শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

আগামী কাল ২৪ মার্চ শুরু হচ্ছে ৩৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী রিদওয়ান ইসলাম।

রিদওয়ান ইসলাম: ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী
রিদওয়ান ইসলাম: ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী

দরজায় কড়া নাড়ছে ৩৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি হচ্ছে, এত দিন যা পড়েছেন, মাথা ঠান্ডা রেখে সেগুলোতেই আবারও চোখ বুলিয়ে নেওয়া।

বাংলা প্রথম পত্র
সাহিত্য, ব্যাকরণ, সারমর্ম, সারাংশ—এই শাখাগুলো থেকেই মূলত প্রশ্ন হয়ে থাকে বাংলা প্রথম পত্রে। ব্যাকরণ অংশে সাধারণত বাক্য, বানান শুদ্ধকরণ, সরল/জটিল/যৌগিক বাক্য রূপান্তর, প্রবাদের অন্তর্নিহিত অর্থ লিখন, শূন্যস্থান পূরণ, বাক্য রচনা ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন থেকে থাকে। সাহিত্যের অংশ থেকে প্রাচীন যুগের চর্যাপদ ও মধ্যযুগের কাব্য এবং আধুনিক যুগের বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক ও তাঁদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। মনে রাখতে হবে যে সাহিত্য অংশই আপনাকে বাংলা প্রথমপত্র বিষয়ে ভালো নম্বর অর্জন করার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলা দ্বিতীয় পত্র
বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সাধারণত দুটি রচনা ও একটি চিঠি বা দরখাস্তের ওপর প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা ও তার প্রতিকার, বাংলাদেশের খনিজসম্পদ ও তেল-গ্যাস, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সুশাসন ও গণতন্ত্র, জাতীয় শিক্ষা কমিশন-২০১০ ইত্যাদি বিষয় আবারও একটু দেখে নেওয়া যেতে পারে।

ইংরেজি প্রথম পত্র
ইংরেজি প্রথম পত্রে গ্রামার, প্রসিস রাইটিং, এমপ্লিফিকেশন অফ আইডিয়া ইত্যাদি অংশ থেকে প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকা পড়া ও ইংরেজি খবর শোনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। গ্রামার অংশে শেষ প্রস্তুতি হিসেবে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রিপজিশন, সেনটেন্স কারেকশন, ট্রান্সফরমেশন অব সেনটেন্সেস, ভয়েস চেঞ্জ, ডাইরেক্ট-ইনডাইরেক্ট স্পিচ, ইডিওম অ্যান্ড ফ্রেজ ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে রিভিশন দেওয়া প্রয়োজন।

ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র
ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে মূলত ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিংয়ে পরীক্ষার্থীর পারদর্শিতা যাচাই করা হয়। বেশির ভাগ সময় দুটি রচনা, একটি চিঠি/দরখাস্ত ও একটি রিপোর্ট রাইটিংয়ের ওপর প্রশ্ন আসে। রিপোর্ট রাইটিং খুবই বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর করা গেলে ভালো হয়। রচনার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেন বাক্য গঠনে কোনো গ্রামাটিক্যাল ভুল না হয়। উইদাউট হিন্টসের রচনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পয়েন্ট আকারেও আপনার রচনা সাজাতে পারেন। গুড গভার্নেন্স, সোশ্যাল সেফটি নেট, মোর‌্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল ভেন্যু, পোভার্টি অ্যালিভিয়েশন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস, ডিজিটাল বাংলাদেশ, রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর, ফিউচার অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি টপিক আরেকটু ঝালাই করে নেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র
এখানে প্রশ্নগুলো বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে হতে পারে। যেমন: বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস, লাহোর প্রস্তাব, দ্বি-জাতি তত্ত্ব, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন হতে পারে। যেমন: সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল, তিস্তার পানি টিপাইমুখ বাঁধ, ট্রানজিট প্রভৃতি। এ ছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়, জ্বালানি সমস্যার সমাধান, বাংলাদেশের রেমিট্যান্স, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সম্পর্কে বর্ণনা ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। লেখায় বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি, মানচিত্র, গ্রাফ, পরিসংখ্যান প্রদান করতে পারলে তা পরীক্ষায় ভাল নম্বর লাভের সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি দ্বিতীয় পত্রে উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধান অংশের ওপর ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে মোট ২০ নম্বরের ১০টি ছোট প্রশ্ন এবং ২০ নম্বরের পাঁচটি টীকা আসতে দেখা যায়। ছোট প্রশ্নের জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞান অংশের মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও তাদের সদর দপ্তর, প্রধানের নাম ও সদস্য সংখ্যা, দেশ-রাজধানী-মুদ্রা-আইনসভার নাম, বিগত বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ইত্যাদি দেখে নেওয়া যেতে পারে। টীকা অংশ ও বড় প্রশ্নের জন্য বহুল আলোচিত বিষয়াবলিসহ সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। এ ছাড়া জিএসপি, ট্রিপস, টিকফা, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ক্রিমিয়া সমস্যা, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৌশলগত অবস্থান, পি৫+১-এর সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনবিষয়ক কৌশলগত অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
শেষ মুহূর্তে গাণিতিক নিয়ম ও সূত্রাবলি আবারও একটু চর্চা করে নিন। অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণীর গণিত পাঠ্যবই এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। মানসিক দক্ষতা অংশ উত্তর করার সময় মাথা ঠান্ডা রাখুন।

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শব্দ, আলো, চুম্বক, আধুনিক পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মৌলিক কিছু বিষয়, মানবদেহ, শারীরবিদ্যা ও এ সংশ্লিষ্ট কিছু সাধারণ রোগ ও তার প্রতিষেধক, দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহূত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির তথ্য, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত মৌলিক কিছু বিষয় শেষ সময়ে ঝালাই করে নিন। এ ক্ষেত্রে ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বইয়ের সংশ্লিষ্ট টপিক এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর কম্পিউটার শিক্ষার পাঠ্যবই বিশেষ সহায়ক হবে বলে আশা রাখি।
পরিশেষে সবার জন্য রইল শুভকামনা। আপনাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে আপনারা পৌঁছে যান, সেই কামনা করি।