ক্রিকেটারদের জন্য পরামর্শ

>

আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই স্বাধীন ফেসবুকে। এই স্বাধীনতার নমুনা মেলে আমাদের ক্রিকেটারদের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে। সেখানে কিছু ‘বিশিষ্ট ফেসবুকার’ তাঁদের জ্ঞান ও গালির ভান্ডার জাহির করতে পছন্দ করেন। কিন্তু ক্রিকেটার বা ক্রিকেটপ্রেমীরা তো সেসব পছন্দ করে না। তাহলে উপায়? ফেসবুকারদের থামানোর একটাই উপায়, সেটা হলো ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ সেটা করবেন বলে মনে হয় না। তাই ক্রিকেটারদেরই বোধ হয় উচিত ‘বিশিষ্ট ফেসবুকার’দের নিয়ম মেনে বাস্তব এবং ভার্চ্যুয়াল জীবন যাপন করা। প্রিয় ক্রিকেটারদের তেমনই কিছু পরামর্শ দিলেন রাফি আদনান ও সোহাইল রহমান

বাস্তব জীবনে যা মেনে চলবেন

১. কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে তাকে বিয়ে করার আগে মা–বাবা নয়, অনুমতি নিতে হবে দেশের বিশিষ্ট ফেসবুকারদের কাছ থেকে। দরকার হলে প্রত্যেকের কাছে পছন্দের নারীর জীবনবৃত্তান্তও পাঠাতে হবে এবং তাদের একজনও যদি বলে, ‘এই মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না’, তাহলে ক্রিকেটারকে অবশ্যই নতুন মেয়ে খুঁজতে হবে। তারপর যে মেয়েকে তারা পছন্দ করবে তাকেই বিয়ে করতে হবে। ক্রিকেটারের নিজের ভালো লাগা বা মন্দ লাগার দাম দেওয়া যাবে না। যদি ওই ফেসবুকাররা কোনো মেয়েকেই ক্রিকেটারের যোগ্য মনে না করে তবে অবশ্যই চিরকুমার হয়ে জীবন কাটাতে হবে।

২. ফেসবুকাররা একমত হয়ে কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে হবে। বিয়ের দিন যাবতীয় অনুষ্ঠান ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দেখাতে হবে। এমন যেন না হয় যে কাউকে না জানিয়ে নিজে নিজে বিয়ে করে তারপর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সবাইকে জানানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সেই বিয়ে সঠিক বিয়ে বলে গণ্য হবে না। এ ছাড়া অলিম্পিক বা বিশ্বকাপ ফুটবলে যেভাবে কাউন্টডাউন করা হয়, সেভাবেই ক্রিকেটারের বিয়ের দিন থেকে শুরু করতে হবে কাউন্টডাউন। যেটা প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। অন্যথায় ওই ফেসবুকারদের যে কেউ যেকোনো সময় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে।

৩. ক্রিকেটারের স্ত্রীর গায়ের রং যদি কিঞ্চিৎ শ্যামলাও হয়, তবে তাঁকে ওই ফেসবুকারদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ওই ফেসবুকারদের মনের মতো না হলে ক্রিকেটারকে জেল, জরিমানা, দল থেকে বহিষ্কার ইত্যাদি শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

৪. ক্রিকেটারের স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ামাত্রই সেটা চিকিৎসককে জানানোর আগে জানাতে হবে ওই ফেসবুকারদের। তারপর তারা কমেন্ট বক্সে তাদের ইচ্ছার কথা জানাবে। তারা যদি মনে করে যে ক্রিকেটারের বাবা হওয়ার সময় হয়েছে, তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

৫. ক্রিকেটারের স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে ফেসবুক লাইভে আসতে হবে। তারপর ওই ফেসবুকাররা ঠিক করবে, ডেলিভারি নরমাল হবে নাকি সিজারিয়ান। বাসায় হবে নাকি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে হবে নাকি প্রাইভেট ক্লিনিকে। নারী চিকিৎসক অপারেশন করবে নাকি পুরুষ চিকিৎসক। কী কী ওষুধ দেওয়া যাবে, আর কী কী দেওয়া যাবে না, সেটাও তারা ঠিক করবে।

৬. শেষমেশ সন্তান জন্ম নেওয়ার পর ওই ফেসবুকাররা ঠিক করবে শিশুটি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে জন্ম নিয়েছে কি না! এ সময় ক্রিকেটারকে সব ধরনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

মহল্লার অন্য ডাস্টবিনগুলা থেকে তো এত গন্ধ আসে না, এই ডাস্টবিনটার সামনে দাঁড়াতেই পারি না! ঘটনা কী, ভাই?

