হালফ্যাশনের হেলমেট

মোটরসাইকেল না চালালেও তরুণেরা এখন রাস্তায় নামলেই হেলমেট পরছেন
মোটরসাইকেল না চালালেও তরুণেরা এখন রাস্তায় নামলেই হেলমেট পরছেন

আঁতেলীয় ঢঙে তেল জবজব করে ডান কি বাঁ দিকে সিঁথি করা কিংবা ড্যাশিং স্টাইলে জেল মেখে নানা ঢঙে স্পাইক অথবা হরেক রকমের হেয়ার কাট-লো ফেড, মিড ফেড, হাই ফেড, বাল্ড ফেড, কুইফ, আন্ডারকাট, পম্পাডোর, কম্ব ওভার...মাথার ফ্যাশন বলতে এত দিন মানুষ কেবল চুলের ফ্যাশনকেই বুঝত। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন যাপনের ধরন-ধারণ যেমন বদলেছে, বদলে গেছে ফ্যাশনও। মাথার ফ্যাশনে এসেছে নতুন ট্রেন্ড-হেলমেট বা শিরস্ত্রাণ! ঘটে বুদ্ধি থাকুক আর না-থাকুক, আঁতেল কিংবা চালাক, অলস মস্তিষ্ক কিংবা কর্মক্ষম, ছোট-বড়-মাঝারি, কুল, হট, যেকোনো মাথাই হেলমেটের কারণে হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল, আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া। কিছু বিপ্লবী ফ্যাশন সচেতন যুবকের হাত ধরে মাথার ফ্যাশনে ঘটে গেছে নীরব হেলমেটবিপ্লব!

তরুণদের ফ্যাশন নিয়ে অনেক দিন ধরে গবেষণা করছেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ এ ওয়াই বাতেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত মানুষ ফ্যাশনের ক্ষেত্রে মাথাকে কম গুরুত্ব দেয়। অথচ পুরো বডিতে আপনার মাথাই হলো আসল। মাথায় গন্ডগোল তো সব শেষ। আর আপনার রুচিবোধ, ব্যক্তিত্ব এবং মানুষ হিসেবে আপনি কতটুকু ড্যাশিং সেটা প্রকাশ পায় আপনি মাথাকে কতটুকু খাটাতে পারছেন তার ওপর। তাই শিরস্ত্রাণ তথা হেলমেটের যে ফ্যাশন শুরু হয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে অভিনব। কেননা সেফটির ব্যাপার তো আছেই, হেলমেট আপনাকে করে আরও আকর্ষণীয়।’

ফ্যাশন সচেতন তরুণদের মধ্যে হেলমেটের এই ট্রেন্ড তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক সমমনা তরুণদের একটি গ্রুপ ‘মাথানষ্ট বয়েজ’, যারা নানা সময় রাস্তায় হেলমেট পরে শো অফ করে। অন্যদের উৎসাহিত করে হেলমেট পরতে। মাথানষ্ট বয়েজের নাটের গুরু গোল্লা খান বলেন, ‘রকিং, ড্যাশিং, ইয়ো-টাইপ হতে গেলে আপনাকে হেলমেট পরতেই হবে। তা ছাড়া কেবল বাইকাররাই হেলমেট পরে ফ্যাশনেবল হবে, আর বাইকহীনেরা ক্যাবলাদর্শন হয়ে থাকবে, আবহমানকাল থেকে প্রচলিত সমাজের এই বৈষম্যপূর্ণ ধ্যান-ধারণাও বদলে দেওয়া প্রয়োজন। শো-অফের মাধ্যমে আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি। আবার অনেক সময় দুষ্টু মানুষেরা শুধু শুধু আপনার মাথা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে পারে। এদের হাত থেকে আপনার মাথাকে সুরক্ষা দিতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য হেলমেট।’

তরুণদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বাজারে রয়েছে হরেক রকমের হেলমেট। সিম্পল, গর্জিয়াস, সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস, গর্জিয়াসের মধ্যে গর্জিয়াস ইত্যাদি। চাহিদামাফিক সব রকমের হেলমেটই পাওয়া যাবে হাতের নাগালে। ডিজাইনে, আকারে, ওজনে হেলমেটগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা অভিনবত্ব। রয়েছে আজব, কদাকার, ভয়ংকর, কিম্ভূতকিমাকার, কেমন জানি-টাইপের সব হেলমেটও। এ ছাড়া মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য ‘এসি হেলমেট’ নামক এক ধরনের হেলমেট ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। প্রখর খররোদে পিকেটিং পিকেটিং খেলার জন্য এই হেলমেট দারুণ সহায়ক হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।

রাজধানীর বংশাল, বাংলামোটর, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুরসহ প্রায় সব এলাকায়ই হেলমেট কিনতে পাওয়া যাবে। কেনা যাবে অনলাইনেও। এ ছাড়া চাইলে চেয়েচিন্তে পরিচিত ভাই-বেরাদরদের অব্যবহৃত হেলমেট বিনে পয়সায় নিতে পারেন। নতুন হেলমেটের দাম পড়বে ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর অনলাইনে ব্যবহৃত হেলমেট কেনা যাবে ২০০ থেকে যেকোনো দামে। আজকাল অনেক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডই মোটরসাইকেলের সঙ্গে হেলমেট ফ্রি দেয়। সে ক্ষেত্রে ফ্রিতে হেলমেট পেতে চাইলে আপনি একটা মোটরসাইকেলও কিনতে পারেন।

তো আর দেরি কেন? একটি মানানসই হেলমেট কিনে আপনিও হয়ে উঠুন রাজপথের একজন ফ্যাশনেবল, রকিং, ড্যাশিং ব্যক্তিত্ব। কেবল হেলমেট কিনে ঘরে বসে থাকলেই কিন্তু আপনি ফ্যাশনেবল হতে পারবেন না। মাথায় হেলমেট গলিয়ে আপনাকে রাস্তায় নামতে হতে হবে। ‘দে মাইর’ খেলার মতো দারুণ রোমাঞ্চকর কিছু করার মাধ্যমে করতে হবে শো-অফ।