মুকুলেই ঝরে পড়ার গল্প

.
.

প্রায় ১৭ কোটি টাকা চুরি করে সোহেল ধরা পড়লেন র‌্যাবের হাতে। ঘটনা কিন্তু এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। সোহেল যদি ধরা না পড়তেন, তাহলে কেমন হতো গল্পটা?
প্রথমে শুভ কাজটা সেরে ফেলতেন সোহেল। শুভ কাজ মানে ‘বিবাহ’ নয়। সোহেল প্রথমে পাড়ি জমাতেন বিদেশে। বিদেশ হিসেবে দুবাই এখন ভালো জায়গা। আলো-বাতাস বেশি, তা ছাড়া সেখানে আরও অনেক চোরের পালিয়ে যাওয়ার সফল রেকর্ড রয়েছে। অতএব দুবাই-ই নির্ভরযোগ্য দেশ। এদিকে পত্রিকায় তুমুল লেখালেখি চলত, ফেসবুকে স্ট্যাটাস লেখা হতো, ‘দেশ কোথায় যাচ্ছে!’ দুবাই থেকে তিনি হয়তো লাইকও দিতেন। কেউ একজন ঘোষণা দিতেন, ‘আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে টাকাসহ সোহেলকে ধরা হবে।’
শুভ কাজের পরও শুভ কাজ থাকে। এবারের শুভ কাজ বিবাহ। যদিও সোহেল বিবাহিত, তার পরও কোনো প্রেমিকা জুটিয়ে তাকে দুই কোটি দুই টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে ফেলতেন দুবাইয়ের বুকে। এক বছরের মধ্যে তাদের কোলজুড়ে পিঠজুড়ে আসত সন্তান। তাদের ভর্তি করানো হতো সেখানকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ফটফট করে ইংলিশ বলত তাদের সন্তান। পত্রিকায় তখনো তুমুল লেখালেখি চলত, তবে অন্য কোনো চোরকে নিয়ে। ফেসবুকেও স্ট্যাটাস লেখা হতো, ‘দেশ কোথায় যাচ্ছে?’
প্রথমে তেল, পরে স্বর্ণের ব্যবসায় সোনার অক্ষরে নাম লিখিয়ে সোহেল তত দিনে বড়সড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তখন আর তিনি সুড়ঙ্গ খুঁড়তেন না, বরং নিজের অর্থ বাঁচাতে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতেন। তখনো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হতো, ‘তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না প্রিয়া, আমার ভালোবাসা সোনার চেয়েও দামি।’

বছর দশেক পর মাথা উঁচু করে দেশে ফিরতেন সোহেল। তারপর কোনো এক উৎসব উপলক্ষে শহর-গ্রামের দেয়ালগুলো ভরে যেত তাঁর শুভেচ্ছা পোস্টারে। ফেসবুকে খোলা হতো সোহেলের নামে পেজ। সেই ফেসবুক পেজ কালের পরিক্রমায় পেত ভেরিফাইড পেজের সম্মান।
অতঃপর বিশিষ্ট দানশীল, সৎ, নিষ্ঠাবান সোহেল ভাই অমুক মার্কায় নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন—এ জাতীয় পোস্টার শোভা পেত অলিগলিতে। সেখানে লেখা থাকত, ‘সোহেল ভাইকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন’। এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সংসদ সদস্যও বনে যেতেন তিনি। ভোটের আগে কথা দিতেন, ‘এলাকার মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেবেন।’ মানে তাদের সবার কাছ থেকে অর্থ মুক্ত করে নিজের ট্যাঁকে ভরতেন। কোনো এক আশাবাদী বালকের ফেসবুক স্ট্যাটাস হতো, ‘সোহেল আঙ্কেলকে শুভেচ্ছা, আমরা একজন সত্যিকারের নেতা পেলাম! ফিলিং লাকি।’
সব শেষে সোহেলের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, অতীত সাফল্য চিন্তা করে তাঁকে মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী করা হতো। তিনি তত দিনে বস্তায় করে টাকা নিতেন না। তাঁর গাড়ি থাকত, গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ত।
কিন্তু গল্পটি সত্যি হতে পারল না। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে ঝরে গেল একজন সুযোগ্য মন্ত্রীর সম্ভাবনার মুকুল। বাস্তব বড় নির্মম!