নতুন আঙ্গিকে বইমেলা

.
.

বাংলাদেশের মানুষ যে ভাগ গণিত খুব ভালো বোঝে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রায়ই আমরা নানা রকম ভাগ করে আমাদের দক্ষতা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিই। বেশ কিছুদিন আগে আমরা ঢাকাকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করেছি। এবার ভাগ হলো বইমেলা। এক অংশ রইল বাংলা একাডেমি চত্বরে। আরেক অংশ চলে গেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
নতুন আঙ্গিকে বইমেলা আয়োজনের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মতবাদ আছে। এটা থাকবেই। কোনো কিছুতেই যে আমরা একমত হতে পারি না—সেই ঐতিহ্যটাও তো বজায় রাখা দরকার। এবার বইমেলার পরিসর বড় হয়েছে। মানুষকে ধাক্কাধাক্কি করে বই কিনতে হচ্ছে না। তবে সমস্যায় পড়েছেন মুখোশ ব্যবসায়ীরা। অতীতে বইমেলায় নতুন বইয়ের গন্ধের চেয়ে বেশি পাওয়া যেত ধুলার গন্ধ। এবারের মেলায় ধুলাবালু নেই। তাই ধুলা নিরোধক মুখোশের বিক্রিও কমে গেছে এবার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ‘আগের মেলাই ভালো ছিল’ নীতি অনুসরণ করছেন মুখোশ ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া যাঁরা টিভি ক্যামেরায় চেহারা দেখানোর ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন, বিপাকে পড়েছেন তাঁরাও।
কারণ, অধিকাংশ টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাগুলো থাকে বাংলা একাডেমি চত্বরে। এদিকে মেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তবে নতুন আঙ্গিকে মেলা হলেও সিমেন্টের মতো অটুট আছে মেলার সময়সূচি। এখনো মেলা বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলে। অথচ, সকাল থেকে মেলা শুরু হলে অনেকেই ‘মর্নিং ওয়াক’ সেরে মেলায় গিয়ে বই কিনতে পারতেন। রমনা পার্ক তো মেলার কাছেই। তা ছাড়া মেলা এমন সময় শুরু হয়, যখন স্কুল পালিয়ে মেলায় গিয়ে ঠিক ছুটির সময়ে বাসায় এসে ‘স্কুল থেকে ফিরলাম’ টাইপ ভাবও নেওয়া যায় না। আবার ছুটির পর মেলায় আসতে আসতে মেলার সময়ই শেষ হয়ে যায়। ওদিকে প্রেমিক-প্রেমিকারাও মেলায় ঠিকমতো ঘুরতে পারে না। অভিভাবকেরাও তো অফিস শেষেই মেলায় আসেন! তার পরও কর্তৃপক্ষ এই সময়সূচি নিয়ে কিছু ভাবছে না। আশা করি, এবার তারা ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করবে। সময়সূচি নিয়ে ভাবার এখনই সময়।