তিস্তার চিকিৎসা

আকা: তুলি
আকা: তুলি

তিস্তা নদীতে পানি নাই, সে এখন মুমূর্ষু। আসুন দেখি তিস্তাকে সুস্থ রাখতে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা কেন ব্যর্থ হলো।

রোগ নির্ণয়
তিস্তা নদীকে ‘পানিশূন্য’ অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে ধরে বেঁধে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলো। চিকিৎসকরা তার ইসিজি, ইকো, হলটার, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, লিপিড প্রোফাইলসহ রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে ঘোষণা দিলেন, তিস্তায় পানি নেই!

প্রাথমিক চিকিৎসা
অতঃপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর পানিশূন্যতা রোগ চিহ্নিত হওয়ায় তাকে ইনজেকশনের মাধ্যমে স্যালাইন দেওয়ার পাশাপাশি একগাদা ওষুধের নাম লিখে দিয়ে চিকিৎসক তিস্তা নদীকে বললেন, ‘পানি কমতে শুরু হওয়ার ঠিক দুই ঘণ্টা আগে ওষুধগুলো খাবেন।’

রেফার করা
তিস্তা নদীর পানি ইতিমধ্যেই কমে গেছে। ফলে সে পানি কমতে শুরু করার দুই ঘণ্টা আগে কীভাবে ওষুধ খাবে বুঝতে না পেরে চিকিৎসাবঞ্চিতই থেকে গেল। ফলে পরবর্তী সময়ে তাকে রেফার করা হলো পানিশূন্যতা রোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের চেম্বারে। সেখানে গিয়ে তিস্তা নদী দেখল চেম্বারের দরজায় বড় করে লেখা আছে, ‘প্রথমবার ৫০০ টাকা, এরপর ৩০০ টাকা।’ ২০০ টাকা বাঁচাতে সে মনে মনে একটা বুদ্ধি আঁটল। তিস্তা নদী ডাক্তারের রুমে ঢুকেই বলল, ‘ডাক্তার সাহেব, দ্বিতীয়বার আবার এলাম। আমার অসুখ তো ভালো হলো না।’ চিকিৎসক ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন। মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। তারপর বললেন, ‘আগে যে ওষুধগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলোই চলবে। এবার ঝটপট ৩০০ টাকা দিন।’

আইসিইউ সাপোর্ট
যেহেতু তিস্তার আগে কখনোই ওই বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়নি, তাই আগের প্রেসক্রিপশনের ব্যাপারস্যাপারও নেই। ওষুধ খাওয়ার অভাবে তাই তিস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। একপর্যায়ে তাকে নিতে হলো আইসিইউতে। আইসিইউর চিকিৎসক তাকে দেখে আনন্দে লাফাতে শুরু করলেন। সেটা দেখে ছুটে এল চিকিৎসকের সহকারী, ‘স্যার, কোনো সমস্যা?’ চিকিৎসক বললেন, ‘সমস্যা হলে কি আমি আনন্দে নাচিরে বেকুব?’ সহকারী বলল, ‘সেটাই তো বলছি স্যার। ভেতরে রোগী বসিয়ে রেখে আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে? নাচানাচি করছেন কেন?’ চিকিৎসক বললেন, ‘ভেতরে যে রোগীকে ঢোকালে, সে কে জানো?’ সহকারী বলল, ‘হ্যাঁ, তাকে তো সবাই চেনে, বিখ্যাত তিস্তা নদী।’ চিকিৎসক বললেন, ‘হুমমম... ছোটবেলায় প্রতিদিন নৌকায় তিস্তা নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। টিফিনের টাকা বাঁচানো যেত না ভাড়া দিতে দিতে। আজ তাকে পেয়েছি!’

অপারেশন
আইসিইউতে দীর্ঘদিন থেকে প্রায় ফতুর অবস্থায় তিস্তা ভর্তি হলো ছোট একটা হাসপাতালে, অপারেশনও লাগবে তার। অপারেশনের সময় দেখা গেল হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে তিস্তা নদী। দরজার সামনে তার পথ রোধ করল হাসপাতালের দারোয়ান। দারোয়ান বলল, ‘কী হলো? কোথায় যাচ্ছেন?’ তিস্তা বলল, ‘আর বলবেন না! নার্স বলছিল, “ভয় পাবেন না। এটা খুবই সাধারণ একটা অপারেশন। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে যাবে।”’ দারোয়ান বলল, ‘হ্যাঁ, সে তো ভালো কথাই বলেছে। নার্স আপনাকে সাহস দিচ্ছিল।’ তিস্তা পালাতে পালাতে বলল, ‘আরে ভাই, সে আমার সঙ্গে নয়, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছিল!’

পোস্ট অপারেটিভ চিকিৎসা
কিন্তু অপারেশন করাতে না চাইলেই কি আর হয়? তিস্তাকে বাঁচানো যে পুরো জাতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কে না জানে? তাই দারোয়ান তাকে ধরে এনে অপারেশন করিয়েই ছাড়ল। এবারে অপারেশন-পরবর্তী চিকিৎসার পালা। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর তিস্তা তার চিকিৎসককে বলল, ‘আপনি আমার যে উপকার করলেন, ফি দিয়ে আমি আপনাকে লজ্জিত করতে চাই না। কিন্তু সম্পত্তির উইলে আমি আপনার জন্য যা রেখে যাচ্ছি, আমার মৃত্যুর পর আপনি নিশ্চয়ই হেসেখেলে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবেন।’ চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘মাফ করবেন, আপনার প্রেসক্রিপশনটা একটু দেবেন? ওখানে আমি কিছু পরিবর্তন আনতে চাই!’ অতঃপর পরদিন খবর বের হলো, ‘ভুল চিকিৎসায় তিস্তা নদী মুমূর্ষু!’