ধারাহাস্যকর

.
.

ক্রিকেটে বলকে যে সমীহ করা যায়, বলের যে মেধা আছে এবং সেটার যে গুণাগুণ বিচার-বিশ্লেষণ করে একজন ব্যাটসম্যানকে খেলতে হয়—সেটা রেডিওতে ক্রিকেটের ধারাভাষ্য না শুনলে জানা যেত না! কদিন আগে শেষ হলো এশিয়া কাপ। সে সময় রেডিওতে শোনা কয়েকটি ম্যাচের ধারাভাষ্য (আংশিক কাল্পনিক) শুনুন এবার।
ম্যাচ: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান, ৪ মার্চ
উমর গুল লাইন-লেংথ হারিয়ে ফেলেছেন, কোথায় বল করবেন বুঝতে পারছেন না। যেখানেই বল ফেলছেন চার-ছয় খাচ্ছেন। আজকে পাকিস্তানি বোলারদের খাওয়া নাই!
চার বাঁচাও, জান বাঁচাও!
আবারও মেরেছেন সাকিব, ক্যাচ উঠেছে সীমানার কাছে! দৌড়ে গেলেন তালহা। তাঁর সামনে ড্রপ খেয়ে সাইড দিয়ে বল চলে গেল সীমানার বাইইইরে। ফিল্ডার বল তো চোখে দেখছে না, ঘুরপাক খাচ্ছে মাঠের ভেতরে, ক্যাচ ধরবে কীভাবে!
পরের বল, সেইইইইই আইপিএলে সাকিব এমন অনেকগুলো মেরেছেন...!
ব্যাটে-বলে হয়েছে, হয়েছে! এবারে আর রক্ষা নেই বোলার আজমলের, বল চলে গেছে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে। পরের বল আবার মেরেছেন, এবারে উল্টো ব্যাটে চার। বলের সুতাই খুলে ফেলল বোধ হয়...!

বাংলাদেশের উচিত ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়া!

.
.

ম্যাচ: বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা, ৬ মার্চ
বাংলাদেশ এক দিনের ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, তবে বাংলাদেশের দর্শকেরা কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। বলতে বলতে আউট আউট আউউউউট হয়ে গেলেন লাহিরু থিরিমান্নে।
কুমার সাঙ্গাকারা এমন একজন ব্যাটসম্যান, যিনি শেষ কবে অল্প রানে আউট হয়েছেন সেটা বোলাররা ভুলে গেছেন, দর্শকেরা ভুলে গেছে, আম্পায়াররা ভুলে গেছেন! এমনকি আমরাও ভুলে গেছি! তবে বোলার আল আমিন মনে করিয়ে দিলেন সেটি। তিনি বললেন, কুমার সাঙ্গাকারা, তুমি অনেক বড় নক্ষত্র হতে পারো, তবে আমরাও কিন্তু তোমাকে বিভ্রান্ত করতে পারি।
: বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু খেলায় চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছে।
: ভাই, ওটা বাংলাদেশ ব্যাংক হবে না, হবে বাংলাদেশ দল!
একটি জয় বাংলাদেশকে কিন্তু ওই আকাশের দিকে উড়িয়ে নিতে পারে। কিন্তু সেই জয়টিই কেন জানি বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় আসছে না। আম্পায়ার বিলি বাওডেন, নিউজিল্যান্ড থেকে পাখা মেলে উড়ে আসা মানুষটি দুই হাত মেলে জানিয়ে দিলেন ওয়াইড।

নতুন ব্যাটসম্যান এসেছে, তাকে ইয়র্কার বল দাও, ব্যাটসম্যানকে এঁটেসেঁটে ধরো, তাকে চাপে ফেলো, বিরক্তি উৎপাদন করো, এরপর তাকে ভুল করার সুযোগ দাও। সে রেগেমেগে নিজেই আউট হয়ে যাবে—এটি কিন্তু এখন বাংলাদেশের সবার কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া।

চার হয়ে গেল, বোলারের মাথায় হাত, মুশফিকের কপালে ভাঁজ, মাহমুদউল্লাহ বিমর্ষ, থেমে গেছে দর্শকদের হর্ষ।
টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছে দর্শকের একাংশ। কারও মাথায় হাত, কারও কপালে ভাঁজ, কেউ আরেকজনের কোলে কাত।

ম্যাচ: শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান, ৮ মার্চ

.
.