আরে ভাই, অন্য ডাস্টবিনে তো আপনি–আমি ময়লা ফেলি। আর এইটাতে ফালানো হয় সাকিব, তাসকিন, লিটনের পেজের বাজে কমেন্টগুলা। গন্ধ তো বেশি হইবই।

ভার্চ্যুয়াল জীবনে যা মেনে চলবেন

১. ক্রিকেটাররা তাঁদের নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। বিভিন্ন কার্টুন, উঁচু দালানের ছবি অথবা ফেসবুকের ডিফল্ট প্রোফাইল ছবিই আপলোড করতে হবে।

২. ফর্ম খারাপ থাকলে অবশ্যই ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভেট করে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, ফর্মে ফেরার পরপরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অ্যাকটিভ করলেও কোনো পোস্ট দেওয়া যাবে না। না হলে কমেন্ট আসবে, ‘এক ম্যাচ খেইলাই ভাব দেখাও? ফেসবুক কি আমাদের নাই? আমরা কি এক্সাম ভালো হইলে শো-অফ করি?’

৩. কিছু ফেসবুকারের মতে মানুষ দুই প্রকার—সাধারণ মানুষ ও বাংলাদেশি ক্রিকেটার। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সব উৎসব এড়িয়ে শুধু খেলার প্রতিই মনোনিবেশ করতে হবে, এমনটাই চাওয়া সেই সব ফেসবুকারের। অতএব সাধারণ মানুষ উৎসবের আনন্দ ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করার ক্ষমতা রাখলেও ক্রিকেটারদের এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। উৎসবের দিনে তাঁরা সর্বোচ্চ স্ট্যাটাস দিতে পারেন, ‘হ্যালো বন্দুরা, কেমন আছো? ইটস মি...’

৪. ওই ফেসবুকাররা ক্রিকেটারদের পোস্টে ভালোবেসেই নানা ধরনের মন্তব্য করেন। তাই ক্রিকেটাররা প্র্যাকটিস সেশনের বিরতি, খেলার পানিবিরতি কিংবা ছুটিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খুঁজে খুঁজে প্রতিটি কমেন্টের রিপ্লাই দিতে বাধ্য থাকবেন। প্রয়োজনে আলাদা লোকবল নিয়োগ করে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা–সুবিধা রাখা চলবে না।

৫. স্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করার সঙ্গে প্রমাণস্বরূপ বিয়ের কাবিননামা সেঁটে দিতে হবে। নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে তোলা ছবি শেয়ার করার আগে ক্যাপশনে বাংলা, বিদেশি এবং অবশ্যই মুরাদ টাকলীয় ভাষায় সম্পর্কের বর্ণনা দিতে হবে। অন্যথায় নেতিবাচক মন্তব্যের চাপে পোস্টটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হলে সেই ফেসবুকাররা কোনোভাবেই দায়ী থাকবে না।

৬. গাড়ি–বাড়ি কেনার আগে ফেসবুকারদের অনুমতি নেওয়া অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। এমনকি গণতান্ত্রিক ভার্চ্যুয়াল ভোটাভুটির মাধ্যমে কোন ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনবেন, কোন এলাকায় বাড়ি কিনবেন—এসব সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের দেওয়া সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে।

৭. দেশের যাবতীয় জাতীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে ক্রিকেটারদের সপ্তাহে অন্তত এক দিন ফেসবুকে লাইভে আসতে হবে। এবং এসব সমস্যা নিয়ে ভক্তদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

৮. বিদেশভ্রমণের কোনো ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা যাবে না। ফেসবুকে শুধু কক্সবাজার, সাজেক, সিলেটের মতো স্থানের ছবি থাকবে। ফেসবুকারদের দেশপ্রেম সবার চেয়ে বেশি, তাঁরা ক্রিকেটারদের বিদেশভ্রমণ মেনে নিতে পারে না। বিদেশভ্রমণের ছবি শেয়ার করে ফেসবুকারদের দেশপ্রেমে আঘাত করবেন না!