হতভাগ্য তরুণেরা কী করবে?

প্রচ্ছদ: আসিফুর রহমান
প্রচ্ছদ: আসিফুর রহমান

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের জয়জয়কার। প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিয়ে সোচ্চার সবাই। কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই পুরো দুনিয়ায় পালিত হয় এক অগণতান্ত্রিক দিবস। যেখানে বৈষম্যের শিকার অগুনতি তরুণপ্রাণ। এই তরুণসমাজ পরিচিত ‘সিঙ্গল’ নামে। দোকলারা যখন যথাযোগ্য মর্যাদা ও তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করে ভ্যালেটইনস ডে, তখন এই তরুণেরা রেকর্ড করে পৃথিবীর দীর্ঘতম নিঃশ্বাস ত্যাগের। অথচ ভালোবাসা দিবস নিয়ে সবাই এমন ব্যস্ত হয়ে থাকে যে সেই রেকর্ড লেখা হয় না পৃথিবীর কোনো বইয়ে! কী নির্মম বৈষম্য ও অবহেলা!
কেবল দীর্ঘতম নিঃশ্বাসই নয়, এই নিপীড়িত তরুণেরা বিশ্বের অর্থনীতিকেও রাখে ভারসাম্যপূর্ণ। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি এলে প্রেমিক-প্রেমিকারা কার্ড, চকলেট, ফুল ও অন্যান্য উপহারসামগ্রীর যত্রতত্র অপচয় করে। অথচ সিঙ্গল তরুণ-তরুণীরা দিনটিতে ঘরে বসে থেকে রোধ করে অর্থের নিদারুণ অপচয়। মানুষের প্রেমে না পড়লেও এই তরুণ-তরুণীরা খাঁটি প্রকৃতিপ্রেমী। কারণ, প্রেমিক-প্রেমিকারা ভালোবাসা দিবসে একে অপরকে উপহার হিসেবে দেয় ফুল। আর সিঙ্গলরা একটা ফুলও না ছিঁড়ে প্রকৃতিকে রাখে সুরক্ষিত। কেবল প্রকৃতিই নয়, জড়বস্তুর প্রতিও তাদের অসীম ভালোবাসা। প্রেমিক-প্রেমিকা না থাকায় ভালোবাসা দিবসে এদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয় টিভি, ল্যাপটপ কিংবা গেমস। এই জড় বস্তুগুলো যে মানবজীবনের কত নিঃসঙ্গ প্রহরের সঙ্গী, তার মর্ম কেবল এই তরুণেরাই উপলব্ধি করে।
এই নির্যাতিত তরুণেরাই সত্যের কান্ডারি। ভালোবাসা দিবসে ‘ডেট’ করার জন্য প্রেমিক-প্রেমিকারা অভিভাবকদের সঙ্গে কত মিথ্যাচারই না করে! আর এই তরুণসমাজ সেদিন বাধ্য সন্তানের মতো বাসায় বসে খায় মায়ের হাতের রান্না, খায় বাবার ঝাড়ি আর বোনের খোঁটা! এত কিছুর পরও এই ‘সিঙ্গল’ সমাজের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেউ। ভালোবাসা দিবসে একটু মিষ্টি হাসিও উপহার পায় না তারা। অথচ একটি গণতান্ত্রিক বিশ্বে আমরা এমন বৈষম্য চাইনি। এমন বৈষম্যের শিকার হওয়ার ফলে এই তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’-এর পাশাপাশি ‘বিশ্ব একাকী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করারও জোর দাবি জানাই আমরা। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখবে।