই একটা প্রশ্ন করতাম, ‘বাবা, তোমাকে ছোটবেলায় কী নামে ডাকা হতো?’
বাবা উত্তর দিতেন, ‘কেন, আমার যেটা নাম, সেই নামেই ডাকত সবাই।’
এটুকু জবাবে মন ভরত না আমার। কারণ, আমার বাবার নাম মো. নাসির উদ্দীন। যেটা শুনতেই কেমন জানি বাবা বাবা টাইপ। ছোট্ট একটা পিচ্চিকে এই নামে কীভাবে ডাকা যায়! শিশুমনের কৌতূহল।
আরেকটা কনফিউশন ছিল আমার। ‘মিষ্টি’ আর ‘মজা’ শব্দ দুটি নিয়ে। একটু ভেঙে বলি। যেমন ধরুন, আমি বলি, ‘পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে।’
কেউ কেউ বলেন, ‘এই আম দুধেভাতে খেতে ভারি মজা লাগে।’
যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় বাক্য দুটিতে কোনো ভুল নেই। মিষ্টি জিনিসটা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। আমার শিশুমনে মিষ্টি হচ্ছে শুধু একটি খাবারের নাম, যা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তাহলে মজাও একটি খাবারের নাম হওয়া উচিত। কৌতূহলী শিশুমন বাবার কাছে জানতে চাইত, ‘এই ‘‘মজা’’ নামে খাবারটি কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?’
কিন্তু এই জানতে চাওয়ার পেছনে আমার ভাবনাটা যে কী, সেটা বোঝাতে পারতাম না। তাই বাবা এটাকে নেহাত দুষ্টুমি ভেবে নিতেন।
এখন বড় হয়েছি। কৌতূহলী শিশুদের দল এখন আমাকেও অতিষ্ঠ করে। ক্লাস টু পড়ুয়া এক ছোট বোনকে পড়াচ্ছিলাম। তাকে বললাম, আমরা পৃথিবীর ভেতরে নয়, বাইরে থাকি। গ্লোব দেখিয়ে মোটামুটি ব্যাপারটা ওকে বোঝালাম।
ওর কৌতূহলী মনে বিষয়টা যে কতটা তৃষ্ণার সৃষ্টি করেছে, সেটা সেদিন বুঝিনি। আরেক দিন সে জিজ্ঞেস করল যে মাটির নিচে পানি থাকে কি না। বলেছিলাম—থাকে। আর কিছু থাকে কি না, সেটা ও আমাকে জিজ্ঞেস করেনি।
কিন্তু সে কল্পনা করে নিল যে গ্লোবের ভেতরে সবটুকু অংশে পানি। আর আকাশে যেমন প্লেনে করে আমেরিকা যাওয়া যায় তেমনি করে মাটির নিচ দিয়ে পানিতে জাহাজ চালিয়েও আমেরিকা যাওয়া যায়। এবার সে তার অর্জিত নতুন জ্ঞান আর কল্পিত সৃষ্টিকে সত্যি বলে তার স্কুলের বন্ধুমহলে চালিয়ে দিতে লাগল আমার নামসহ। কিছুদিন পর ওর স্কুলে গিয়ে সব শুনে আমি তো থ বনে গেলাম।
নওরীন নাহার
খুলনা।