পানিতে যেমন উজান থাকে, ভাটাও থাকে। রানের ক্ষেত্রেও এমন ভাটা থাকে; সেই রানের ভাটা চলছে এখন মিজবাহর ব্যাটে।
এবারে কিন্তু বোল্ড হয়ে গেলেন লাহিরু থিরিমান্নে। কিন্তু বোল্ড হলে কী হবে, আজমল কিন্তু দলের বারোটা বাজার পর উইকেট পেলেন। বলা চলে বোলার আজমলের পেটের ওপর চাপ দিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন লাহিরু থিরিমান্নে। তিনি মাথা উঁচু করে, বুক চিতিয়ে, ব্যাট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন।
বলতে বলতেই বল চলে গেল ডিপ ফাইন লেগ অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে! চার রান। বলা চলে ধ্রুপদি ব্যাটিং। শুধু মাঠে উপস্থিত দর্শকই নয়, মাঠের বাইরে শ্রীলঙ্কায়ও বাদ্যযন্ত্র বাজছে, তারা নাচছে, তারা গাইছে। আর খেলা শেষ হলে কী হবে বলা মুশকিল। কী হবে না, সেটাও বলা যাচ্ছে না। আর কিছুক্ষণ পরই শ্রীলঙ্কা অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। বলতে না বলতেই আবারও চার, আর এক মিনিটের মধ্যেই ট্রফিটা চলে যাবে ওই মিজবাহ-উল-হকের নাগালের বাইরে। তিনি চেয়ে চেয়ে শুধু দেখবেনই। ট্রফির গন্ধও পাবেন না।

.
.

‘থানা’ থেকে বল করতে ছুটছেন তালহা। কোনো স্লিপ নেই, বল চলে গেল মাটি কামড়ে সীমানার বাইরে। একটি নান্দনিক শট।
এক দিনের ক্রিকেটের অন্যতম দানবীয় মারমুখী ব্যাটসম্যান ছিলেন সনাথ জয়াসুরিয়া। তিনি বলের গুণ বুঝতেন না, মেরিট বুঝতেন না, সমীহ বুঝতেন না। বুঝতেন শুধু পিটানো। সেই ‘মাতারা হারিকেন’ এখন শ্রীলঙ্কা দলের নির্বাচক।

.
.

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ধারাভাষ্য শোনা যাবে বাংলাদেশের বাইরেও, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িয়া, আসামসহ বাংলা ভাষাভাষী সব জায়গায়। আপনাদের সবাইকে আমাদের ধারাভাষ্য শোনার জন্য আমন্ত্রণ রইল।
এখন বল করবেন লাসিথ মালিঙ্গা। বিশ্বের এক মস্তবড় বোলারের নাম এবং বর্তমান যুগের ব্যাটসম্যানদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। বলতে বলতেই আউউউউট! আম্পায়ারকে কিন্তু আঙুল তুলতে হয়নি, ব্যাটসম্যান নিজে নিজেই হেঁটে চলে যাচ্ছেন। বোলার কিন্তু ওই আতঙ্ক, ব্যাটসম্যানদের দিন খারাপ করে দেওয়া ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো লাসিথ মালিঙ্গা!
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাতে ব্যাট মানে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাতে ম্যাচ। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাতে দেশ। যতক্ষণ তাঁর হাতে ব্যাট, পথ হারাবে না বাংলাদেশ, মাফ করবেন, পথ হারাবে না শ্রীলঙ্কা।