বিরূপকথা

জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ সামনে একটা বাঘ এসে পড়ল। আমিও কাঁচা কাজ করিনি। পকেটে করে পিস্তল নিয়ে এসেছি। বাঘ আসুক আর টাঘ আসুক, কুছ পরোয়া নেহি। বাঘের সামনে পিস্তল তাক করে গুলি করলাম। কিন্তু গুলির শব্দ না হয়ে পিস্তল থেকে গানের আওয়াজ বের হলো, ‘নিম্বুরা নিম্বুরা নিম্বুরা...!’ কী একটা অবস্থা! ভুলে আমার ভাগনের খেলনা পিস্তল নিয়ে এসেছি!

গান শুনে বাঘ পেটে হাত রেখে হাসতে হাসতে আমাকে গিলে ফেলল। আমি বাঘের পেটে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। একটু এগিয়ে দেখি, এক সুন্দরী মেয়ে কান্নাকাটি করছে।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কে? বাঘের পেটে এলে কীভাবে?’

মেয়েটা বলল, ‘আমি হিং টিং ছট রাজ্যের রাজকন্যা। বাগানে সেলফি তুলতে গিয়েছিলাম, তারপর এই দুষ্ট বাঘ আমাকে খেয়ে ফেলেছে।’

‘তোমার বাবাকে ফোন করে বা মেসেজ করে জানাও।’

‘বাঘের পেটে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না।’

‘ও, আমার সিম সাড়ে ৪–জি। নেট পাওয়ার কথা। হ্যাঁ, নেট আছে।’

‘কী বলেন! এখান থেকে বের হতে পারলে এমএনপি ব্যবহার করে অপারেটর পরিবর্তন করে ফেলব। দেন, আব্বুকে ফোন দিই।’

খানিক পর...

‘না, আব্বুর নম্বর বন্ধ। আপনি একটু ফেসবুকে ঢুকবেন?’

আমি ফেসবুকে ঢুকলাম।

রাজকন্যা বলল, ‘ট্যাপা সুলতান লিখে সার্চ দিন।’

আমি বললাম, ‘তিনি আবার কে?’

‘আমার বাবা। তিনি একটু মোটা তো, তাই এই নাম। আমাদের রাজ্যে “ট্যাপা” কথাটা খুব সম্মানের। রাজবংশের কেউ বাদে কারও মোটা হওয়ার অধিকার নেই তো, তাই...’

‘ও আচ্ছা! এই যে সার্চ করে পেয়েছি। দাঁড়াও, একটা পোস্ট দিয়েছেন মনে হয়।’

‘দেখেন তো কী লেখা!’

‘হুম, লিখেছেন—“যে আমার কন্যাকে এনে দিতে পারবে, তাকে আমার কন্যার সঙ্গে বিয়ে দেব, সঙ্গে অর্ধেক রাজত্ব।’”

‘কিন্তু আমার তো বয়ফ্রেন্ড আছে!’

‘আর আমিও বা তোমাকে বিয়ে করে কী করব? আমি দুইটা প্রাইভেট ব্যাচ পড়াই। এই দেখো, পকেটে এখনো মার্কার। টাকায় কুলায় না বলে এক মার্কার বারবার কালি দিয়ে রিফিল করি।’

এর ভেতর আমার বাবার ফোন এল। (বাঘের পেটের ভেতরে ফোন মনে হচ্ছে স্পিকার মুডে চলে গেছে। রাজকন্যাও ওপাশের কথা শুনতে পাচ্ছে।)

আমি ফোন ধরতেই আব্বা বলে উঠলেন, ‘ওই গাধা, তুই কই?’

‘আব্বা, আমি বাঘের পেটে।’

‘তুই বাঘের পেটে থাকিস না ডায়নোসরের পেটে থাকিস, সেটা কথা না। আগে বল, তোরে কত দিন বলছি, ঘরের দরজার সামনে ভেজা লুঙ্গি নাড়বি না। তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসায় এসে লুঙ্গি সরাবি। রাখলাম।’

আমি রাজকন্যার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম। বললাম, ‘দেখলেই তো, পরিবারে আমার অবস্থান। এর মধ্যে রাজকন্যা বিয়ে করে ঘরে তুললে আব্বা আমাকে বের করে দেবেন।’

‘আরে, বারবার বিয়ের কথা বলছেন কেন? বললাম না আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। দেন, ফোনটা দেন। ওকে ফোন করব। ও নিশ্চয়ই আমাকে উদ্ধার করবে।’

রাজকন্যার বয়ফ্রেন্ডকে ফোন করা হলো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করার পর সবই শুনতে পেলাম।

‘হ্যালো, কে?’

‘আমি ঘূর্ণিবতী।’

‘আরে, তুমি! তোমাকে নাকি বাঘে খেয়েছে?’

‘হ্যাঁ, তুমি তাড়াতাড়ি এসে আমাকে বাঁচাও!’

‘আরে, আমি ঝামেলায় আছি। আমার সুয়োকাকি আর দুয়োকাকি ঝগড়া করছে। আমাদের কাকা মানে আমাদের রাজা রাগে সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে বনবাসে চলে গেছে। সেখানে আবার ওয়াই–ফাইয়ে কী জানি সমস্যা হইছে। আমি ইঞ্জিনিয়ার মশাইকে নিয়ে সেখানে যাচ্ছি। আর আমার কাকার কোনো ছেলেমেয়ে নেই, আমার বাবাও নেই। সুতরাং আমি হবু রাজা। তাই তোমার চিন্তা আমি আর করি না। ব্রেকআপ।’

‘কী! এত বড় প্রতারণা! যা, ব্রেকআপ!’

রাজকন্যা আমার দিকে লাজুক মুখে তাকিয়ে বলল, ‘দেখলেন, কত বড় প্রতারক!’

‘হ্যাঁ, তাই তো বুঝলাম। কিন্তু আমাদের তো এখান থেকে বের হতে হবে।’

‘কিন্তু কীভাবে?’

‘আমি একটা মন্ত্র জানি। যেটা পড়লে বাঘ বা যেকোনো বড় প্রাণী বমি করে দেয়।’

‘তাড়াতাড়ি পড়ুন তাহলে।’

আমি মন্ত্র পড়া শুরু করলাম—‘টাইগার টাইগার ডাক পাড়ি, টাইগার এখন কার বাড়ি? যা রে টাইগার সরে যা, মরা ছুঁচো চাবিয়ে খা।’

বলার সঙ্গে সঙ্গে বাঘ ওয়াক ওয়াক করে বমি করে দিল। আমরাও বমির সঙ্গে বের হয়ে গেলাম। তারপর রাজকন্যাকে নিয়ে চলে গেলাম সরাসরি রাজপ্রাসাদে। রাজা তো খুশিতে আত্মহারা। আমার সঙ্গে রাজকন্যার বিয়ে দেবেনই।

রাজার আদেশ অমান্য করি কীভাবে? রাজি হয়ে গেলাম। সাত বছর, সাত মাস, সাত দিন, সাত ঘণ্টা, সাত মিনিট, সাত সেকেন্ড পর্যন্ত চলল আমাদের বিয়ের উৎসব।